ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
*৫০১. তাল: দ্রুত-দাদ্রা গুলশান কো চুম চুম কহতি বুলবুল রুখসারা সে বেদরদী বোরখা খুল খুল॥ হাঁসতি হায় বোস্তা মস্ত্ হো যা দোস্তা শিরি শিরাজি সে হো যা বেহোঁশ জাঁ সব কুছ আজ রঙ্গীন হ্যায় সব কুছ মশগুল হাঁসতি হায় গুল হো কর দোজখ্ বিলকুল। হারে আশক মাশুক কি চমনোঁ মে ফুলতা নেই দোবারা ফুল, ফুল ফুল ফুল॥ *৫০২. তাল: কাহার্বা আমার ধ্যানের ছবি আমার হজরত। ও নাম প্রাণে মিটায় পিয়াসা, আমার তামান্না আমারি আশা, আমার গৌরব আমারি ভরসা, এ দীন গোনাহ্গার তাঁহারি উম্মত॥ ও নামে রওশন জমীন আস্মান, ও নামে মাখা তামাম জাহান্, ও নামই দরিয়ায় বহায় উজান, ও নাম ধেয়ায় মরু ও পর্বত॥ আমার নবীর নাম জপে নিশিদিন ফেরেশ্তা আর হুর পরী জিন্ ও নাম জপি আমার ভোমরায় পাব কিয়ামতে তাঁহার শাফায়ৎ॥ *৫০৩. রাগ; আড়ানা, তাল: ত্রিতাল এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া॥ বারিধারে এসো চারিধার ভাসায়ে বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দশদিক হাসায়ে বিরহী মনে জ্বালায়ে আশার আলেয়া ঘন দেয়, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া॥ শ্রাবণ বরিষণ হরষণ ঘনায়ে এসো নব ঘন শ্যাম নূপুর শুনায়ে। হিজল তমাল ডালে ঝুলন ঝুলায়ে তাপিতা ধরার চোখে অঞ্জন বুলায়ে যমুনা স্রোতে ভাসায়ে প্রেমের খেয়া ঘন দেয়, মোহনীয়া, শ্যাম-পিয়া॥ *৫০৪. তাল: দাদ্রা ওমা কালী সেজে ফিরলি ঘরে, কোটি ছেলের কাজল মেখে। একলা আমি কেঁদেছি মা সারাটি দিন ডেকে ডেকে॥ হাত বাড়ায়ে মা তোর কোলে আমি যাব না আর ‘মা’ ‘মা’ বলে, মা হয়ে তুই ঘুরে বেড়াস্ আমায় ধূলায় ফেলে রেখে॥ তোর আর ছেলেদের অনেক আছে আমার যে মা নাই গো কেহ, আমি শুধু তোরেই জানি, যাচি শুধু তোরি স্নেহে। তাই আর কারে যেই ধরিস কোলে- মোর দু’চোখ ভ’রে ওঠে জলে (মাগো), আমি রাগে-অনুরাগে কাঁদি অভিমানে দূরে থেকে॥ *৫০৫. তাল: দাদ্রা কাছে তুমি থাক যখন তখন আমি দিই না ধরা। দূরে থেকে কাঁদ যখন তখনি হই স্বয়ম্বরা॥ তখন তোমার অভিসারে মন ছুটে যায় অন্ধকারে তখন ওঠে বিরহেরি ব্যাকুল রোদন পাগল পারা॥ প্রিয়, তুমি যাবে রহ পাশে- কেন এত ভয় জাগে গো, কেন মনে দ্বিধা আসে! ভিক্ষা যখন চাও ভিখারি হাত কাঁপে গো দিতে নারি, তুমি চ’লে গেলে লুকিয়ে কাঁদি ভিক্ষা নিয়ে আঁচল ভরা॥ *৫০৬. তাল: কাহার্বা খয়বর-জয়ী আলী হায়দার জাগো জাগো আরবার। দাও দুশমন দুর্গ-বিদারী দু’ধারী জুল্ফিকার॥ এসো শেরে খোদা ফিরিয়া আরবে, ডাকে মুসলিম ‘ইয়া আলী’ রবে- হায়দারী হাঁকে তন্দ্রা-মগনে করো করো হুঁশিয়ার॥ আল-বোর্জের চূড়া গুঁড়া করা গোর্জ আবার হানো, বেহেশ্তী সাকি মৃত এ জাতিরে আবে কওসার দানো। আজি বিশ্ব বিজয়ী জাতি যে বেহোশ দাও তারে নব কুয়ৎ ও জোশ; এসো নিরাশায় মরু-ধূলি উড়ায়ে দুল্দুল্-আসোয়ার॥ *৫০৭. রাগ; ভৈরবী, তাল: দাদ্রা গানগুলি মোর আহত পাখির সম লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম॥ বাণ-বেঁধা মোর গানের পাখিরে তুলে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে, লভিবে মরণ চরণে তোমার সুন্দর অনুপম॥ তারা সুরের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে- তব নয়ন-শায়কে বিঁধিলে তাদের কবে। মৃত্যু-আহত কণ্ঠে তাহার একি এ গানের জাগিল জোয়ার- মরণ বিষাদে অমৃতেরই স্বাদ আনিলে নিষাদ মম॥ *৫০৮. তাল: কাহার্বা গুনগুনিয়ে ভ্রমর এলো ফুলের পরাগ মেখে। তোমার বনে ফুল ফুটেছে যায় ক’য়ে তাই ডেকে॥ তোমার ভ্রমর দূতের কাছে যে বারতা লুকিয়ে আছে- দখিন হাওয়ায় তারি আভাস শুনি থেকে থেকে॥ দল মেলেছে তোমার মনের মুকুল এতদিনে- সেই কথাটি পাখিরা গায় বিজন বিপিনে। তোমার ঘাটের ঢেউগুলি হায় আমার ঘাটে দোল দিয়ে যায়- লতায় পাতায় জোছনা দিয়ে সেই কথা চাঁদ লেখে॥ *৫০৯. রাগ; মিশ্র মল্লার, তাল: কাহার্বা ঘন দেয়া গরজায় গো-কেঁদে ফেরে পুবালি বায়॥ একা ঘরে মম ডর লাগে, কার বিধুর স্মৃতি মনে জাগে, বারি ধারে কাঁদে চারিধার, সে কোথায় আজি সে কোথায়॥ গগনে বরষে বারি, তৃষ্ণা গেল না তবু আমারি, কোন্ দূর দেশে প্রিয়তম এ বিধুর বরষায়॥ *৫১০. ইন্টারন্যাশনাল সঙ্গীতের সুর, তাল: কাহার্বা জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত! যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’ হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী, নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী ওরে ঐ আগত॥ আদি শৃঙ্খল সনাতন শাস্ত্র আচায় মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার। ভেদি দৈত্য-কারা আয় সর্বহারা; কেহ রহিবে না আর পর-পদ-আনত॥ নব ভিত্তি ’পরে- নব নবীন জীবন হবে উত্থিত রে! শোন্ অত্যাচারী! শোন্ রে সঞ্চয়ী! ছিনু সর্বহারা, হব সর্বজয়ী। ওরে সর্বশেষের এই সংগ্রাম-মাঝ। নিজ নিজ অধিকার জুড়ে দাঁড়া সবে আজ; এই ‘জনগণ-অন্তর-সংহতি’ রে হবে নিখিল মানব জাতি সমুদ্ধত॥ *৫১১. নাটিকা: ‘লায়লী মজনু’, বৈতালিক তোমার কবরে প্রিয় মোর তরে একটু রাখিও ঠাঁই। মরণে যেন সে পরশ পাই গো জীবনে যা পাই নাই॥ তোমারে চাহিয়া ওগো প্রিয়তম কাঁদিয়া আমার কাটিল জনম, কেঁদেছি বিরহে এবার যেন গো মিলনে কাঁদিতে পাই॥ ঐ কবরের বাসর ঘরে গো তোমার বুকের কাছে কাঁদিবে লায়লী, মজনু তোমার য’দিন ধরণী আছে। যে যাহারে চায় কেন নাহি পায়, কেন হেথা প্রেম-ফুল ঝ’রে যায়- প্রেমের বিধাতা থাকে যদি কেই শুধাইব তারে তাই॥ *৫১২. তাল: কাহার্বা ত্রাণ কর মওলা মদিনার, উম্মত তোমার গুনাহ্গার কাঁদে। তব প্রিয় মুসলিম দুনিয়া পড়েছে আবার গুনাহের ফাঁদে॥ নাহি কেউ ঈমানদার, নাহি নিশান-বরদার, মুসলিম জাহানে নাহি আর পরহেজগার, পড়ে নাকো কোরআন মানে না মুর্শিদে; ভুলিয়াছে কল্মা শাহাদাত, পড়ে না নামাজ ঈদের চাঁদে॥ নাহি দান খয়রাত, ভুলে মোহ ফাঁসে মেতে আছে সবে বিভবে বিলাসে; বসিয়াছে জালিম শাহী তখ্তে তব- মজলুমের এ ফরিয়াদ আগর কাহে কব, তলোয়ার নাহি আর, পায়ে গোলামীর জিঞ্জির বাঁধে॥
