ভাষাংশ | কাজী নজরুল ইসলাম |
কাজী নজরুল ইসলামের রচনাসংগ্রহের সূচি


 

 

*৩৫১. তাল: দাদ্‌রা

হায় আঙিনায় সখি আজো কি সেই চাঁপা ফোটে।

হায় আকাশে সখি আজো কি সেই চাঁদ ওঠে

    সখি তাহার হাতের হেনা গাছে

    বুঝি প্রথম মুকুল ধরিয়াছে।

হায় যমুনায়, বাঁশি বাজে কি আর ছায়ানটে

শিয়রে জান্‌লা খুলে দে বাহিরে চাহিয়া দেখি

আমার বাগানে আবার বসন্ত আসিয়াছে কি?

দেখি সে ডালিম ফুলে হায় আছে কি সে রঙ আগেকার।

ও-বাড়ির ছাদের টবে সই বেলফুল ফুটলো কি আবার?

    আজি আসিবে সে মনে লাগে

    তারি আসার আভাস মনে জাগে

হায় বুঝি তাই, মোর মরণ মধুর হয়ে ওঠে

*৩৫২. মার্চের সুর, তাল: ফের্‌তা (দ্রুত-দাদ্‌রা ও কাহার্‌বা)

ঝড়-ঝঞ্ঝার ওড়ে নিশান, ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে।

জাগো জাগো তন্দ্রা-অলস রে, সাজো সাজো রণ-সাজে

দিকে দিকে ওঠে গান, অভিযান অভিযান!

আগুয়ান আগুয়ান হও ওরে আগুয়ান

ফুটায়ে মরুতে ফুল-ফসল।

জড়ের মতন বেঁচে কি ফল? কে র’বি প’ড়ে লাজে

বহে স্রোত জীবন-নদীর, চল চঞ্চল অধীর,

তাহে ভাসিবি কে আয়, দূর সাগর ডেকে যায়।

হ’বি মৃত্যু-পাথার পার, সেথা অনন্ত প্রাণ বিরাজে

    পাঁওদল্ রণে চল্ চল্ রণে চল্

    পাঁওদল আগে চল্ চল্ রণে চল্

মরুতে ফোটাতে পারে ওই পদতল প্রাণ-শতদল।

    বিঘ্ন-বিপদে করি’ সহায়

    না-জানা পথের যাত্রী আয়,

স্থান দিতে হবে আজি সবায়, বিশ্ব-সভা-মাঝে

*৩৫৩, তাল: ফের্‌তা (কাহার্‌বা ও দ্রুত-দাদ্‌রা)

আজি অলি ব্যাকুল ওই বকুলের ফুলে

কত আদরে টানি, চুমে বদনখানি

ফুলকলি লাজে পড়ে বুকে ঢুলে ঢুলে

আসে ফুল-বধূ, ভরা মধু

হাসে ভ্রমর-বঁধু কলি সনে দুলে দুলে

সোহাগে গুনগুনিয়ে সব কথা তার কইতে বাকি

সলাজ ফুল-কুমারীর ঘোম্‌টাখানি খুল্‌তে  বাকি,

গোপনে গোপন বুকের সুধাটুকু লুট্‌তে বাকি,

না-কওয়া যত কথা কানে কানে বলে খুলে

*৩৫৪. তাল: কাহার্‌বা

    আমিনা-দুলাল নাচে হালিমার কোলে

    তালে তালে সোনার বুকে সোনার তাবিজ দোলে

    সে কাঁদিলে মুক্তা ঝরে হাস্‌লে ঝরে মানিক

    ঈদের চাঁদে লেগে আছে সেই খুশির খানিক।

তাঁর  কচি মুখে খোদার কালাম আধো আধো বলে

    দেখেছিল লুকিয়ে সে নাচ কোটি গ্রহতারা

    আসমানে তাই ঘোরে তারা আজো দিশাহারা

সেদিন    নেচেছিল বিশ্বভুবন ইয়া মোহাম্মদ ব’লে

    কোরানের আয়াতে লেখা সেই নাচেরই ছন্দ

    তক্‌বীরের ধ্বনিতে বাজে তাহারি আনন্দ

আমি থাক্‌লে সেদিন হতাম ধূলি তাঁহার পায়ের তলে

*৩৫৬. তাল: কাহার্‌বা

ওগো দেবতা তোমার পায়ে গিয়াছিনু ফুল দিতে

মোর মন চুরি ক’রে নিলে কেন তুমি অলখিতে

আজি ফুল দিতে শ্রীচরণ

মম  হাত কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে;

কেন প্রণাম করিতে গিয়া- প্রিয় সাধ জাগে পরশিতে

তুমি দেবতা যে মন্দিরে- কাছে এলে যাই ভুলে

বঁধু  আমি দীন দেবদাসী কেন তুমি মোরে ছুঁলে।

        তুমি কাছে এলে যাই ভুলে।

আমি হাতে আনি হেমঝারি’,

তুমি কেন চাহ আঁখি-বারি;

