ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
[১০১] দাদরা
আজ শ্রাবণের লঘু মেঘের সাথে
মন চলে মোর ভেসে’,
রেবা নদীর বিজন তীরে
মালবিকার দেশে
মন চলে মোর ভেসে॥
মন ভেসে যায় অলস হাওয়ায়
হালকা-পাখা মরালী-প্রায়
বিরহিণী কাঁদে যথা
একলা এলোকেশে।
মন চলে মোর ভেসে॥
কভু মেঘের পানে কভু নদীর পানে চেয়ে’,
লুকিয়ে যথা নয়ন মোছে গাঁয়ের কালো মেয়ে,
একলা বঁধু বসে থাকে যথায় বাতায়নে।
বাদল দিনের শেষে॥
আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম
ঘরে এলে ফিরে পরবাসী প্রিয়তম॥
আজ প্রভাতের কুসুমগুলি
সফল হল ডালায় তুলি’
সাজি ফুলের আজের মালা হবে অনুপম॥
এতদিনে সুখের হলো
প্রভাতী শুকতারা
ললাটে মোর সিঁদুর দিলো
ঊষার রঙের ধারা।
আজকে সকল কাজের মাঝে
আনন্দেরই বীণা বাজে
দেবতার বর পেয়েছিআজ তপস্বিনী-সম॥
H.M.V. N 17166
শিল্পী: শ্রিমতী শীলা সরকার
[১০৩] দাদরা
আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে
আধখানা চাঁদ নীচে
প্রিয়া তব মিখে ঝলকিছে
গগনে জ্বলিছে অগনন তারা
দু’টি
তারা ধরণীতে
প্রিয়া তব চোখে চমকিছে॥
তড়িৎ-লতার ছিড়িয়া আধেকখানি
জড়িত তোমার জরীণ ফিতায় রাণী !
অঝোরে ঝরিছে নীল নভে বারি
দুইটি বিন্দু তারি
প্রিয়া তব আঁখি বরষিছে॥
মধুর কণ্ঠে বিহগ বিলাপ গাহে,
গান ভুলি’
তা’রা
তব অঙ্গনে চাহে,
তাহারও অধিক সুমধুর সুর তব
চুড়ি কঙ্কণে ঝনকিছে॥
H.M.V N. 31312
সুর: কমল দাশগুপ্ত শিল্পী: জগন্ময় মিত্র
[১০৪] দাদরা
আমার কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায়
কে দেবে তায় ধ’রে
তারে যেই ধরেছি মনে করি
অমনি সে যায় স’রে॥
বনের ফাঁকে দেখা দিয়ে
চঞ্চলা মোর যায় পালিয়ে,
দেখি ফুল হয়ে মা’র
নূপুরগুলি
পথে আছে ঝরে॥
তার কণ্ঠহারের মুক্তাগুলি
আকাশ-আঙিনাতে
তারা হয়ে ছড়িয়ে আছে
দেখি আধেক রাতে।
কোন মায়াতে মহামায়ায়
রাখবো বেঁধে আমার হিয়ায়
কাঁদলে যদি হয় দয়া তার
তাই কাঁদি প্রাণ ভরে॥
H.M.V N.
9877
শিল্পী: কুমারী বিজন ঘোষ (কালী)
[১০৫] দাদরা
আমার কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী
এ কোন সোনার গাঁয়
আমার ভাটির তরী আবার কেন
উজান যেতে চায়
তরী উজান যেতে চায়
কোন কূলে মোর ভিড়লো তরী
এ কোন সোনার গাঁয়॥
নিভিয়ে দিয়ে ঘরের বাতি
ডেকেছিল ঝড়ের রাতি
তুমি কে এলে মোর সুরের সাথী
গানের কিনারায়।
তুমি কে এলে ?
ওগো কে এলে মোর সুরের সাথী
গানের কিনারায় ?
সোনার দেশের সোনার মেয়ে,
ওগো তুমি হবে কি মোর তরীর নেয়ে,
ভাঙা তরী চলো বেয়ে
রাঙা অলকায়॥
H.M.V. N. 4187
শিল্পী: ধীরেন্দ্রনাথ দাশ
[১০৬] দ্রুত-দাদরা
ওরে আমার চটি
আমার ঠনঠনিয়ার চটি
যাত্রা শুনতে কাহার সাথে গেলি তুই পালটি॥
মোর শ্রীচরন ভরসা গেলি কাহার পায়ে গ’লে
তুই দু’বছর
পায়ে ছিলি তোরে জানতাম সতী ব’লে
তুই কাহার গোদা চরণ দেখে গেলি শেষে পটি’।
তোরে নিয়ে গেছেন যিনি তার চটিখানি ফেলে
এ চটিতো নয় যেন রামচটিতং আছেন বদন মেলে’
সদা আছেন বদন মেলে’,
যেন অষ্টাবক্র বেঁকে হয়ে গিয়েছেন ঠিক আঁশবঁটি
বেঁকে হয়েছেন আঁশবঁটি॥
চটি কেন তোরে রাখিনিকো বগল-দাবা ক’রে
বুঝি এতক্ষণ সে ফাটিয়ে তোরে ফেলেছে পা’ভরে
শেষে আস্তাকুঁড়ে দেছে ফেলে
সে যে হয়তো চটিমটি’॥
আমি ভাবি, এ তার পায়ের জুতো না গায়ের নিমা
আমার চটির পাশে ইনি ঠিক যেন দিদি মা
ওরে চটি রে তোর দিদি হলেও চলতো মোটামুটি
তুই চটপটিয়ে আয় চ’লে
নয় সত্যি যা’ব
চ’টি॥
H.M.V. N. 7208
শিল্পী: হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
[১০৭] দাদরা
আমার ভুবন কান পেতে রয়
প্রিয়তম তব লাগিয়া
দীপ নিভে যায়, সকলে ঘুমায়
মোর আঁখি রহে জাগিয়া
প্রিয়তম তব লাগিয়া॥
তারারে শুধাই,
‘কত
দেরী আর
কখন আসিবে বিরহী আমার ?’
