অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
নজরুল ইসলাম, কাজী
ব্যর্থতার ব্যথা
পৃথিবী তাহার ভোগ-সম্ভার চোখের লইয়া জাগিয়া আছে অনন্তকাল ধরিয়া।
বিপুল ক্ষুধার তীব্র তাড়নে ছুটিয়া চলি। দুই হাত পাতিয়া আমরা ক্ষুধার অন্নভিক্ষা চাই ধরণীর মুখ ফিরাইয়া দূরে সরিয়া যায়।
ধীরে ধীরে আঘাত আসে, বেদনা আসে, দৈন্য-দুঃখ-দারিদের তাণ্ডব লীলা চলে জীবনের শ্মশানে প্রাঙ্গণে।
প্রেম ভালবাসা আত্মীয়তা বান্ধবতার মধ্যে জাগিয়া উঠে জীবনব্যাপী বঞ্চনার নিষ্ঠুর পরিহাস!
অন্তর-জগতে কাঁদিয়া মরে যুগ-যুগান্তরে মথিত মানুষ। অত্যাচার অনশন- নিষ্পেষণের মাঝেও প্রাণ চায় জীবনের তৃপ্তি।
জ্ঞানী তাহার দানে জগৎকে প্রভাবান্বিত করিল। কবির দানে ধরিত্রীর প্রাণ সরস হইয়া উঠিল। ধনী তাহার-সর্বস্বদান করিয়া অমর হইয়া রহিল।
শত শতাব্দী ধরিয়া আমি দান করিয়া আসিলাম-শরীরের রক্ত, দেহের শক্তি, এক কথায় সমস্ত জীবনটাকে। প্রতিদানে পাইলাম নিপীড়ন বন্ধন বঞ্চনা, অপমান আর বুকভরা বেদনা।
অন্ধকার রাত্রি। উর্ধ্বে বন্ধ উর্ধ্বে ম্লান নক্ষত্রের পানে চাহিয়া ভাবিতেছিলাম। উঃ কি অকরুণ-এই জীবন। সুখ শাস্তি আনন্দ। কিছুই নাই-আছে কেবল রিক্ততার হাহাকার!
প্রাণের গহন অন্ধকার হইতে.কে যেন.বলিয়া উঠিল: মিথ্যা কথা! তোমার ব্যথা, তোমার ব্যর্থতা আজ সার্থকতার পরিপূর্ণ মূর্তি পরিগ্রহ করে জেগেছে। প্রতীচীর স্বার্থ মন্দির ভেঙে পড়েছে; মিশরের পিরামিড কেঁপে উঠেছে; চীনের প্রাচীরে ভাঙন লেগেছে; হিমালয় দুলে উঠেছে। তোমার ব্যথার, ভিতর দিয়ে সত্যের বাণী এসেছে। মানুষ পাবে তার মানবীয় সর্ব-প্রয়োজনের সম- অধিকার।'
কি আশ্চর্য! আমার এই সার্থকতা বেদনার আড়ালে কেমন করিয়া লুকাইয়াছিল।
হে আমার জীবনের ব্যথা। তোমায় নমস্কার।
গণবাণী
১৯২৭