আমি পূজা-অঞ্জলি আনি, তুমি কেন চাহ মালা নিতে

*৩৫৭. তাল: কাহার্‌বা

    কল্‌মা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি

    ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি

    ঐ কল্‌মা জপে যে ঘুমের আগে

    ঐ কল্‌মা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে,

    দুখের সংসার যার সুখময় হয়, তা’র-

    মুসিবত আসে নাকো, হয় না ক্ষতি।

তার  মুসিবত আসে নাকো, হয় না ক্ষতি

    হর্‌দম্ জপে মনে কল্‌মা যে জন

    খোদায়ী তত্ত্ব তা’র রহে না গোপন

    দিলের আয়না তার হয়ে যায় পাক সাফ

    আল্লার রাহে তার রহে মতি।

সদা  আল্লার রাহে তার রহে মতি

    এস্‌মে আজম হতে কদর ইহার

    পায় ঘরে ব’সে খোদা রসুলের দিদার

    তাহারি হৃদয়াকাশে সাত বেহেশ্‌ত্ নাচে

    আল্লার আরশে হয় আখেরে গতি।

তার  আল্লার আরশে হয় আখেরে গতি

*৩৫৮. তাল: কাহার্‌বা

খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে।

তরঙ্গ-লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে

ছল-ছল ঊর্মি-নূপুর

স্রোত-নীরে বাজে সুমধুর,

চল-চঞ্চল বাজে কাঁকন কেয়ূর

ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে

আনমনে খেলে জল-বালিকা

খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা

হরষিত পারাবারে ঊর্মি জাগে

লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে

*৩৫৯. তাল: দাদ্‌রা

    জরীন হরফে লেখা

    রূপালি হরফে লেখা

(নীল) আসমানের কোরআন।

সেথা তারায় তারায় খোদার কালাম

(তোরা) পড়্ রে মুসলমান

নীল  আসমানের কোরআন

    সেথা ঈদের চাঁদে লেখা

    মোহাম্মদের ‘মীম’-এর রেখা,

সুরুযেরই বাতি জ্বেলে’ পড়ে রেজোয়ান

খোদার আরশ লুকিয়ে আছে ঐ কোরআনের মাঝে,

খোঁজে ফকির-দরবেশ সেই আরশ সকাল-সাঁঝে।

    খোদার দিদার চাস রে, যদি

    পড়্ এ কোরআন নিরবধি;

খোদার নূরের রওশনীতে রাঙ রে দেহ-প্রাণ

*৩৬০. রাগ; সারং, তাল: ত্রিতাল

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।

জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা

দিকে দিকে মেলি’ তব লেলিহান রসনা,

নেচে চল উন্মাদিনী দিগ্‌বসনা,

জাগো হতভাগিনী ধর্ষিতা নাগিনী,

বিশ্ব-দাহন তেজে জাগো দাহিকা

ধূ ধূ জ্ব’লে ওঠ ধূমায়িত অগ্নি,

জাগো মাতা, কন্যা, বধূ, জায়া, ভগ্নী!

পতিতোদ্ধারিণী স্বর্গ-স্খলিতা

জাহ্নবী সম বেগে জাগো পদ-দলিতা,

মেঘে আনো বালা বজ্রের জ্বালা

চির-বিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা

*৩৬১. তাল: কাহার্‌বা

জানি জানি প্রিয়, এ জীবনে মিটিবে না সাধ

আমি জলের কুমুদিনী ঝরিব জলে

তুমি দূর গগনে থাকি, কাদিবে চাঁদ

    আমাদের মাঝে বঁধু বিরহ বাতাস

    চিরদিন ফেলে যাবে দীরঘ শ্বাস

    পায় না বুকে কভু পায় না বুকে তবু মুখে মুখে

    চাঁদ কুমুদীর নামে রটে অপবাদ

তুমি কত দূরে বঁধু, তবু বুকে এত মধু কেন উথলায়?