ওরা বলে’
‘হের
পথ চেয়ে তার
নয়ন উঠেছে রাঙিয়া’
প্রিয়তম তব লাগিয়া॥
আসিতেছে সে কি মোর অভিসারে
কাঁদিয়া শুধাই চাঁদে
মোর মুখ পানে চেয়ে চেয়ে চাঁদ
নীরবে শুধু কাঁদে।
ফাগুন বাতাস করে হায় হায়
বলে, বিরহিনী তোর নিশি যে পোহায়
ফুল বলে আর জাগিতে নারি গো
ঘুমে আঁখি আসে ভাঙিয়া
প্রিয়তম তব লাগিয়া॥
H.M.V. N. 27523
সুর: কমল দাশগুপ্ত শিল্পী: যূথিকা রায়
[১০৮] কাহারবা
আমার মালায় লাগুক তোমার
মধুর হাতের ছোঁওয়া
ঘিরুক তোমায় মোর আরতি
পূজা-ধূপের ধোঁওয়া॥
পূজায় ব’সে
দেব-দেউলে
তোমায় দেখি মনের ভুলে
প্রিয় তুমি নিলে আমার পূজা
হবে তাঁরই লওয়া
হবে দেবতারই লওয়া॥
তুমি যেদিন প্রসন্ন হও
ঠাকুর চাহেন হেসে
কাঁদলে তুমি, বুকে আমার
দেবতা কাঁদেন এসে।
আমি অন্ধকারে ঠাকুর পুজে
ঘরের মাঝে পেলাম খুঁজে
সে যে তুমি, আমার চির
অবহেলা-সওয়া॥
H.M.V. N. 17398
শিপ্লী: শ্রীমতী বীণা চৌধুরী
[১০৯] যৎ
আমার শ্যামা মায়ের কোলে চ’ড়ে
জপি আমি শ্যামের নাম
মা হলেন মোর মন্ত্র-গুরু
ঠাকুর হলেন রাধা-শ্যাম॥
ডুবে শ্যামা, যমুনাতে
মা খেলবো খেলা শ্যামের সাথে
শ্যাম যবে মোরে হানবে হেলা
মা পুরাবেন মনস্কাম॥
আমার মনের দোতারাতে
শ্যাম শ্যামা দু’টি
তার,
সেই দোতারায় ঝঙ্কার দেয়
ওঙ্কার রব অনিবার।
মহামায়া মায়ার ডোরে
আনবে বেঁধে শ্যাম-কিশোরে
আমি কৈলাসে তাই মাকে ডাকি
দেখবো সেথায় ব্রজধাম॥
H.M.V. N. 9974
শিপ্লী: প্রফেসর জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ গোস্বামী
[১১০]
আমার সকল আকাশ ভ’রলো
তোমার তনুর কমল-গন্ধে
আমার বন-ভবন ঘিরল
মধুর কৃষ্ণ-মকরন্দে॥
এলোমেলো মলয় বহে
বন্ধু এলো, এলো কহে
উজ্জল হ’ল
আমার ভুবন
তোমার মুখ-চন্দে॥
আমার দেহ-বীণায় বাজে তোমার
চরণ-নূপুর-ছন্দ
সকল কাজে শুধু
অধীর আনন্দ।
আমার বুকের সুখের মাঝে
তোমার উদাস বেণু বাজে
তোমার ছোঁওয়ার আবেশ জাগে
ব্যাকুল বেণীর বন্ধে॥
H.M.V. N. 9723
সুর: কমল দাশগুপ্ত শিপ্লী: শ্রীমতী আভা সরকার
[১১১] কাহারবা
গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী
দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয়-ভীতা মেদিনী॥
দেখায় মেঘের ঝাপি তুলিয়া
ফণা তুলি বিদ্যুৎ-ফণী ওঠে দুলিয়া,
ঝড়ের তুবড়ীতে বাজে তার অশান্ত রাগিণী॥
মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল
দিগন্তে দুলে তার এলোকেশে পিঙ্গল
ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল তন্ত্র-মোহিণী॥
অশনি-ডমরু ওঠে দমকি’
পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি’
তার ডাক শুনে ছুটি আসে নদীজল যেন পাহাড়িয়া নাগিনী॥
H.M.V. N. 17178
শিল্পী: কুমারী রেবা সোম, কুমারী অনিমা মুখার্জী ও শ্রীমতী পদ্মরাণী গাঙ্গুলী
[১১২] দাদরা
আমি আছি ব’লে
দুখ পাও তুমি
তাই আমি যাবো চ’লে
এবার ঘুমাও প্রদীপের কাজ
শেষ হয়ে গেছে জ্ব’লে॥
আর আসিবে না কোন অশান্তি
আর আসিবে না ভয়ের ভ্রান্তি
আর ভাঙিব না ঘুম নিশীথে গো
‘জাগো
প্রিয়া জাগো’
ব’লে॥
হয়তো আবার সুদূর শূন্য
আকাশে বাজিবে বাজিবে বাঁশী,
গোপী-চন্দন গন্ধ আসিবে
বাতায়ন পথে ভাসি’।
চম্পার ডালে বিরহী পাপিয়া
