মহাভারত
আদিপর্ব


ভাষাংশ>মহাভারত >আদিপর্ব>ত্রিনবতিতম অধ্যায়- চতুর্নবতিতম অধ্যায়


ত্রিনবতিতম অধ্যায়
যযাতির ত্যাগশীলতা

বসুমান্ কহিলেন, “মহারাজ! আমি উষদশ্বের পুৎত্র, আমার নাম বসুমান্। যদি স্বর্গে বা অন্তরীক্ষে আমার ভোগ্য কোন স্থান থাকে, তাহা আমি তোমাকে প্রদান করিলাম।” রাজা কহিলেন, “অন্তরীক্ষ, পৃথিবী, দিক এবং যে-সকল লোক সূর্য্যদেবের তাপে উত্তপ্ত হয়, তাদৃশ বহুসংখ্যক লোক আপনার গমন-প্রতীক্ষা করিতেছে।” বসুমান্ প্রত্যুত্তর কহিলেন, “মহারাজ! আর ভূমণ্ডলে নিপতিত হইতে হইবে না, আমি সেই লোক আপনাকে প্রদান করিতেছি, উহা আপনারই ভোগ্য হউক; যদি প্রতিগ্রহ করা আপনার পক্ষে নিতান্ত দূষণীয় হয়, তবে তৃণ দ্বারা উহা ক্রয় করুন।” রাজা প্রত্যুত্তর করিলেন, “হে নরেন্দ্র! তুমি সাধু ব্যক্তিদিগকে কদাচ অবমাননা কর নাই, অতএব তোমার বিদ্যুৎ প্রায় অনন্ত লোক বিদ্যমান আছে।” শিবি কহিলেন, “মহারাজ! যদি এই সকল লোক ক্রয় করা আপনার অনভিমত হয়, তবে তাহা আপনাকে সম্প্রদান করিতেছি, আপনি তাহা গ্রহণ করুন। আমি দান করিয়া পুনরায় তাহা গ্রহণ করিব না, যেহেতু বিদ্বান ব্যক্তিরা দান করিয়া কদাচ অনুতাপ করেন না।”যযাতি কহিলেন, “হে নরদেব! আপনি দেবরাজতুল্য প্রভাবসম্পন্ন এবং আপনার ভোগ্য লোকও অনন্ত বটে, কিন্তু আমার অদ্যাপি অন্যদত্ত লোকে স্পৃহা হয় নাই; অতএব আপনার দান আমার অভিমত নহে।” তখন অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! যদি অস্মদ্দত্ত এক একটি লোক স্বীকার না করেন, তবে আমরা আপনাকে সমুদয় প্রদান করিয়া বরং নরকে গমন করিব।” রাজা প্রত্যুত্তর করিলেন, “আমার পক্ষে যাহা উপযুক্ত বোধ হয়, তাহা সম্পাদন করিতে যত্নবান্ হউন, কারণ, সাধু ব্যক্তিরা স্বভাবতঃ সত্যপরায়ণ হইয়া থাকেন; কিন্তু যাহা আমার অদৃষ্টলভ্য নহে, তদ্বিষয় ভোগ করিতে আমি কখনই সম্মত হইতে পারি না।” অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! যে-সকল সুবর্ণময় রথে আরোহণ করিয়া লোকে শাশ্বতলোকে গমন করিতে অভিলাষ করে, তদ্রূপ পাঁচখানি রথ দেখা যাইতেছে, উহা কাহার?” রাজা কহিলেন, “ঐ সকল সুবর্ণময় রথ তোমাদিগকে বহন করিবে। উহা জ্বলন্ত অগ্নিশিখার ন্যায় পরিদৃশ্যমান হইতেছে।” অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! তুমি ঐ রথে আরোহণ করিয়া অন্তরীক্ষে গমন কর এবং নির্দ্দিষ্টকাল উপস্থিত হইলে আমারাও তোমার অনুসরণ করিব।” রাজা কহিলেন, “আমরা কর্ম্মফলে সকলেই স্বর্গলোক জয় করিয়াছি, অতএব চল, সকলে সমবেত হইয়া তথায় গমন করিব। এই আমাদিগের দেবলোকে প্রস্থান করিবার নিষ্কণ্টক পথ দেখাইতেছে।”