    হাতের কাছে রহো রাতের চাঁদ গো

    ধরা নাহি যায় তবু ছোঁওয়া নাহি যায়।

    মরু-তৃষা ল’য়ে কাঁদে শূন্য হিয়া

    সকলে বলে আমি তোমারি প্রিয়া

সেই কলঙ্ক-গৌরব সৌরভ দিল গো

    মধুর হ’ল মোর বিরহ-বিষাদ

*৩৬২. তাল: কাহার্‌বা

ঝড় এসেছে ঝড় এসেছে কাহারা যেন ডাকে।

বেরিয়ে এলো নতুন পাতা পল্লবহীন শাখে

    ক্ষুদ্র আমার শুক্‌নো ডালে

    দুঃসাহসের রুদ্র ভালে

কচি পাতার লাগলো নাচন ভীষণ ঘূর্ণিপাকে

স্থবির আমার ভয় টুটেছে গভীর শঙ্খ-রবে,

মন মেতেছে আজ নতুনের ঝড়ের মহোৎসবে।

    কিশলয়ের জয়-পতাকা

    অন্তরে আজ মাল্‌লো পাখা

প্রণাম জানাই ভয়-ভাঙানো অভয়-মহাত্মাকে

*৩৬৩. তাল দাদ্‌রা

তুমি কি আসিবে না

বলেছিলে তুমি আসিবে আবার ফুটিবে যবে হেনা

    সেদিন ঘুমায়ে ছিল যে মুকুল

    আজি সে পূর্ণ বিকশিত ফুল

সেদিনের ভীরু অচেনা হৃদয় আজি হতে চায় চেনা

ঘন পল্লব গুণ্ঠন ঢাকা ছিল সেদিন যে লতা

আজিকে পুষ্প নিবেদন ল’য়ে কহিতে চায় যে কথা।

    প্রদীপ জ্বালায়ে আজি সন্ধ্যায়

    পথ চেয়ে আছি তোমারি আশায়

পূর্ণিমা-তিথি আসিল, হে চাঁদ-অতিথি আসিলে না

*৩৬৪. তাল: দাদ‌্‌রা

দিনের সকল কাজের মাঝে তোমায় মনে পড়ে।

কাজ ভুলে যাই (আমি), মন চ’লে যায় সুদূর দেশান্তরে

    তুলসী তলায় দীপ জ্বালিয়ে

    দূর আকাশে রই তাকিয়ে,

সাঁঝের ঝরা ফুলের মতো অশ্রু বারি ঝরে

আঁধার রাতে বাতায়নে এক্‌লা ব’সে থাকি,

চাঁদকে শুধায় তোমার কথা ঘুমহারা মোর আঁখি।

    প্রভাত বেলায় গভীর ব্যথায়

    মন কেঁদে কয় তুমি কোথায়,

শূন্য লাগে এ তিন ভুবন প্রিয় তোমার তরে

      

*৩৬৫. তাল: দাদ্‌রা

দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে জেগে আছে মোর আঁখি।

কে যেন কহিছে কেঁদে মোর বুকে মুখ রাখি’

        ‘পথিক এসেছ না কি’

হারায়ে গিয়াছে চাঁদ জল-ভরা কালো মেঘে

আঁচলে লুকায়ে ফুল বাতায়নে আছি জেগে’

শূন্য গগনে দেয়া কহিতেছে যেন ডাকি’

        ‘পথিক এসেছ না কি’

ভাঙিয়া দুয়ার মম কাড়িয়া লইতে মোরে

এলে কি ভিখারি ওগো প্রলয়ের রূপ ধ’রে?

ফুরাইয়া যায় বঁধু শুভ-লগনের বেলা

আনো আনো ত্বরা করি’ ওপারে যাবার ভেলা

‘পিয়া পিয়া’ ব’লে বনে ঝুরিছে পাপিয়া পাখি

        ‘পথিক এসেছ না কি’

*৩৬৬. তাল: কাহার্‌বা

দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে মসজিদেরই মিনারে।

এ কী খুশির অধীর তরঙ্গ উঠ্‌লো জেগে’ প্রাণের কিনারে

    মনে জাগে হাজার বছর আগে

    ডাকিত বেলাল এমনি অনুরাগে,

তাঁর খোশ এলেহান, মাতাইত প্রাণ গলাইত পাষাণ ভাসাইত মদিনারে

        প্রেমে ভাসাইত মদিনারে

তোরা ভোল্ গৃহকাজ ওরে মুসলিম থাম্

চল্ খোদার রাহে শোন্ ডাকিছে ইমাম।

মেখে’ দুনিয়ারই থাক, বৃথা রহিলি না-পাক,

চল্ মসজিদে তুই শোন্ মোয়াজ্জিনের ডাক,

তোর জনম যাবে বিফলে যে ভাই এই ইবাদতে বিনা রে

*৩৬৭. তাল: কাহর্‌বা

    প্রিয়তম হে, বিদায়

আর রাখিতে নারি, আশা-দীপ নিভে যায় দুরন্ত বায়

    কত ছিল বলিবার, হায় হ’লো বলা

    ঝুরিতেছে চামেলির বন উতলা

যেন  অনন্ত দিনের বিরহিনী কে

কে  কাঁদে দিকে দিকে হায় হায়

    রহিল ছড়ানো মোর প্রাণের তিয়াস হুতাস পবনে;

    জড়ানো রহিল মোর করুণ প্রীতি ধূসর গগনে।

    তুমি মোরে স্মরিও

যদি  এই পথে কোনদিন চলিতে প্রিয়

    নিশিভোরে ঝরা ফুল দ’লে যাও পায়

*৩৬৮. রাগ: পিলু মিশ্র, তাল: ফের্‌তা (কাহার্‌বা ও দ্রুত-দাদ্‌রা)

মদির আবেশে কে চলে ঢুলুঢুলু আঁখি।

    মদির কার আঁখি

হেরিয়া পাপিয়া উঠিছে পিউ পিউ ডাকি’

আল্‌তা-রাঙা পায়ে আল্পনা আঁকি,

পথের যত ধূলি তাই বুক পেতে থাকে,

দু’ধারে তরুলতা দেয় চরণ ফুলে ফুলে ঢাকি’