‘পিয়া
পিয়া’
ব’লে
উঠিবে ডাকিয়া
বৃন্দাবন কি ভাসিবে আবার
সেদিন রোদন-যমুনা জলে।
বৃন্দাবন কি ভাসিবে সেদিন
রোদন-যমুনা জলে॥
COLUMBIA GE. 7824
সুর: দূর্গা সেন শিল্পী: ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
[১১৩] দাদরা
আমি চাঁদ নহি, চাঁদ নহি অভিশাপ
শূন্য হৃদয়ে আজো নিরাশায় আকাশে করি বিলাপ\
শত জনমের অপূর্ণ সাধ ল’য়ে
আমি গগনে কাঁদি গো ভুবনের চাঁদ হয়ে
জোছনা হইয়া ঝরে গো আমার অশ্রু বিরহ-তাপ\
কলঙ্ক হয়ে বুকে দোলে মোর তোমার স্মৃতির ছায়া
এত জোছনায় ঢাকিতে পারিনি তোমার মধুর মায়া।
কোন্ সে সাগর মন্থন শেষে মোরে
জড়াইয়া যেন উঠেছিলে প্রেমভোরে
হায় তুমি গেছ চ’লে
বুকে তবু দোলে তব অঙ্গের ছাপ\
১১৪. তাল: দাদ্রা
আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে
আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ বেণী যাবে যবে খুলিতে\
তোমার সুরের নেশায় যখন
ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবন
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে দুলিতে\
আসিবে তোমার পরমোৎসব-কত প্রিয়জন কে জানে,
মনে প’ড়ে
যাবে কোন্ সে ভিখারি পায়নি ভিক্ষা এখানে।
তোমার কুঞ্জ-পথে যেতে হায়
চমকি’
থামিয়া যাবে বেদনায়
দেখিবে কে যেন ম’রে
মিশে আছে তোমার পথের ধূলিতে\
১১৫. তাল:কাহার্বা
আমি জানি তব মন বুঝি তব ভাষা
তব কঠিন হিয়ার তলে জাগে কি গভীর ভালোবাসা\
ওগো উদাসীন! আমি জানি তব ব্যথা
আহত পাখির বুকে বাণ বিঁধে কোথা
কোন্ অভিমান ভুলিয়াছ তুমি ভালোবাসিবার আশা\
তুমি কেন হানো অবহেলা অকারণ আপনাকে,
প্রিয় যে হৃদয়ে বিষ থাকে সে হৃদয়ে অমৃত থাকে।
তব যে-বুকে জাগে প্রলয় ঝড়ের জ্বালা
আমি দেখেছি যে সেথা সজল মেঘের মালা
ওগো ক্ষুধাতুর আমারে আহুতি দিলে
মিটিবে কি তব পরানের পিপাসা\
১১৬. তাল: দাদ্রা
আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা ব’লে
নাই দিলি তুই সাড়া মা গো নাই নিলি তুই কোলে\
শুনলে
‘মা’
নাম জেগে উঠি
ব্যাকুল হয়ে বাইরে ছুটি
মাগো ঐ নামে মোর নয়ন দু’টি
ভ’রে
ওঠে জলে\
ও নাম আমার মুখের বুলি ও নাম খেলার সাথী
ও নাম বুকে জড়িয়ে ধ’রে
পোহাই দুখের রাতি।
মা-হারানো শিশুর মতো
যপি ও-নাম অবিরত
মা ঐ নামের-মন্ত্র আমার বুকে কবচ হয়ে দোলে\
১১৭. তাল: কাহার্বা
আমি মূলতানী গাই
শ্রোতারা বাছুর সম মুখপানে চেয়ে মম
ঘন ঘন তোলে হাই\
জাপটে সুরের দাড়ি
শ্বশুরের দাড়ি, ভাসুরের দাড়ি
সাপটে তান মারি-আ-আ-আ
জাপ্টে সুরের দাড়ি
সাপটে তান মারি
গমকে ধমক দেই, মীড়ের মাড় চটকাই\
হায় হায় রে হায়-
বোলতানে আবোল-তাবোল তানে খেলি হা-ডু-ডু
কিত্- কিত্-হা-ডু-ডু হা-ডু-ডু-কিত্- কিত্ কিত্-কিত্
মোড়-মোড়-মোড়-
আমি বাটের চাট মেরে সুরে করি চিত
আমি তালের সিঙ্ দিয়ে বেদম গুতাই\
মোর মুখের হা দেখে হিপোপটেমাস
আফ্রিকার জঙ্গলে ভয়ে করে বাস
আমি যত নাহি গাই তার অধিক রাগাই\
১১৮. তাল: কাহার্বা
আমি রচিয়াছি নব ব্রজধাম হে মুরারি
সেথা করিবে লীলা এসো গোলক-বিহারী\
মোর কামনার কালীদহ করি মন্থন
কালীয় নাগে হরি করিও দমন
আছে গিরি-গোবর্ধন মোর অপরাধ
