ভাষাংশ | কাজী নজরুল ইসলাম |
কাজী নজরুল ইসলামের রচনাসংগ্রহের সূচি


 

 

*৫৫১. তাল:কাহার্‌বা

তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম।

ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারি খোদায়ী কালাম-

    মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম

ঐ নামেরি রশি ধ’রে যাই আল্লার পথে,

ঐ নামেরি ভেলা ধ’রে ভাসি নূরের স্রোতে,

ঐ নামেরি বাতি জ্বেলে দেখি আরশের মোকাম।

    মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম

*৫৫২. তাল: কাহার্‌বা

মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।

তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান, (ওরে) এমন মধুর লাগে

    ওরে গোলাপ নিরিবিলি

    নবীর কদম ছুঁয়েছিলি-

তাঁর কদমের খোশবু আজো তোর আতরে জাগে

    মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে

    তাঁর পেশানির জ্যোতি মেখে,

ওরে ও চাঁদ রাঙলি কি তুই গভীর অনুরাগে

    ওরে ভ্রমর তুই কি প্রথম

    চুমেছিলি তাঁহার কদম,

গুন্‌গুনিয়ে সেই খুশি কি জানাস্ রে গুল্‌বাগে

*৫৫৩. তাল: ঝাঁপতাল

আমার প্রিয় হজরত নবী কমলিওয়ালা

যাঁহার রওশনীতে দীন দুনিয়া উজালা

যাঁরে খুঁজে ফেরে কোটি গ্রহ তারা,

ঈদের চাঁদে যাঁহার নামের ইশারা,

বাগিচায় গোলাব গুল্ গাঁথে যাঁর মালা

আউলিয়া আম্বিয়া দরবেশ যাঁর নাম

খোদার নামের পরে জপে অবিরাম

কেয়ামতে যাঁর হাতে কওসর-পিয়ালা

পাপে-মগ্ন ধরা যাঁহার ফজিলতে

ভাসিল সুমধুর তৌহিদ-স্রোতে,

মহিমা যাঁহার জানেন এক আল্লাতালা

*৫৫৪.তাল: কাহার্‌বা

মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি মোহাম্মদ নাম জপমালা।

ঐ নামে মিটাই পিয়াসা ও নাম কওসারের পিয়ালা

    মোহাম্মদ নাম শিরে ধরি,

    মোহাম্মদ নাম গলায় পরি,

ঐ নামেরি রওশনীতে আঁধার এ মন রয় উজালা

    আমার হৃদয়-মদিনাতে

    শুনি ও নাম দিনে-রাতে,

ও নাম আমার তস্‌বি হাতে, মন-মরুতে গুলে-লালা

    মোহাম্মদ মোর অশ্রু-চোখের

    ব্যথার সাথি শান্তি শোকের,

চাইনে বেহেশ্‌ত্ যদি ও নাম জপ্‌তে সদা পাই নিরালা

*৫৫৫. তাল: কাহার্‌বা

    শোন শোন্ ইয়া ইলাহী, আমার মোনাজাত।

    তোমারি নাম জপে যেন, (আমার) হৃদয় দিবস-রাত

        যেন কানে শুনি সদা

        তোমারি কালাম হে খোদা,

(আমি)    চোখে যেন দেখি শুধু, (দেখি) কোর্‌আনের আয়াত

        মুখে যেন জপি আমি

        কলেমা তোমার দিবস-যামী,

(তোমার) মস্‌জিদেরি ঝাড়ু-বর্‌দার্, (খোদা) হোক আমার এ হাত।

        সুখে তুমি, দুখে তুমি,

        চোখে তুমি, বুকে তুমি,

    এই পিয়াসি প্রাণে খোদা তুমি আবহায়াত

*৫৫৬. তাল: কাহার্‌বা

দ্বৈত: ভুলে রইলি মায়ায় এসে ভবে

    তুই ভুলবি ভুলের খেলা কবে

স্ত্রী:  নিবু নিবু তোর জীবন-বাতি শেষ হলো সুখ-রাতি,

পুরুষ: রাত পোহালে সুখের সাথি সঙ্গে নাহি রবে

