বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম
যুগান্তরের গান
[গান]
১
বল ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ,
নব যুগ ঐ এলো ঐ
এলো ঐ রক্ত যুগান্তর রে।
বল জয় সত্যের জয়
আসে ভৈরব বরাভয়,
শোন অভয় ঐ রথ-ঘর্ঘর রে॥
রে বধির! শোন পেতে কান
ওঠে ঐ কোন মহাগান,
হাঁকছে বিষাণ ডাকছে ভগবান রে।
জগতে পাগল সাড়া
জেগে ওঠ উঠে দাঁড়া,
ভাঙ্ পাহারা মায়ার কারা-ঘর রে।
যা আছে যাক্ না চুলায়
নেমে পড় পথের ধূলায়,
নিশান দুলায় ঐ প্রলয়ের ঝড় রে।
সে ঝড়ের ঝাপটা লেগে
ভীম আবেগে উঠনু জেগে
পাষাণ ভেঙে প্রাণ-ঝরা নির্ঝর রে।
ভুলেছি পর ও আপন
ছিঁড়েছি ঘরের বাঁধন,
স্বদেশ স্বজন মোদের ঘর রে।
যারা ভাই বদ্ধ কুঁয়ায়
খেয়ে মা'র জীবন গোঁয়ায়
তাদের শোনাই প্রাণ-জাগা মন্তর রে॥
২
ঝড়ের ঝাঁটার ঝাণ্ডা নেড়ে
মাভৈঃ বাণীর ডঙ্কা মেরে
শঙ্কা ছেড়ে হাঁক্ প্রলয়ঙ্কর রে।
তোদের ঐ চরণ-চাপে
যেন ভাই মম রণ কাঁপে
মিথ্যা পাপের কণ্ঠ চেপে ধর্ রে।
শোনা তোর বুক ভরা গান
জাগা ফের দেশ-জোড়া প্রাণ,
দে বলিদান প্রাণ ও আত্মপর রে॥
৩
মোরা ভাই বাউল চারণ
মানি না শাসন বারণ,
জীবন মরণ মোদের অনুচর রে।
দেখে ঐ ভয়ের ফাঁসি হাসি
জোর জয়ের হাসি,
অ-বিনাশী নাইকো মোদের ডর রে,
গেয়ে যাই গান যেয়ে যাই
মরা প্রাণ উট্কে দেখাই,
ছাই-চাপা ভাই অগ্নি ভয়ঙ্কর রে॥
৪
খুঁড়ব কবর তুড়্ব শ্মশান
মড়ার হাড়ে নাচাব প্রাণ,
আনব বিধান নিদান কালের বর রে
শুধু এই ভরসা রাখিস
মরিস্নি ভির্মি গেছিস
ঐ শুনেছিস ভারত বিধির স্বর রে।
ধর্ হাত ওঠ্ রে আবার
দুর্যোগের রাত্রি কাবার,
ঐ হাসে মা'র মূর্তি মনোহর রে॥
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (শ্রাবণ ১৩৩১) মাসে প্রকাশিত 'বিষের বাঁশী' কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই বিচারে ধারণা করা যায়, গানটি ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসের আগে রচিত। 'বিষের বাঁশী' গ্রন্থের প্রকাশকালের বিচারে গানটিকে নজরুলের বয়স ছিল ২৫ বৎসর বয়সের গান হিসেবে ধরা হলো।