ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
৩০২. তাল : কাহারবা নয়নে তোমার ভীরু মাধুরীর মায়া বন-মৃগী সম উঠিছ চমকি’ হেরিয়া আপন ছায়া॥ প্রাতে ঊষার প্রায় রেঙে ওঠো লজ্জায়, এলায়িত লতিকায় ভঙ্গুর তব কায়া॥ দৃষ্টিতে তব আরতি-দীপের দ্যুতি তুমি নিবেদিতা সন্ধ্যা-পূজা-আরতি। ভূমি অবলুণ্ঠিতা বনলতা কুণ্ঠিতা কোলাহল-শঙ্কিতা যেন গো তাপস-জায়া॥ *৩০৩. রাগ: মালবশ্রী মিশ্র, তাল: কাহার্বা আমার নয়নে নয়ন রাখি’ পান করিতে চাও কোন্ অমিয়। আছে এ আঁখিতে উষ্ণ আঁখি-জল মধুর সুধা নাই পরান-প্রিয়॥ ওগো ও শিল্পী, গলাইয়া মোরে গড়িতে চাহ কোন্ মানস-প্রতিমারে, ওগো ও পূজারি, কেন এ আরতি জাগাতে পাষাণ-প্রণয়-দেবতারে। এ দেহ-ভৃঙ্গারে থাকে যদি মদ ওগো প্রেমাষ্পদ, পিও গো পিও॥ আমারে কর গুণী, তোমার বীণা কাঁদিব সুরে সুরে, কণ্ঠ-লীনা আমার মুখের মুকুরে কবি হেরিতে চাহ মোরে কর গো চন্দন তপ্ত তনু তব শীতল করিও॥১ ১. এ অনুচ্ছেদটি গ্রামোফোন রেকর্ডে গাওয়া হয়নি।
*৩০৪. তাল: কাহার্বা আমি কূল ছেড়ে চলিলাম ভেসে বলিস্-ননদীরে সই, বলিস্ ননদীরে। শ্রীকৃষ্ণ নামের তরণীতে প্রেম-যমুনার তীরে বলিস্ ননদীরে সই, বলিস্ ননদীরে॥ সংসারে মোর মন ছিল না, তবু মনের দায়ে আমি ঘর করেছি সংসারেরি শিকল বেঁধে পায়ে শিক্লি-কাটা পাখি কি আর পিঞ্জরে সই ফিরে॥ বলিস্ গিয়ে কৃষ্ণ নামের কলসি বেঁধে গলে ডুবেছে রাই কলঙ্কিনী কালিদহের জলে। কলঙ্কেরই পাল তুলে সই, চল্লেম অকূল-পানে নদী কি সই, থাকতে পারে সাগর যখন টানে। রেখে গেলাম এই গোকুলে কুলের বৌ-ঝিরে॥ *৩০৫. রাগ; পিলু-ভৈরবী, তাল: কাহার্বা আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি। হরষে বরিষে বারি শাওন-গগন তিতি’॥ বকুল-বনের সাকি নটীন্ পুবালি হাওয়া বিলায় সুরভি-সুরা মাতায় কানন-বীথি॥ তিতির শিখীর সাথে নোটন-কপোতী নাচে; ঝিঁঝির ঝিয়ারি গাহে ঝুমুর কাজরি-গীতি। হিঙুল হিজল-তলে ডাহুক পিছল-আঁখি, বধূর তমাল-চোখে ঘনায় নিশীথ-ভীতি। তিমির-ময়ূর আজি তারার পেখম খোলে জড়ায় গগন-গলে চাঁদের ষোড়শী তিথি॥ *৩০৬. তাল: দাদ্রা এখনো মেটেনি আশা এখনো মেটেনি সাধ। এখনো নয়ন মানে নাই তার চাহনির অপরাধ॥ আজো ঢেউগুলি নীল সায়রের কোলে জল-তরঙ্গে ঝঙ্কার তোলে পিয়াসি চাতক আজো চেয়ে ফেরে বরষার পরসাদ॥ কবে ফুটছিল রূপের কুসুম বনানীর লতা-গাছে, আজো গৌরী-চাঁপার রঙটুকু তার মরমে লাগিয়া আছে। চ’লে গেছে চাঁদ আলো আবছায় দাগ ফেলে হিয়া-আয়নার গায় থেমেছে কানুর বাঁশরি থামেনি যমুনার কলনাদ॥ *৩০৭. ঢাল পিয়ালে লাল সিরাজী নিত্য দোদুল তালে তালে আঁকবো বুকে প্রীতির ব্যথা রঙিন নেশায় রঙিন জালে॥ মত্ত হবো চিত্ত হারা বেদনা ভরা বদমেজাজি করলে পাগল ব্যর্থ আশায় করলে প্রেমের দাগাবাজি॥ রঙিন বঁধু তুমি শুধু, তুমি শুধু সত্যি হবে রঙিন নেশায় রঙিন পথে তুমি শুধু সাথী হবে॥ শুষ্ক তালু কণ্ঠ আমার দে রে আমার রুগ্ন গালে দে রে সাকি দে রে ঢেলে নিত্য দোদুল তালে তালে॥
[
অগ্রন্থিত নজরুল, সংকলন ও সম্পাদনা: ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, ডি এম. লাইব্রেরী,