যদি সাধ যায় সেই গিরি ধ’রো
গিরিধারী\
আছে ষড় রিপু কংসের অনুচর দল
আছে অবিদ্যা পুতনা শোক্ দাবানল
আছে শত জনমের সাধ আশা-ধেনুগণ
আছে অসহায় রোদনের যমুনা-বারি।
আছে জটিলতা কুটিলতা প্রেমের বাধা
হরি সব আছে, নাই শুধু আনন্দ-রাধা
তুমি আসিলে হরি ব্রজে রাসেশ্বরী
আসিবেন হ্লাদিনী রূপে রাধা প্যারী\
১১৯. তাল: দাদ্রা
আমি সুন্দর নহি জানি হে বন্ধু জানি
তুমি সুন্দর, তব গান গেয়ে নিজেরে ধন্য মানি\
আসিয়াছি সুন্দর ধরণীতে
সুন্দর যারা তাদেরে দেখিতে
রূপ-সুন্দর দেবতার পায় অঞ্জলি দেই বাণী\
রূপের তীর্থে তীর্থ-পথিক যুগে যুগে আমি আসি’
ওগো সুন্দর বাজাইয়া যাই তোমার নামের বাঁশি।
পরিয়া তোমার রূপ-অঞ্জন
ভুলেছে নয়ন রাঙিয়াছে মন
উছলি’
উঠুক মোর সঙ্গীতে সেই আনন্দখানি\
১২০. তাল: কাহার্বা
আয় বনফুল ডাকিছে মলয়
এলোমেলো হাওয়ায় নূপুর বাজায়, কচি কিশলয়\
তোমরা এলে না ব’লে-ভোমরা
কাঁদে
অভিমানে মেঘ ঢাকিল চাঁদে
‘ভুল
বঁধু ভুল’
টুলটুলে মৌটুসী বুলবুলে কয়\
কুহু যামিনীর তিমির টুটে
মুহু মুহু কুহু কুহরি’
ওঠে।
হে বন-কলি, গুণ্ঠন খোলো
হে মৃদু-লজ্জিতা, লজ্জা ভোলো,
কোথা তার দুল্ দোলে নটিনী তটিনী খুঁজে বনময়\
১২১.
আর অনুনয় করিবে না কেউ কথা কহিবার তরে
আর দেখিবে না স্বপন রাতে গো কেহ কাঁদে হাত ধ’রে।
তব মুখ ঘিরে আর মোর দু’নয়ন
ভ্রমরের মত করিবে না জ্বালাতন
তব পথ আর পিছল হবে না আমার অশ্রু ঝরে’।
তোমার ভুবনে পড়িবে না আর কোনদিন ছায়া মম
তোমার পূর্ণ-চাঁদের তিথিতে আসিব না রাহু-সম।
আর শুনিবে না করুণ কাতর
এই ক্ষুধাতুর ভিখারির স্বর
শুনিবে না আর কাহারও রোদন রাতের আকাশ ভ’রে\
১২২.
আর্শিতে তোর নিজের রূপই দেখিস চেয়ে’
চেয়ে’
আমায় চেয়ে দেখিস না তাই রূপ-গরবী মেয়ে।
ওলো রূপ-গরবী মেয়ে\
নাইতে গিয়ে নদীর জলে
দেরি করিস নানান্ ছলে
ওরে ভাবিস তোরে দেখতে কখন আস্বে জোয়ার ধেয়ে\
চাঁদের সাথে মিলিয়ে দেখিস্ চাঁদপানা মুখ তোর
ভাবিস্ তুই-ই আসল শশী চাঁদ যেন চকোর
ওলো চাঁদ যেন চকোর।
বনের পথে আনমনে
দাঁড়িয়ে থাকিস্ অকারণে
ওরে ভাবিস্ তোরে দেখেই বুঝি বিহগওঠে গেয়ে’।
১২৩. তাল: কাহার্বা
আসে রজনী, সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে
তিমির দু’কূলে
গগনে, গোধূলি-ধূসর সাঁঝ-পবনে
তারার মানিক অলকে ঝলে\
পূজা আরতি লয়ে চাঁদের থালায়
আসিল সে অস্ত-তোরণ নিরালায়।
ললাটের টিপ জ্বলে সন্ধ্যা-তারা
গিরি-দরি বনে ফেরে আপন-হারা
থামে ধীরে ধীরে বিরহীর নয়ন-জলে\
১২৪. তাল: কাহার্বা
উচ্ছে নহে, ঝিঙে নহে, নহে সে পটল ব্রজের আলু\
রসঘন রসুনের সে গন্ধতুত দাদা, ও দাদা
রস কিছু কম হলে হতো আম দাদা, ও দাদা
সে আরো খানিক ডাগর হলে ঐ হতো ওল, ব্রজের আলু\
পরম বৈষ্ণব সে যে ফল-দল মাঝে-ও দাদা
হের তার শিরে চৈতন-চুট্কী বিরাজে-ও দাদা
আবার মাথাটি বাবাজীর মতো চাঁচাছোলা গোল
তার মাথাটি বাবাজীর মতো চাঁচা ছোলা গোল, ব্রজের আলু\
১২৫. তাল: কাহার্বা
উতল হ’ল
শান্ত আকাশ তোমার কলগীতে
বাদল ধারা ঝরে বুঝি তাই আজ নিশীথে\
সুর যে তোমার নেশার মত, মন্কে দোলায় অবিরত,
ফুল্কে শেখায় ফুটিতে গো, পাখিকে শিস্ দিতে\
কেন তুমি গানের ছলে বঁধু, বেড়াও কেঁদে?