স্ত্রী:  যাঁর কৃপায় তুই রইলি সুখে ডাক্‌লি না রে তারে

পুরুষ: তুই কি নিয়ে হায় তাহার কাছে যাবি পরপারে।

স্ত্রী:  জমালি যা তুই জীবন ভ’রে পিছে প’ড়ে রবে

পুরুষ: দারাসুত লবে বিভব রতন পাপের বোঝা নাহি লবে

স্ত্রী:  স্রোতের মতো সময় যে যায় নিয়ে শরণ প্রভুর পায়

পুরুষ: কৃপা-সিন্ধুর কৃপা পেলে ত’রে যাবি তুই তবে

*৫৫৭. তাল: কাহার্‌বা

নামাজ পড়, রোজা রাখ, কল্‌মা পড় ভাই।

তোর আখেরের কাজ করে নে, সময় যে আর নাই

    সম্বল যার আছে হাতে

    হজ্বের তরে যা কা’বাতে,

জাকাত দিয়ে বিনিময়ে শাফায়াত যে পাই

ফরজ তর্‌ক ক’রে কর্‌লি করজ ভবের দেনা,

আল্লাহ ও রসুলের সাথে হ’ল না তোর চেনা।

    পরানে রাখ কোরান রেঁধে,

    নবীরে ডাক কেঁদে কেঁদে,

রাত্রি দিন তুই কর্ মোনাজাত- আল্লাহ্ তোমায় চাই

৫৫৮.বৈতালিক

বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়।

নবীজী নাই-উঠ্‌ল মাতম মদিনায়

    আঁখি-প্রদীপ এই ধরনীর

    গেল নিভে ঘির্‌ল তিমির,

দীনের রবি মোদের নবী চায় বিদায়।

সইল না রে বেহেশ্‌তী দান দুনিয়ায়

    না পূরিতে সাধ-আশা

    না মিটিতে তৌহিদ-পিপাসা,

যায় চ’লে দীনের শাহানশাহ্-হায় রে হায়,

সেই শোকেরি তুফান বহে ‘লু’ হাওয়ায়

বেড়েছে আজ দ্বিগুণ পানি দজ্‌লা ফোরাত নদীতে,

তূর ও হেরা পাহাড় ফেটে অশ্রু-নিঝর ব’য়ে যায়।

ধরার জ্যোতি হরণ ক’রে উজল হ’ল ফের বেহেশ্‌ত্

কাঁদে পশু-পাখি ও তরুলতায়,

সেই কাঁদনের স্মৃতি দোলে দরিয়ায়

*৫৫৯. তাল: কাহার্‌বা

মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা-হলেন নাজেল তাহার দেশে খোদার রসুল।

যাঁহার নামে যাঁহার ধ্যানে সারা দুনিয়া দীওয়ানা, প্রেমে মশগুল

    যাঁহার আসার আশাতে অনুরাগে

    নীরস খর্জুর তরুতে রস জাগে,

তপ্ত মরু’পরে খোদার রহম্ ঝরে, হাসে আকাশ পরিয়া চাঁদের দুল

    ছিল এ ত্রিভুবন যাঁহার পথ চাহি’,

    এলে রে সেই নবী ‘ইয়া উম্মতি’ গাহি’,

যতেক গুম্‌রাহে নিতে খোদার রাহে এলো ফুটাতে দুনিয়াতে ইসলামি ফুল

*৫৬০. তাল: কাহার্‌বা

নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম আহমদ বোল।

যে নাম নিয়ে চাঁদ-সেতারা আস্‌মানে খায় দোল

    পাতায় ফুলে যে নাম আঁকা

    ত্রিভুবনে যে নাম মাখা,

যে নাম নিতে হাসিন ঊষার রাঙে রে কপোল

    যে নাম গেয়ে ধায় রে নদী,

    যে নাম সদা গায় জলধি,

যে নাম বহে নিরবধি পবন হিল্লোল

    যে নাম রাজে মরু-সাহারায়,

    যে নাম বাজে শ্রাবণ-ধারায়,

যে নাম চাহে কাবার মসজিদ-মা আমিনার কোল

*৫৬১. তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

আল্লা নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে।

ফলবে ফসল বেচ্‌ব তারে কেয়ামতের হাটে

    পত্তনীদার যে এই জমির

    খাজনা দিয়ে সেই নবীজীর

বেহেশ্‌তেরি তালুক কিনে বস্‌ব সোনার খাটে

মসজিদে মোর মরাই বাঁধা হবে নাকো চুরি,

মনকির নকির দুই ফেরেশ্‌তা হিসাব রাখে জুড়ি’ রে;