*৫১৩. গীতি-আলেখ্য: হিন্দোলা’, তাল: দাদ্রা থৈ থৈ জলে ডুবে গেছে পথ এসো এসো পথ ভোলা, সবাই দুয়ার বন্ধ করেছে (আছে) আমার দুয়ার খোলা॥ সৃষ্টি ডুবায়ে ঝরুক বৃষ্টি, ঘন মেঘে ঢাকো সবার দৃষ্টি, ভুলিয়া ভুবন দুলিব দু’জন গাহি’ প্রেম হিন্দোলা॥ সব পথ যবে হারাইয়া যায় দুর্দিনে মেঘে ঝড়ে, কোন পথে এসে সহসা সেদিন দোলো মোরে বুকে ধ’রে। নিরাশা-তিমিরে ঢাকা দশ দিশি, এলো যদি আজ মিলনের নিশি, আশাঢ়-ঝুলনা বাঁধিয়া শ্রী হরি দাও দাও মোরে দোলা॥ *৫১৪. তাল: দাদ্রা নয়নে নিদ নাহি। নিশীথ প্রহর জাগি, একাকিনী গান গাহি॥ কোথা তুমি কোন্ দূরে, ফিরিয়া কি আসিবে না, তোমার সাজানো বনে কত আর পথ চাহি॥ কত আশা অনুরাগে হৃদয় দেউলে রেখে পুজিনু তোমারে পাষাণ, কাঁদিলাম ডেকে ডেকে। এসো অভিমানী ফিরে নিরাশার এ তিমিরে চাঁদের তরণী বাহি’ ॥ *৫১৫. তাল: কাহার্বা নাই চিনিলে আমায় তুমি রইব আধেক চেনা। চাঁদ কি জানে কোথায় ফোটে চাঁদনি রাতে হেনা॥ আধো আঁধার আধো আলোতে একটু চোখের চাওয়া পথে- জানিতাম তা ভুলবে তুমি, আমার আঁখি ভুলবে না॥ হয় না সাহস কোথায় যাব মনের কথা কয়ে। একটু জানার মধু পিয়ে বেড়াই কেন গুন্গুনিয়ে- তুমি জান, আমি জানি, আর কেহ জানে না॥ *৫১৬. রাগ; পাহাড়ি মিশ্র, তাল: কাহার্বা পিয়া গেছে কবে পরদেশ পিউ কাঁহা ডাকে পাপিয়া, দোয়েল শ্যামার শিসে তারি হুতাশ উঠিছে ছাপিয়া॥ পাতারি আড়ালে মুখ ঢাকি’ মুহুমুহু কুহু ওঠে ডাকি, বাজে ধ্বনি তারি উহু উহু বিরহী পরান ব্যাপিয়া॥ ‘বউ কথা কও’ পাখি ডাকে- কেন মনে প’ড়ে যায় তাকে, কথা কও বউ-ডাকিত সে মোরে, নিশীথ উঠিত কাঁপিয়া॥ *৫১৭. তাল: ত্রিতাল পুবালী পবনে বাঁশি বাজে রহি’ রহি’। ভবনের বধূরে ডাকে বনের বিরহী॥ রতন হিন্দোলা নীপ ডালে বাঁধা’, দোলে দোলে, বলে যেন ‘রাধা রাধা’ দুরু দুরু বুকে বাজে গুরু গুরু দেয়া কেয়া ফুল আনে সোম-সুগন্ধ বহি’ ॥ চোখে মাখি সজল কাজলের ছলনা অভিসারিকার সাজে সাজে গোপ-ললনা। বৃষ্টির টিপ ফেলে ননদীর নয়নে কদম-কুঞ্জে চলে গোপন চরণে, মিলন বিরহ শোক তারি বুকে কাঁদে ‘রাধা-শ্যাম রাধা-শ্যাম’ কহি’ ॥ *৫১৮. তাল: দাদ্রা বঁধু আমি ছিনু বুঝি বৃন্দাবনের রাধিকার আঁখি-জলে। বাদল সাঁঝের যুঁই ফুল হয়ে আসিয়াছি ধরা তলে॥ তাই যেমনি মিলন সাধ ওঠে জেগে তুমি লুকাও হে চাঁদ বিরহের মেঘে, আমি পুবালী পবনে ঝরে যাই বনে দলগুলি যেই খোলে॥ বঁধু এই বুঝি হায় নিয়তির লেখা মিলন আমার নহে- ক্ষণিকের শুভ-দৃষ্টি লভিয়া কাঁদিব পরম বিরহে। বুঝি মিলন আমার নহে- আসিব না আমি মাধবী নিশীথে, অসহায় ধারা-স্রোতে ভেসে যাব, মালা হব না কো গলে॥ *৫১৯. তাল: দ্রুত-দাদ্রা বল ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ, নব যুগ ঐ এলো ঐ এলো ঐ রক্ত যুগান্তর রে। বল জয় সত্যের জয় আসে ভৈরব বরাভয়, শোন অভয় ঐ রথ-ঘর্ঘর রে॥ রে বধির! শোন পেতে কান ওঠে ঐ কোন মহাগান, হাঁকছে বিষাণ ডাকছে ভগবান রে। জগতে পাগল সাড়া জেগে ওঠ উঠে দাঁড়া, ভাঙ্ পাহারা মায়ার কারা-ঘর রে। যা আছে যাক্ না চুলায় নেমে পড় পথের ধূলায়, নিশান দুলায় ঐ প্রলয়ের ঝড় রে। সে ঝড়ের ঝাপটা লেগে ভীম আবেগে উঠনু জেগে পাষাণ ভেঙে প্রাণ-ঝরা নির্ঝর রে। ভুলেছি পর ও আপন ছিঁড়েছি ঘরের বাঁধন, স্বদেশ স্বজন মোদের ঘর রে। যারা ভাই বদ্ধ কুঁয়ায় খেয়ে মা’র জীবন গোঁয়ায় তাদের শোনাই প্রাণ-জাগা মন্তর রে॥ ঝড়ের ঝাটার ঝাণ্ডা নেড়ে মাভৈঃ বাণীর ডঙ্কা মেরে শঙ্কা ছেড়ে হাঁক্ প্রলয়ঙ্কর রে। তোদের ঐ চরণ-চাপে যেন ভাই পরণ কাঁপে মিথ্যা পাপের কণ্ঠ চেপে ধর্ রে। শোনা তোর বুক ভরা গান জাগা ফের দেশ-জোড়া প্রাণ, দে বলিদান প্রাণ ও আত্মপর রে॥ মোরা ভাই বাউল চারণ মানি না শাসন বারঅণ, জীবন মরণ মোদের অনুচর রে। দেখে ঐ ভয়ের ফাঁসি হাসি জোর জয়ের হাসি, অ-বিনাশী নাইকো মোদের ডর রে, গেয়ে চাপা ভাই অগ্নি ভয়ঙ্কর রে॥ খুঁড়ব কবর তুড়্ব শ্মশান পড়ার হাড়ে নাচাব প্রাণ, আনব বিধান নিদান কালের বর রে শুধু এই ভরসা রাখিব মরিস্নি ভির্মি গেছিস ঐ শুনেছিস ভারত বিধির স্বর রে। ধর্ হাত ওঠ্ রে আবার দুর্যোগের রাত্রি কাবার, ঐ হাসে মা’র মূর্তি মনোহর রে॥ *৫২০. তাল: কাহার্বা বাহির দুয়ার মোর বন্ধ হে প্রিয়-মনের দুয়ার আছে খোলা, সেই পথে এসো হে মোর চিত-চোর-হে দেবতা পথ ভোলা॥ সেথা নাহি কুল লাজ কলঙ্ক ভয়, নাহি গুরুজন গঞ্জনা নিরদয়; তাই গোপন মানস তমাল কুঞ্জে (আমি) বাঁধিয়াছি ঝুলন দোলা॥ মোর অন্তরে বহে সদা অন্তঃসলিলা অশ্রু-নদী- সেই যমুনার তীরে কর তুমি লীলা নিরবধি। সে মিলন-মন্দিরে জাগাবে না কেহ, তব দেহে বিলীন হবে মোর দেহ; অনন্ত বাসর-শয্যা রচিয়া অনন্ত মিলনে রহিব উতলা॥
*৫২১. তাল: দাদ্রা বেদনা বিহ্বল পাগল পুবালি পবনে হায় নিদ-হারা তার আঁখি-তারা জাগে আনমনা একা বাতায়নে॥ ঝরিছে অঝোর নভে বাদল, হিয়া দুরু দুরু মন উতল, কাজলের বাঁধ নাহি মানে হায়-অশ্রুর নদী দু’নয়নে॥ মন চলে গেছে দূর সুদূর- একা প্রিয় যথা ব্যথা-বিধুর, এ বাদল রাতি কাটে বিনা সাথি, তারি কথা শুধু পড়ে মনে॥ *৫২২. রাগ: ইমন মিশ্র, তাল: কাহার্বা যবে তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় তুমি করিবে প্রণাম, তব দেবতার নাম নিতে ভুলিয়া বারেক প্রিয় নিও মোর নাম॥ একদা এমনি এক গোধূলি বেলা যেতেছিলে মন্দির-পথে একেলা, জানি না কাহার ভুল তোমার পূজার ফুল আমি লইলাম- সেই দেউলের পথ সেই ফুলের শপথ প্রিয়, তুমি ভুলিলে হায় আমি ভুলিলাম॥ পথের দুঁধারে সেই কুসুম ফোটে- হায় এরা ভোলেনি, বেঁধেছিলে তরু শাখে লতার যে ডোর হের আজো খোলেনি। একদা যে নীল নভে উঠেছিল চাঁদ ছিল অসীম আকাশ ভরা অনন্ত সাধ, আজি অশ্রু-বাদল সেথা ঝরে অবিরাম॥ *৫২৩. বেতার গীতিকা: ‘বর্ষা মোদের প্রাণ’, তাল: কাহার্বা রুম্ ঝুম্ ঝুম্ বাদল নূপুর বোলে বোলে, তমাল বরণী কে নাচে, কে নাচে গগন কোলে॥ তার অঙ্গের লাবনি যেন ঝরে অবিচল হয়ে শীতল মেঘনা মতির ধারা জল। কদম ফুলের পীত উত্তরী তার পুব হাওয়াতে দোলে॥ বিজলি ঝিলিকে তার বনমালার আভাস জাগে বন কুন্তলা ধরা হলো শ্যাম মনোহরা তাহারি অনুরাগে। তারে হেরি পাপিয়া পিয়া পিয়া কহে সাগর কাঁদে নদী জল বহে ময়ূর-ময়ূরী বন-শর্বরী নাচে ট’লে ট’লে॥ *৫২৪. তাল: কাহার্বা সেদিন নিশীথে মোর কানে কানে যে কথাটি গেছ বলে প্রথম মুকুল হয়ে সেই বাণী মালতী লতায় দোলে॥ সে-কথাটি আবার শুনিবে বলিয়া আড়ি পাতে চাঁদ মেঘে লুকাইয়া চাহে চুপি চুপি পিয়াসি পাপিয়া ঘন পল্লব তলে॥ বসে আছি সেই মালতী বিতানে আজ তুমি নাই কাছে- ম্লান মুখে পথ চাহে ফুলগুলি আঁধার বকুল গাছে। দখিনা বাতাস করে হায় হায় ঝরিছে কুসুম শুকনো পাতায় নিবু নিবু হল তোমার আশায় চাঁদের প্রদীপ জ্বলে॥ *৫২৫. রাগ; ভৈরবী, তাল: কাহার্বা এ আঁখি জল মোছ প্রিয়া ভোলো ভোলো আমারে। মনে কি গো রাখে তারে (ওগো) ঝরে যে ফুল আঁধারে॥ ফোটা ফুলে ভরি’ ডালা গাঁথ বালা মালিকা, দলিত এ ফুল লয়ে, (ওগো) দেবে গো বল কারে॥ স্বপনের স্মৃতি প্রিয় জাগরণে ভুলিও, ভুলে যেয়ো দিবালোকে রাতের আলেয়ারে। ঘুমায়েছ সুখে তুমি সে কেঁদেছে জাগিয়া, তুমি জাগিলে গো যবে সে ঘুমায়ে ওপারে॥ *৫২৬. রাগ: দেশ, তাল: কাহার্বা ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায়, (ওগো) জাগিয়ো না উহারে ঘুমাইতে দাও। বনের পাখি ধীরে গাহ গান, দখিনা হাওয়া ধীরে ধীরে বয়ে যাও॥ এখনো শুকায়নি চোখে তার জল, এখনো অধরে হাসি ছলছল্; প্রভাত-রবি শুকায়ো না তায়, ধীর কিরণে তাহারি নয়নে চাও॥ সামলে পথিক ফেলিও চরণ- ঝরেছে হেথায় ফুলের জীবন; ভুলিয়া দ’লো না ঝরা পাতাগুলি-ফুল-সামাধি থাকিতে পারে হেথাও॥ *৫২৭. তাল: দাদ্রা ভীরু এ মনের কলি ফোটালে না কেন ফোটালে না- জয় করে কেন নিলে না আমারে, কেন তুমি গেলে চলি॥ ভাঙিয়া দিলে না কেন মোর ভয়, কেন ফিরে গেলে শুনি অনুনয়; কেন সে বেদনা বুঝিতে পার না মুখে যাহা নাহি বলি॥ কেন চাহিলে না জল নদী তীরে এসে, অকরুণ অভিমানে চলে গেলে মরু-তৃষ্ণার দেশে॥ ঝোড়ো হাওয়া ঝরা পাতারে যেমন তুলে নেয় তার বক্ষে আপন কেন কাড়িয়া নিলে না তেমনি করিয়া মোর ফুল অঞ্জলি॥ *৫২৮. তাল: কাহারবা আমি গিরিধারী সাথে মিলিতে যাইব, সুন্দর সাজে মোরে সাজায়ে দে। লাখ যুগের পরে শুভদিন এলো, মেহেদি রঙে হাত রাঙায়ে দে॥ চন্দন টিপ, গলে মালতীর মালা, নয়নে কাজল পরায়ে দে, অধর রাঙায়ে দে তাম্বুল রাগে, চরণে আল্তা মাখায়ে দে॥ প্রেম নীল শাড়ি প্রীতির আঙিনা, অনুরাগ ভূষণে বধু সাজিয়া হৃদয়-বাসরে মিলিব দোঁহে-কুসুমের শেজ সখি বিছায়ে দে॥ *৫২৯. রাগ; ভৈরবী, তাল: দাদ্রা আঁখি তোল আঁখি তোল না, দানো করুণা ওগো অরুণা, মেলি, নয়ন জীর্ণ কানন কর তরুণা॥ আঁখি যে তোমার বনের পাখি- ঘুম যে ভাঙায় আঁধারে ডাকি’, আলোর-সাগর জাগাও বরুণা’॥ তব আনত আঁখির পাতার কোলে তরুণ আলোর মুকুল দোলে। রঙের কুমার দুয়ারে জাগে, তোমার আঁখির প্রসাদ মাগে, পাণ্ডুর ভোর হোক তরুণারুণা॥ *৫৩০. গীতিচিত্র: ‘অতনুর দেশ’ রাগ: মিশ্র মূলতানী, তাল: কাহার্বা আমায় নহে গো-ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান। বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হ’লে অবসান॥ চাঁদেরে কে চায়-জোছনা সবাই যাচে, গীত শেষে বীণা প’ড়ে থাকে ধূলি মাঝে; তুমি বুঝিবে না বুঝিবে না- আলো দিতে পোড়ে কত প্রদীপের প্রাণ॥ যে কাঁটা-লতার আঁখি-জল, হায়, ফুল হ’য়ে ওঠে ফুটে- ফুল নিয়ে তায় দিয়েছ কি কিছু শূন্য পত্র-পুটে! সবাই তৃষ্ণা মিটায় নদীর জলে, কী তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া-তলে- বেদনার মহাসাগরের কাছে কর সন্ধান॥ *৫৩১. তাল: দাদ্রা ওরে নীল যমুনার জল! বল্ রে মোরে বল্ কোথায় ঘনশ্যাম-আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম। আমি বহু আশায় বুক বেঁধে যে এলাম-এলাম ব্রজধাম॥ তোর কোন্ কূলে কোন্ বনের মাঝে আমার কানুর বেণু বাজে, আমি কোথায় গেলে শুনতে পাব ‘রাধা রাধা’ নাম॥ আমি শুধাই ব্রজের ঘরে ঘরে-কৃষ্ণ কোথায় বল্; কেন কেউ কহে না কথা, হেরি সবার চোখে জল। বল্ রে আমার শ্যামল কোথায় কোন্ মথুরায় কোন্ দ্বারকায়-বল্ যমুনা বল। বাজে বৃন্দাবনের কোন্ পথে তাঁর নূপুর অভিরাম॥ *৫৩২. তাল: দাদ্রা মমতাজ মমতাজ তোমার তাজমহল- যেন ফেরদৌসের এক মুঠো প্রেম, কত সম্রাট হ’ল ধূলি স্মৃতির গোরস্তানে- পৃথিবী ভুলিতে নারে প্রেমিক শাহ্জাহানে, শ্বেত মর্মরে সেই বিরহীর ক্রন্দন-মর্মর গুঞ্জরে অবিরল॥ কেমনে জানিল শাজাহান-প্রেম পৃথিবীতে ম’রে যায়, তাই পাষাণ প্রেমের স্মৃতি রেখে গেল পাষাণে লিখিয়া হায়! যেন তাজের পাষাণ অঞ্জলি ল’য়ে নিঠুর বিধাতা পানে অতৃপ্ত প্রেম বিরহী আত্মা আজো অভিযোগ হানে! বুঝি সেই লাজে বালুকায় মুখ লুকাইতে চায় শীর্ণা যমুনা জল॥ *৫৩৩. তাল:দাদ্রা তোমার কালো রূপে যাক না ডুবে সকল কালো মম, হে কৃষ্ণ প্রিয়তম! নীল সাগর-জলে হারিয়ে যাওয়া নদীর জলের সম॥ কৃষ্ণ নয়ন-তারায় যেমন আলোকিত হেরি ভুবন, তেমনি কালো রূপের জ্যোতি দেখাও নিরুপম॥ যাক মিশে আমার পাপ-গোধূলি তোমার নীলাকাশে, মোর কামনা যাক ধুয়ে তোমার রূপের শ্রাবণ মাসে। তোমায় আমায় মিলন থাকুক (যেমন) নীল সলিলে সুনীল শালুক তুমি জড়িয়ে থাকো (গো) আমার হিয়ায় গানের সুরের সম॥ *৫৩৪, তাল: কাহার্বা উভয়ে: ভালোবাসায় বাঁধব বাসা আমরা দু’টি মানিক জোড়। থাকব বাঁধা পাখায় পাখায় মাখামাখি প্রেম-বিভোর॥ পুরুষ: আমার বুকের যত মধু স্ত্রী: আমার মুখে ঢালবে বঁধু পুরুষ: আমি কাঁদব যখন দুখে স্ত্রী: আমি মুছাব সে নয়ন-লোর॥ পুরুষ: আমি, যদি কভু মনের ভুলে তোমায় প্রিয় থাকি ভুলে স্ত্রী: আমি রইব তাতেই ফুলের মালায় লুকিয়ে যেমন থাকে ডোর। উভয়ে: মোরা নীল গগনের নীল স্বপনে চির-কালের চাঁদ-চকোর॥ *৫৩৫. তাল: কাহার্বা পুরুষ: মন নিয়ে আমি লুকোচুরি খেলা খেলি প্রিয়ে। স্ত্রী: ধরিতে পারি না পেতে তাই প্রেম ফাঁদ- তুমি মেঘ আমি চাঁদ, ফের গো কাঁদিয়ে॥ পুরুষ: মন্দ বায় আমি গন্ধ লুটি শুধু- চাই না আমি সে মধু; স্ত্রী: চাইনে চাইনে বঁধু- তাহে নাই সুখ নাই, আমি পরশ যে চাই। পুরুষ: স্বপন-কুমার ফিরি যে আমি মন ভুলিয়ে॥ উভয়: চল তবে যাই মোরা স্বপনের দেশে জোছনায় ভেসে- নন্দন পারিজাত ফুল ফুটিয়ে॥ *৫৩৬. রাগ; টোড়ি, বৈতালিক তোমার আকাশে উঠেছিনু চাঁদ, ডুবিয়া যাই এখন। দিনের আলোকে ভুলিও তোমার রাতের দুঃস্বপন॥ তুমি সুখে থাক আমি চলে যাই, তোমারে চাহিয়া ব্যথা যেন পাই, জনমে জনমে এই শুধু চাই- না-ই যদি পাই মন॥ ভয় নাই রানী রেখে গেনু শুধু চোখের জলের লেখা, জলের লিখন শুকাবে প্রভাতে, আমি চলে যাব একা! ঊর্ধ্বে তোমার প্রহরী দেবতা, মধ্যে দাঁড়ায়ে তুমি ব্যথাহতা,- পায়ের তলার দৈত্যের কথা ভুলিতে কতক্ষণ॥ *৫৩৭. রাগ: পরশ মিশ্র, তাল: দ্রুত-দাদ্রা জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া! ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া॥ হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি-ভাব্লি এতেই জাতির জান, তাইত বেকুব, করলি তোরা এক জাতিকে একশ’-খান। এখন দেখিস ভারত জোড়া পঁচে আছিস বাসি মড়া, মানুষ নাই আজ, আছে শুধু জাত-শেয়ালের হুক্কাহুয়া॥ জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্ম সম সহন-শীল, তাকে কি ভাই ভাঙ্তে পারে ছোঁয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল! যে জাত-ধর্ম ঠুন্কো এত, আজ নয় কা’ল ভাঙবে সে ত, যাক্ না সে জাত জাহান্নামে, রইবে মানুষ, নাই পরোয়া॥ বলতে পারিস, বিশ্ব-পিতা ভগবানের কোন সে জাত? কোন্ ছেলের তার লাগলে ছোঁয়া অশুচি হন জগন্নাথ? ভগবানের জাত যদি নাই তোদের কেন জাতের বালাই? ছেলের মুখে থুথু দিয়ে মার মুখে দিস ধূপের ধোঁয়া॥ *৫৩৮. রাগ; ভীমপলশ্রী, তাল: কাহার্বা কত আর এ মন্দির দ্বার, হে প্রিয়, রাখিব খুলি’। বয়ে যায় যে লগ্নের ক্ষণ, জীবনে ঘনায় গোধূলি॥ নিয়ে যাও বিদায়-আরতি, হ’ল ম্লান আঁখির জ্যোতি; ঝরে যায় শুষ্ক স্মৃতির মালিকা-কুসুমগুলি॥ কত চন্দন ক্ষয় হ’ল হায়, কত ধূপ পুড়িল বৃথায়; নিরাশায় সে পুষ্প কত ওপায়ে হইল ধূলি॥ ও বেদী-তলে কত প্রাণ-হে পাষাণ নিলে বলিদান; তবু হায় দিলে না দেখা-দেবতা, রহিলে ভুলি’॥ *৫৩৯. রাগ: সিন্ধুড়া, তাল: কাহার্বা কার মঞ্জির রিনিঝিনি বাজে-চিনি চিনি প্রাণের মাঝে সদা বাজে তারি রাগিণী॥ বন-শিরিষের জিরিজিরি পাতায় ধীরি ধীরি ঝিরি ঝিরি নূপুর বাজায়, তমাল-ছায়ায় বেড়ায় ঘুরে মায়া-হরিণী॥ আমার গানে তারি চরণের অনুরণনে ছন্দ জাগে গন্ধে রসে রূপে বরণে। কান পেতে রই দুয়ার পাশে- তারি আসার আভাস আসে, ঝঙ্কার তোলে মনের বীণায় বীণ-বাদিনী॥ *৫৪০. তাল: কাহার্বা কেন তুমি কাঁদাও মোরে, হে মদিনাওয়ালা! অবরোধবাসিনী আমি কুলের কুলবালা॥ ঈদের চাঁদের ইশারাতে কেন ডাক নিঝুম রাতে, হাসিন ইউসুফ! জুলেখারে কত দিবে জ্বালা॥ একি লিপি পাঠালে নাথ কোরানের আয়াতে- পড়তে গিয়ে অশ্রু-বাদল নামে আঁখি পাতে। বাজিয়ে শাহাদতের বাঁশি কেন ডাক নিত্য আসি; হাজার বছর আগে তোমায় দিয়েছি তো মালা॥ *৫৪১. সঙ্গীতালেখ্য: ‘পঞ্চাঙ্গনা,’ তাল:কাহার্বা নূরজাহান, নূরজাহান! সিন্ধু নদীতে ভেসে, এলে মেঘলামতীর দেশে, ইরানি গুলিস্তান॥ নার্গিস লালা গোলাপ আঙ্গুর-লতা শিঁরি ফরহাদ সিরাজের উপকথা এনেছিলে তুমি তনুর পেয়ালা ভরি’ বুলবুলি দিলরুবা রবাবের গান॥ তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম, সে যে রাজাধিরাজ- চন্দন সম মাখিল অঙ্গে কলঙ্ক লোক-লাজ। যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ নীল আকাশে, যাহা লেখা থাকে শুধু প্রেমিকের ইতিহাসে, দেবে চিরদিন নন্দন-লোক-চারী তব সেই কলঙ্ক সে প্রেমের সম্মান॥ *৫৪২. নাটিকা: ‘বাসন্তিকা,’ তাল: কাহার্বা এলো এলো রে ঐ সুদূর বন্ধু এলো। এলো পথ চাওয়া এলো হারিয়ে পাওয়া মনের আঁধার দূরে গেল, ঐ বন্ধু এলো॥ এলো চঞ্চল বন্যার ঢল মন্হর স্রোত-নীড়ে, এলো শ্যামল মেঘ-মায়া তৃষ্ণিত গগন ঘিরে; তার পলাতকা মৃগে বন ফিরে পেল॥ এলো পবনে বিহ্বল চঞ্চলতা যেন শান্ত ভবনে এলো সারা ভুবনের কল-কথা। অলি গুঞ্জরি’ কয় জাগো বনবীথি; ডাকে দখিনা মলয়-এলো এলো অতিথি; বাজে তোরণ দ্বারে বাঁশরি গীতি, দুখ নিশি পোহাল, আঁখি মেল॥ *৫৪৩. তাল: কাহার্বা ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর। বদ্নসীব আয়, আয় গুনাহ্গার নূতন করে সওদা কর॥ জীবন ভ’রে করলি লোকসান আজ হিসাব তার খতিয়ে নে; বিনিমূলে দেয় বিলিয়ে সে যে বেহেশ্তী নজর॥ কোরানের ঐ জাহাজ বোঝাই হীরা মুক্তা পান্নাতে,