তীরের চেয়েও সুর যে তোমার প্রাণে অধিক বেঁধে।
তোমার সুরে কোন্ সে ব্যথা, দিলো এতো বিহ্বলতা
আমি জানি(ওগো) সেই বারতা তাই কাঁদি নিভৃতে\
১২৬. রাগ: সারঙ্গ, তাল: ত্রিতাল
এ কি এ মধু শ্যাম-বিরহে।
হৃদি-বৃন্দাবনে নিতি রসধারা বহে\
গভীর বেদনা মাঝে
শ্যাম-নাম-বীণা বাজে
প্রেমে মন মোহে যত ব্যথায় প্রাণ দহে\
১২৭. তাল: দাদ্রা
এ কোন্ মায়ায় ফেলিলে আমায়
চির জনমের স্বামী-
তোমার কারণে এ তিন ভুবনে
শান্তি না পাই আমি\
অন্তরে যদি লুকাইতে চাই
অন্তর জ্ব’লে
পুড়ে হয় ছাই;
এ আগুন আমি কেমনে লুকাই, ওগো অন্তর্যামী\
মুখ থাকিতেও বলিতে পারে না বোবা স্বপনের কথা;
বলিতেও নারি লুকাতেও নারি; তেমনি আমার ব্যথা।
যে দেখেছে প্রিয় বারেক তোমায়
বর্ণিতে রূপ-ভাষা নাহি পায়
পাগলিনী-প্রায় কাঁদিয়া বেড়ায় অসহায়, দিবাযামী\
১২৮. তাল: দাদ্রা
একাদশীর চাঁদ রে ওই রাঙা মেঘের পাশে
যেন কাহার ভাঙা কলস আকাশ-গাঙে ভাসে\
সেই কল্সি হতে ধরার
‘পরে
অঝোর ধারায় মধু ঝরে রে
দলে দলে তাই কি তারার মৌমাছিরা আসে\
সেই মধু পিয়ে ঘুমের নেশায় ঝিমায় নিশীথ রাতি
বন-বধূ সেই মধু ধরে ফুলের পাত্র পাতি’।
সেই মধু এক বিন্দু পিয়ে
সিন্ধু ওঠে ঝিল্মিলিয়ে রে
সেই চাঁদেরই আধখানা কি তোমার মুখে হাসে\
১২৯
এবার নবীন-মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন।
নিত্যা হয়ে রইবি ঘরে, হবে না তোর বিসর্জন\
সকল জাতির পুরুষ-নারীর প্রাণ
সেই হবে তোর পূজা-বেদী মা তোর পীঠস্থান;
সেথা শক্তি দিয়ে ভক্তি দিয়ে পাতবো মা তোর সিংহাসন\
সেথা রইবে নাকো ছোঁয়াছুঁয়ি উচ্চ-নীচের ভেদ,
সবাই মিলে উচ্চারিব মাতৃ-নামের বেদ।
মোরা এক জননীর সন্তান সব জানি,
ভাঙব দেয়াল, ভুল্ব হানাহানি
দীন-দরিদ্র রইবে না কেউ সমান হবে সর্বজন,
বিশ্ব হবে মহাভারত, নিত্য-প্রেমের বৃন্দাবন\
১৩০. তাল: কাহার্বা
ও তুই উল্টা বুঝ্লি রাম
আমি আম চাহিতে জাম দিলে, আর জাম চাহিতে কি-না আম\
আমি চড়্বার ঘোড়া চাইতে শেষে, ওগো ঘোড়াই ঘাড়ে
চড়লো এসে, ও বাব্বা-
আমি প্রিয়ার চিঠি চাইতে এলো কিনা ইনকামট্যাক্স-এর খাম\
আমি চেয়েছিলাম কোঠা বাড়ি, তাই পড়লো পিঠে লাঠির বাড়ি
ভুলে আমি বলেছিলাম তোমার পায়ে শরণ নিলাম।
তুমি ভুল বুঝিলে, ভিটেবাড়ি সব হ’লো
নিলাম\
১৩১. তাল: কাহার্বা
বন্ধু, বন্ধু রে-পরান বন্ধু
(আমার) দূরের বন্ধু আছে আমার ঐ গাঙের পারের গাঁয়ে।
ঝরা-পাতার পত্র আমার যায় ভেসে’
তার পায়ে\
জানি জানি আমার দেশে
আমার নেয়ে আসবে ভেসে’,
ওরে চির ঋনী আছে সে যে আমার প্রেমের দায়ে\
নতুন আশার পাল তুলে’
সে আসবে ফিরে’
ঘরে
ফুটেছে তাই কাশ-কুসুমের হাসি শুক্নো চরে।
পিদিম জ্বেলে’
তারি আশায়
গহীন গাঙের স্রোতে ভাসায়
ওরে ঐ পিদিমের পথ ধ’রে
সে আস্বে সোনার নায়ে\
১৩২. তাল: কাহার্বা
ঐ জলকে চলে লো কার ঝিয়ারি।
রূপ চাপে না তার নীল শাড়ি\
এমন মিঠি বিজলি দিঠি শেখালে তায় কে গো?