তা’রি চোখের চাওয়ায় গো দোলা লাগে হাওয়ায়,

তালীবন তাল দিয়ে যায় তাল-ফের্‌তায় দোলা লাগে হওয়ায়।

আকুল তানে গাহে বকুল-বনের পাখি

তারি মুখ-মদের ছিটে যোগায় ফুলে মধু মিঠে

চাঁদের জৌলুসে তাহারি রওশন্ মাখি

*৩৬৯. তাল: কাহার্‌বা

যাদের তরে এ সংসারে খাট্‌নু জনম ভোর,

তাদের কেউ হবে না হে নাথ মরণ-সাথি মোর

    শত পাপ শত অধর্ম ক’রে

    বিভব রতন আনলেম ঘরে

সে সকল ভাগ বাটোয়ারা ক’রে খাবে পাঁচ ভূত চোর

জীবনে তোমার লই নাই নাম তোমাতে হয় নাই মতি

মরণ-বেলায় তাই কাঁদি প্রভু কি হবে মোর গতি।

    চেয়ে দেখি আজ যাবার বেলায়

    কর্ম কেবল মোর সাথে যায়

তরিবার আর না দেখি উপায় বিনা পদতরী তোর

*৩৭০. তাল: কাহার্‌বা

আমার ঘরের মলিন দীপালোকে

জল দেখেছি যেন তোমার চোখে

বল পথিক বল বল

কেন নয়ন ছল ছল

কেন শিশির টলমল কমল-কোরকে

তোমার হাসির তড়িৎ আলোকে

মেঘ দেখেছি তব মানস-লোকে।

    চাঁদনি রাতে আনো কেন

    পুবের হাওয়ার কাঁদন হেন?

ধূলি ঝড়ে ঢাকল যেন ফুলেল বসন্তকে

*৩৭১. তাল: কাহার্‌বা

আয় ঘুম আয় ঘুম আয় মোর গোপাল ঘুমায়

বহু রাত্রি হল আর জাগাস্‌নে মায়

কোলে লয়ে তোরে ধীরে ধীরে দোলাবো

ঘুম-পাড়ানিয়া গান তোরে শোনাবো

গায়ে হাত বুলাবো পাঙ্‌খা ঢুলাবো

মন ভুলাবো কত রূপকথায়

তোরে কে বলে চঞ্চল একচোখো সে

মোর শান্ত গোপাল থাকে গোষ্ঠে ব’সে

তোরে কে বলে ঝড় তোলে থির যমুনায়

সে যে দিন রাত ঘোরে তার মা’র পায় পায়

*৩৭২. রাগ: তিলং মিশ্র, তাল: ত্রিতাল

একি অসীম পিয়াসা

শত জনম গেল তবু মিটিল না

    তোমারে পাওয়ার আশা

সাগর চাহিয়া চাঁদে চির জনম কাঁদে

তেমনি যত নাহি পায় তোমা পানে ধায়

    অসীম ভালোবাসা

তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন

সেই জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন

তোমার স্মৃতি তার মরণের সাথি হয়

    মেটে না প্রেমের পিয়াসা

*৩৭৩. রাগ: পরজ বসন্ত, তাল: কাহার্‌বা

এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত

বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায় রে চঞ্চল তরুণ দুরন্ত

    বাঁশিতে বাজায় সে বিধুর

    পরজ-বসন্তের সুর

পাণ্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত

    কিশলয় পর্ণে অশান্ত

    ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত

পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।

    এলোমেলো দখিনা মলয় রে

    প্রলাপ বকিছে বনময় রে

অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত

*৩৭৪. তাল: কাহার্‌বা

ও বন্ধু! দেখ্‌লে তোমায়, বুকের মাঝে জোয়ার-ভাঁটা খেলে।

আমি এক্‌লা ঘাটে কুলবধূ কেন তুমি এলে

    বন্ধু, কেন তুমি এলে

ও বন্ধু, আমার অঙ্গে কাটা দিয়ে ওঠে বাজাও যখন বাঁশি

আমি খিড়্‌কি দুয়ার দিয়ে বন্ধু, জল ভরিতে আসি

ভেসে’ নয়ন-জলে ঘরে ফিরি ঘাটে কলস ফেলে

আমার পাড়ায়, বন্ধু, তোমার নাম যদি নেয় কেউ

বুকে আমার দুলে ওঠে পদ্মা নদীর ঢেউ বন্ধু পদ্মা নদীর ঢেউ।

    ওগো ও চাঁদ, এনো না আর

    দু’কূল-ভাঙা এমন জোয়ার

কত ছল ক’রে জল লুকাই চোখের কাঁচা কাঠে আগুন জ্বেলে

*৩৭৫. রাগ: বেহাগ মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা

কলঙ্ক আর জোছনায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ

জাগালে জোয়ার ভাঙ্গিলে আবার সাগর-কূলের বাঁধ

    তিথিতে তিথিতে সুদূর অতিথি

    ভোলাও জাগাও ভুলে যাওয়া স্মৃতি

এড়াইতে গিয়ে পরানে জড়াই তোমার রূপের ফাঁদ

চাহি না তোমায় তবু তোমারেই ভাবি বাতায়নে বসি’

আমার নিশীথে তুমি আনিয়াছ শুক্লা চতুর্দশী।

    সুন্দর তুমি তবু হয় মনে

    আছে কলঙ্ক জোছনার সনে

মুখোমুখি বসে কাঁদে তাই বুকে সাধ আর অবসাদ

 

    *৩৭৬. চলচ্চিত্র : ‘ধ্রুব’ (কাহিনীকার : গিরিশ ঘোষ), তাল : কাহারবা

গহন বনে শ্রীহরি নামের মোহন বাঁশি কে বাজায়।

ভুবন ভরি’ সেই সুরেরি সুরধুনি বয়ে যায়

সেই নামেরি বাঁশির সুরে, বনে পূজার কুসুম ঝুরে

সেই নামেরি নামাবলি, গ্রহ তারা আকাশ জুড়ে

অন্ত বিহীন সেই নামেরি সুর-স্রোতে কে ভাসবি আয়

 