অনন্তর ধর্ম্মশীল ভূপালগণ রথারোহণপূর্ব্বক স্বীয় প্রভাপুঞ্জ দ্বারা নভোমণ্ডল আচ্ছন্ন করিয়া গমন করিতে লাগিলেন। এই অবসরে অষ্টক কহিলেন, “আমি মনে করিয়াছিলাম, মহাত্মা ইন্দ্র আমার সখা, আমি অগ্রে তাঁহার নিকট গমন করিব; কিন্তু উশীনরতনয় শিবি মহাবেগে অশ্বগণকে অতিক্রম করিয়া গমন করিতেছেন, ইঁহার অভিপ্রায় কি?” যযাতি প্রত্যুত্তর করিলেন, “উশীনরপুৎত্র যত ধন উপার্জ্জন করিয়াছিলেন, সমুদয়ই দেবলোকে সমর্পণ করিয়াছেন; অতএব শিবিরাজ আমাদিগের সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অসামান্য-বুদ্ধিসম্পন্ন শিবিরাজ দান, তপস্যা, সত্য,ধর্ম্ম, লজ্জা, ক্ষমা ওবিধিৎসা প্রভৃতি প্রভূত গুণে অলঙ্কৃত; বিশেষতঃ শিবিরাজ অতিশয় সুশীল ও সৌম্য; এই কারণে শিবি সর্ব্বাগ্রে গমন করিতেছেন।” অনন্তর অষ্টক সকৌতুকচিত্তে পুনর্ব্বার মাতামহকে জিজ্ঞাসিলেন, “মহারাজ! জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোথা হইতে আগমন করিতেছেন এবং কাহার পুৎত্র? আর আপনি যে-সকল কার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়াছেন, তাদৃশ অন্য কোন ক্ষৎত্রিয় বা ব্রাহ্মণ তদ্রূপ কর্ম্ম র পারেন না কেন? এই সমুদায় যথার্থরূপে বর্ণন করুন।” রাজা প্রত্যুত্তর করিলেন, “আমি নহুষতনয়, আমার নাম যযাতি। আমি পৃথিবী-রাজ্যের সম্রাট্ ছিলাম, আমি তোমাদিগের সমক্ষে সমুদয় রহস্য প্রকাশ করিতেছি। আমি তোমাদের মাতামহ, আমি সমস্ত অবনীমণ্ডল জয় করিয়াছি, ব্রাহ্মণদিগকে একশত সুরূপ পবিত্র অশ্ব ও বস্ত্র দান করিয়াছি এবং শত অর্ব্বুদ গো, বাহন, সুবর্ণ ও ধনের সহিত এই সসাগরা ধরিত্রী বিপ্রসাৎং করিয়াছি;পৃথিবী ও স্বর্গে আমার সত্যের প্রভাব দেদীপ্যমান আছে। সত্যপ্রভাবেই মানুষ্যলোকে অগ্নি প্রজ্বলিত হইতেছে। আমি যাহা কহিা থাকি, সকলই সত্য। আমার বাক্য কদাচ বিফল হয় না; যেহেতু সাধুলোকেরা সত্যের সম্মান করিয়া থাকন। হে অষ্টক! আমি সত্যই কহিতেছি , উষদশ্বের পুত্র প্রতর্দ্দন, মুনি ও দেবগণ ইহারা সত্য-প্রভাবেই সকলের পুজনীয় ও মান্য হইয়াছেন। আমরা স্বীয় পুণ্যবলে সুরলোক জয় করিয়াছি; অতএব যে ব্যক্তি আমাদিগের নিকট অকপটে স্বকিয় রহস্য ভেদ করিবেন এবং বিপ্রগণের প্রতি অসূয়া- শূন্য হইবেন, তিনি উত্তরকালে আমাদিগের সালোক্য লাভ করিতে পারিবেন। এইরূপে রাজা যযাতি স্বয় দৌহিত্রগণ দ্বারা তারিত হইয়া মহীয়সী কীর্ত্তি-সংস্থাপনপূর্ব্বক পৃথিবী পরিত্যাগ করিয়া ত্রিদশালয়ে গমন করিলেন।