কলকাতা,২০০৩] কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে আস্লে প্রাতে পুষ্প-চোর ডাকছে পাখি, ‘বৌ গো জাগো’ আর ঘুমায়ো না, রাত্রি ভোর॥ যুঁই-কুঁড়িরা চোখ মেলে চায় চুম্কুড়ি দেয় মৌমাছি শাপলা-বনে চাঁদ ডুবে যায় ম্লান চোখে হায় চায় চকোর॥ ঘোম্টা ঠেলি’ কয় চামেলি গোল ক’রো না গুল্-ডাকাত, ঢুলছে নয়ন, দুলছে গলায় বেল-টগরের ছিন্ন ডোর॥ গুন্গুনিয়ে মোর আঙিনায় কোন্ সতীনের গাইছ গুন্ কার মালঞ্চে ফুল ফোটায়ে হুল ফোটালে বক্ষে মোর॥
*৩০৯. রাগ : ভূপালি, তাল: দাদ্রা কে পরালো মুণ্ডমালা আমার শ্যামা-মায়ের গলে। সহস্র-দল জীবন-কমল দোলে রে যার চরণ-তলে॥ কে বলে মোর মা-কে কালো, মায়ের হাসি দিনের আলো মায়ের আমার গায়ের জ্যোতি গগন-পবন-জলে-স্থলে॥ শিবের বুকে চরণ যাঁহার কেশব যাঁরে পায় না ধ্যানে, শব নিয়ে সে রয় শ্মশানে কে জানে কোন্ অভিমানে। সৃষ্টিরে মা রয় আবরি,’ সেই মা নাকি দিগম্বরী? তাঁরে অসুরে কয় ভয়ঙ্করী ভক্ত তাঁয় অভয়া বলে॥ *৩১০. রাগ; মান্দ, তাল: কাহার্বা কেউ ভোলে না কেউ ভোলে অতীত দিনের স্মৃতি কেউ দুঃখ ল’য়ে কাঁদে কেউ ভুলিতে গায় গীতি॥ কেউ শীতল জলদে হেরে অশনির জ্বালা কেউ মুঞ্জরিয়া তোলে তার শুষ্ক কুঞ্জ-বীথি॥ হেরে কমল-মৃণালে কেউ কাঁটা কেহ কমল। কেউ ফুল দলি’ চলে কেউ মালা গাঁথে নিতি॥ কেউ জ্বালে না আর আলো তার চির-দুখের রাতে, কেউ দ্বার খুলি’ জাগে চায় নব চাঁদের তিথি॥ *৩১১. রাগ: ভীমপলশ্রী, তাল: কাহার্বা গগনে প্রলয় মেঘের মেলা জীবন-ভেলা দোলে টলমল নীর অপার ভব পরাবার তীর না হেরে পরান বিকল তীর না হেরে নয়নে পরান বিকল॥ দীন দয়াল ভীত দীন জনে মাগে শরণ তব অভয় চরণে দুস্তর দুর্গম দুঃখ জলধি তরিতে চরণ-তরী ভরসা কেবল॥ *৩১২. রাগ; ভৈরবী, তাল: কাহার্বা তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী॥ বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায় হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, (ওরে) ‘আয়,’ বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায় (ওগো) কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ॥ বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন, ধরি’ অজানা পথ আসিল অনাগত জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ॥ *৩১৩. তাল: দাদ্রা তুই কে ছিলি তাই বল? কোন্ কাননের পুষ্পরানী কোন্ সরসীর জল॥ তুই কি ছিলি কবিতা আর আমি চরণ তা’রি তুই কি ছিলি পিয়াসি শুক আমি আতুর সারী তুই কি দুঃখী দুয়োরানী আমি চোখের জল॥ কোন্ বরষার সিক্ত প্রাতে কোন্ শরতের জোছনা রাতে কোন্ জগতের অরুণ ঊষার প্রথম দেখা বল্॥ নতুন মোদের নতুন ক’রে পরিচয়ের পালা কণ্ঠে মোদের মিলন-বাণী হাতে মিলন-মালা মোরা এক বিরহীর দু’টি চোখের ঝরা দু’টি মুক্তাফল॥ *৩১৪. মার্চের সুর, তাল: দাদ্রা দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল। ওরে বে-খবর, তুইও ওঠ্ জেগে, তুইও তোর প্রাণ-প্রদীপ জ্বাল॥ গাজী মুস্তাফা কামালের সাথে জেগেছে তুর্কী সুর্খ-তাজ, রেজা পহ্লবী-সাথে জাগিয়াছে বিরান মুলুক ইরানও আজ গোলামী বিসরি’ জেগেছে মিসরী, জগলুল-সাথে প্রাণ-মাতাল॥ ভলি’ গ্লানি লাজ জেগেছে হেজাজ নেজদ্ আরবে ইবনে সউদ্ আমানুল্লার পরশে জেগেছে কাবুলে নবীন আল্-মামুদ, মরা মরক্কো বাঁচাইয়া আজি বন্দী করিম রীফ্-কামাল॥ জাগে ফয়সল্ ইরাক আজমে, জাগে নব হারুন-আল্-রশীদ, জাগে বয়তুল মোকাদ্দস্ রে; জাগে শাম দেখ্ টুটিয়া নিদ জাগে না কো শুধু হিন্দের দশ কোটি মুসলিম বে-খেয়াল॥ মোরা আস্হাব কাহাফের মত হাজারো বছর শুধু ঘুমাই, আমাদেরি কেহ ছিল বাদশাহ্ কোন কালে; তার করি বড়াই, জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার কাঁপিবে চরণে টাল্মাটাল॥ *৩১৫. তাল: ফের্তা নবীর মাঝে রবির সম আমার মোহাম্মদ রসুল। খোদার হবিব দীনের নকিব বিশ্বে নাই যার সমতুল॥ পাক আরশের পাশে খোদার গৌরবময় আসন যাঁহার, খোশ-নসীব উম্মত আমি তাঁর (আমি) পেয়েছি অকূল কূল॥ আনিলেন যিনি খোদার কালাম তাঁর কদমে হাজার সালাম; ফকির দরবেশ জপি’ সেই নাম (সবে) ঘর ছেড়ে হলো বাউল॥ জানি, উম্মত আমি গুনাহ্গার হবো তবু পুল্সরাত পার; আমার নবী হষরত আমার করো মোনাজাত কবুল॥ *৩১৬. রাগ: নটনারায়ণ, তাল: দাদ্রা নাচে নাচে রে মোর কালো মেয়ে নৃত্যকালী শ্যামা নাচে। নাচ হেরে তার নটরাজও প’ড়ে আছে পায়ের কাছে॥ মুক্তকেশী আদুল গায়ে নেচে বেড়ায় চপল পায়ে মা’র চরণে গ্রহতারা নূপুর হয়ে জড়িয়ে আছে॥ ছন্দ-সরস্বতী দোলে পুতুল হয়ে মায়ের কোলে রে সৃষ্টি নাচে, নাচে প্রলয় মায়ের আমার পায়ের তলে রে। আকাশ কাঁপে নাচের ঘোরে ঢেউ খেলে যায় সাত সাগরে সেই নাচনের পুলক জাগে ফুল হয়ে রে লতায় গাছে॥ *৩১৭. তাল: কাহা্রবা পিও পিও হে প্রিয় শরাব পিও চোখে রঙের নেশা লেগে সব অবসাদ হোক রমনীয়॥ জীবনের নহবতে বাজুক সানাই আঁধার এ দুনিয়ায় জ্বলুক রোশ্নাই আজি আবছা আলোয় যারে লাগবে ভালো তারি গলায় চাঁদের মালা পরায়ে দিও॥ আজি লেগে অনুরাগে রঙ শিরাজির প্রাণে প্রাণে লহর বহুক রস-নদীর সেই মধুর ক্ষণে বঁধু নিরজনে ভালোবাসি’ দুটি কথা মোরে বলিও॥ *৩১৮. রাগ; পটদীপ, তাল: ত্রিতাল প্রথম প্রদীপ জ্বালো মম ভবনে হে আয়ুষ্মতী আঁধার ঘিরে’ আশার আলো আনুক তোমার গৃহের জ্যোতি॥ হেরিয়া তোমার আঁখির আলোক বিষাদিত সাঁঝ পুলকিত হোক, যেন দূরে যায় সব দুখ শোক, তব শঙ্খরব শুনি’, হে সতী॥ কাঁকন পরা তব শুভ কর মুখর করুক এ নীরব ঘর এ গৃহে আনুক বিধাতার বর তোমার মধুর প্রেম-আরতি॥ *৩১৯. তাল: দ্রুত-দাদ্রা ফুলে পুছিনু, ‘বল, বল ওরে ফুল!’ কোথা পেলি এ সুরভি, রূপ এ অতুল? ‘যার রূপে উজালা দুনিয়া’, কহে গুল, ‘দিল সেই মোরে এই রূপ এই খোশ্বু। আল্লাহু আল্লাহু॥ ‘ওরে কোকিল, কে তোরে দিল এ সুর, কোথা পেলি পাপিয়া এ কণ্ঠ মধুর?’ কহে কোকিল পাপিয়া, আল্লাহ গফুর, তাঁরি নাম গাহি ‘পিউ পিউ, কুহু কুহু- আল্লাহু আল্লাহু॥ ‘ওরে রবি-শশী, ওরে গ্রহ-তারা কোথা পেলি এ রওশনী জ্যোতি ধারা?’ কহে, ‘আমরা তাহারি রূপের ইশারা মুসা, বেহুঁশ হলো হেরি’ যে খুব্রু আল্লাহু আল্লাহু॥’ যারে আউলিয়া আম্বিয়া ধ্যানে না পায় কূল-মখলুক যাঁহার মহিমা গায়, যে নাম নিয়ে এসেছি এই দুনিয়ায়, নাম নিতে নিতে মরি এই আরজু আল্লাহু আল্লাহু॥ *৩২০, তাল: দাদ্রা বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু হইব না আর পথহারা বন্ধু স্বজন সব ছেড়ে যায় তুমি একা জাগো ধ্রুবতারা॥ মায়ারূপী হায় কত স্নেহ-নদী, জড়াইয়া মোরে ছিল নিরবধি, সব ছেড়ে গেল, হারাইনু যদি তুমি এসো প্রাণে প্রেম ধারা॥ ভ্রান্ত পথের শ্রান্ত পথিক লুটায় তোমার মন্দিরে, প্রভু আরো যদি কিছু আছে মোর প্রিয় লও বাঁচায়ে বন্দীরে। ডাকি’ লও মোরে মুক্ত আলোকে তব আনন্দ-নন্দন-লোকে, শান্ত হোক এ ক্রন্দন, আর সহে না এ বন্ধন-কারা॥ *৩২১. তাল: কাহার্বা বিজন গোঠে কে রাখাল বাজায় বেণু আমি সুর শুনে তা’র বাউল হয়ে এনু (গো)॥ ঐ সুরে পড়ে মনে কোন্ সুদূর বৃন্দাবনে যেত নন্দ-দুলাল ব্রজ-গোপাল বাজিয়ে বেণু বনে পথ লুট্তো কেঁদে গোপবালা, ভুল্তো তৃণ-ধেণু গো কেঁদে ভুলতো তৃণ-ধেণু॥ কবে নদীয়াতে গোরা ও ভাই ডেকেছিল এম্নি সুরে এম্নি পাগল-করা। কেঁদে ডাক্তো বৃথাই শচীমাতা, সাধ্তো বসুন্ধরা, প্রেমে গ’লে যত নর-নারী যাচ্তো পদ-রেণু গো তারা যাচ্তো পদ-রেণু॥ *৩২২. রাগ: পাহাড়ি মিশ্র, তাল: রূপক বিরহের গুল্বাগে মোর ভুল ক’রে আজ ফুটলো কি বকুল। অবেলায় কুঞ্জবীথি মুঞ্জরিতে এলে কি বুল্বুল্॥ এলে কি পথ ভুলে মোর আঁধার রাতে ঘুম-ভাঙানো চাঁদ, অপরাধ ভুলেছ কি, ভেঙেছে কি অভিমানের বাঁধ। মরণ আজ মধুর হলো পেয়ে তব চরণ রাতুল॥ ওগো প্রদীপ নিভে আসে ইহারি ক্ষীণ আলোকে, দেখে নিই শেষ দেখা যত সাধ আছে চোখে। হে চির-সুন্দর মোর, বিদায়-সন্ধ্যা মম রাঙালে এ কি রঙে উদয় ঊষার সম ঝ’রে পড়ুক তব পায়ে আমার এই জীবন-মুকুল॥ *৩২৩. রাগ: সিন্ধু-ভৈরবী, তাল: আদ্ধা ভাঙা মন (আর) জোড়া নাহি যায় ওগো ঝরা ফুল আর ফেরে না শাখায়॥ শীতের হাওয়ায় তুষার হয়ে গলি’ খরতাপে বারি যায় ব’য়ে, গলে না ক’ আর হৃদয়-তুষার এ উষ্ণ ছোঁওয়ায়॥ গাঁথি’ ফুলমালা নাহি দিয়া গলে শুকালে নিঠুর তব মুঠি-তলে, হাসিব না সে ফুল শত আঁখি-জলে আর সে শোভায়। স্রোতের সলিলে যে বাঁধ বাঁধিলে ভাঙিয়া সে বাঁধ তোমারে ভাসায়॥ *৩২৪. রাগ: আনন্দ-ভৈরব, তাল: ত্রিতাল রাধা-তুলসী, প্রেম-পিয়াসি, গোলকবাসী শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ। নাম জপ মুখে, মূরতি রাখ বুকে ধ্যান দেখ তারি রূপ মোহন॥ অমৃত রসঘন কিশোর-সুন্দর, নব নীরদ শ্যাম মদন মনোহর- সৃষ্টি প্রলয় যুগল নূপুর শোভিত যাহার রাঙা চরণ॥ মগ্ন সদা যিনি লীলারসে, যে লীলা-রস ভরা গোপী-কলসে, কান্না-হাসির আলো-ছায়ার মায়ায় যাহার মোহিত ভুবন॥ *৩২৫. রাগ: রাগেশ্রী, তাল: ত্রিতাল শ্রীকৃষ্ণ রূপের করো ধ্যান অনুক্ষণ হবে নিমেষে সংসার-কালীয় দমন॥ নব-জলধর শ্যাম রূপ যাঁর অভিরাম (যাঁর) আনন্দে ব্রজধাম লীলা নিকেতন॥ বিদ্যুৎ-বর্ণ পীতান্বরধারী, বনমালা-বিভীষিত মধুবনচারী; গোপ-সখা গোপী-বঁধু মনোহারী নওল-কিশোর তনু মদনমোহন॥ *৩২৬. তাল: কাহার্বা হেমন্তিকা এসো এসো হিমেল শীতল বন-তলে শুভ্র পূজারিণী বেশে কুন্দ-কবরী-মালা গলে॥ প্রভাত শিশির নীরে নাহি’ এসো বলাকার তরণী বাহি’ সারস মরাল সাথে গাহি’ চরণ রাখি শতদলে॥ ভরা নদীর কূলে কূলে চাহিছে সচকিতা চখি- মানস-সরোবর হ’তে-অলক-লক্ষ্মী এলো কি? আমন ধানের ক্ষেতে জাগে হিল্লোল তব অনুরাগে, তব চরণের রঙ লাগে কুমুদে রাঙা কমলে॥ *৩২৭. তাল: কাহার্বা পুরুষ : আজি মিলন বাসর প্রিয়া হের মধুমাধবী নিশা। স্ত্রী : কত জনম অভিসারে শেষে প্রিয় পেয়েছি তব দিশা॥ পুরুষ : সহকার-তরু হের দোলে মালতী লতায় লয়ে বুকে, স্ত্রী : মাধবী কাঁকন পরি’ দেওদার তরু দোলে সুখে। পুরুষ : হায় প্রাণ কানায় কানায় আজি পুরে স্ত্রী : প্রাণ কানায় কানায় আজি পুরে পুরুষ : হিয়া আবেশ-পুলক-মিশা স্ত্রী : হিয়া আবেশ-পুলক-মিশা॥ পুরুষ : শরাব রঙের শাড়ি পরেছে চাঁদনি রাতি স্ত্রী : চাঁদে ও তারাতে আজি মিলনের মাতামাতি পুরুষ : হের জোয়ার-উতলা সিন্ধু পূর্ণিমা-চাঁদেরে পেয়ে’ স্ত্রী : কোন দূর অতীত স্মৃতি মম প্রাণে-মনে ওঠে ছেয়ে। পুরুষ : আজি মিলন-ঘন মেঘলোকে স্ত্রী : আজি মিলন-ঘন মেঘলোকে পুরুষ :প্রিয়া মিটিবে মরু-তৃষা স্ত্রী : প্রিয় মিটিবে মরু-তৃষা॥ দ্বৈত : প্রিয় মিটিবে মরু-তৃষা॥ *৩২৮. তাল: কাহার্বা দ্বৈত : আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ূর ডাকে, দোল্না কেন বাঁধলে না গো এবার কদম-শাখে॥ স্ত্রী : সঙ্গে ল’য়ে গোপ-গোপীরে পুরুষ : ব্রজের-কিশোর শ্যাম যে লীলা-সাথীর সাথে থাকে॥ দ্বৈত : দোলনা বেঁধে রইবো চেয়ে আমরা মেঘের পানে : আয় ওরে আয়, নির্জন বনকে জানাই সেই কাজরি গানে গানে। : বৃষ্টি ধারায় টাপুর টুপুর পুরুষ : শুনব তাহার পায়ের নূপুর দ্বৈত : বিজলিতে তার চপল চাওয়া দেখব মেঘের ফাঁকে॥ *৩২৯. তাল: ফের্তা (কাহার্বা ও দাদ্রা) আমি কলহেরি তরে কলহ করেছি বোঝনি কি রসিক বঁধু। তুমি মন বোঝ মনোচোর মান বোঝ নাকি হে- তুমি ফুল চেন, চেন নাকি মধু? তুমি যে মধুবনের মধুকর, তুমি মধুরম্ মধুরম্ মধুময় মনোহর কলহেরি কূলে রহে অভিমান-মধু যে, চেন নাকি বঁধু হে- রাগের মাঝে রহে অনুরাগ-মধু যে, দেখ নাকি বঁধু হে- কলঙ্কী বলে গগনের চাঁদ প্রতি দিন ক্ষয় হয় তুমি নিত্য পূর্ণ চাঁদ সম প্রিয়তম চির অক্ষয় এ চাঁদে একাদশী নাই হে- শুধু রাধা একা দোষী হলো নিত্য কেন পায় না মোর কৃষ্ণ চাঁদে যে একাদশী নাই হে- সেই ব্রজগোপীদের ঘর আছে পর আছে কৃষ্ণ বিনা নাই রাধার কেহ আমিও জানি যেন আমারও শ্রীকৃষ্ণ কেবল রাধাময় দেহ। সে রাধা প্রেমে রাঁধা সে রাধা ছাড়া জানে না, রাধাময় দেহ সে রাধা প্রেমে রাঁধা। *৩৩০. ও তুই কারে দেখে ঘোমটা দিলি নতুন বউ বল্ গো- তুই উঠলি রেঙে’ যেন পাকা কা,রাঙ্গার ফল গো॥ তোর মন আইঢাই কি দেখে কে জানে তুই চুন বলে দিস হলুদ বাটা পানে তুই লাল নটে শাক ভেবে কুটিস শাড়ির আঁচল গো॥ তুই এ-ঘর যেতে ও-ঘরে যাস পায়ে বাধে পা বউ তোর রঙ্গ দেখে হাসছে ননদ-জা। তুই দিন থাকিতে পিদিম জ্বালিস ঘরে ওলো রাত আসিবে আরো অনেক পরে কেন ভাতের হাঁড়ি মনে ক’রে উনুনে দিস জল গো॥ *৩৩১. তাল: ফের্তা ও বৌদি তোর কি হয়েছে চোখে কেন জল দাদার তরে মন বুঝি তোর হয়েছে উতল॥ তোর দিব্যি দেখেছি স্বপনে যেন দাদা কথা কইতেছে তোর সনে দেখিস তোরা আমার স্বপন হবে না বিফল॥ তোর কান্নার সাগরে যখন উঠেছে জোয়ার বৌদি লো তোর চাঁদ উঠিবার নাই রে দেরি আর। ও বৌদি তোর চোখের জলের টানে আমার দাদার সোনার তরী আসতেছে উজানে দেখ্ বাটনা ফেলে হাসছে দিদি চল্ ও-ঘরে চল্॥ *৩৩২. তাল। দ্রুত-দাদ্রা ওকে নাচের ঠমকে দাঁড়ালো থম্কে সহসা চম্কে পথে যেন তার নাম ধ’রে ডাকিল কে বাঁশের বাঁশিতে মাঠের ওপার হতে॥ তার হঠাৎ থেমে যাওয়া দেহ দোদুল নাচের তালে যেন ছন্দের ভুল সে রহে চাহি, অনিমেষে পটে আঁকা ছবিতুল গেছে হারায়ে সে যেন কোন্ জগতে॥ তার ঘুম জড়িত চোখে জাগালো কী নূতন ঘোর অকরূণ বাঁশির কিশোর; উদাসী মূরতি প্রভাতী রাগিনী কাননে যেন এলো নামিয়া অরুণ-কিরণ রথে॥ *৩৩৩. তাল: দাদ্রা কলঙ্কে মোর সকল দেহ হলো কৃষ্ণময় শ্যামের নামে হউক এবার আমার পরিচয়॥ কলঙ্কিনীর তিলক এঁকে কলঙ্ক-চন্দন মেখে’ আমি শোনাব গো ডেকে ডেকে কলঙ্কেরি জয়, কৃষ্ণ-কলঙ্কেরি জয়॥ ভুবনে মোর ঠাঁই পেয়েছি ভবন হতে নেমে’ হয়ে বৈরাগিনী আমার কৃষ্ণ-প্রিয়তমের প্রেমে। যারে কৃষ্ণ টানে বিপুল টানে সে কি কুলের বাধা মানে এই বিশ্বব্রজে ভাগ্যবতী সেই শ্রীমতী হয়॥ *৩৩৪. তাল: ফের্তা ওগো ফুলের মতন ফুল্ল মুখে দেখছি একি ভুল। হাসির বদল দোলে সেথায় অশ্রুকণার দুল॥ রোদের দাহে বালুচরে
মরা নদী কেঁদে মরে ভোর-গগনে পূর্ণ চাঁদের এমনি মলিন মুখ, ম্লান-মাধুরী মালার ফুলে এমনি নীরব কান্না দোলে, করুণ তুমি বিসর্জনের দেবীর সমতুল॥ *৩৩৫. নাটক: ‘মহুয়া’, তাল:দ্রুত-দাদ্রা কে দিল খোঁপাতে ধুঁতুরা ফুল লো খোঁপা খুলে কেশ হলো বাউল লো॥ পথে সে বাজালো মোহন-বাঁশি তোর ঘরে ফিরে যেতে হলো এ ভুল লো॥ কে নিল কেড়ে তোর পৈঁচী চুড়ি বৈঁচি মালায় ছি ছি খোয়ালি কুল লো॥ ও সে বুনা পাগল পথে বাজায় মাদল পায়ে ঝড়ের নাচন শিরে চাঁচর চুল লো॥ দিল নাকেতে নাকছাবি বাবলা ফুলি কুঁচের চুড়ি আর ঝুঁমকো ফুল দুল লো॥ সে নিয়ে লাজ দু’কূল দিল ঘাঘরি সে আমার গাগরি ভাসালো জলে বাতুল লো॥ *৩৩৬. রাগ: ললিত-পঞ্চম, তাল: তেওড়া কে দুরন্ত বাজাও ঝড়ের ব্যাকুল বাঁশি আকাশ কাঁপে সে সুর শুনে সর্বনাশী॥ বন ঢেলে দেয় উজাড় ক’রে ফুলের ডালা চরণ’ পরে, নীল গগনে ছুটে আসে মেঘের রাশি॥ বিপুল ঢেউয়ের নাগর-দোলায় সাগর দুলে বান ডেকে যায় শীর্ণা নদীর কূলে কূলে তোমার প্রলয় মহোৎসবে বন্ধু ওগো, ডাকবে কবে? ভাঙবে আমার ঘরের বাঁধন কাঁদন হাসি॥ *৩৩৭. তাল: কাহার্বা কে বলে গো তুমি আমার নাই? তোমার গানে পরশ তব পাই॥ তোমায়-আমায় এই নীরবে জানাজানি অনুভবে, তোমার সুরের গভীর রবে আমারি কথাই॥ হে বিরহী আমায় বারে বারে স্মরণ করো সুরের সিন্ধু পারে ওগো গুণী পেয়ে আমায় যদি তোমার গান থেমে যায়, উঠবে কাঁদন সুরের সভায় চাই না কাছে তাই॥ *৩৩৮. রাগ: পিলু, খাম্বাজ, তাল: কাহার্বা কেমনে কহি প্রিয় কি ব্যথা প্রাণে বাজে কহিতে গিয়ে কেন ফিরিয়া আসি লাজে॥ শরমে মরমে ম’রে গেল বনফুল ঝ’রে ভীরু মোর ভালোবাসা শুকালো মনের মাঝে॥ আজিকে ঝরার আগে, নিলাজ অনুরাগে ধরিতে যে সাধ জাগে হৃদয়ে হৃদয় রাজে॥ *৩৩৯. রাগ; খাম্বাজ, তাল: কাহার্বা কোথায় তখ্ত তাউস, কোথায় সে বাদশাহী। কাঁদিয়া জানায় মুসলিম ফরিয়াদ ইয়া ইলাহী॥ কোথায় সে বীর খালিদ, কোথায় তারেক মুসা নাহি সে হজরত আলী, সে জুলফিকার নাহি॥ নাহি সে উমর খত্তাব, নাহি সে ইসলামী জোশ্ করিল জয় যে দুনিয়া, আজি নাহি সে সিপাহি॥ হাসান হোসেন সে কোথায়, কোথায় বীর শহীদান- কোরবানি দিতে আপনায় আল্লার মুখ চাহি’॥ কোথায় সে তেজ ঈমান, কোথায় সে শান-শওকত, তক্দীরে নাই সে মাহ্তাব, আছে প’ড়ে শুধু সিয়াহি॥
*৩৪০. তাল: ত্রিতাল চঞ্চল শ্যামল এলো গগনে । নয়ন-পলকে বিজলি ঝলকে চাঁচর অলক ওড়ে পবনে॥ রিমঝিম্ বৃষ্টির নূপুর বোলে মৃদঙ্গ বাজে গুরু গম্ভির রোলে; হেরি’ সেই নৃত্য ধরার চিত্ত ডুবু ডুবু বরিষার প্রেম-প্লাবনে॥ উদাসী বেণু তার অশান্ত বায়ে বাজে রহি’ রহি’ দূর বনছায়ে; আকাশে অনুরাগে ইন্দ্রধনু জাগে ভাবের বন্যা বহে বৃন্দাবনে॥
*৩৪১. তাল : দাদরা চন্দ্রমল্লিকা, চন্দ্রমল্লিকা- চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল চন্দ্রমল্লিকা। রঙ্-পরীদের সঙ্গিনী তুই অঙ্গে চাঁদের রূপ-শিখা॥ ঊষার ধরায় আস্লি ভুলে তুষার দেশে রঙ্গিনী’ হিমেল দেশের চন্দ্রিকা তুই শীত-শেষের বাসন্তিকা॥ চাঁদের আলো চুরি ক’রে আনলি তুই মুঠি ভ’রে, দিলাম চন্দ্র-মল্লিকা নাম তাই তোরে আদর ক’রে। ভঙ্গিমা তোর গরব-ভরা, রঙ্গিমা তোর হৃদয়-হরা, ফুলের দলে ফুলরানী তুই-তোরেই দিলাম জয়টিকা॥ *৩৪২. মার্চের সুর, তাল: কাহার্বা (দ্রুতলয়) চল্ রে চপল তরুণ-দল বাঁধব হারা চল্ অমর সমরে, চল ভাঙি’ কারা জাগায়ে কাননে নব পথের ইশারা॥ প্রাণ-স্রোতের ত্রিধারা বহায়ে তোরা ওরে চল! জোয়ার আনি, মরা নদীতে পাহাড় টলায়ে মাতোয়ারা॥ ডাকে তোরে স্নেহভরে ‘ওরে ফিরে আয় ফিরে ঘরে’ তারে ভোল্ ওরে ভোল্ তোরা যে ঘর-ছাড়া॥ তাজা প্রাণের মঞ্জরি ফুটায়ে পথে তোরা চল্, রহে কে ভুলে ছেঁড়া পুঁথিতে তাদের পরানে দে রে সাড়া। রণ-মাদল আকাশে ঘন বাজে গুরু গুরু। আঁধার ঘরে কে আছে প’ড়ে তাহার দুয়ারে দে রে নাড়া॥ *৩৪৩. রাগ: শঙ্করাভরণ, তাল: ত্রিতাল নাচে নটরাজ, মহাকাল। অম্বর ছাপিয়া পড়ে লুটাইয়া আলো-ছায়ার বাঘ-ছাল॥ কালো সিন্ধু জলে তাথৈ তাথৈ রব শুনি সেই নৃত্যের নাচে মহাভৈরব বিষাণ মন্দ্রে বাজে মাভৈঃ মাভৈঃ রব প্রাণ পেয়ে জেগে ওঠে মৃত কঙ্কাল॥ গঙ্গা তরঙ্গে অপরূপ রঙ্গে ছন্দ জাগে সেই নৃত্য-বিহঙ্গে জোছনা আশিস-ধারা ঝরে চরাচরে ছাপিয়া ললাটে শশী ভাল॥ ৩৪৪. তাল: কাহার্বা পলাশ-মঞ্জরি পরায়ে দে লো মঞ্জুলিকা আজি রসিয়ার রাসে হবো আমি নায়িকা লো মঞ্জুলিকা॥ কৃষ্ণছূড়ার সাথে রঙ্গনে অশোকে বুলালো রঙের মোহন তুলিকা লো মঞ্জুলিকা॥ মাদার শিমুল ফুলে রঙিন পতাকা দোলে জ্বলিছে মনে মনে আগুন শিখা লো মঞ্জুলিকা॥ *৩৪৫. রাগ: পাহাড়ি মিশ্র, তাল: দাদ্রা পায়ে বিঁধেছে কাঁটা সজনী ধীরে চল। ধীরে ধীরে ধীরে চল। চলিতে ছলকি’ যায় ঘটে জল ছল ছল॥ একে পথ আঁকাবাঁকা তাহে কন্টক-শাখা আঁচল ধ’রে টানে, টলে তনু টলমল॥ ভরা যৌবন-তরী, তাহে ভরা গাগরি, বুঝি হয় ভরা-ডুবি, ছি ছি বল এ কি হলো॥ পথের বাঁকে ও কে হাসে ডাগর চোখে, হাসিবে পথের লোকে সখি স’রে যেতে বল॥ *৩৪৬. তাল: তেওড়া বাজে মৃদঙ্গ বরষার ওই দিকে দিকে দিগন্তরে নীরস ধরা সরস হলো কাহার যাদু-মন্তরে॥ বন-ময়ূর আনন্দে নাচে ধারা প্রপাত ছন্দে ঝরঝর গিরি-নির্ঝর স্রোতে অন্তর সুখে সন্তরে॥ শ্যামল প্রিয়-দরশা হলো ধূসর পথ-প্রান্তর বন্ধু-মিলন-হরষা গাহে দাদুরি অবান্তর। শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যাতে আজি পুষ্পে পল্লবে বন মাতে এলো শ্যাম শোভন সুন্দর প্রাণ-চঞ্চল ক’রে মন্থরে॥ *৩৪৭. তাল: ফের্তা (আড়া চৌতাল, দ্রুত-দাদ্রা ও কাহার্বা) মুরলী শিখিব ব’লে এসেছি কদম্ব তলে মুরলীধারী মুরলী শিখাও হে কোন সুরে মধু-মাধবী ফোটে কোন সুরে রাধা নাম ওঠে মাধব হে! বাঁশির কোন সুরে উদাসী করে প্রাণ দাসী করে, মাধব হে- দেহ ময়ূর নাচে কোন সুর শুনিয়া মন-পাপিয়া গেয়ে ওঠে পিয়া পিয়া মোরে শিখাও সে সুর হে- যে সুরে তুমি নাচিবে, পিয়া ব’লে ডাকিবে মোরে শিখাও সে সুর হে বঁধু যে সুরে কেবল তব সাথে ভাব হয় অভাব রয় না আমি সেই সুর শিখিব যে সুর কৃষ্ণ ছাড়া কোন কথা কয় না কেন ছলছল চোখে চাও মুরলী শিখাও কেন হাত কাঁপে রসময়। যে সুর তোমার অধর পরশ লাগে সেই বেণু যেন চিরদিন রাধারই রয় বেণু শিখাও হে মোর দেহ মন ধায় যেন ধেণু সম তব পানে বেণু শিখাও হে॥ *৩৪৮.তাল: দাদ্রা ললাটে মোর তিলক এঁকো মুছে বঁধুর চরণ-ধূলি আখিঁতে মোর কাজল মেখো ঘন শ্যামের বরণগুলি॥ বঁধুর কথা মধুর প্রিয় কর্ণ মূলে দুলিয়ে দিও বক্ষে আমার হার পরিও বঁধুর পায়ের নূপুর খুলি’ ॥ তার পীত বসন দিয়ে ক’রো এই যোগিনীর উত্তরীয় হবে অঙ্গেরই চন্দন আমার কলঙ্ক তার মুছে নিও। সে দেয় যা ফেলে মনের ভুলে তাই অঞ্চলে মোর দিও তুলে তার বনমালার বাসি ফুলে ভ’রো আমার ভিক্ষা ঝুলি॥ *৩৪৯. মার্চের সুর, তাল: দ্রুত-দাদ্রা শঙ্কাশূন্য লক্ষ কণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ঐ পুণ্য-চিত্ত মৃত্যু-তীর্থ-পথের যাত্রী কই॥ আগে জাগে বাধা ও ভয় ও ভয়ে ভীত নয় হৃদয় জানি মোরা হবই হব জয়ী॥ জাগায়ে প্রাণে প্রাণে নব আশা, ভাষাহীন মুখে ভাষা হে নবীন আন নব পথের দিশা নিশি শেষের ঊষা কেহ নাই দেশে মানুষ তোমরা বৈ॥ স্বর্গ রচিয়া মৃত্যুহীন চল্ ওরে কাঁচা চল নবীন দৃপ্ত চরণে নৃত্য দোল জাগায়ে মরুতে রে বেনুইন! ‘নাই নিশি নাই’ জাগে শুভ্র দীপ্ত দিন। নাই ওরে ভয় নাই জাগে ঊর্দ্ধে দেবী জননী শক্তিময়ী॥ *৩৫০. তাল: দাদ্রা হাতে হাত দিয়ে আগে চল্ হাতে নাই থাক্ হাতিয়ার। জমায়েত হও, আপনি আসিবে শক্তি জুলফিকার॥ আন্ আলীর শৌর্য, হোসেনের ত্যাগ ওমরের মত কর্মানুরাগ; খালেদের মত সব অশান্ত ভেঙে কর একাকার॥ ইসলামে নাই ছোট বড় আর আশরাফ আত্রাফ্ নিষ্ঠুর হাতে এই ভেদ জ্ঞান কর মিস্মার সাফ। চাকর সৃজিতে, চাক্রি করিতে, ইসলাম আসে নাই পৃথিবীতে। মরিবে ক্ষুধায় কেহ নিরন্ন, কারো ঘরে রবে অঢেল অন্ন এ জুলুম সহেনি, ইসলাম, সহিবে না আজো আর॥
|