রূপে ডুবু ডুবু রবির রঙ-ভরা ছবির, ছোঁয়াচ লেগেছে গো।
মন মানে না, আর কি করি!
চলে পিছনে ছুটে’
তারি\
নাচে বুলবুলি ফিঙে ঢেউয়ে নাচে ডিঙে
মাঠে নাচে খঞ্জন;
তার দু’টি
আঁখি-তারা নেচে হতো সারা-
দেখেছে বলো কোন জন?
আঁখি নিল যে মোর মন কাড়ি’-
ঘরে থাকিতে আর নারি লো\
গোলাপ বেলী যুঁই-চামেলী-কোন্ ফুল তারি তুল্ গো
তার যৌবন-নদী বহে নিরবধি ভাসায়ে দু’কূল
গো
নিল ভাসায়ে প্রাণ আমারি
রূপে দু’কুল-ছাপা
গাঙ্ তারি\
১৩৩. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
কন্যার পায়ের নূপুর বাজে রে বাজে রে।
রুমুঝুমু রুমুঝুমু বাজে রে বাজে রে।
যেন ভোমরারি ঝাঁক উড়ে গেল ফুল-বনের মাঝে রে\
কালো জলে নামলো যেন বুনো হাঁসের দল,
যেন পাহাড় বেয়ে’
ছুটে এলো ঝর্না ছলছল
থির সায়রে টাপুর-টুপুর ঝরে মেঘের জল
যেন বাদল সাঁঝে রে\
যেন আচম্কা নিঝুম রাতে গাঙে জোয়ার এলো
ঝরা পাতায় চৈতী বাতাস বইলো এলোমেলো
সে সুর ওঠে রিমঝিমিয়ে
আমার বুকে চমক্ দিয়ে
মহুয়া-ডালে গানের পাখি নীরব হলো লাজে রে\
১৩৪. তাল:কাহার্বা
করুণ কেন অরুণ আঁখি দাও গো সাকি দাও শারাব
হায় সাকি এ আঙ্গুরী খুন নয় ও হিয়ার খুন-খারাব\
আর সহে না দিল্ নিয়ে এই দিল্-দরদীর দিল্লাগী,
তাইতে চালাই নীল পিয়ালায় লাল শিরাজি বে-হিসাব\
হারাম কি এই রঙীন পানি আর হালাল এই জল চোখের?
নরক আমার হউক মঞ্জুর বিদায় বন্ধু! লও আদাব\
দেখ্ রে কবি, প্রিয়ার ছবি এই শারাবের আর্শিতে,
লাল গেলাসের কাঁচ্-মহলার পার হ’তে
তার শোন্ জবাব্\
১৩৫. তাল: দাদ্রা
কোথায় গেলি মাগো আমার খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে
ক্লান্ত আমি খেলে এ সংসারে ও-মা ধুলা মেখে\
বলেছিলি সন্ধ্যা হ’লে
ধুলা মুছে নিবি কোলে
ও-মা ছেলেরে তুই গেলি ছ’লে
পাইনে সাড়া ডেকে’
ডেকে’\
এ কী খেলার পুতুল মা গো দিয়েছিলি মন ভুলাতে
আধেক তাহার হারিয়ে গেছে আধেক ভেঙে আছে হাতে।
এ পুতুলও লাগছে মা ভার
তোর পুতুল তুই নে গো এবার
এখন সন্ধ্যা হলো ও-মা সন্ধ্যা হলো নাম্লো আঁধার
ঘুম পাড়া মা আঁচল ঢেকে\
১৩৬. তাল: কাহার্বা
খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশ ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা\
চপল বিদ্যুতে হেরি’
সে চপলার
ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার,
নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে
ছুঁড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা\
কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল-ঝিলে
তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।
ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল
কাজ্লা দীঘির জলে ঢেউ তোলে
আন্মনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা\
১৩৭. তাল: কাহার্বা
ব্যথিত প্রাণে দানো শান্তি, চিরন্তন, ধ্রুব-জ্যোতি।
দুখ-তাপ-পীড়িত-শোকার্ত এই চিত যাচে তব সান্ত্বনা ত্রিভুবন-পতি\
বেদনা যাতনা ক্লেশ মুক্ত কর, বিপদ নিবার, সব বিঘ্ন হর,
আঁধার পথে তুমি হাত ধরো, প্রভু অগতির গতি\
সকল গ্লানি হতে হে নাথ বাঁচাও, চিত্ত অটল প্রসন্নতা দাও
যেন সুখে ও দুখে সদানন্দে থাকি, অবিচল থাকে যেন তব পদে মতি\
১৩৮. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
গেরুয়া-রঙ মেঠো পথে বাঁশরি বাজিয়ে কে যায়
সুরের নেশায় নুয়ে প’ড়ে
ভুঁই-কদম তার পায়ে জড়ায়।
আহা ভূই-কদম তার পায়ে জড়ায়\
সুর শুনে তার সাঁঝের ঠোঁটে,
বাঁকা শশীর হাসি ফোটে,
গো-পথ বেয়ে ধেনু ছোটে রাঙা-মাটির আবির ছড়ায়।
তারা রাঙা-মাটির আবির ছড়ায়\
গগন-গোঠে গ্রহ-তারা
সে সুর শুনে দিশেহারা
হাটের পথিক ভেবে সারা ঘরে ফেরার পথ ভুলে যায়\
জল নিতে নদী কূলে
কুলবালা কূল ভূলে
সন্ধ্যা-তারা প্রদীপ তুলে’
বাঁশুরিয়ার নয়নে চায়।
তারা বাঁশুরিয়ার নয়নে চায়\
১৩৯. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা।
আর সই, সইতে নারি ফুল-ঝামেলা\
সাজায়ে বন-ডালি,
বসে রই বন-মালি
যা’রে
দিই এই ফুল সেই হানে হেলাফেলা\
কে তুমি মায়া-মৃগ
রতির সতিনী গো
ফুল নিতে আসিলে এ বনে অবেলা\
ফুলের সাথে প্রিয়
ফুল-মালীরে নিও
তুমিও এক সই, আমিও একেলা\
১৪০. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
চিকন কালো বেদের কুমার কোন্ পাহাড়ে যাও?