চতুর্নবতিতম অধ্যায়
পুরুবংশবর্ণন

জনমেজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, ভগবন্! পুরুবংশাবতংস ভূপতিগণ কিরূপ শৌর্য্য, বীর্য্য, পরাক্রম, সদাচার ও সদ্ব্যবহারাদি সম্পন্ন ছিলেন, তৎসমুদয় সবিস্তর বর্ণনা করুন। সেই সুশীল সুবিখ্যাত মহাবলপরাক্রান্ত বিজ্ঞানশালী মহীপালগণের জীবন চরিত সবিশেষ পরিজ্ঞাত হইতে আমার সাতিশয় অভিলাষ হইতেছে। বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! পুরুবংশসমুদ্ভূত মহাবল মহাতেজাঃ সর্ব্বলক্ষণাক্রান্ত ভূপালগণের বৃত্তান্ত বর্ণনা করিতেছি, শ্রবণ করুণ। পৌষ্ট্রীর গর্ভে পুরুরাজের তিন পুৎত্র জন্মে;-প্রবীর, ঈশ্বর এবং রৌদ্রাশ্ব। রাজকুমারেরা সকলেই মহারথ ছিলেন। সর্ব্বজ্যেষ্ঠ প্রবীরের ভার্য্যা শূরসেনী; তাঁহার গর্ভে মনস্যু নামে এক পুৎত্র জন্মে। মহাবল মনস্যু স্বীয় বাহুবলে অরাতিকুল নির্ম্মূল করিয়া অতি বিস্তীর্ণ সাগরাম্বরা৪ ধরিত্রীর একাধিপতি হইয়াছিলেন। সৌবীরীর গর্ভে মনস্যুর অন্বগ্‌ভানু প্রভৃতি তিন পুৎত্র জন্মে। অপ্সরা মিশ্রকেশীর গর্ভে রৌদ্রাশ্বের দশ পুৎত্র জন্মে;-ঋচেয়ু, কক্ষেয়ু, কৃকণেয়ু, স্থণ্ডিলেয়ু, বনেয়ু, জলেয়ু, তেজেয়ু, সত্যেয়ু, ধর্ম্মেয়ু ও সন্নতেয়ু। তাঁহারা সকলেই সুপণ্ডিত, ধর্ম্মপরায়ণ, যাগশীল ও অস্ত্রবিদ্যাবিশারদ ছিলেন। তন্মধ্যে ঋচেয়ুর পুৎত্র অনাধৃষ্টি অসাধারণ বিদ্যোপার্জ্জন করিয়া পৈতৃক সিংহাসনে অধিরূঢ় হইলেন। মহীপাল অনাধৃষ্টির মতিনার নামে এক পুৎত্র জন্মে। পরমধার্ম্মিক মতিনার রাজসূয় ও অশ্বমেধ প্রভৃতি যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। কালক্রমে তাঁহার চারি পুৎত্র হইল;-তংসু, মহান্, অতিরথ এবং দ্রুহ্যু। মহাবল-পরাক্রান্ত তংসু সমস্ত বসুন্ধরা জয় করিয়া ভূমণ্ডলে নির্ম্মল যশোরাশি বিস্তার করিয়াছিলেন। তংসুর ঈলিন নামে এক মহাবল পুৎত্র জন্মে;- তিনিও সমুদয় পৃথিবী জয় করিয়াছিলেন। মহারাজ ঈলিন স্বীয় পত্নী রথন্তরীর গর্ভে দুষ্মন্ত, শূর, ভীম, প্রবসু এবং বসু পাঁচ পুৎত্র উৎপাদন করেন। তন্মেধ্যে সর্ব্বজ্যেষ্ঠ দুষ্মন্ত সিংহাসনে অধিরূঢ় হইলেন। তিনি শকুন্তলার গর্ভে ভরত নামে এক পুৎত্র উৎপাদন করেন। সেই শকুন্তলাতনয় ভরত দ্বারাই ভরতবংশের এতদূর গৌরব-বৃদ্ধি হইয়াছে। মহারাজ ভরতের তিন মহিষী। তাঁহাদিগের গর্ভে রাজার নয় পুৎত্র জন্মে। কিন্তু পুৎত্রেরা কেহই তাঁহার অনুরূপ হন নাই, এই নিমিত্ত তিনি স্বীয় সন্তানগণকে