*৩৭৭. নাটক : ‘সাবিত্রী’, তাল : ত্রিতাল

ঘোর ঘন ঘটা ছাইল গগন

ভুবন গভীর বিষাদ মগন

নাহি রবি শশী নাহি গ্রহ তারা

নিখিল নয়নে শ্রাবণের ধারা

সৃষ্টি ডুবালো গো স্রোতের প্লাবন

 

*৩৭৮. নাটক: ‘আলায়া’, রাগ: সিন্ধু-ভৈরবী, তাল: কাহার্‌বা

চাঁদনী রাতে কানন-সভাতে আপন হাতে গাঁথিলে মালা।

সয়েছি বুকে নিবিড় সুখে তোমারি হাতের সূচির জ্বালা

আজিও জাগে লোহিত রাগে রঙিন গোলাবে তাহারি ব্যথা

তব ও গলে দুলিব ব’লে দিয়েছি কুলে কলঙ্ক-কালা

যদি ও-গলে নেবে না তুলে কেন বধিলে ফুলের পরান

অভিমানে হায় মালা যে শুকায় ঝ’রে যায় লাজে নিরালা

 

            *৩৭৯.

 

চাঁপার কলির তুলিকায়, কাজল লেখায় শ্রীমতী শ্রীহরির ছবি আঁকে।

রাই ছবি আকে পটে গো, যারে হেরে নিতি গঠে যেতে

যমুনার তটে গো, সে বংশী বাজায়ে মঞ্জির পায়ে

নাচে ছায়া বটে গো, রাই ছবি আঁকে পটে গো।

আঁকিয়া শ্যামের মূরতি আঁকিল না রাধা শ্রীচরণ,

রাধা চরণ আঁকে না, তুলি তুলিয়া রাখে চরণ আঁকে না।

তখন ললিতা বলে-‘রাধা! রাধা! রাধা!

তুই আঁকলি না কেন চরণ রাধা!’

‘জীবন মরণ যে চরণে বাঁধা, আঁক্‌লি না কেন চরণ রাধা-

বিশ্বের ত্রাণ বৃন্দাবনের ধ্যানজ্ঞান ব্রজগোপী সাধা’-

‘আঁক্‌লি না কেন চরণ রাধা’-!

তখন রাধা কেঁদে বলে-‘ওগো ললিতা-

সখি আঁকিলে চরণ যাবে সে পালায়ে আমি হব পদদলিতা।

পলায়ে যাবে গো মথুরায়, আবার পালায়ে যাবে গো-

চির চপল সে মথুরায় আবার পালায়ে যাবে গো-

থাক্ লুকানো হৃদয়ে শ্রীচরণ।’

 

*৩৮০. তাল : দাদরা

জ্বলো দেয়ালি জ্বালো

অসীম তিমিরে শ্যামা মা যে অযুত কোটি আলো

         এলো শক্তি অশিব নাশিনী

         এলো অভয়া চির বিজয়িনি

কালো রূপের স্নিগ্ধ লাবনি নয়ন মন জুড়ালো

গ্রহ তারার দেওয়াললি জলিছে পবনে

জ্বলো দীপালি জীবনের সব ভবনে।

এলো শিবানী প্রাণ দিতে সবে

নাশিতে লোভী পাপ দানবে

রক্ষা করিতে পীড়িত মানবে ধরারে বাসিতে ভালো

 

        *৩৮১. তাল : দ্রুত-দাদ্‌রা

দ্বৈত : ঝুমুর নাচে ডুমুর গাছে ঘুঙুর বেঁধে গায় (লো)।

    : নাচব দুজন মাদল, বাঁশি, নূপুর নিয়ে আয় (লো)

স্ত্রী   : আর জনমে চোরকাঁটা তুই ছিলি (রে)

    : এই জনমে আঁচল ছিঁড়ে হৃদয়ে বিধলি।

পুরুষ : চোরকাঁটা নয় ছিলাম পানের খিলি লো

    : গয়না ছিলাম গায় (লো)

স্ত্রী   : ঝিলমিলিয়ে ঝিলের জল নাচায় শালুক ফুল-

পুরুষ : শালুক যেন মুখখানি তোর লো ঝিলের ঢেউ যেন এলোচুল।

স্ত্রী   : কুহু কুহু ডেকে কোকিল কাহার কথা কহে

পুরুষ : সেই কথা কয় কোয়েলা আর জনমে করেছি যা তোরই বিরহে।

দ্বৈত : সে জনমের দু’টি হৃদয় এ জনমে হায়

      এক হতে যে চায় লো এক হতে যে চায়

 

          

*৩৮২. তাল : ফেরতা (কাহারবা ও দ্রুত-দাদরা)

তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত।

যত চাহি তত কাঁদি, আমার মেটে না হসরত

কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্

প্রাণে শুধু জাগে(তোমার) মদিনার ঐ পথ

কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগে

আছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার  অনুরাগে।

মোর অন্তরের হেরা গুহায়

আজো তোমার ডাকে শোনা যায়

জাগে আমার মনের কাবা ঘরে তোমারি সুরত্-

    হযরত তোমারি সুরত্

যারা দোজখ হতে ত্রাণের তরে তোমায় ভালোবাসে

আমার এ প্রেম দেখে তারা কেউ কাঁদে কেউ হাসে।

তুমি জান হে মোর স্বামী, শাফায়াৎ চাহি না আমি

আমি শুধু তোমায় চাহি তোমার মুহব্বত

    হযরত তোমার মুহব্বত

*৩৮৩. তাল: কাহার্‌বা

তোর রূপে সই গাহন ক’রে জুড়িয়ে গেল গা

তোর গাঁয়েরি নদীর ঘাটে বাঁধলাম এ মোর না

    তোর চরণের আলতা লেগে

    পরান আমার উঠল রেঙে (রে)

ও তোর বাউরি কেশের বিনুনীতে জড়িয়ে গেল পা।

তোর বাঁকা ভুরু বাঁকা আঁখি বাঁকা চলন, সই,

দেখে পটে আঁকা ছবির মতন দাঁড়িয়ে পথে রই।

    উড়ে এলি’ দেশান্তরী

    তুই কি ডানা-কাটা পরী (রে)

তুই শুকতারারি সতিনী সই সন্ধ্যাতারার জা’

*৩৮৪. রাগ: ইমন-ভূপালি, তাল: ঝাঁপতাল

থির হয়ে তুই ব’স দেখি মা খানিক আমার আঁখির আগে

দেখব নিত্য লীলাময়ী থির হলে তুই কেমন লাগে

    শান্ত হ’লে ডাকাত মেয়ে

    কেমন দেখায় দেখব চেয়ে (মা গো)

চিন্ময় শিব শম্ভু কেন চরণ-তলে শরণ মাগে

দেখব চেয়ে জননী তুই সাকারা না নিরাকারা

কেমন করে কালি হয়ে নামে ব্রহ্ম জ্যোতিধারা।

    কোলে নিতে কোলের ছেলে

    শ্মশান জাগিস বাহু মেলে

কেমন ক’রে মহামায়া তোর বুকে মায়া জাগে

৩৮৫. তাল: কাহার্‌বা

নতুন ক’রে রেজওয়ান জিন্নত সাজায়

আজ রোজায় আজ রোজায় আজ রোজায়।

লাগল চাবি দোজখেরি দরওয়াজায়

    মসজিদেরি মিনার-চূড়ে

    আজ বেহেশ্‌তী নিশান উড়ে

গাফলতি নাই আর কারো নামাজ কাজায়

    রোজার শবেকদর রাতে

    কোরান এলো দুনিয়াতে

ফেরেশ্‌তা সব সালাম জানায় মোর্তজায়

*৩৮৬. তাল: ফের্‌তা

না মিটিতে মনোসাধ যেয়ো না হে শ্যামচাঁদ

    আঁধার করিয়া ব্রজধাম, সখা হে-।

সোনার বরনী রাই অঙ্গে মাখিয়া ছাই

    দিশা নাই কাঁদে অবিরাম, সখা হে-

অবিরাম কাঁদে রাই

তারে কাঁদায় যে তারি তরে

    অবিরাম কাঁদে সখা হে।

    এখানো মাধবী-লতা

    কহেনি কুসুম-কথা

        জড়াইয়া তরুর গলে,

এখনো ফোটেনি ভাষা

আধ-ফুট ভালোবাসা

        ঢাকা লাজ পল্লব-তলে।

        বলা হলো না, হলো না,

    বুকের ভাষা মুখে বলা যে হলো না।

সখা  আমরা নারী, বল্‌তে নারি!

    দুঃখের কথা মুখে বলতে নারি

    নয়ন জলে গলতে পারি

    তবু মুখে বলতে নারি

    মরণ-কোলে ঢল্‌তে পারি

সখা  মুখ ফুটে তবু বলতে নারি, সখা হে-

    নবীন নীরদ-বরণ শ্যাম জানিতাম মোরা তখনি,

ঐ   করুণ সজল কাজল মেঘে থাকে গো ভীষণ অশনি।

    তুমি আগুন জ্বালিয়ে,

ওহে নিরদয়! বুকে কেন আগুন জ্বালিয়ে।

বুকে আগুন জ্বালায়ে চোখে সলিল ঢালিলে!

তাহে আগুন নেভে কি?

