বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম

                ভূত-ভাগানোর গান
                     [বাউলের গান]

                            ১

ঐ         তেত্রিশ কোটি দেব্‌তাকে তোর তেত্রিশ কোটি ভূতে।
আজ     নাচ্‌ বুঢঢি নাচায় বাবা উঠ্‌তে বস্‌তে শুতে॥

ও ভূত   যেই দেখেছে মন্দিরে তোর
            নাই দেবতা নাচ্‌ছে ইতর,
আর      মন্ত্র শুধু দন্ত-বিকাশ, অমনি ভূতের পুতে-
তোর     ভগবানকে ভূত বানালে ঘানি-চক্রে জু'তে॥
                        ২
ও ভূত   যেই জেনেছে তোদের ওঝা
            আজ নকলের বইছে বোঝা,
ওরে      অম্‌নি সোজা তোদের কাঁধে খুঁটো তাদের পুঁতে-
আজ     ভূত-ভাগানোর মজা দেখায় বোম্‌ ভোলা বম্বুতে॥
                               ৩
            ও ভূত   সর্ষে-পড়া অনেক ধুনো
                            দেখে শুনে হ'ল ঝুনো,
তাই      তুলো-ধুনো করছে ততই যতই মরিস্‌ কুঁথে-
ও ভূত   নাচ্‌ছে রে তোর নাকের ডগায় পারিস্‌নে তুই ছুঁতে॥
                               ৪
            আগে     বোঝেনি ক' তোদের ওঝা
            তোরা     গোঁজামিলের মন্ত্র-ভজা,
                        (শিখ্‌লি শুধু চক্ষু-বোঁজা)
            শিখ্‌লি শুধু কানার বোঝা কুঁজোর ঘাড়ে থূতে-
তাই      আপ্‌নাকে তুই হেলা ক'রে ডাকিস্‌ স্বর্গ-দূতে॥
                            ৫
ওরে         জীবন-হারা, ভূতে খাওয়া!
               ভূতের হাতে মুক্তি পাওয়া
           সে কি সোজা? ভূত কি ভাগে ফুস-মন্তর ফুঁতে?
তোর     ফাঁকির কিন্তু এড়িয়ে- প'ড়বি কূল-হারা 'কিন্তু' তে!
                            ৬
ওরে         ভূত তো ভূত- ঐ মায়ের চোটে
               ভূতের বাবাও উধাও ছোটে,
           ভূতের বাপ ঐ ভয়টাকে মার্‌, ভূত যাবে তোর চুটে-
তখন     ভূতে-পাওয়া এই দেশই ফের ভ'রবে দেব্‌তা দূতে॥

রচনাকাল: এই গানটি রচনাকাল সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ ১৩৩১) মাসে প্রকাশিত 'বিষের বাঁশী' কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই বিচারে ধারণা করা যায়, গানটি ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসের আগে রচিত।  'বিষের বাঁশী' গ্রন্থের প্রকাশকালের বিচারে গানটিকে নজরুলের বয়স ছিল ২৫ বৎসর বয়সের গান হিসেবে ধরা হলো।