কোন্ বন-হরিণীর পরান নিতে বাঁশরি বাজাও?
তুমি শিস্ দিয়ে গান গাও
তুমি কুটিল চোখে চাও\
তীর-ধনুক নিয়ে সারাবেলা
ও শিকারি, এ কি খেলা?
শাল গাছেরই ডাল ভাঙিয়া একটু বাতাস খাও\
কাঁকর-ভরা কাঁটার পথে(আজ) নাই শিকারে গেলে,
অশথ্-তলে বাজাও বাঁশি (তোমার) হাতের ধনুক ফেলে’।
তোমার কালো চোখের কাজল নিয়ে
ঝিল উঠেছে ঝিল্মিলিয়ে, ঝিল্মিলিয়ে।
ঐ কমল ঝিলের শাপলা নিয়ে বাঁশিখানি দাও\
১৪১. তাল: কাহার্বা
চিকন কালো ভুরুর তলে কাজল-আঁখি দোলে রে
যেন বন-লতার কোলে কোয়েল পাখি দোলে রে\
যেন ফুল-ধনুর উজল তীর গো হায়
বাদশাজাদীর রঙ-মহলে
যেন নীলার প্রদীপ জ্বলে দোলে রে দোলে রে দোলে রে\
সজল শিশির-মাখা দু’টি
কুসুম গো
সুনীল দু’টি
কমল-কুঁড়ি
যেন রূপের সাঁতার-জলে দোলে রে দোলে রে দোলে রে\
১৪২. তাল: কাহার্বা
নন্দন-বন হতে কি গো ডাকো মোরে আজো নিশীথে
ক্ষণে ক্ষণে ঘুম-হারা পাখি কেঁদে ওঠে করুণ-গীতে\
ভেঙে যায় ঘুম চেয়ে থাকি
চাহে চাঁদ ছলছল আঁখি
ঝরা-চম্পার ফুল যেন কে ফেলে’
চলে যায় চকিতে\
সহিতে না তিলেক বিরহ ছিলে যবে জীবনের সাথী,
ব’লে
যাও আজ কোন্ অমরায় কেমনে কাটাও দিবারাতি।
জীবনে ভুলিলে তুমি যারে
তারে ভুলে যাও মরণের ওপারে
আঁধার ভুবনে মোরে একাকী দাও মোরে দাও ঝুরিতে\
১৪৩. তাল: দাদ্রা
দোপাটি লো, লো করবী, সেই সুরভি রূপ আছে
রঙের পাগল রূপ-পিয়াসী সেই ভালো
আমার কাছে\
গন্ধ ফুলের জল্সাতে তোর
গুণীর সভায় নেইকো আদর
গুল্ম-বনে দুল্ হয়ে তুই, দুলিস্ একা ফুল গাছে\
লাজুক মেয়ে পল্লী-বধূ জল নিতে যায় এক্লাটি
করবী নেয় কবরীতে বেণীর শেষে দোপাটি
গন্ধ ল’য়ে
স্নিগ্ধ মিঠে
আলো ক’রে
থাকিস্ ভিটে,
নেই সুবাস সাথে, গায়ে কাঁটা, সেই গরবে মন নাচে\
১৪৪. তাল: কাহার্বা
তুমি হাতখানি যবে রাখ মোর হাতের পরে
মোর কণ্ঠ হ’তে
সুরের গঙ্গা ঝরে\
তব কাজল-আঁখির ঘন পল্লব তলে
বিরহ মলিন ছায়া মোর যবে দোলে
তব নীলাম্বরীর ছোঁয়া লাগে যেন সেদিন নীলাম্বরে\
যেদিন তোমারে পাই না কাছে গো পরশন নাহি পাই,
মনে হয় যেন বিশ্ব ভুবনে কেহ নাই, কিছু নাই।
অভিমানে কাঁদে বক্ষে সেদিন বীণ
আকাশ সেদিন হয়ে যায় বাণী হীন
যেন রাধা নাই, আর বৃন্দাবনে গো সব সাধ গেছে ম’রে\
১৪৫. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
দিনগুলি মোর পদ্মেরই দল যায় ভেসে’
যায় কালের স্রোতে
ওগো সুদূর ওগো বিধূর তোমার সাগর-তীর্থ-পথে\
বিফল দিনের কমলগুলি
পড়লো ঝ’রে
পাপড়ি খুলি’
নিও প্রিয় তাদের তুলি’
দিন শেষের ম্লান আলোতে\
সঞ্চিত মোর দিনগুলি হায় ছড়িয়ে গেল অযতনে;