    চোখেরি জলে ডুবে আগুন নেভে কি

        সখা হে- আগুন নেভে কি

*৩৮৭. রাগ: পলাশী মিশ্র, তাল: কাহার্‌বা

পলাশ ফুলের গেলাস ভরি’ পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া

চাঁদনী রাতের চাঁদোয়া তলে বুকের আঁচল দিব পাতিয়া

নয়ন-মণির মুকুরে তোমার দুলিবে আমার সজল ছবি

সবুজ ঘাসের শিশির ছানি মুকুতা মালিকা দিব গাঁথিয়া

    ফিরোজা আকাশ আবেশে ঝিমায়

    দীঘির বুকে কমল ঘুমায়

নীরব যখন পাখির কূজন আমরা দু’জন রব জাগিয়া

*৩৮৮. রাগ: মাঢ়, তাল: কাহার্‌বা

বকুল চাঁপার বনে কে মোর চাঁদের স্বপন জাগালে-

অনুরাগের সোনার রঙে হৃদয়-গগন রাঙালে

ঘুমিয়ে ছিলাম কুমুদ-কুঁড়ি বিজন ঝিলের নীল জলে

পূর্ণ শশী তুমি আসি’ আমার সে ঘুম ভাঙালে

হে মায়াবী তোমার ছোঁয়ায় সুন্দর আজ আমার তনু

তোমার মায়া রচিল মোর বাদল মেঘে ইন্দ্র ধনু।

    তোমার টানে হে দরদি

    দোল খেয়ে যায় কাঁদন-নদী

কূল হারা মোর ভালোবাসা আজকে কূলে লাগালে

*৩৮৯. রাগ: গান্ধারী, তাল: ত্রিতাল

ব্রজ-দুলাল ঘন শ্যাম

মোর হৃদে কর বিহার হে

নব অনুরাগের জ্বালায়ে বাতি

অঙ্গে অঙ্গে রাখি তব শেজ পাতি’

গাঁথি অশ্রু-মোতিহার হে

আরতি-প্রদীপ আঁখিতে জ্বালায়ে রাখি

পথ-পানে চাহি বার বার হে

নিবেদন করি নাথ তব চরণে

নিত্য পূজা-উপচার হে

বিরহ-গন্ধ-ধূপ বেদনা-চন্দন

পূজাঞ্জলি আঁখি-ধার হে

দেবতা এসো, খোল দ্বার হে

*৩৯০. রাগ: মল্লার, তাল: কাহার্‌বা

যাও মাঘদূত নিও প্রিয়ার হাতে

আমার বিরহ-লিপি লেখা কেয়া পাতে

আমার প্রিয়ার দীরঘ নিশাসে

থির হয়ে আছে মেঘ যে-দেশেরই আকাশে

আমার প্রিয়ার ম্লান মুখ হেরি’

ওঠে না চাঁদ আর যে-দেশে রাতে

পাইবে যে-দেশে কুন্তল-সুরভি বকুল ফুলে

আমার প্রিয়া কাঁদে এলায়ে কেশ সেই মেঘনা-কূলে।

স্বর্ণলতার সম যার ক্ষীণ করে

বারে বারে কঙ্কণ চুড়ি খুলে পড়ে

মুকুল’ বয়সে যথা বরষার ফুল-দল

বেদনায় মুরছিয়া আছে আঙিনাতে

*৩৯১. রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ, তাল: ফের্‌তা (কাহার্‌বা ও দাদ্‌রা)

রুমু রুমু রুমু ঝুমু বাজে নূপুর

তালে তালে দোদুল দোলে নাচের নেশায় চুর

চঞ্চল বায়ে আঁচল উড়ায়ে

চপল পায়ে ও কে যায়

নটিনী কল তটিনীর প্রায়

চিনি বিদেশিনী চিনি গো তায়

শুনি’ ছন্দ তারি এ হিয়া ভরপুর

নাচন শিখালে ময়ূর মরালে

মরিচী-মায়া মরুতে ছড়ালে

বন-মৃগের মন হেসে ভুলালে

ডাগর আঁখির নাচে সাগর দুলালে।

গিরিদরি বনে গো দোল লাগে নাচনের শুনে তারি সুর

*৩৯২. রাগ: সিন্ধু-ভৈরবী, তাল: কাহার্‌বা

সই  ভাল ক’রে বিনোদ-বেণী বাঁধিয়া দে

মোর বঁধু যেন বাঁধা থাকে বিননী-ফাঁদে

সই  বাঁধিতে সে বাঁধন-হারা বনের হরিণ

সই  জড়ায়ে দে জরীণ ফিতা মোহন ছাঁদে

সই  চপল পুরুষ সে তাই কুরুশ কাটায়

    রাখিব খোঁপারি সাথে বিঁধিয়া লো তায়।

তাহে রেশমি জাল বিছায়ে দে ধরিতে চাঁদে

    প্রথম প্রণয়-রাগের মত আলতা রঙে

    রাঙায়ে দে চরণ মোর এমনি ঢঙে।

সই  পায়ে ধ’রে সে যেন লো আমারে সাথে

*৩৯৩. তাল: কাহার্‌বা

মোর বেদনার কারাগারে জাগো, জাগো-বেদনাহারী হে মুরারি।

    অসীম দুঃখ ঘেরা কৃষ্ণা তিথিতে এসো এসো হে কৃষ্ণ গিরিধারী

    ব্যথিত এ চিত দেবকীর সম মূর্ছিত পাষাণেরি ভারে

    ডাকে প্রাণ-যাদব, এসো এসো মাধব উথলিছে প্রেম আঁখিবারি

        মুরারি উথলিছে প্রেম আঁখিবারি

    হৃদয়-ব্রজে মম ভক্তি প্রীতি জাগিয়া আছে আশায়,

    কদম্ব ফুল সম উঠিছে শিহরি’ মম শ্যাম-বরষায়।

    ওগো বন্‌শীওয়ালা, তব না শোনা বাঁশি

        শোনে অনুরাগ রাধা প্রণয় পিয়াসি;

    গোপন ধ্যানের মধুবনে তব নূপুর শুনি, হে কিশোর বনচারী

*৩৯৪. তাল: ফের্‌তা (দ্রুত-দাদ্‌রা ও কাহার্‌বা)

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার

পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কাণ্ডারি

নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার

থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল

পুণ্যহীন শূন্য মরু সম হৃদি-তল নাহি ফুল নাহি ফল

পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল

নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরি সম্বল।

সাহারায় নাহি জল

শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা

ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার

*৩৯৫. তাল: কাহার্‌বা

আজি আল কোরায়শী প্রিয় নবী এলেন ধরাধাম

তাঁর  কদম মোবারকে লাখো হাজারো সালাম।

তওরত ইঞ্জিল মুসা ঈসা পয়গম্বর

    বলেছিলেন আগাম যাঁহার আসারি খবর

    রব্বুলে দায়েব যাঁহার দিয়েছিলেন নাম

সেই আহ্‌মদ মোর্তজা আজি এলেন আরব ধাম

    আদমেরি পেশানিতে জ্যোতি ছিল যাঁর

    যাঁর গুণে নূহ্ তরে গেল তুফান পাথার

    যাঁর নূরে নমরুদের আগুন হলো ফুলহারা

    সেই মোহাম্মদ মুস্তাফা এলেন নিয়ে দীন-ইসলাম

    এলেন কাবার মুক্তিদাতা মসজিদের প্রাণ,

    শাফায়াতের তরী এলো পাপী তাপীর ত্রাণ

    দিকে দিকে শুনি খোদার নামের আজান

    নবীর রূপে এলো খোদার রহমতেরি জাম

*৩৯৬. রেকর্ড-নাটিকা: ‘বিসন্তিকা’, তাল: দাদ্‌রা

আজি চৈতী হাওয়ার মাতন লাগে হলুদ চাঁপার ডালে ডালে।

    তালী বনে বাজে তারি করতালি ঐ তালে তালে

    ভ্রমর মুখে গুনগুনিয়ে

    যায় সে মৃদু সুর শুনিয়ে

    শুক্‌নো পাতার মর্মরে তার নূপুর বাজে রুন্‌ঝুনিয়ে

    ফুলে পাতায় রঙ মাখায় সে ফিকে সবুজ নীলে লালে

আজি ওড়ে তাহার রঙের নিশান প্রজাপতির পাখার পালে পালে

*৩৯৭. তাল: দাদ্‌রা

আমি হব মাটির বুকে ফুল

প্রভাত বেলা হয়ত পাব তোমার চরণ মূল

    ঠাঁই পাব গো তোমার থালায়

    রইব তোমার গলার মালায়

সুগন্ধ মোর মিশবে হাওয়ায় আনন্দ আকুল

আমার রঙে রঙিন হবে বন

পাখির কণ্ঠে আনব আমি গানের হরষণ।

    নাই যদি নাও তোমার গলে

    তোমার পূজা বেদীর তলে

শুকাবো গো সেই হবে মোর মরণ অতুল

*৩৯৮.তাল: ফের্‌তা

আমিনার কোলে নাচে হেলে দুলে

শিশু নবী আহ্‌মদ্ রূপের লহর তুলে

রাঙা মেঘের কাছে ঈদের চাঁদ নাচে

যেন নাচে ভোরের আলো গোলাব গাছে।

চরণে ভ্রমরা গুঞ্জরে গুল ভূলে

সে খুশির ঢেউ লাগে আরশ্‌ কুর্‌সি পাশে

হাততালি দিয়ে হুরী সব বেহেশ্‌তে হাসে

সুখ ওঠে কেঁপে হিয়া চরণ মূলে

চাঁদনি রাঙা অতুল মোহন মোমের পুতুল

আদুল গায়ে নাচে খোদার প্রেমে বেভুল

আল্লার দয়ার তোহ্‌ফা এলো ধরার কূলে

*৩৯৯. রাগ: ধানি, তাল: দাদ্‌রা

আয় গোপিনী খেলবি হোরি ফাগের রাঙা পিচ্‌কারিতে

আজ শ্যামে লো করব ঘায়েল আবির হাসির টিট্‌কারিতে

রঙে রাঙা হয়ে শ্যাম আজ হবে যেন রাই কিশোরী

যমুনা জল লাল হবে আজ আবির ফাগের রঙের ভরি

কপালে কলঙ্ক মোদের ধুয়ে যাবে রঙ ঝরিতে

    গুরুজনার গঞ্জনা আজ

    সইব না লো মানব না লাজ

কূল ভুলে গোকুল পানে ভেসে যাব রাঙা গীতে

৪০০. তাল. কাহার্‌বা

আয় নেচে নেচে আয় রে বুকে দুলালী মোর কালো মেয়ে

দগ্ধ দিনের বুকে যেমন আসে শীতল আঁধার ছেয়ে

    আমার হৃদয় আঙিনাতে

    খেলবি মা তুই দিনে রাতে

মোর সকল দেহ নয়ন হয়ে দেখবে মা তাই চেয়ে চেয়ে

হাত ধরে মোর নিয়ে যাবি তোর খেলাঘর দেখাবি মা

এইটুকু তুই মেয়ে আমার কেমন করে হ’স অসীমা।

    লুটে নিবি চতুর্ভুজা

    আমার স্নেহ প্রেম-পূজা

(মা) নাম ধরে তোর ডাকব মা যেই যেথায় থাকিস আসবি ধেয়ে