ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
*৪০১. তাল: ত্রিতাল অনাদিকাল হতে অনন্তলোক গাহে তোমারি জয়। আকাশ-বাতাস রবি-গ্রহ তারা চাঁদ, হে প্রেমময়॥ সমুদ্র-কল্লাল নির্ঝর-কলতান- হে বিরাট, তোমারি উদার জয়গান; ধ্যান গম্ভীর কত শত হিমালয় গাহে তোমারি জয়॥ তব নামের বাজায় বীণা বনের পল্লব জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব। সকল জাতির কোটি উপাসনালয় গাহে তোমারি জয়॥ আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায় তব জয়গান বাজে অপরূপ মহিমায়, কোটি যুগ-যুগান্ত সৃষ্টি প্রলয় গাহে তোমারি জয়॥ *৪০২. তাল: কাহার্বা অনেক কথা বলার মাঝে লুকিয়ে আছে একটি কথা। বলতে নারি সেই কথাটি তাই এ মুখর ব্যাকুলতা॥ সেই কথাটি ঢাকার ছলে অনেক কথা যাই গো ব’লে ভাসি আমি নয়ন-জলে বল্লে গিয়ে সেই বারতা॥ অবকাশ দেবে কবে সাহস পাবে প্রাণে লজ্জা ভুলে সেই কথাটি বলব তোমার কানে কানে। মনের বনে অনুরাগে কত কথার মুকুল জাগে সেই মুকুলের বুকে জাগাও ফুটে ওঠার ব্যাকুলতা॥ *৪০৩. রাগ: সাহানা-বাহার, তাল: কাহার্বা অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনা॥ যৌবন-মদ গর্বিত তন্বী আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহিৃ, তব চরণের পরশ বিনা অশোক তরু মুঞ্জরে না॥ নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা, প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা। নৃত্য শেষের তব নূপুরগুলি হায় রয়েছে ছড়ানো আকাশের তারকায় সুর-লোক-ঊর্বশী হে বসন্ত-সেনা! চির-চেনা॥ *৪০৪. রেকর্ড-নাটিকা : ‘লায়লি মজনু’, তাল: কাহার্বা আজকে শাদী বাদ্শাজাদীর পান করো শিরাজি॥ নেশার ঝোঁকে চোখে চোখে খেলুক আতস বাজি (সবে) পান করো শিরাজি॥ সামনে মোরা যাকে পাব রঙিন পানি পান করাব প্রাণে খুশির রঙ ঝরাব নেচে গেয়ে আজি সবে পান করো শিরাজি॥ *৪০৫. রাগ: বেহাগ, তাল: দাদ্রা আনমনে জল নিতে ভাসিল গাগরি সাঁতার জানি না, আনি কলস কেমন করি॥ জানি না বলিব কি শুধাবে যবে ননদী কাহার কথা ভাবে পোড়া মন নিরবধি কলসি না ভাসিয়া ভাসিতাম আমি যদি কি বলিব কেন মোর ভিজিল ঘাগরি॥ একেলা কুলবধূ, পথ বিজন, নদীর বাঁকে ডাকিল বৌ-কথা-কও কেন হলুদ চাঁপার শাখে বিদেশে শ্যাম আমার পড়ল মনে সেই সে ডাকে ঠাঁই দে যমুনে, বুকে, আমিও ডুবিয়া মরি॥ *৪০৬. রাগ: পিলু-বারোয়াঁ, তাল: দ্রুত-দাদ্রা আমার গানের মালা আমি করব কারে দান মালার ফুলে জড়িয়ে আছে করুণ অভিমান মালা করব কারে দান॥ চোখে মলিন কাজল লেখা কণ্ঠে কাঁদে কুহু কেকা, কপোলে যার অশ্রু-রেখা একা যাহার প্রাণ মালা করব কারে দান॥ কথায় আমার কাঁটার বেদন মালায় সূচির জ্বালা, কণ্ঠে দিতে সাহস না পাই অভিশাপের মালা (ঐ)। বিরহে যার প্রেম-আরতি আঁধার লোকের অরুন্ধতী নাম না জানা সেই তপতী তারি তরে গান মালা করব কারে দান॥ *৪০৭. তাল: কাহার্বা আল্লাজী আল্লাজী রহম কর তুমি যে রহমান দুনিয়াদারির ফাঁদে পড়ে কাঁদে আমার প্রাণ॥ পাই না সময় ডাকতে তোমায় বৃথা কাজে দিন বয়ে যায় চলতে নারি মেনে আমার নবীর ফরমান॥ দুনিয়াদারির চিন্তা এসে মনকে ভোলায় সদা তাইতো মনে তোমায় স্মরণ করতে নারি খোদা। দাও অবসর তুমি ডাকার এই বেদনা সহে না আর সংসারের এই দোজখ হতে করো মোরে ত্রাণ॥ *৪০৮. তাল: কাহার্বা আল্লার নাম জপিও ভাই দিবসে ও রেতে সকল কাজের মাঝে রে ভাই তাঁহার রহম পেতে কোরাস: আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, হাত করবে কাজ রে ভাই মন জপবে নাম ঐ নাম জপ্তে লাগে না ভাই টাকা কড়ি দাম, নাম জপো ভাই মাঠে ঘাটে হাটের পথে যেতে। কোরাস: আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্,॥ ঐ আল্লার নাম যদি রে ভাই তুমি থাকো ধ’রে ঐ নামও তোমায় থাকবে ধ’রে দুঃখ বিপদ ঝড়ে, ঐ নামেরে সঙ্গী করো নাইতে শুতে খেতে। কোরাস: আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্,আল্লাহ্,॥ তোমার দেহ মন হবে রে ভাই নূরেতে রওশন তখন আমির ফকির চাইবে সবাই তোমার দরশন মাতোয়ারা হও যিকির করো খোদার প্রেমে মেতে। কোরাস: আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্,॥ *৪০৯. তাল: কাহার্বা আল্লার নাম লইয়া বান্দা রোজ ফজরে উঠিও আল্লা নামের আহ্লাদে ভাই ফুলের মতন ফুটিও॥ কাজে তোমার যাইয়ো বান্দা আল্লারি নাম লইয়া ঐ নামের গুণে কাজের ভার যাইবে হাল্কা হইয়া। শুনলে আজান কাজ ফেলিয়া মসজিদে শির লুটিও॥ আল্লার নাম লইয়া রে ভাই কইরো খানাপিনা হাটে মাঠে যাইয়ো না ভাই আল্লারই নাম বিনা। ওয়াজ নসিহত হইলে মজলিসে আইসা জুটিও॥ স্ত্রী পুত্র কন্যা তোমার খোদায় সঁপে দিও আল্লার নাম জিকির কইরা নিশীথে ঘুমিও। এই নাম শুইনা জন্মেছ ভাই এই নাম লইয়া মরিয়ো॥ *৪১০. তাল: কাহার্বা আল্লাহ্ রসুল বোল্ রে মন আল্লাহ্ রসুল বোল্। দিনে দিনে দিন গেল তোর দুনিয়াদারি ভোল্॥ রোজ কেয়ামতের নিয়ামত এই আল্লাহ্-রসুল বাণী তোর আখেরের ভুখের খোরাক পিয়াসের ঐ পানি তোর দিল্ দরিয়ায় আল্লাহ্-রসুল জপের লহর তোল্॥ তোর স্ত্রী-পুত্র ভাই-বেরাদর কেউ হবে না সাথি আঁধার গোরে রইবি প’ড়ে জ্বালবে না কেউ বাতি। যে নামে হেসে পার হবি তুই পুল-সেরাতের পোল্॥ (ওরে) হাড়-ভাঙা খাটুনি খেটে ঘুরে ঘুরে পথে আনিস যা তুই লাগবে না তা তোর কাজে আকবতে। যে যে নাম জ’পে পাবি রে তুই মোস্তফারই কোল্॥
*৪১১. তাল: দ্রুত-দাদ্রা ইয়া আল্লাহ্, তুমি রক্ষা কর-দুনিয়া ও দ্বীন্। শান-শওকতে হোক পূর্ণ আবার নিখিল মুস্লেমিন। আমিন আল্লাহুম্মা আমিন॥ (খোদা) মুষ্টিমেয় আরববাসী যে ঈমানের জোরে তোমার নামের ডঙ্কা বাজিয়েছিল দুনিয়াকে জয় ক’রে (খোদা) দাও সে ঈমান, সেই তরক্কী, দাও সে একিন্। খোদা দাও সে একিন্। আমিন আল্লাহুম্মা আমিন॥ হায়! যে-জাতির খলিফা ওমর শাহানশাহ্ হয়ে ছেঁড়া কাপড় প’রে গেলেন উপবাসী র’য়ে আবার মোদের সেই ত্যাগ দাও, খোদা ভোগ-বিলাসে মোদের জীবন ক’রো না মলিন। আমিন আল্লাহুম্মা আমিন॥ (খোদা) তুমি ছাড়া বিশ্বে কারো করতাম না ভয় তাই বিশ্বে হয়নি মোদের কভু পরাজয় দাও সেই দীক্ষা শক্তি সেই ভক্তি দ্বিধাহীন। আমিন আল্লাহুম্মা আমিন॥ *৪১২. তাল: কাহার্বা ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক দোস্ত ও দুশমন পর ও আপন সবার মহল আজ হউক রওনক ॥ যে আছ দূরে যে আছ কাছে, সবারে আজ মোর পরান যাচে সবারে জানাই এ দিল আশক্॥ এ দিল যাহা কিছু সদাই চাহে দিলাম জাকাত খোদার রাহে মিলিয়া ফকির শাহান্শাহে ঐ ঈদগাহে গাহুক ইয়াহক্। এনেছি শিরনি প্রেম পিয়ালার এসো হে মোমিন কর হে ইফতার প্রেমের বাঁধনে কর গেরেফ্তার খোদার রহম নামিবে বেশক্॥ *৪১৩. রেকর্ড-নাটিকা: ‘ঈদল ফেতর’, তাল: কাহার্বা ঈদের খুশির তুফানে আজ ভাসলো দো জাহান এই তুফানে ডুবু ডুবু জমিন ও আসমান॥ ঈদের চাঁদের পান্সি ছেড়ে বেহেশ্ত্ হতে কে পাঠালো এত খুশি দুখের জগতে শোন ঈদ্গাহ হতে ভেসে আসে তাহারি আজান॥ *৪১৪. রেকর্ড-নাটিকা: ‘প্রতাপদিত্য,’ (নাট্যকার: যোগেশ চৌধুরী) তাল: দ্রুত-দাদ্রা এই আমাদের বাংলাদেশ এই আমাদের বাংলাদেশ যে দিকে চাই স্নিগ্ধ শ্যামল চোখ জুড়ানো রূপ অশেষ॥ চন্দনিত শীতল বাতাস বয় দেশে নিরন্তর জোছনা সম কোমল হয়ে আসে হেথায় রবির কর জীবন হেথায় স্নেহ সরস সরল হৃদয় সহজ বেশ॥ নিত্য হেথা ঝরছে মেঘে স্বর্গ হতে শান্তি জল মাঠে ঘাটে লক্ষ্মী হেথায় ছড়িয়ে রাখে ফুল কমল। হাঙ্গোর কুমির শার্দুল সাপ খেলার সাথি এই জাতির দিল্লীর যশ করল হরণ এই দেশেরি প্রতাপ বীর একদা এই দেশের ছেলে জয় করেছে দেশ বিদেশ॥ *৪১৫. রাগ: ভীমপলশ্রী মিশ্র, তাল: দাদ্রা এলো ঐ পূর্ণ শশী ফুল-জাগানো বহে বায় বকুল-বনে ঘুম-ভাঙানো॥ লাগিল জাফরানি-রঙ শিউলি-ফুলে ফুটিল প্রেমের কুঁড়ি পাপড়ি খুলে, খুশির আজ আমেজ জাগে মন-রাঙানো॥ চাঁদনী ঝিলমিলায় ঝিলের জলে, আবেশে শাপ্লা ফুলের মৃণাল টলে, জাগে ঢেউ দীঘির বুকে দোল-লাগানো॥ এসো আজ স্বপন-কুমার নিরিবিলি খুলিয়া গোপন প্রাণের ঝিলিমিলি, এসো মোর হতাশ প্রাণে ভুল-ভাঙানো॥ *৪১৬. এসো কৃষ্ণ কানাইয়া তমাল বনে সাজো ঝুলনের সাজে তারে গোপ বালিকার মালা পরাব আজি এ রাখাল রাজে॥ নব নীপমালা পরি আসিল কিশোর হরি বাজিল ঘন মেঘে বাঁশরি বৃষ্টিতে নূপুর বাজে॥ সে এসেছে ঐ চন্দন মন্থন তনু গোপী বরণ এসেছে নীল লাবনিতে ছাইয়া অবনি বিদ্যুত হাসি হেসেছে। ঘনঘটা গগনে দোলা লাগায় মনে মনে। দোলা লেগেছে, নয়নে মনে দোলা লেগেছে শয়নে স্বপনে দোলা লেগেছে-বাঁধো বাঁধো ঝুলনা খোঁপায় পরিয়া দোপাটি মালিকা সাজো সাজো অতুলনা নির্দয় হৃদয়হীনে বাঁধিব হৃদয়মাঝে॥ *৪১৭. তাল: কাহার্বা এলো রমজানেরি চাঁদ এবার দুনিয়াদারি ভোল সারা বরষ ছিলি গাফেল এবার আঁখি খোল্॥ এই একমাস রোজা রেখে পরহেজ থাক গুনাহ্ থেকে কিয়ামতের নিয়ামত তোর ঝুলি ভরে তোল্॥ বন্দী রহে এই মাসে শয়তান মালাউন (তার) এই মাসে যা করবি সওয়াব দর্জা হাজার গুণ। ভোগ বিলাসে মাখ্লি যে পাঁক রমজানে তা হবে রে সাফ একতারে তোর কর রে সামান আল্লা রসুল বোল্॥ *৪১৮. রাগ: ইমন মিশ্র, তাল: কাহার্বা এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে, ঐ বৈশাখী ঝড় এলো এলো মহীয়ান সুন্দর। পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর চরাচর থরথর॥ ঘনবন-কুন্তলা বসুমতী সভয়ে করে প্রণতি, সভয়ে নত চরণে ভীতা বসুমতী। সাগর তরঙ্গ মাঝে তারি মঞ্জিল যেন বাজে বাজে রে পায়ে গিরি-বির্ঝর-ঝরঝর ঝরঝর॥ ধূলি-গৈরিক নিশান দোলে ঈশান গগন চুম্বী, ডম্বরু ঝল্লরী ঝাঁঝর ঝনঝন বাজে এলো ছন্দ বন্ধন-হারা এলো রে এলো মরু-সঞ্চর বিজয়ী বীরবর॥
*৪১৯. রাগ: পাহাড়ি মিশ্র, তাল:কাহার্বা এসো নূপুর বাজাইয়া যমুনা নাচাইয়া কৃষ্ণ কানাইয়া হরি। মাখি, গোখুর ধূলিরেণু গোঠে চরাইয়া ধেনু বাজায়ে বাঁশের বাঁশরি॥ গোপী চন্দন চর্চিত অঙ্গে প্রাণ মাতাইয়া প্রেম তরঙ্গে বামে হেলায়ে ময়ূর পাখা দুলায়ে তমাল শাখা নীপবনে, দাঁড়ায়ে ত্রিভঙ্গে। এসো লয়ে সেই শ্যম-শোভা ব্রজ বধূ মনোলোভা সেই পীত বসন পীত পরি’ ॥ এসো গগনে ফেলি নীল ছায়া আনো পিপাসিত চোখে মেঘ মায়া। এসো মাধব মাধবী-তলে এসো বনমালী বন-মালা গলে এসো ভক্তিতে প্রেমে আঁখি জলে এসো তিলক-লাঞ্ছিত সুর-নর-বাঞ্ছিত বামে লয়ে রাই কিশোরী॥ *৪২০. নাটক: ‘মদিনা’ তাল: কাহার্বা এসো এসো পাহাড়ি ঝর্ণা মেঘ সজল কাজল বর্ণা এসো জল ছিটিয়ে ফুল ফুটিয়ে এসো॥ উপল নুড়িতে কাঁকন চুড়িতে রিনি ঠিনি ছন্দে বন্য আনন্দে এসো এসো ছলছল ঝলমল আঁচল লুটিয়ে এসো॥ তৃষ্ণায় ডাকে কূলে কূলে হরিণী আনো তৃষ্ণার জল নির্ঝরিণী। ফুলবনে ভ্রমর দল জুটিয়ে এসো॥ এসো তপ্ত ধরার বক্ষে, শান্তি ধারা আনো চক্ষে শীতল হোক খরতর বায়ু, নির্জীব প্রান্তরে আনো পরমায়ু এসো পাষাণ-করার ঘুম টুটিয়ে এসো॥ *৪২১. রাগ; সিন্ধু-কাফি, তাল: দাদ্রা এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে। এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে॥ দলি,শাপলা শালুক শতদল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল নীল লাবনি ঝরায়ে ঢলঢল এসো অরণ্য পর্বতে॥ এসো ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়ে কেতকী পাতার তরণী এসো বলাকার রঙ পালক কুড়ায়ে বাহি’ ছায়াপথ-সরণি। শ্যাম শস্যে কুসুমে হাসিয়া এসো হিমেল হাওয়ায় ভাসিয়া এসো ধরণীরে ভালোবাসিয়া দূর নন্দন-তীর হতে॥ *৪২২, রাগ: পাহাড়ি, তাল: কাহার্বা ও কালো বউ! জল আনিতে যেয়ো না আর বাজিয়ে মল। তোমায় দেখে শিউরে ওঠে কাজ্লা দীঘির কালো জল। ওগো কাজলা দীঘির কালো জল॥ দেখে তোমার কালো আঁখি, কালো কোকিল ওঠে ডাকি’ তোমার চোখের কাজল মাখি’ হয় সজল ঐ মেঘ-দল ওগো হয় সজল ঐ মেঘ-দল॥ তোমার কালো রূপের মায়া দুপুর রোদে শীতল ছায়া কচি অশথ্ পাতায় টলে ঐ কালো রূপ টলমল॥ ভাদর মাসের ভরা ঝিলে তোমার রূপের আদল মিলে গো- তোমার তনুর নিবিড় নীলে আকাশ করে টলমল। ঐ আকাশ করে টলমল॥ *৪২৩. তাল: কাহার্বা ওগো ও আমার কালো- গহন বনে বুকের মাঝে জ্বালো তুমি জ্বালো ওগো আমার আলো গো॥ কাজ্লা মেঘের অন্তরালে তোমার রূপের মানিক জ্বলে আমার কালো মনের তলে জ্বালাও তুমি আলো গো॥ এক্লা ব’সে দিন যেন মোর কাটে কইতে কথা বুক যে আমার ফাটে গো আঁধার যখন আস্বে ঘিরে জ্বালবে তুমি আলো গো॥ *৪২৪. তাল: কাহার্বা ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ তোমায় হেরে হৃদয় সাগর আনন্দে উন্মাদ॥ তোমার রাঙা তশতরিতে ফিরদৌসের পরী খুশির শিরনি বিলায় রে ভাই নিখিল ভুবন ভরি খোদার রহম পড়ছে তোমার চাঁদনী রূপে ঝরি। দুখ ও শোক সব ভুলিয়ে দিতে তুমি মায়ার ফাঁদ॥ তুমি আসমানে কালাম ইশারাতে লেখা যেন মোহাম্মদের নাম। খোদার আদেশ তুমি জান স্মরণ করাও এসে জাকাত দিতে দৌলত সব দরিদ্রেরে হেসে শত্রুরে আজি ধরিতে বুকে শেখাও ভালবেসে। তোমায় দেখে টুটে গেছে অসীম প্রেমের বাঁধ॥ *৪২৫. তাল: দ্রুত-দাদ্রা কানে আজো বাজে আমার তোমার গানের রেশ নয়নে মোর জাগে তোমার নয়নের আবেশ॥ তোমার বাণী অনাহত দুলে কানে দুলের মত ও গান যদি কুসুম হত সাজাতাম মোর কেশ॥ নদীর ধারে যেতে নারি শুনে তোমার সুর মনে আনে তোমার গান করুণ বিধুর। শুনি বুনো পাখির গীতি জাগে তোমার গানের স্মৃতি পরান আমার যায় যে ভেসে তোমার সুরের দেশ॥ *৪২৬. রাগ: রামদাসী মল্লার, তাল: কাহার্বা (কার) ঝর ঝর বর্ষণ বাণী যায় দিক্ দিগন্তে বেদনা হানি’॥ করুণ সুরে দূর অলকায় যেন অবিরল বীণা বাজায় বিরহের বীণাপাণি॥ গীত পিপাসিত বসুন্ধরা শোনে সেই সুর প্রাণ উদাস করা। তারি ভাষায় বেদনা আভাস কাঁদায় ভুবন আকাশ বাতাস পথ প্রান্তর বনানী॥ *৪২৭. তাল: কাহার্বা কার বাঁশরি বাজিল মেঠো সুরে মন উদাস করা দুপুরে (গো)। সখি কে কাহারে চায় আজো সুরে সুরে ঝুরে ঝুরে কাহারে ধেয়ায় মোর মন যেতে চায় বাঁশুরিয়ার সুরের দেশে উড়ে (গো)॥ হেরি যেতে নদী পথে সে ভাঁট ফুলেরি মালা গেঁথে ভাসায় ভাটির স্রোতে (গো) আমার সাধ জাগে ঐ মালা যাহার দেখি সেই বঁধু রে (গো)॥ *৪২৮. তাল: ফের্তা কালো জাম রে ভাই! আম কি তোমার ভায়রা ভাই? লাউ বুঝি তোর দিদি মা, আর কুমড়ো তোর দাদা মশাই॥ তরমুজ তোমার ঠাকুমা বুঝি কাঁঠাল তোমার ঠাকুরদা গোলাপজাম তোর মাসতুতো ভাই জামরুল কি ভাই তোর বোনাই॥ পেয়ারা কি তোর লাটিম রে ভাই চিচিঙ্গে তোর লাঠি জাম্বুরা তোর ফুটবল আর লংকা চুষি কাঠি। টোপা কুল তোর বৌ বুঝি আর বৈঁচি লেবু তোর বেহাই। নোনা আতা সোনা ভাই তোর রাঙা দি তোর লাল মাকাল, ডাব বুঝি তোর পানি-পাঁড়ে ঢিল বুঝি ভাদুরে তাল। গেছো দাদা আয় না নেমে গালে রেখে চুমু খাই॥ *৪২৯. নাটিকা: ‘পুতুলের বিয়ে’, তাল: কাহার্বা কুলের আচার নাচার হয়ে আছিস কেন শিকায় ঝুলে কাচের জারে বেচারা তুই মরিস কেন ফেঁপে ফু’লে॥ কাঁচা তেঁতুল পেয়ারা আম ডাঁশা জামরুল আর গোলাপ-জাম- যেমনি তোরে দেখিলাম অমনি সব গেলাম ভুলে॥ *৪৩০. নাটক: ‘সাবিত্রী’, রাগ: সিন্ধু-কাফি,১ তাল: কাহার্বা কুসুম-সুকুমার শ্যামল তনু হে ফুল-দেবতা লহ প্রণাম। বিটপী লতায় চিকন পাতায় ছিটাও হাসি কিশোর শ্যাম॥ পূজার থালা এ অর্ঘ্য-ডালা এনেছি দিতে তোমার পায় দেহ শুভ বর কুসুম-সুন্দর হোক নিখিল নয়নভিরাম এ বিশ্ব বিপুল কুসুম-দেউল হোক তোমার ফুল কিশোর মুরলী করে এসো গোলক-বিহারী হোক ভূ-লোক আনন্দ-ধাম॥ ১. বাগেশ্রী-সিন্ধু