লুটে নে রে, লুটে নে সব, ভরে তোল তোর শূন্য ঘর। এই ব্যাপারীর হও খরিদ্দার লও রে ইহার সিল-মোহর॥ আরশ হতে পথ ভুলে এ এলো মদিনা শহর, নামে মোবারক মোহাম্মদ- পুঁজি ‘আল্লাহু আকবর’॥ *৫৪৪. তাল: কাহার্বা যে আল্লার পথা শোনে তারি কথা শোনে লোকে। আল্লার নূর যে দেখেছে পথ পায় লোক তার আলোকে॥ যে আপনার হাত দেয় আল্লায় জুল্ফিকার তেজ সেই পায়, যার চোখে আছে খোদার জ্যোতি রাত্রি পোহায় তারি চোখে॥ ভোগের তৃষ্ণা মিটেছে যার খোদার প্রেমের শিরনি পেয়ে, যায় বাদ্শা-নবাব গোলাম হ’য়ে সেই ফকিরের কাছে যেয়ে। আসে সেই কওমের ইমাম সেজে কওমকে পেয়েছে যে, তারি কাছে খোদার দেওয়া শান্তি আছে দুখে-শোকে॥ *৫৪৫. তাল: দাদ্রা সুদূর মক্কা মদিনার পথে আমি রাহি মুসাফির, বিরাজে রওজা মুবারক যথা মোর প্রিয় নবীজীর॥ বাতাসে যেখানে বাজে অবিরাম তওহীদ বাণী খোদার কালাম, জিয়ারতে যথা আসে ফেরেশ্তা শত আউলিয়া পীর॥ মা ফাতেমা আর হাসান হোসেন খেলেছেন পথে যার, কদমের ধূলি পড়েছে যথায় হাজারো আম্বিয়ার। সুরমা করিয়া কবে সেই ধূলি মাখিব নয়নে দুই হাতে তুলি’, কবে এ দুনিয়া হতে যাবার আগে রে কাবাতে লুটাব শির॥ *৫৪৬. রাগ; দরবারী কানাড়া, তাল: দাদ্রা ভুল ক’রে যদি ভালবেসে থাকি ক্ষমিও সে অপরাধ। অসহায় মনে কেন জেগেছিল ভালবাসিবার সাধ॥ কত জন আসে তব ফুলবন মলয়, ভ্রমর, চাঁদের কিরণ,- তেমনি আমিও আসি অকারণ অপরূপ উন্মাদ॥ তোমার হৃদয়-শূন্যে জ্বলিছে কত রবি শশী তারা, তারি মাঝে আমি ধূমকেতু সম এসেছিনু পথহারা। তবু জানি প্রিয় একদা নিশীথে মনে পড়ে যাবে আমারে চকিতে, সহসা জাগিবে উৎসব-গীতে সকরুণ অবসাদ॥ *৫৪৭. চোখের জলে মন ভিজিয়ে যায় চলে ঐ কোন উদাসী। বুকে কেন নীরব বীণা মুখে কেন নেইকো হাসি॥ আকাশে চাঁদ তারার মালা বনের পথে রঙের ডালা তবু কেন আঁখিতে ওর উথলে পড়ে অশ্রুরাশি॥ বনের হাওয়ায় বাজিয়ে বেণু, ছাড়িয়ে চলে ফুলের রেণু বিদেশিকে আন্না ডেকে সাধ হয়েছে ভালবাসি॥ *৫৪৮. তাল: দাদ্রা দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে। বেহোশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে॥ হায় গো খোদা, কেন মোরে পাঠাইলে হায় কাঙাল ক’রে; যেতে নারি প্রিয় নবীর মাজার শরীফ জিয়ারতে॥ স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে-যেন কাবার মিনার থেকে কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে। ইয়া ইলাহি! বল সে কবে আমার স্বপন সফল হবে, গরিব বলে হব কি নিরাশ, মদিনা দেখার নিয়ামতে॥ *৫৪৯. তাল: কাহার্বা খোদা এই গরীবের শোন শোন মোনাজাত। দিও তৃষ্ণা পেলে ঠাণ্ডা পানি ক্ষুধা পেলে লবন-ভাত॥ মাঠে সোনার ফসল দিও, দিও গৃহ ভরা বন্ধু প্রিয়, দিও হৃদয় ভরা শান্তি দিও-(খোদা) সেই তো আমার আবহায়াত॥ আমায় দিয়ে কারুর ক্ষতি হয় না যেন দুনিয়ায়, আমি কারুর ভয় না করি, মোরেও কেহ ভয় না পায়, খোদা। (যবে) মস্জিদে যাই তোমারি টানে (যেন) মন নাহি ধায় দুনিয়া পানে আমি ঈদের চাঁদ দেখি যেন আস্লে দুখের আঁধার রাত॥ *৫৫০. তাল: দ্রুত-দাদ্রা ওরে ও মদিনা বলতে পারিস কোন্ সে পথে তোর খেল্ত ধুলা মাটি নিয়ে মা ফাতেমা মোর॥ হাসান হোসেন খেল্ত কোথায় কোন্ সে খেজুর-বনে পাথর-কুচি কাঁকর লয়ে দুম্বা শিশুর সনে; সেই মুখকে চাঁদ ভেবে রে উড়িত চকোর॥ মা আয়েশা মোর নবীজীর পা ধোয়াতেন যথা, দেখিয়ে দে সেই বেহেশ্ত্ আমায় রাখ রে আমার কথা; তোর প্রথম কোথায় আজান ধ্বনি ভাঙ্লো ঘুমের ঘোর॥ কোন পাহাড়ের ঝর্ণা-তীরে মেঘ চরাতেন নবী, কোন পথ দিয়ে রে যেতেন হেরায় আমার আল-আরবি’ তুই কাঁদিস কোথায় বুকে ধরে সেই নবীজীর গোর॥ |