যথাযোগ্য সমাদর করিতেন না। মহিষীগণ রাজার অসন্তোষের কারণ জানিতে পারিয়া ক্রোধপরবশ হইয়া তৎক্ষণাৎ পুৎত্রদিগেকে বিনষ্ট করিলেন। এইরূপে ভরতের অপত্যোৎপাদন বৃথা হইয়া গেল। অনন্তর তিনি পুৎত্রার্থী হইয়া বহুবিধ যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করাতে মহর্ষি ভরদ্বাজের অনুগ্রহে ভূমত্যু নামে এক পুৎত্র লাভ করিলেন। ভূমন্যু প্রাপ্তবয়স্ক হইলে রাজা তাঁহাকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। মহিষী পুষ্করিণীর গর্ভে ভূমণ্যুর পুৎত্র জন্মে;- সুহোত্র, দিবিরথ, সুহোতা, সুহবিঃ, সুজেয় এবং ঋচীক। সর্ব্বজ্যেষ্ঠ সুহোত্র গজবাজি-সমাকীর্ণ ও বল্হরত্ন-সমাকুল রাজ্য লাভ করিলেন এবং রাজসূয়, অশ্বমেধ প্রভৃতি বহুবিধ যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতে লাগিলেন। ন্যায়পরায়ণ সুহোত্র ধর্ম্মতঃ প্রজ্ঞাপালন করিতে আরম্ভ করিলে, হস্তী, অশ্ব ও রথসম্পূর্ণা এবং জনতাসমাকুলা বসুন্ধরা ভারাক্রান্ত হইয়া যেন রসাতলে নিমগ্না হইতে লাগিলেন। তিনি রাজা হইলে শস্যবৃদ্ধি, প্রজাবৃদ্ধি ও পৃথিবী স্থানে স্থানে চৈত্য১ ও যূপস্তম্ভে২ উদ্ভাসিত হইতে লাগিল। ঐক্ষাকীর গর্ভে সুহোত্রের তিন পুৎত্র জন্মে;- অজমীঢ়, সুমীঢ় এবং পুরুমীঢ়। তন্মধ্যে অজমীঢ় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাঁহার তিন পত্নী;- ধূমিনী, নীলী এবং কেশিনী। ইঁহাদিগের গর্ভে অজমীঢ়ের ছয় পুৎত্র হয়;- ঋক্ষ, দুষ্মন্ত, পরমেষ্ঠী, জহ্নু, ব্রজন ও রূপিণ। ধূমিনীর গর্ভে ঋক্ষ, নীলীর গর্ভে দুষ্মন্ত ও পরমেষ্ঠী, কেশিনীর গর্ভে জহ্নু, ব্রজন ও রূপিণ জন্মগ্রহণ করেন। দুষ্মন্ত ও পরমেষ্ঠী হইতে পাঞ্চালবংশ সমুদ্ভুত হইয়াছে এবং অমিততেজাঃ জহ্নু হইতে কুশিকান্বয় বিস্তৃত হইয়াছে। সর্ব্বজ্যেষ্ঠ ঋক্ষ রাজা ছিলেন। ঋক্ষের পুৎত্র সংবরণ। তিনি রাজ্যশাসন করিতে আরম্ভ করিলে প্রজামণ্ডলীর ক্ষয় হইতে লাগিল এবং অন্যান্য বিষয়ের বিনাশ হওয়াতে ক্রমশঃ জনপদ উৎসন্নপ্রায় হইয়া উঠিল। শত শত লোক ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হইয়া অকালে কালকবলে পতিত হইতে লাগিল এবং অনাবৃষ্টি ও ব্যাধিতে লোক-সকল পঞ্চ পাইতে লাগিল। এই সময়ে পাঞ্চালরাজ চতুরঙ্গিণী সেনা-সমভিব্যাহারে রাজা সংবরণকে আক্রমণ করিয়া পরাজয় করিলেন। অনন্তর রাজা সংবরণ ভীত হইয়া পুৎত্র, কলত্র, অমাত্য ও বন্ধুবর্গের সহিত পলায়ন করিয়া সিন্ধুনদ-তীরবর্ত্তী এক নিবিড় নিকুঞ্জমধ্যে বাস করিলেন। সেই নিকুঞ্জ নদীতট অবধি