*৪৩১. তাল: কাহার্বা কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল রে মন, কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল্ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল রে মন, প্রেমের লহর তোল্ রে মন মায়ার বন্ধন খোল॥ নিরালা হৃদয়-যমুনাতে কে বাজায় বাঁশি আধেক রাতে তুই কুল ভুলে চল তাহারি সাথে প্রেম-আনন্দে দোল্। ও তুই প্রেম-আনন্দে দোল্॥ সে গোলক হতে ভালবাসে গোকুল বৃন্দাবন মধুর প্রেমের-ভিখারি সে মদন মোহন। প্রেম দিয়ে যে বাঁধতে পারে, সাধ করে তার কাছে হারে মুনি-ঋষি পায় না তারে গোপীরা পায় কোল্। ও তার গোপীরা পায় কোল্॥ *৪৩২. তাল: দ্রুত-দাদ্রা ক্ষীণ তনু যৌবন ভার বইতে নারি ধীরে চল গোরী ধীরে ধীরে টলে টুটে না যায় যেন নাগরি নীল চোলি ভিজিয়া না যায় নীরে॥ কঠিন ধরা হানে বেদনা কোমল পায়ে মুছায়ে দিব ব্যথা ব’স এ বকুল ছায়ে ‘না’ বলি মুচ্কিয়া হেসো না ফিরে ফিরে॥ দাঁড়ায়ে কত পথিক বহিতে সই ভার তব যদি চাহ গো সখি ভার তব আমি লব দাও আমারে ঠাঁই, তব ঐ তনুর তীরে॥ *৪৩৩. তাল: কাহার্বা খেলত বায়ু ফুলবন-মে, আও প্রাণ-পিয়া আও মন-মে প্রেম-সাথি আজ রজনী, গাও প্রেম-পিয়া॥ মন-বন মে প্রেম মিলি দোলত হ্যয় ফুল কলি বোলত হ্যয় পিয়া পিয়া বাজে মুরলীয়া, আওয়ে শ্যাম পিয়া॥ মন্দির মে রাজত হ্যয় পিয়া তব মূরতি প্রেম পূজা লেও পিয়া, আও প্রেম-সাথি। চাঁদ হাসে তারা সাথে আও পিয়া প্রেম-রথে সুন্দর হ্যয় প্রেম-রাতি আও মোহনীয়া, আও প্রাণ পিয়া॥ *৪৩৪. নাটিকা: ‘পুতুলের বিয়ে, তাল: দাদ্রা খেলি আয় পুতুল-খেলা ব’য়ে যায় খেলার বেলা সই। বাবা ঐ যান আপিসে ভাব্না কিসের খোকারা দোলায় ঘুমোয় ঐ॥ দাদা যান ইস্কুলেতে, মা খুড়ি মা রান্না করেন ঐ হেঁসেলে ঠান্দি দাওয়ায় ঝিমায় ব’সে ফোক্লা বদন মেলে। আয় লো ভুলি পঞ্চি টুলি পট্লি খেঁদি কই॥ *৪৩৫. তাল: দাদ্রা খোদায় পাইয়া বিশ্ব বিজয়ী ছিল একদিন যারা খোদায় ভুলিয়া ভীত পরাজিত আজ দুনিয়ায় তারা॥ খোদার নামের আশ্রয় ছেড়ে ভিখারির বেশে দেশে দেশে ফেরে ভোগ বিলাসের মোহে ভুলে, হায় নিল বন্ধন কারা॥ খোদার সঙ্গে যুক্ত সদাই ছিল যাহাদের মন দুখে রোগে শোকে অটল যাহারা রহিত সর্বক্ষণ। এসে শয়তান ভোগ বিলাসের কাড়িয়া লয়েছে ঈমান তাদের খোদায় হারায়ে মুসলিম আজ হয়েছে সর্বহারা॥ *৪৩৬. তাল: কাহার্বা গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে। তা’রি আশায় গানের ভেলা ভাসাই পারাবারে॥ জানি জানি আমার এ সুর পাবেই পাবে চরণ বঁধুর ঐ ভেলাতে আসবে বঁধু গভীর অন্ধকারে॥ ঘুমে যখন মগ্ন সবাই বন্ধু আমার আসে ফুলের মতন সুরগুলি তার চেয়ে’ হাসে। উদ্দেশে তার গানগুলি মোর যায় ভেসে যায় নেশায় বিভোর যেমন ক’রে ছায় গো তপন চাঁদের অধিকারে॥ ৪৩৭. তাল: দাদ্রা চুড়ি কিঙ্কিনী রিনি রিন ঝিনি বীণ বাজায়ে চলে শুনি নদীর নীল জলে জোয়ার উথলে॥ বাজে পায়ে পাঁইজোর ঘুঙুর ঝুমুর ঝুমুর গাহে পাপিয়া পিয়া পিয়া শুনি সে সুর শত পরান হতে চায় ঐ চরণে নূপুর হৃদি হতে চায় চাবি তাহার আঁচলে॥ পথিক বধিতে কি নদীতে সে জলকে যায় ছল্ ছল্ বলি তাহার কলসিতে জল ছ’ল্কে যায় কাজল-ঘন চোখে বিজলি জ্বালা ঝল্কে যায় মন-পতঙ্গ ধায় ঐ আঁখির অনলে শুনি নদীর নীল জলে জোয়ার উথলে॥ *৪৩৮. রাগ: হেমকল্যাণ, তাল: ঝাঁপতাল জাগো অমৃত-পিয়াসি চিত আত্মা অনিরুদ্ধ কল্যাণ প্রবুদ্ধ। জাগো শুভ্র জ্ঞান পরম নব প্রভাত পুষ্প সম আলোক-স্নান-শুদ্ধ॥ সকল পাপ কলুষ তাপ দুঃখ গ্লানি ভোলো পুণ্য প্রাণ-দীপ-শিখা স্বর্গ পানে তোলো। বাহিরে আলো ডাকিছে জাগো তিমির কারারুদ্ধ॥ ফুলের সম আলোর সম ফুটিয়া ওঠ হৃদয় মম রূপ রস গন্ধে অনায়াস আনন্দে জাগো মায়া-বিমুগ্ধ॥ *৪৩৯. তাল: দাদ্রা জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ। তুমি আপনি এসে দেবে ধরা দূর-আকাশের চাঁদ॥ চকোর নহি মেঘও নহি আপন ঘরে বন্দী রহি’ আমি শুধু মনকে কহি কাঁদ্ নিশি দিন কাঁদ্॥ কূল-ডুবানো জোয়ার কোথা পাব হে সুন্দর? হে চাঁদ আমি সাগর নহি পল্লী-সরোবর। নিশীথ তারে আমার নীরে, প্রেমের কুমুদ ফোটে ধীরে, মোর ভীরু প্রেম যেতে নারে ছাপিয়ে লাজের বাঁধ॥ *৪৪০. নাটিকা: ‘অর্জুন বিজয়,’ তাল: দ্রুত-দাদরা ঝুমঝুম্ ঝুমরা নাচ নেচে কে এলো গো সই লো দেখে আয়। বৈঁচি বনে বিরহে বাউরি বাতাস বহে এলোমেলো গো॥ আঁড়বাঁশি বাজায় আড়চোখে তাকায় তীর হানার ভঙ্গীতে ধনুক বাঁকায় নন্দন পাহাড়ে তাহারে দেখে চাঁদ আঁউরে গেল গো॥ মোরলা মাছ যেন খেলে বেড়ায় গো কালো জলে। মৌটুসির মৌ ফেলে ভোমরা রয় তাকিয়ে গুরুজনের মত বটের তরু দাঁড়িয়ে জট পাকিয়ে আমলকি গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখি, দেখতে কি তা পেল গো(সে)॥ *৪৪১. রাগ: ছায়ানট, তাল: দাদ্রা ডাক্তে তোমায় পারি যদি আড়াল থাক্তে পারবে না এখন আমি ডাকি তোমায় তখন তুমি ছাড়বে না॥ যদি দেখা না পাই কভু- সে দোষ তোমার নহে প্রভু সে সাধনায় আমারি হার জানি তুমি ছাড়বে না॥ বহু লোকের চিন্তাতে মোর বহু দিকে মন যে ধায়, জানি জানি, অভিমানী পাইনে আজ তাই তোমায়। বিশ্ব, ভুবন ভুলে যেদিন তোমার ধ্যানে হব বিলীন, সেদিন আমার বক্ষ হতে চরণ তোমার কাড়বে না॥ *৪৪২. তাল: কাহার্বা তুমি লহ আমার সংসারেরি ভার লহ সংসারেরি ভার আজকে অতি ক্লান্ত আমি বইতে নারি আর এ ভার বইতে নারি আর॥ সংসারেরি তরে খেটে জনম আমার গেল কেটে (ওরে) তবু অভাব ঘুচল না (আমার) হায় খাটাই হল সার॥ বিফল যখন হলাম পেতে সবার কাছে হাত তখন তোমায় পড়ল মনে হে অনাথের নাথ। অভাবকে আর করি না ভয় তোমার ভাবে মগ্ন হৃদয় তোমায় ফিরিয়ে দিলাম হে মায়াময় তোমারি সংসার॥ *৪৪৩. তাল: দাদ্রা তুমি সুন্দর কপট হে নাথ! মায়াতে রাখ বিভোর। তোমার ছলনা যে বোঝে না নাথ সেই সে দুঃখী ঘোর॥ কত শত রূপে নিঠুর আঘাতে তুমি চাও নাথ তোমারে ভোলাতে তবু যে তোমারে ভুলিতে পারে না ধরা দাও তারে চোর॥ কাঁদাও তাহারে নিশিদিন তুমি যপে যে তোমার নাম তোমারে যে চাহে শত বন্ধনে বাঁধ তারে অবিরাম। সাগরে মিশাতে চায় বলে নদী জনম গোঁয়ায় কেঁদে নিরবধি ভক্তে তেমনি দিয়াছ যে নাথ অসীম আঁখি-লোর॥ *৪৪৪. তাল: কাহার্বা দাসী হতে চাই না আমি হে শ্যাম কিশোর বল্লভ, আমি তোমার প্রিয়া হওয়ার দুঃখ লব। জানি জানি হে উদাসীন দুঃখ পাব অন্ত বিহীন বঁধুর আঘাত মধুর যে নাথ সে গরবে সকল সব॥ তোমার যারা সেবিকা নাথ, আমি নাহি তাদের দলে, সর্বনাশের আশায় আমি ভেসেছি প্রেম-পাথার জলে। দয়া যে চায় যাচুক চরণ আমার আশা করব বরণ বিরহে হোক মধুর মরণ, আজীবন সুদূরে রব॥ *৪৪৫. তাল: ধামার দোলে ঝুলন দোলায় দোলে নওল কিশোর গিরিধারী হরষে॥ মৃদঙ্গ বাজে নভোচারী মেঘে বারিধারা রুমু ঝুমু বরষে॥ নাচে ময়ূর নাচে কুরঙ্গ কাজরি গাহে বন বিহঙ্গ যমুনা-জলে বাজে জলতরঙ্গ শ্যামসুন্দর-রূপ দরশে॥ *৪৪৬. তাল: কাহার্বা নমঃ নমঃ নমো বাঙ্লাদেশ মম চির-মনোরম চির মধুর বুকে নিরবধি বহে শত নদী চরণে জলধির বাজে নূপুর॥ গ্রীষ্ম নাচে বামা কালবোশেখি ঝড়ে সহসা বরষাতে কাঁদিয়া ভেঙে পড়ে শরতে হেসে চলে শেফালিকা-তলে গাহিয়া আগমনী গীতি বিধুর॥ হরিত অঞ্চল হেমন্তে দুলায়ে ফেরে সে মাঠে মাঠে শিশির ভেজা পায়ে শীতের অলস বেলা পাতা ঝরারি খেলা ফাগুনে পরে সাজ ফুল-বধূর॥ এই দেশের মাটি জল ও ফুলে ফলে যে রস যে সুধা নাহি ভূমণ্ডলে এই মায়েরি বুকে হেসে খেলে সুখে ঘুমাবো এই বুকে স্বপ্নাতুর॥ *৪৪৭. রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ, তাল: দাদ্রা না-ই পরিলে নোটন-খোঁপায় ঝুমকো-জবার ফুল (রানী) এমনি এসো (ওগো) লুটিয়ে পিঠে আকুল এলোচুল॥ সজ্জা-বিহীন লজ্জা নিয়ে এমনি তুমি এসো প্রিয়ে গোলাপ ফুলের রঙ মাখাতে হয় যদি হোক ভুল॥ গৌর দেহে না-ই জড়ালে গৌরী চাঁপার শাড়ি ওগো ভূষণ পরে না-ই বা দিলে রূপের সাথে আড়ি। যেমন আছ তেমনি এসো নয়ন তুলে একটু হেসো সেই খুশিতে উঠবে দুলে আমার হৃদয় কূল॥ *৪৪৮. তাল: দাদ্রা নিশিদিন তব ডাক শুনিয়াছি মনে মনে শ্রবণে শুনিনি আহ্বান তব পবনে শুনেছি বনে বনে॥ হে বিরহী তব আভাস পাণ্ডু করেছে তোমার আকাশ বিজনে তোমারে করিয়াছি ধ্যান শুধা যে ফিরিনি জনে জনে॥ সকলে যখন ঘুমায়ে পড়েছে আধ রাতে স্মৃতি মঞ্জুষা খুলিয়া দেখেছি নিরালাতে। যদি তব ছবি ম্লান হয়ে যায় অশ্রু সলিলে ধূয়ে রাখি তায় দেবতা তোমারে মৌন পূজায় নীরবে ধেয়াই নিরজনে॥ *৪৪৯. রাগ: বাহার, তাল: কাহার্বা পথিক বন্ধু এসো এসো পাপড়ি ছাওয়া পথ বেয়ে। মন হয়েছে উতলা গো তোমার আসার পথ চেয়ে॥ আকাশ জুড়ে আলোর খেলা বসুন্ধরায় ফুলের মেলা রঙিন মেঘের ভাস্লো ভেলা তোমারই আসার আভাস পেয়ে॥ সাধ জাগে ঐ পথে তোমার পেতে রাখি মন প্রাণ চলতে গিয়ে দলবে তা’রে চরণ ছোঁয়া করিবে দান। তোমার ধ্যান, হে রাজাধিরাজ সাজ ভুলেছি ভুলেছি কাজ আসবে তুমি সেই খুশিতে আছে আমার মন ছেয়ে॥
*৪৫০. রাগ: পিলু. তাল: দাদ্রা পরাণ-প্রিয়া! কেন এলে অবেলায় শীতল হিমেল বায়ে ফুল ঝ’রে যায়॥ সেদিনো সকাল বেলা খেলেছি কুসুম-খেলা, আজি যে কাঁদি একালা ভাঙ্গা এ মেলায়॥ |