তোমার বরণ-মালা গাঁথা হলো না আর এ জীবনে।
অন্য মনে কখন বেভুল
ভাসিয়ে দিলাম দলি’
সে ফুল
বঞ্চিত তাই হবে কি হায় তোমার চরণ-ছোঁওয়া হ’তে\
১৪৬. তাল:কাহার্বা
নিশি-ভোরে অশান্ত ধারায় ঝরঝর বারি ঝরে।
আকাশ-পারের বিরহীর বীণায় যেন সুর ঝুরে আকুল স্বরে\
কাহার মদির নিঃশ্বাস আসে
বকুলের বনে ঝরা ফুল বাসে
কর হানি’
দ্বারে যেন বারে বারে
‘খোল
দুয়ার’
বলি’
ডাকে ঘুমঘোরে\
ডাকে কেয়া বনে ডাহুক কেকা
বিরহের ভার বহি কত আর একা
ম্লান হয়ে এলো চোখে কাজলের লেখা অশ্রু-লোরে\
১৪৭. তাল: দাদ্রা
ঝিলের জলে কে ভাসালো নীল শালুকের ভেলা
মেঘ্লা সকাল বেলা।
বেণু-বনে কে খেলে রে পাতা-ঝরার খেলা।
মেঘ্লা সকাল বেলা\
কাজল-বরণ পল্লী মেয়ে
বৃষ্টি ধারায় বেড়ায় নেয়ে,’
ব’সে
দীঘির ধারে মেঘের পানে রয় চেয়ে একেলা\
দুলিয়ে কেয়া ফুলের বেণী শাপলা মালা প’রে
খেল্তে এলো মেঘ পরীরা ঘুম্তী নদীর চরে।
বিজলিতে কে দূর বিমানে, সোনার চুড়ির ঝিলিক হানে,
বনে বনে কে বসালো যুঁই-চামেলির মেলা\
১৪৮. তাল: দাদ্রা
ছেড়ে দাও মোরে আর হাত ধরিও না
প্রেম যারে দিতে পারিলে না, তারে আর কৃপা করিও না\
আমি করুণা চাহিনি কভু কারো কাছে
বহু লোক পাবে, তব কৃপা যারা যাচে
যারে হৃদয়ে দিলে না ঠাঁই তার তরে কাঁদিও না\
ভুল করেছিনু যেথা শুধু অসুন্দরের ভিড়,
সেই পৃথিবীতে কেঁদেছি খুঁজিয়া প্রেম-যমুনার তীর।
তরণী ভাসিল বিরহের পারাবারে
পিছু ডেকে আর ফিরায়ো না তুমি তারে
আমারে পাষাণ-বিগ্রহ ক’রে
আর মালা পরিও না\
১৪৯. তাল: কাহর্বা
টলমল্ টলমল্ টলে সরসী
জল নিতে এলে কি গো ষোড়শী\
হেরিয়া তোমার রাঙা পদতল
ফুটিল প্রেমের কুমুদ কমল
খেলিছে চঞ্চল তরঙ্গ-দল ল’য়ে
তব কলসি\
হেরি’
তোমার নীলাম্বরী কাজল-আঁখি
হলো কাজ্লা দীঘির জল সুনীল না-কি!
হাতে শাপলা মৃণাল দিয়ে বাঁধে রাখী
নাচে লীলায়িত ঢেউ তব তনু পরশি’\
১৫০. তাল: কাহার্বা
টারালা টারালা টারালা টা টারালা টারালোল্লা
নাচে শুট্কী শুক্নো সাহেবকে ধ’রে
মুট্কী মিস্ আরসোল্লা।
হা-হা-হা-হা-হা\
খুরওয়ালা জুতা পরে খটখট ঠেংরী নাড়ে
চাবুক খেয়ে জোড়া ঘোড়ায় যেন পেছ্লি ঝাড়ে!
দেখে পাদ্রি, পুরুত, মোল্লা বাবাজী কাছা খোল্লা।
আর বাবাজী কাছা খোল্লা\
দেখে আণ্ডাওয়ালা ভাবে বুঝি খেল্ ডাণ্ডাগুলি
হা গণ্ডার মার্কা ষণ্ডা বিবি খেল্ ডাণ্ডাগুলি
হা ভাব-আবেশে নয়ন তাহার হলো নয়ান ঝুলি;
নেকু বাবুর ঢেকুর ওঠে পেটে মেকুর আচড়ায়!
কাল্লু ভাবে মেম পালোয়ান সাহেবকে বুঝি পাছড়ায়।
যতো কাব্লিওয়ালা মাউড়া সব হো গিয়া ভাই বাউড়া।
মোষের গাড়োয়ান প্রেম-রসে হলো রসগোল্লা\