পর্ব্বতসমীপে পর্য্যন্ত বিস্তৃত। এই দুর্গমধ্যে তাঁহারা বহুকাল অতিবাহিত করিলেন। প্রায় সহস্র বৎসর অতীত হইলে, একদিবস ভগবান বশিষ্ঠ তথায় আগমন করিলেন। ভারতেরা মহর্ষিকে সমাগত দেখিয়া, পরমযত্নে প্রত্যুদ্‌গমন ও অভিবাদনপূর্ব্বক তাঁহাকে অর্ঘ্য-দান করিলেন এবং করিলেন এবং অনাময়-প্রশ্নপূর্ব্বক তাঁহার যথাবিধি সৎকার করিলেন। মুনিবর আসনে উপবিষ্ট হইলে রাজা প্রার্থনা করিলেন, “ভগবান! আপনাকে আমাদিগের পৌরোহিত্য গ্রহণ করিতে হইবে। আপনি পুরোহিত হইলে আমরা রাজ্যের নিমিত্ত যত্ন করিতে পারি।” মহর্ষি বশিষ্ঠ “তথাস্ত্ত” বলিয়া রাজার প্রার্থনায় সম্মতি প্রকাশ করিলেন। অনন্তর অচিরকালমধ্যে তাঁহাকে সাম্রাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। মহারাজ সংবরণ রাজ্যলাভানন্তর যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠানে তৎপর হইলেন। অনন্তর সংবরণের মহিষী তপতী এক পুৎত্র প্রসব করিলেন। ঐ পুৎত্রের নাম কুরু। তিনি অত্যন্ত ধর্ম্মপরায়ণ হওয়াতে প্রজাদিগের সাতিশয় প্রীতিভাজন হইয়াছিলেন। মহাতপাঃ কুরু কুরুজঙ্গলে তপস্যা করিয়াছিলেন। বলিয়া ঐ প্রদেশ পবিত্র ও কুরুক্ষেত্র নামে বিখ্যাত হইল। কুরুর পাঁচ পুৎত্র;- অবিক্ষিত, ভবিষ্যন্ত, চৈত্ররথ, মুনি এবং জনমেজয় অবিক্ষিতের আট সন্তান;- পরীক্ষিৎ, শবলাশ্ব, আদিরাজ, বিরাজ, শাল্মিলি, উচ্চৈঃশ্রবা, ভঙ্গকার ও জিতারি। পরীক্ষিতের সাত পুৎত্র;- জনমেজয়, কক্ষসেন, উগ্রসেন, চিত্রসেন, ইন্দ্রসেন, সুষেণ ও ভীমসেন। জনমেজয়ের আট পুৎত্র;- ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু, বাহ্লীক, নিষধ, জাম্বুনদ, কুণ্ডোদর, পদাতি ও বসাতি। রাজকুমারেরা সকলেই বুদ্ধিমান্, সুশীল, ধর্ম্মপরায়ণ ও দয়ালু ছিলেন। সর্ব্বজ্যেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্র রাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন। তাঁহার দ্বাদশ পুৎত্র;- কুণ্ডিক, হস্তী, বিতর্ক, ক্রাথ, কুণ্ডিন, হবিঃশ্রবা, ইন্দ্রাভ, ভূমন্য, অপরাজিত, প্রতীপ, ধর্ম্মনেত্র এবং সুনেত্র। তন্মধ্যে প্রতীপ ভূয়সী প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তাঁহার তিন পুৎত্র;- দেবাপি, শান্তনু, এবং বাহ্লীক। তন্মধ্যে দেবাপি ধর্ম্মোপার্জ্জন-বাসনায় প্রব্রজ্যাশ্রম গ্রহণ করিলেন; শান্তনু ও বাহ্লীক রাজ্যশাসন করিতে লাগিলেন। হে নরেন্দ্র! এতদ্ভিন্ন অন্যান্য বহুসংখ্যক রাজা পবিত্র মনুবংশে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন।