ভাষাংশ | কাজী নজরুল ইসলাম |
কাজী নজরুল ইসলামের রচনাসংগ্রহের সূচি


 

 

*৪৫১. রাগ: ভৈরবী, তাল: তেওড়া

প্রভাত বীণা তব বাজে হে

উদার অম্বর মাঝে হে

তুষার কান্তি তব প্রশান্তি

শুভ্র আলোকে রাজে হে

তব আন্দিত গভীর বাণী

শোনে ত্রিভুবন যুক্ত পাণি

মন্ত্রমুগ্ধ ভাব গঙ্গা নিস্তরঙ্গা লাজে হে

*৪৫২. তাল: কাহার্‌বা

প্রেম ক্যাটারী লগ্য গ্যয়ি তোরে কারী কারী

প্যয়ারে ভ্যঁওরে ডোলাৎ হ্যায় যো নিস্‌দিন ডারী ডারী

শুনা প্যয়ারে ভ্যঁয়র ও প্রেম-কাহানী

বাগ্‌মে যাতা হ্যায় প্রেম সে গাতা হ্যায় কয়া মানমেঁ ঠানী

ফুলো সে ক্যয়া তুঝকো প্রেম হুয়া হ্যায়

মেরী তারহা ক্যায়া তু প্রেমী ব্যনা হ্যায়

ত্যড়পত হ্যায় কিসকী তু বরহা মেঁ নিস্‌দিন

পাই হ্যায় কিস্‌সে হয়ে প্রেমনিশানী

ফুলমে হ্যায় গুলসে গালো কি রং গাৎ

মিলতি হ্যায় ইনসে প্রীতম কি প্যারী সুরাত

ইস্‌সে ম্যায় কারতিহু ফুলসে উলফত

ফিরত হু ব্যন ব্যন ব্যন্‌কে দিওয়ানী  

*৪৫৩. তাল: কাহার্‌বা

প্রেম নগরকা ঠিকানা করলে প্রেম নগরকা ঠিকানা।

ছোড় করিয়ে দোদিন কা ঘর ওহি রাহপে জানা

    দুনিয়া দওলত হ্যায় সব মায়া

    সুখ সুখ দো হ্যায় জগ কা কায়া

দুখকো তু প্রেম সে গলে লাগালে আগে না পছ্‌তানা

    আতি হ্যায় যব রাত আঁধেরি

    ছোড় তু মায়া বন্ধন-ভারি

প্রেম নগর কি কর তৈয়ারি, আয়া হ্যায় পরোয়ানা

*৪৫৪. রাগ: দেশ, তাল: কাহার্‌বা

    ফিরিয়া এসো এসো হে ফিরে

বঁধু  এ ঘোর বাদলে নারি থাকিতে একা।

হায়  গগনে মনে আজি মেঘের ভিড়

যায়  নয়ন-জলে মুছে কাজল-লেখা

    ললাটে কর হানি’ কাঁদিছে আকাশ

    শ্বসিছে শন-শন হুতাশ বাতাস।

    তোমারি মত ঝড় হানিছে দ্বারে কর,

খোঁজে বিজলি তোমারি পথ-রেখা

    মেঘেরে শুধাই তুমি কোথায়

    কাঁদন আমার বাতাসে ডুবে যায়!

    ঝড়ের নূপুর পরি’ রাঙা পায়

    শ্যামল-সুন্দর দাও দেখা

 

    *৪৫৫. নাটিকা: ঈদল ফেতর’, তাল: কাহার্‌বা

ফুরিয়ে এলো রমজানেরি মোবারক মাস

আজ বাদে কাল ঈদ তবু মন করে উদাস

রোজা রেখেছিলি, হে পরহেজগার মোমিন!

ভুলেছিলি দুনিয়াদারি রোজার তিরিশ দিন;

তরক করেছিলি তোরা কে কে ভোগ-বিলাস

সারা বছর গুনাহ্ যত ছিল রে জমা,

রোজা রেখে খোদার কাছে পেলি সে ক্ষমা;

ফেরেশতা সব সালাম করে কহিছে সাবাস

 

    *৪৫৬. তাল : কাহারবা

বন তমালের শ্যামল ডালে দোলে ঝুলন দোলায় যুগল রাধা শ্যাম।

কিশোরী পাশে কিশোর হাসে ভাসে আনন্দ সাগরে আজ ব্রজধাম

    তড়িত লতায় যেন জড়িত জলধরে

    ওগো যুগল রূপ হেরি মুনির মনোহরে

পুলকে গগন ছাপিয়া বারি ঝরে বাজে যমুনা তরঙ্গে শ্যাম শ্যাম নাম

    বন ময়ূর নাচে ঘন দেয়ার তালে

    দোলা লাগে কেতকী কদম ডালে।

আকাশে অনুরাগে ইন্দ্রধনু জাগে হেরে ত্রিলোক থির হয়ে রূপ অভিরাম

*৪৫৭. নাটক. ‘সাবিত্রী’, রাগ; সিন্ধু, তাল: কাহার্‌বা

বন-বিহারিণী        চঞ্চল হরিণী

চিনি আঁখিতে চিনি খঅণণ নটিনী রে

ছুটে চলে যেন বাঁধ ভাঙা তটিনী রে

নেচে নেচে চলে ঝর্নার তীরে তীরে

ছায়াবীথি তলে কভু ধীরে চলে

চকিতে পালায় ছুটি’ ছায়া হেরি গিরি-শিরে

*৪৫৮. তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

ব্যন্‌মে শুন স্যখিরি পিয়া পিয়া বোলে বাঁশুরিয়া।

সখি ক্যওন উও বন্‌শী ব্যজায় ঘ্যরমে ন্য র্‌হন্ যায়,

মন্ ভ্যয়ে উদাস্ সখি ন্যহি মানে জিয়া রি

নিরালা ঢং বাজে মৃদঙ্গ ম্যওর পাপিহা বোলে রি

চ্যরণন্ মে ছ্যন্দ জাগে ত্যন্ মন্ প্রাণ ডোলে রি

প্রেম্‌সে ম্যতওয়ালী ভ্যয়ি চাঁদ কি আঁখিয়া রি

স্যখি প্যহনো নীল শাড়ি ছূড়া বাঁধো ম্যন্‌হারি

যাঁহা ব্যন্‌চারী চ্যলো ক্যরকে সিঙ্গার

চ্যরণন্ মে গুজরী গ্যালেমে চম্পা হার-

নাচুঙ্গী আজ ওয়াকে সাথ্ গাউঙ্গি র্‌সিয়ারি

*৪৫৯. রাগ; মেঘমল্লার, তাল: ত্রিতাল

বরষা ঐ এলো বরষা

আলোর ধারায় জল ঝরঝরি’ অবিরল

ধূসর নীরস ধরা হলো সরসা

ঘন দেয়া দমকে দামিনী চমকে

ঝঞ্ঝার ঝাঁঝর ঝমঝম ঝমকে

মনে পড়ে সুদূর মোর প্রিয়তমকে

মরাল মরালীরে হেরি সহসা

*৪৬০. তাল: দ্রুত-দাদ‌্‌রা

বালা যোব্যন মোরি স্যখিরি পরদেশে পিয়া

ক্যায়সে স্যামহালু সোলা ব্যরস উম্যারিয়ারি পরদেশে পিয়া

ব্যয়রি ভ্যয়রি যোবান্ দিলমে নাহি চ্যয়ন্

দিল ন্য লাগে কাম্‌মে জাগি কাটে র্‌য়ন

সোতে ড্যর লাগে একেলী স্যাবরিয়া রি পরদেশে পিয়া

ফিকা লাগে খানা পিনা ন্যয়নোমো নিদ ন্যহিরি

যাঁহা মোরি বিদেশিয়া লেবা মোহে ওয়াহিঁরি।

আয়ে ফাগুন চৈত্ স্যখি খিলা যোবান ফুল মোর

স্যতায়ে নিস্‌দিন মোহে বুলবুল আওর ফুলচোর

ক্যায়সে ছিপাউঁ উও ফুল প্যতরি আঙ্গিঁয়ারি পরদেশে পিয়া

*৪৬১. তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

    ভাই হয়ে ভাই চিনবি আবার গাইব কি আর এমন গান!

সেদিন    দুয়ার ভেঙে আস্‌বে জোয়ার মরা গাঙে ডাকবে বান

তোরা স্বার্থ-পিশাচ যেমন কুকুর তেম্‌নি মুগুর পাস্ রে মান।

সেই কল্‌জে চুঁয়ে গল্‌ছে রক্ত দল্‌ছে পায়ে ডল্‌ছে কান

ওরে তোরা করিস লাঠালাঠি সিন্ধু-ডাকাত লুটছে ধান!

তাই গোবর-গাদা মাথায় তোদের কাঁঠাল ভেঙে খায় শেয়ান

ছিলি সিংহ ব্যাঘ্র, হিংসা-যুদ্ধে আজকে এমন ক্ষিন্ন প্রাণ।

মুখের গ্রাস ঐ গিল্‌ছে শেয়াল, তোমরা শুয়ে নিচ্ছ ঘ্রাণ

তোরা বাঁদর ডেকে মান্‌লি সালিশ ভাইকে দিতে ফাট্‌লো প্রাণ!

সালিশ    নিজেই, ‘খা ডালা সব’, বোকা তোদের এই দেখান

তোরা নাক কেটে নিজ পরের যাত্রা ভঙ্গ করিস বুদ্ধিমান

তোদের   কে যে ভালো কে যে মন্দ সব শিয়ালই এক সমান

শুনি  আপন ভিটেয় কুকুর রাজা, তার চেয়েও হীন তোদের প্রাণ।

তাই তোদের দেশ এই হিন্দুস্থানে নাই তোদেরই বিন্দু স্থান

আজ সাধে ভারত-বিধাতা কি চোখ বেঁধে ঐ মুখ লুকান!

তোরা বিশ্বে যে তার রাখিস্‌নে টাই কানা গরুর ভীন্ বাথান

তোরা করলি কেবল অহরহ নীচ কলহের গরল পান।

আজ বুঝ্‌লি নে হায় নাড়ি-ছেঁড়া মায়ের পেটের ভায়ের টান

*৪৬২. তাল: তেওড়া

ভারতের দুই নয়ন তারা হিন্দু-মুসলমান

দেশ জননীর সমান প্রিয় যুগল সন্তান

তাইতো মায়ের কোল নিয়ে ভাই

ভা’য়ে ভা’য়ে বাধে লড়াই

এই কলহের হবেই হবে মধুর অবসান

এক দেশেরই অন্নজলে এক দেহ এক প্রাণ

আল্লা বলে কোরান তোমায়, এলা বলে বেদ,

যেমন পানি, জলে রে ভাই শুধু নামের ভেদ।

মোদের মাঝে দেয়াল তুলতে যে চায়

জানবে মোদের শত্রু  তাহায় (জানবে রে)

বিবাদ ক’রে এনেছি হায় অনেক অকল্যাণ

মিলনে আজ উঠুক জেগে নব-হিন্দুস্থান।

    জেগে উঠুক হিন্দুস্থান

*৪৬৩. তাল: দাদ্‌রা

    ভুলে যেয়ো , ভুলে যেয়ো সেদিন যদি পড়ে আমায় মনে

যবে  চৈতী বাতাস উদাস হয়ে ফিরবে বকুল বনে

    তোমার মুখের জোছনা নিয়ে

    উঠবে যে চাঁদ ঝিলমিলিয়ে,

    হেনার সুবাস ফেলবে নিশাস তোমার বাতায়নে

        শুনবে যেন অনেক দূরে

        ক্নান্ত বাঁশির করুণ সুরে-

    বিদায় নেওয়া কোন বিরহীর কানে কাঁদে নিরজনে

*৪৬৪. তাল: কাহার্‌বা

ভেসে’ যায় হৃদয় আমার মদিনা পানে।

আসিলেন রসুলে-খোদা প্রথম যেখানে

উঠিল যেখানে রণি,’ প্রথম তক্‌বির ধ্বনি

লভিনু মণির খনি যথায় কোরানে

যথা হেরা গুহার আঁধারে প্রথম

ইসলামের জ্যোতি লভিল জনম,

ঝরে অঝোর ধারায় যথা খোদার রহম,

ভাসিল নিখিল ভুবন যাহার তুফানে

লাখো আম্বিয়া আউলিয়া বাদ্‌শা ফকির

যথা যুগে যুগে আসি’ করিল ভিড়

তারি ধূলাতে লুটাবো আমি নোয়া’ব শির;

নিশিদিন শুনি তাঁরি ডাক আমার পরানে

 

    *৪৬৫. তাল: কাহার্‌বা

মদিনায় যাবি কে আয় আয়।

উড়িল নিশান দিনের বিষাণ বাজিল যাহা্র দরওয়াজায়

    হিজরত ক’রে যে দেশে

    ঠাঁই পেলেন হজরত এসে

খেলিতেন যথায় হেসে হাসান হোসেন ফাতেমায়

হজরতের চার আসহাব যথা করলেন খেলাফত,

মসজিদে যাঁর প্রিয় মোহাম্মদ করতেন এবাদত;

ফুটল যথায় প্রথম বীর খালেদের হিম্মত,

খোশ এলেহান দিতেন আজান বেলাল যথায়

       যার পথের ধূলির মাঝে

       নবীজীর চরণের ছোঁয়া রাজে,

তৌহিদেরি ধ্বনি বাজে যার আসমানে, যার লু  হাওয়ায়

 

    *৪৬৬. তাল: কাহার্‌বা

মদির আঁখির সুধায় সাকি ডুবাও আমার এ তনু মন

আজিকে তোমায় ও আমায়    বেদনার বাসর জাগরণ।

মদালস ও আঁখি তব,       সাকি, দিল দোলা প্রাণে

বাদল-ছাওয়া এ গুল্-বাগিচায় বুলবুল কাঁদে গজল গানে

গোলাবী গুলের নেশা        ছিল মোর ফুলেল্ ফাগুনে।

শুকায়ে গিয়াছে ফুলবন,  নাই গোলাব গুলিস্তানে

শুনি, সাকি তোমার কাছে ব্যথা-ভোলার দারু আছে-

হিয়া কোন্ অমিয়া যাচে  জান তুমি, খোদা জানে

দুখের পশরা লয়ে     বিফল কাঁদিয়া বৃথা (সাকি)।

সকলি গিয়াছে যখন    যাক ঈমান শারাব পানে

*৪৬৭. তাল: কাহার্‌বা

মদির স্বপনে মম বন-ভবনে

জাগো চঞ্চলা বাসন্তিকা, ওগো ক্ষণিকা

মোর ক্ষণেক চকিতে মিলায়

তোমার হাসির যুঁই-কণিকা

পুষ্প ধনু তব মন-রাঙানো

বঙ্কিম ভুরু হানো হানো

তোমার উতল উত্তরীয়

আমার চোখে ছুঁইয়ে দিও (প্রিয়)

আমি হব (ওগো) তোমার মালার মণিকা

 

    *৪৬৮. তাল: কাহার্‌বা

মধুর আরতি তব বিশ্ব-সভাতে

নিত্য হেরি নাথ সন্ধ্যায় প্রভাতে

চন্দ্র, সূর্য, দীপ গগন-থালা

শ্বেত মেঘ-চন্দন, তারার মালা

মলয় সমীর পূজা-ধূপের গন্ধ

ঝরা ফুল-অঞ্জলি ধরণীর হাতে

শঙ্খ বাজায় তব সাগর-কল্লোল

বজ্র রবে ঘন ঘন্টার রোল

বিগ্রহ নিখিল সৃষ্টি-আঙিনায়।

(তব) শান্ত স্তব-গাথা প্রণব-ওঙ্কার

ঝমঝম বৃষ্টিতে ঝাঁঝর ঝঙ্কার।

দেবদাসী সম কোটি গ্রহ ঘুরে ঘুরে

তোমার বন্দনা-নৃত্যে মাতে

*৪৬৯. তাল: ফের্‌তা (দ্রুত-দাদ্‌রা ও কাহার্‌বা)

মহুল গাছে ফুল ফুটেছে নেশার ঝোঁকে ঝিমায় পবন

গুনগুনিয়ে ভ্রমর এলো, (ওলো) ভুল করে তোর ভোলালো মন

    আঁউরে গেছে মুখখানি ওর

    কর লো বাতাস খুলে আঁচল

চাঁদের লোভে এলো চকোর (ও তুই) মেঘে ঢাকিস্‌নে লো নয়ন

    কেশের কাঁটা বিঁধে পাখায়

    রাখলো ওরে বেঁধে শাখায়

মৌটুসি মৌ মদের মিঠায় (ও তুই) কপটে কর নিকট আপন

*৪৭০. নাটক: ‘সাবিত্রী; পিলু-খাম্বাজ, তাল: কাহার্‌বা

মৃদুল মন্দে     মঞ্জুল ছন্দে

মরাল মদালস        নাচে আনন্দে

তরঙ্গ-হিন্দোলে      শতদল দোলে

শিশু অরুণে জাগায় অমা-যামিনীর কোলে

শুষ্ক কানন ভরে      বকুল গন্ধে

নন্দন-উপহার       ধরণীর ক’রে

শুভ্র পাখায় শুভ       আশিস ঝরে।

মিলন, বসন্তের       দূত আগমনী

কণ্ঠে সুমঙ্গল    শঙ্খের ধ্বনি

কুহু কেকা গাহে   মধুর ছন্দে

*৪৭১. তাল: কাহার্‌বা

    মেঘ-বরণ কন্যা থাকে মেঘ্‌লামতীর দেশে (রে)

    সেই দেশে মেঘ জল ঢালিও তাহার আকুল কেশে

        তাহার কালো চোখের কাজল

        শাওন মেঘের চেয়ে শ্যামল

    চাউনিতে তার বিজলি ছড়ায় চমক বেড়ায় ভেসে (রে)

সে  ব’সে থাকে পা ডুবিয়ে ঘুমতী নদীর জলে

কভু  দাঁড়িয়ে থাকে ছবির মত এক্‌লা তরু-তলে (রে)।

        কদম ফুলের মালা গেঁথে

        ছড়িয়ে সে দেয় ধানের ক্ষেতে

তারে দেখতে পেলে আমার কথা (তারে) কইও ভালোবেসে

*৪৭২. রাগ: পিলু-বাবোয়াঁ, তাল: কাহার্‌বা

মেঘ-মেদুর গগন কাঁদে হুতাশ পবন

কে বিরহী রহি’ রহি’ দ্বারে আঘাত হানো।

শাওন ঘন ঘোর ঝরিছে বারি অঝোর

কাঁপিছে কুটির মোর দীপ নেভানো

বজ্রে বাজিয়া ওঠে তব সঙ্গীত,

বিদ্যুতে ঝলকিছে আঁখি-ইঙ্গিত,

চাঁচর  চিকুরে তব ঝড় দুলানো, ওগো মন ভুলানো

এক হাতে, সুন্দর, কুসুম ফোটাও!

আর হাতে নিষ্ঠুর মুকুল ঝরাও।

হে পথিক, তব সুর অশান্ত বায়

জন্মান্তর হতে যেন ভেসে আসে হায়!

বিজড়িত তব স্মৃতি চেনা অচেনায় প্রাণ কাঁদানো

 

    *৪৭৩. তাল : দাদরা

মেঘলা-মতীর ধারা-জে কর স্নান (হে ধরণী)

স্নিগ্ধ শীতল মেঘ-চন্দনে জুড়াও তাপিত প্রাণ (হে ধরণী)

           তব    বৈশাখী ব্রত শেষে

              শ্যাম সুন্দর দেশে

নব  দেবতা এলো হেসে লহ আশিস বারি দান (হে তপসী)

        তব ভুষণ-হীন উপবাস ক্ষিণ্ কায়

        হোক নবতর শ্যাম সমারোহে, পুষ্পিত সুষমায়।

              তীর্থ-সলিলে কৃষনো

              দূর কর গো তৃষ্ণা

    শ্যাম দরশ পরশ ব্যাকুলা হরষে গাহ গান (হে তপতী)

*৪৭৪. নাটিকা: ‘পুতুলের বিয়ে’, রাগ: ভৈরবী, তাল: কাহারবা

মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।

মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ

    এক সে আকাশ মায়ের কোলে

    যেন রবি শশী দোলে,

এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান

এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,

এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই একই ফুল ও ফল।

    এক সে দেশের মাটিতে পাই

    কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই

এক ভাষাতে মা’কে ডাকি, এক সুরে গাই গান

*৪৭৫. তাল: কাহার্‌বা

যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা তখন তুমি এলে

ভাটির স্রোতে ভাসলো যখন ভেলা পারের পথিক এলে

    আঁধার যখন ছাইল বনতল

    পথ হারিয়ে এলে হে চঞ্চল

দীপ নিভাতে এলে হে বাদল ঝড়ের পাখা মেলে

শূন্য যখন নিবেদনের থালা তখন তুমি এলে

শুকিয়ে যখন ঝরল বরণ-মালা তখন তুমি এলে।

    নিরশ্রু এই নয়ন পাতে

    শেষ পূজা মোর আজকে রাতে

নিবু নিবু প্রাণ শিখাতে আরতি-দীপ জ্বেলে

*৪৭৬. তাল: দাদ্‌রা

    যাবার বেলায় মিনতি আমার (শুধু) রাখিও মনে

    ডাক দিও গো সাঁঝের ছায়ে সাঙ্গোপনে

    যখন সন্ধ্যাবধু আঁকবে রঙের আলপনা

    আমার হিয়া দুলবে তখন তোমার প্রদীপ সনে

    যখন নিরালাতে গাঁথবে মালা আনমনে

(আমি)    রইব ঘিরে তোমার মালার গন্ধ সনে (প্রিয় আমার)

    আমি দুলিয়ে যাব অলক তব মৃদু পবনে

    ওগো একটি মালা গলায় নিও আমার স্মরণে

*৪৭৭. সিনেমা: চৌরঙ্গী,’ তাল: কাহার্‌বা

রুম্ ঝুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম ঝুম্

    খেজুর পাতার নূপুর বাজায়ে কে যায়।

ওড়না তাহার ঘূর্ণি হাওয়ায় দোলে

    কুসুম ছড়ায় পথের বালুকায়

তার ভুরুর ধনুক বেঁকে ওঠে তনুর তলোয়ার,

সে যেতে যেতে ছড়ায় পথে পাথর-কুচির হার।

তার ডালিম ফুলের ডালি গোলাপ-গালের লালি

        ঈদের-চাঁদ ও চায়

আরবি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে, বাদ্‌শাজাদা বুঝি

সাহারাতে ফেরে সেই মরীচিকা খুঁজি

কত তরুণ মুসাফির পথ হারালো, হায়‍!

কত বনের হরিণ মরে তারি-রূপ তৃষায়

*৪৭৮. নাটিকা: ‘পুতুলের বিয়ে’ তাল: কাহার্‌বা

শাদী মোবারকবাদী শাদী মোবারক।

দেয় মোবারক-বাদ আলম্ রসুলে-পাক আল্লা হক

    আজ এ খুশির মাহ্‌ফিলে

    দুল্‌হা ও দুল্‌হিনে মিলে

মিলন হল প্রাণে প্রাণে মাশুক আর আশক

    আউলিয়া আম্বিয়া সবে

    এসো এ মিলন-উৎসবে,

দোয়া কর আজ এ খুশির গুলিস্তান গুলজার হোক

*৪৭৯. তাল: দাদ্‌রা

সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা-পথে এসো মোরা যাই।

সঙ্ঘ বাঁধিয়া চলিলে অভয় সে পথে মৃত্যু নাই

সঙ্ঘবদ্ধ হইলে তাদের সাথে,

ঐশী শক্তি সহায় হইয়া চলে হাত রেখে হাতে

সঙ্ঘবদ্ধ হইলে সারথি ভগবানে মোরা পাই

সঙ্ঘ শক্তি আসিলে সর্ব ক্লৈব্য হইবে লীন,

চল্লিশ কোটি মানুষ এই ভারতে

ভিন্ন হইয়া ডালি ঠাঁই ঠাঁই, তাই মোরা পরাধীন।

মোরা সঙ্ঘবদ্ধ হই যদি একবার

জাতি ও ধর্ম ভেদ রবে নাকো আর

পাব সাম্য, শান্তি, অন্ন, বস্ত্র পুন সবাই

*৪৮০. রাগ; খাম্বাজ, তাল: দাদ্‌রা

সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়

        নবীন আমন ধানের ক্ষেতেল

হেমন্তের ঐ শিশির-নাওয়া হিমেল হাওয়া

        সেই নাচনে উঠলো মেতে’

    টইটুম্বুর ঝিলের জলে

    কাঁচা রোদের মানিক ঝলে

চন্দ্র ঘুমায় গগন-তলে সাদা মেঘের আঁচল পেতে’

নটকানো-রঙ শাড়ি প’রে কে বালিকা

ভোর না হতে যায় কুড়াতে শেফালিকা।

    আন্‌মনা মন উড়ে বেড়ায়

    অলস প্রজাপতির পাখায়

মৌমাছিদের সাথে সে চায় কমল-বনের তীর্থে যেতে’

*৪৮১. রাগ; মালবশ্রী, তাল: দাদ্‌রা

সন্ধ্যা হল ওগো রাখাল এবার ডাক মোরে

বেণুর রবে ধেনুগণে ডাক যেমন করে

    সংসারেরি গহন বনে

    ঘুরে ফিরি শূন্য মনে

ডাকবে কখন বাঁশির সনে আমায় আপন ঘরে

ভেঙেছে মোর প্রাণের মেলা ভাঙলো মায়ার খেলা

মোরে ডাক এবার তোমার পায়ে, আর করো না হেলা।

    মোর জীবনের কোশোর রাখাল,

    বাঁশি শুনে কাটলো সকাল

তন্দ্রা আন ক্লান্ত চোখে, তোমার সুরের ঘোরে

*৪৮২, রাগ: পিলু, তাল: দাদ্‌রা

সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে তুমি আমারে ছুঁইয়াছিলে।

অনুরাগ-কুঙ্কুম দিলে দেহে মনে, বুকে প্রেম কেন নাহি দিলে

বাঁশি বাজাইয়া লুকালে তুমি কোথায়-

যে ফুল ফোটালে সে ফুল শুকায়ে যায়

কী যেন হারায়ে প্রাণ করে হায় হায়-

কী চেয়েছিলে- কেন কেড়ে নাহি নিলে

জড়ায়ে ধরিয়া কেন ফিরে গেলে বল কোন অভিমানে,

কেন জাগে নাকো আর সে মাধুরী রস-আনন্দ-প্রাণে।

    তোমারে বুঝি গো বুঝেছিনু আমি ভুল

    এসেছিলে তুমি ফোটাতে প্রেম-মুকুল,

কেন আঘাত করিয়া প্রিয়তম, সেই ভুল নাহি ভাঙাইলে

*৪৮৩. তাল: কাহার্‌বা

স্যখিরী দেখেতো বাগমেঁ কামিনী

জুঁহি চাম্বেলী কি ক্যয়সী বাহার হ্যায়

আও আও হ্যর ডালি সে তোড়কে

ক্যচ্চি কলিও কো গুঁথে হ্যম যোড়কে

প্রেমমালা পিন্‌হায়ে দিলদার ইয়ার কো

ম্যস্ত হোক্যর গলে মিনতী হ্যর ডার হ্যায়

ম্যয় হুঁ সুন্দর নার নওয়েলী প্যরী

প্যহেনা ফুলোঁ কা গ্যহনা যো ম্যায়নে স্যখি

    দুলহান ব্যন গ্যই।

প্যয়ারে প্রীতমসে মিলনে কি আই ঘ্যড়ি

ইসী কারণ স্যখীরী ব্যনী সুন্দর

আজ বাল্যম কে ম্যন কো লুভাউঙ্গী

ইসী আশা পে সারা ইয়ে সিঙ্গার হ্যায়

*৪৮৪. রাগ: ধানি মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা

হায় ভিখারি কাহার কাছে হাত পাতিলে হায়।

তোমার চেয়েও আমি যে দীন কাঙাল অসহায়

আমার        হয়ত কিছু ছিল কভু

        সব নিয়েছেন কেড়ে প্রভু

আমায় তিনি নেননি তবু তাঁহার রাঙা পায়

তোমায় তিনি পথ দেখালেন ভাবনা কিসের ভাই

তোমার আছে ভিক্ষা ঝুলি আমার তাহাও নাই।

        চাইনে তবু আছি পড়ে

        সংসারেরে জড়িয়ে ধরে

কবে তোমার মতন পথের ধূলি মাখ্‌ব সারা গায়

*৪৮৫. তাল: কাহার্‌বা

হে প্রিয় নবী রসুল আমার

প’রেছি আভরণ নামেরি তোমার

নয়নের কাজলে তব নাম

ললাটের টীপে জ্বলে তব নাম

গাঁথা মম কুন্তলে আহ্‌মদ

বাঁধা মোর অঞ্চলে তব নাম

দুলিছে গলে মোর তব নাম মণিহার

তাবিজ অঙ্গুরী তব নাম

বাজু ও পৈঁচী চুড়ি তব নাম

ভয়ে ভয়ে পথে পথে ঘুরি যে

পাছে কেউ করে চুরি তব নাম

ঐ নাম রূপ মোর ঐ নাম আঁখি ধার

বুকের বেদনা ঢাকা তব নাম

প্রাণের পরতে আঁকা তব নাম

ধ্যানে মোর জ্ঞানে মোর তুমি যে

প্রেম-ভক্তি মাখা তব নাম

প্রিয় নাম আহ্‌মদ জপি আমি অনিবার

*৪৮৬. নাটিকা: ‘পুতুলের বিয়ে’ তাল: কাহার্‌বা

হেড মাস্টারের ছড়ি, সেকেন্ড মাস্টারের দাড়ি

থার্ড মাস্টারের টেড়ি, কারে দেখি কারে ছাড়ি।

হেড-পণ্ডিতের টিকির সাথে ওদের যেন আড়ি

    দাঁড়াইয়া ঐ হাই বেঞ্চে

    হাসি রে মুখ ভেংচে ভেংচে,

খোঁড়া সেকেন্ড পণ্ডিত যায় লেংচে হুঁকো হাতে বাড়ি

তার মুখ নয় তেলো হাড়ি, মোর হেসে ছিড়ে যায় নাড়ি

*৪৮৭. রাগ: ভৈরবী, তাল: ফের্‌তা (কাহার্‌বা ও দাদ্‌রা)

আঁখি ঘুম-ঘুম-ঘুম নিশীথ নিঝুম ঘুমে ঝিমায়।

বাহুর ফাঁদে স্বপন-চাঁদে বাঁধিতে কারে চায়

আমি কারো লাগি একা নিশি জাগি বিরহ-ব্যথায়

কোথায় কাহার বুকে বঁধু ঘুমায়

কাঁদি চাতকিনী মরে তৃষায়

কুসুম-গন্ধ আজি যেন বিষ-মাখা হায়

কেন এ ব্যথা এ আকুলতা

পরের লাগি এ পরান পুড়ে?

মরুভূমিতে বারি কি ঝরে

আমি যেন ম’রে তারি রূপ ধ’রে আসি সে যাহারে চায়

*৪৮৮. তাল: দাদ্‌রা

(মা) আমার ভবের অভাব লয় হয়েছে শ্যামা-ভাব-সমাধিতে।

শ্যামা রসে যে-মন আছে ডুবে কাজ কিরে তার যশ-খ্যাতিতে

    মধু যে পায় শ্যামা-পদে,

    কাজ কি’রে তার বিষয়-মদে;

যুক্ত যে মন যোগমায়াতে ; ভাবনা কি তার রোগ ব্যাধিতে

কাজ কি’রে তার লক্ষ টাকায়, মোক্ষ লক্ষ্মী যাহার ঘরে,

কত রাজার রাজা প্রসাদ মাগে সেই ভিখারির পায়ে ধরে।

    ওমা শান্তিময়ী অন্তরে যার,

    দুঃখ শোকে ভয় কিরে তার

সে  সদানন্দ সদাশিব জীবন্মুক্ত ধরণীতে

*৪৮৯. তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

এ তো ঘুম নয় সই নয়ন ভরা রঙিন স্বপনে

আমি যেন হারিয়ে গেছি কোন ফুলবনে

        ওগো রঙিন স্বপনে

    আমি যেন চাঁদনী রাতে

    মিশিয়ে গিয়ে হাওয়ার সাথে

গোপন প্রিয়ার গোপন কথা শুনছি গোপনে

আমি যেন মৌমাছিদের হালকা পাখায় বসি

কোন প্রেয়সী মন টানে মোর কোন সে রূপসী।

    আমি যেন কেমন করে

    মেতেছি মোর রূপের তরে

অশান্ত যৌবনের একি বাহুর বাঁধনে

*৪৯০. তাল: একতাল

ওগো অন্তর্যামী, ভক্তের তব শোন শোন নিবেদন

যেন থাকে নিশিদিন তোমারি সেবায় মোর তনু-প্রাণ-মন

    নয়নে কেবল দেখি যেন আমি

    তোমারই স্বরূপ ত্রিভুবন-স্বামী

শিরে বহি যেন তোমারি পূজার অর্ঘ্য অনুক্ষণ

এ রসনা শুধু জপে তব নাম এই বর দাও নাথ;

তোমারি চরণ সেবায় লাগুক মোর এই দুটি হাত।

    ওঠে তব নাম প্রতি নিঃশ্বাসে

    শ্রবণে কেবল তব নাম ভাসে

তব মন্দির-পথে যেন সদা চলে মোর এ চরণ

*৪৯১. মার্চের সুর, তাল: দাদ্‌রা

কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান

জয় আর্যাবর্ত, জয় ভারত, জয় হিন্দুস্থান

শিরে হিমালয় প্রহরী, পদ বন্দে সাগর যাঁর,

শ্যাম বনানী কুন্তলা রাণী জন্মভূমি আমার।

    ধূসর কভু ঊষর মরুতে,

    কখনো কোমল লতায় তরুতে,

কখনো ঈশানে জলদ-মন্দ্রে বাজে-মেঘ বিষাণ

সকল জাতি সকল ধর্ম পেয়েছে হেথায় টাই

এসেছিল যারা শত্রুর রূপে, আজ সে স্বজন ভাই।

    বিজয়ীর বেশে আসিল যাহারা,

    আজি মা’র কোলে সন্তান তারা,

(তাই) মা’র কোল নিয়ে করে কাড়াকাড়ি হিন্দু মুসলমান

জৈন পার্শী বৌদ্ধ শাক্ত খ্রীস্টান বৈষ্ণব

মা’র মমতারয় ভুলিয়া বিরোধ এক হয়ে গেছে সব।

    ভুলি’ বিভিন্ন ভাষা আর বেশ

    গাহিছে সকলে আমার স্বদেশ

শত দল মিলে’ শতদল হ’য়ে করিছে অর্ঘ্য দান

*৪৯২. রাগ: মিশ্র পিলু-খাম্বাজ-দুর্গা, তাল: কাহার্‌বা

কেন চাঁদিনী রাতে মেঘ আসে ছায়া ক’রে।

সুখের বাসরে কেন, প্রাণ ওঠে বিষাদে ভ’রে

কেন মিলন রাতে, সলিল আঁখি পাতে,

কেন ফাগুন প্রাতে, সহসা বারি ঝরে

ডাকিয়া ফুলবনে, থাকে সে আন্‌মনে,

কাঁদিয়া নিরজনে, কাঁদে কে কিসের তরে

৪৯৩. রাগ: ভৈরব, তাল: দাদ্‌রা

জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী

জাগো শ্রীকৃষ্ণ-তিথির তিমির অপসারি’

    ডাকে বসুদেব দেবকী ডাকে

    ঘরে ঘরে, নারায়ণ, তোমাকে!

ডাকে বলরাম শ্রীদাম সুদাম ডাকিছে যমুনা-বারি

    হরি হে, তোমায় সজল নেত্রে

    ডাকে পাণ্ডব কুরুক্ষেত্রে!

দুঃশাসন সভায় দ্রৌপদী ডাকিছে লজ্জাহারী

    মহাভারতের হে মহাদেবতা

    জাগো জাগো, আনো আলোক-বারতা!

ডাকিছে গীতার শ্লোক অনাগতা বিশ্বের নর-নারী

৪৯৪. রাগ: যোগিয়া তাল: একতাল

জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো,

তব কনিষ্ঠা কন্যা ধরণী কাঁদে আর ডাকে মা গো

    বরষ বরষ বৃথা কেঁদে যাই

    বৃথাই মা তোর আগমনী গাই

সেই কবে মা আসিলি ত্রেতায় আর আসিলি না গো

কোটী নয়নের নীল পদ্ম মা ছিড়িয়া দিলাম চরণে তোর,

জাগিলিনে তুই, এলিনে ধরায় মা কবে হয় হেন কঠোর।

    দশ ভুজে দশ প্রহরণ ধরি’

    আয় মা দশ দিক আলো করি’,

দশ হাতে আন্ কল্যাণ ভরি’ নিশীথ-শেষে ঊষা গো

*৪৯৫. তাল: কাহার্‌বা

মন  লহ নিতি নাম রাধা শ্যাম গাহো হরি গুণ গান।

তব  ধন জন প্রাণ, যাহার কৃপার দান

    জপ তারি নাম জয় ভগবান জয় ভগ্‌বান

জনক-জননীর স্নেহে তাঁহার হেরিস্ তুই স্নেহময়,

ভাই ভগিনীর প্রীতিতে যাঁর, শান্ত মধুর পরিচয়।

প্রয়ণী বন্ধুর মাঝে, যাঁর প্রেম রূপ বিরাজে;

পুত্র কন্যা-রূপে সেই জুড়ায় তাপিত পরান

তৃষ্ণা ক্ষুধায় সেই কৃষ্ণেরি লীলা,

হাসে শ্যাম শস্যে কুসুমে রঙিলা;

তরঙ্গে ছলছল আঁখি জল-নীলা,

    কল-ভাষা নদী-কলতান।

দেয় দুখ্ শোক সেই, পুন সেই করে ত্রাণ।

জয় ভগবান, জয় ভগবান, জয় ভগবান

*৪৯৬. রাগ ঝিঁঝিট-খাম্বাজ, তাল: দাদ্‌রা

    মনে যে মোর মনের ঠাকুর তারেই আমি পূজা করি,

    আমার দেহের পঞ্চভূতের পঞ্চপ্রদীপ তুলে ধরি

        ফকির যোগী হয়ে বনে

        ফিরি না তার অন্বেষণে

আমি মনের দুয়ার খুলে দেখি রূপের জোয়ার মরি মরি

        আছেন যিনি ঘিরে আমায়

        তারে আমি খুঁজব কোথায়

    সাগরে খুঁজে বেড়াই সাগর বুকে ভাসিয়ে তরী।

        মন্দিরের ঐ বন্ধ খোঁপে

        ঠাকুর কি রয় পূজার লোভে?

    পেতে রাখি ভক্তি বেদী আসবে নেমে প্রেমের হরি

*৪৯৭. রাগ; ভৈরবী, তাল: তেওড়া

মহাবিদ্যা আদ্যাশক্তি পরমেশ্বরী কালিকা।

পরমা প্রকৃতি জগদম্বিকা, ভবানী ত্রিলোক-পালিকা

    মহাকালি মহাসরস্বতী,

    মহালক্ষ্মী তুমি ভগবতী

তুমি বেদমাতা, তুমি গায়ত্রী, ষোড়শী কুমারী বালিকা

কোটি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র মা মহামায়া তব মায়ায়,

সৃষ্টি করিয়া করিতেছ লয় সমুদ্রে জলবিম্ব-প্রায়।

    অচিন্ত্য পরমাত্মারূপিণী,

    সুর-নর চরাচর-প্রসবিনী।

নমস্তে শিবে অশুভ নাশিনী, তারা মঙ্গল চণ্ডিকা।

নমস্তে শিরে অশুভ নাশিনী, তারা মঙ্গল সাধিকা

*৪৯৮. তাল: দাদ্‌রা

(তুই) মা হ’বি না মেয়ে হ’বি দে মা উমা ব’লে

    তুই আমারে কোল্ দিবি, না আমিই নেব কোলে

        মা হয়ে তুই মা গো আমার,

        নিবি কি মোর সংসার-ভার।

    দিন ফুরালে আসব ছুটে, মা তোর চরণ-তলে।

(তুই) মুছিয়ে দিবি দুঃখ-জ্বালা তোর স্নেহ-অঞ্চলে

    এক হাতে মোর পূজার থালা ভক্তি-শতদল।

(ও মা)    আর এক হাতে ক্ষীর নবনী, কি নিবি তুই বল্।

            ওমা কি নিবি তুই বল্

        মেয়ে হ’য়ে মুক্ত-কেশে,

        খেলবি ঘরে হেসে হেসে,

      ডাকলে মা তুই ছুটে এসে, জড়াবি মোর গলে।      

(তোরে)  বক্ষে ধ’রে শিব-লোকে যাব আমি চলে

 

      *৪৯৯. নাটিকা : ‘বাসন্তিকা’, তাল : কাহারবা

মিনতি রাখো রাখো পথিক থাকো থাকো,

            এখনি যেয়ো না গো _ না না না

ক্ষণিক অতিথি        বিদায়ের গীতি

        এখনি গেয়ো না গো ----না না না

চৈতি পূর্ণিমা চাঁদের তিথি,

পুষ্প পাগল এ বনবীথি,

    ধূলায় ছেয়ো না গো-না না না

বলি বলি ক’রে হয়নি যা বলা,

যে কথা ভরিয়াছিল বুকের তলা;

সে কথা না শুনে সুন্দর অতিথি হে

    যেতে চেয়ো না গো-না না না

*৫০০. রাগ; ধানি মিশ্র, তাল: কাহার্‌বা

লুকোচুরি খেলতে হরি হার মেনেছ আমার সনে

লুকাতে চাও বৃথা হে শ্যাম, ধরা পড় ক্ষণে ক্ষণে

গহন মেঘে লুকাতে চাও অম্‌নি রাঙা, চরণ লেগে

যে পথে ধাও সে পথ ওঠে ইন্দ্রধনুর রঙে রেঙে,

চপল হাসি চম্‌কে বেড়ায় বিজলিতে নীল গগনে

রবি-শশী-গ্রহ-তারা তোমার কথা দেয় প্রকাশি’

ঐ আলোতে হেরি তোমার তনুর জ্যোতি মুখের হাসি।

হাজার কুসুম ফুটে’ ওঠে লুকাও যখন শ্যামল বনে।

মনের মাঝে যেমনি লুকাও, মন হয়ে যায় অম্‌নি মুনি,

ব্যথায় তোমার পরশ যে পাই, ঝড়ের রাতে বংশী শুনি

দুষ্টু তুমি দৃষ্টি হয়ে লুকাও আমার এই নয়নে

দুষ্টু তুমি দৃষ্টি হয়ে থাক আমার এই নয়নে