    রাখব হেফাজতের তরে

    ঈমানকে মোর সাথি করে,

রদ হবে না কিস্তি (মোর), জমি উঠবে না আর লাটে

*৫৬২. তাল: কাহার্‌বা

ওরে ও দরিয়ার মাঝি! মোরে নিয়ে যা রে মদিনা।

তুমি মুর্শিদ হয়ে পথ দেখাও ভাই আমি যে পথ চিনি না

    আমার প্রিয় হজরত সেথায়

    আছেন নাকি ঘুমিয়ে ভাই,

আমি প্রাণে যে আর বাঁচি না রে আমার হজরতের দরশ বিনা

নবী নাকি নাই ও দেশে, নাও না চলে যদি-

আমি চোখের সাঁতার পানি দিয়ে বইয়ে দেব নদী।

    ঐ মদিনার ধূলি মেখে

    কাঁদবো ইয়া মোহাম্মদ ডেকে ডেকে রে-

কেঁদেছিল কারবালাতে, (ওরে) যেমন বিবি সাকিনা

*৫৬৩. তাল: কাহার্‌বা

যাবি কে মদিনায় আয় ত্বরা করি’।

তোর খেয়া ঘাটে এলো পুণ্য তরী

আবুবকর, উমর খাত্তাব, ওসমান্, আলী হায়দার

দাঁড়ি এ সোনার তরণীর, পাপী সব নাই নাই আর ডর।

এ তরীর কাণ্ডারি আহ্‌মদ পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,

মাঝিদের মুখে সারিগান শোন্ ঐ ‘লা শরীক আল্লাহ্,।

পাপ-দরিয়ার তুফানে আর নাহি ডরি

ঈমানের পারানি পড়ি আছে যার আয় এ সোনার নায়-

ধরিয়া দ্বীনের রশি কলেমার জাহাজ-ঘাটায়।

ফেরদৌস্ হতে ডাকে হুরী-পরী

*৫৬৪. তাল: কাহার্‌বা

    সকাল হ’ল শোন্ রে আজান, ওঠ্ রে শয্যা ছাড়ি’।

তুই  মস্‌জিদে চল্ দ্বীনের কাজে, ভোল্ দুনিয়াদারি

    ওজু করে ফেল্ রে ধূয়ে নিশীথ রাতের গ্লানি,

    সিজ্‌দা করে জায়নামাজে ফেল্ রে চোখের পানি;

    খোদার নামে সারাদিনের কাজ হবে না ভারী

    নামাজ প’ড়ে দু’হাত তুলে প্রার্থনা কর তুই-

    ফুল-ফসলের ভ’রে উঠুক সকল চাষির ভুঁই;

    সকল লোকের মুখে হোক আল্লার নাম জারী

    ছেলে-মেয়ে সংসার-ভার সঁপে দে আল্লারে,

    নবীজীর দোয়া ভিক্ষা কর্,কর্ রে বারে বারে;

তোর হেসে নিশি প্রভাত হবে সুখে দিবি পড়ি

*৫৬৫. তাল: কাহার্‌বা

আল্লাজী গো, আমি বুঝি না রে তোমার খেলা।

তাই দুঃখ পেলে ভাবি-বুঝি হানিলে হেলা

কুমার যখন হাঁড়ি গড়ে কাঁদে মাটি-

ভাবে, কেন পোড়ায় আমায় চড়িয়ে ভাটি;

ফুলদানি হয় পোড় খেয়ে সেই মাটির ঢেলা

মা শিশুরে ধোয়ায় মোছায়, শিশু ভাবে-

ছাড়া পেলে, মা ফেলে সে পালিয়ে যাবে।

মোরা, দোষ করে তাই দুষি তোমায় সারা বেলা

আমরা তোমার বান্দা, খোদা তুমি জানো-

কেন হাসাও, কেন কাঁদাও, আঘাত হানো।

যে গড়তে জানে তারি সাজে ভেঙে ফেলা

*৫৬৬. তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

হেরা হতে হেলে দুলে নূরানী তনু ও কে আসে হায়,

সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা খুলে খুলে যায়-

সে যে আমার কমলিওয়ালা-কমলিওয়ালা

তার ভাবে বিভোল রাঙা পায়ের তলে

পর্বত জঙ্গম টলমল টলে,

খোরমা খেজুর বাদাম জাফরানি ফুল ঝ’রে ঝ’রে যায়-

সে যে আমার কমলিওয়ালা-কমলিওয়ালা

আসমানে মেঘ চলে ছায়া দিতে,

পাহাড়ের আঁসু গলে ঝরনার পানিতে,

বিজলি চায় মালা হতে,

পূর্ণিমার চাঁদ তার মুকুট হতে চায়-

সে যে আমার কমলিওয়ালা-কমলিওয়ালা

*৫৬৭. তাল: কাহার্‌বা

যেদিন রোজ হাশরে করতে বিচার তুমি হবে কাজী

    সেদিন তোমার দিদার আমি পাব কি আল্লাজী

    সেদিন নাকি তোমার ভীষণ কাহ্‌হার রূপ দেখে

    পীর পয়গম্বর কাঁদবে ভয়ে ‘ইয়া নফসী’ ডেকে;

    সেই সুদিনের আশায় আমি নাচি এখন থেকে।

আমি তোমায় দেখে হাজারো বার দোজখ যেতে রাজি

আল্লাহ    তোমায় দেখে হাজারো বার দোজখ যেতে রাজি

    যেরূপে হোক বারেক যদি দেখে তোমায় কেহ

    দোজখ্ কি আর ছুঁতে পারে পবিত্র তাঁর দেহ।

সে  হোক না কেন হাজার পাপী হোক না রে-নামাজী

    ইয়া আল্লাহ, তোমার দয়া কত তাই দেখাবে ব’লে

    রোজ-হাশরে দেখা দেবে বিচার করার ছলে,-

    প্রেমিক বিনে কে বুঝিবে তোমার এ কারসাজি

*৫৬৮. তাল: কাহার্‌বা

মোহাম্মদ নাম যত জপি, তত মধুর লাগে।

নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে

    ঐ নামেরি মধু চাহি’

    মন-ভ্রমরা বেড়ায় গাহি’,

আমার ক্ষুধা তৃষ্ণা নাহি ঐ নামের অনুরাগে

    ও নাম প্রাণের প্রিয়তম,

    ও নাম জপি জমনু সম,

ঐ নামে পাপিয়া গাহে প্রাণের কুসুম-বাগে

    ঐ নামে মুসাফির রাহী,

    চাই না তখ্‌ত্ শাহানশাহী,

নিত্য ও নাম ইয়া ইলাহী, যেন হৃদে জাগে

*৫৬৯. তাল: কাহার্‌বা

চল্ রে কাবার জিয়ারতে, চল্ নবীজীর দেশ।

দুনিয়াদারির লাবাস খুলে পর রে হাজির বেশ

আওকাতে তোর থাকে যদি-আরফাতের ময়দান,

    চল্ আরফাতের ময়দান,

এক জামাত হয় যেখানে ভাই নিখিল মুসলমান।

মুসলিম গৌরব দেখার যদি থাকে তোর খায়েশ

যেথায় হজরত হলেন নাজেল মা আমিনার ঘরে

খেলেছেন যার পথে-ঘাটে মক্কার শহরে, চল্ মক্কার শহরে-

সেই মাঠের ধূলা মাখ্‌বি যথা নবী চরাতেন মেষ

ক’রে হিজরত কায়েম হলেন মদিনায় হজরত-যে মদিনায় হজরত

সেই মদিনা দেখ্‌বি রে চল্ মিট্‌বে রে তোর প্রাণের হসরত;

সেথা নবীজীর ঐ রওজাতে তোর আরজি করবি পেশ

*৫৭০. তাল কাহার্‌বা

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।

আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখ্‌বি যদি আয়

ধূলির ধরা বেহেশ্‌তে আজ, জয় করিল দিল রে লাজ।

আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়

দেখ্ আমিনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে।

কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়

আজকে যত পাপী ও তাপী, সব গুনাহের পেল মাফী।

দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী জুলুম নিল বিদায়

নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে নাম, সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম।

জীন পরী ফেরেশ্‌তা সালাম জানায় নবীর পায়

*৫৭১. তাল: কাহার্‌বা

আসিছেন হাবিব- এ খোদা আরশ্-পাকে তাই উঠেছে শোর,

চাঁদ পিয়াসে ছুটে আসে আকাশ পানে যেমন চকোর।

কোকিল যেমন গেয়ে ওঠে ফাগুন আসার আভাস পেয়ে,

তেমনি ক’রে হরষিত ফেরেশ্‌তা সব উঠলো গেয়ে:

দেখ আজ আরশে আসেন মোদের নবী কম্‌লিওয়ালা।

হের সেই খুশিতে চাঁদ-সুরুজ আজ হ’ল দ্বিগুণ আলা

ফকির দরবেশ্ আউলিয়া যাঁরে, ধ্যানে জ্ঞানে ধ’রতে নারে,

যাঁর মহিমা বুঝিতে পারে এক সে আল্লাহ তালা

বারেক মুখে নিলে যাঁহার নাম, চিরতরে হয় দোজখ্ হারাম,

পাপীর তরে দস্তে যাঁহার কওসরের পিয়ালা

‘মিম্’ হরফ না থাকলে সে আহাদ, নামে মাখা তার শিরিন শাহাদ্,

নিখিল প্রেমাস্পদ আমার মোহাম্মদ ত্রিভুবন উজালা

*৫৭২. তাল: কাহার্‌বা

নতুন চাঁদের তক্‌বির শোন্ কয় ডেকে ঐ মুহাজ্জিন-

আসমানে ফের ঈদুজ্জোহার চাঁদ উঠেছে মুসলেমিন

এলো স্মরণ করিয়ে দিতে উদুজ্জোহার এই সে চাঁদ,

তোরা ভোগের পাত্র ফেল্‌রে ছুঁড়ে ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ।

কোরবানি দে তোরা, কোরবানি দে

প্রাণের যা তোর প্রিয়তম আজকে সে সব আন্,

খোদারই রাহে আজ তাহাদের কর রে কোরবান্।

কি হবে ঐ বনের পশু খোদারে দিয়ে,

তোরা কাম-ক্রোধাদি মনের পশু জবেহ্ কর্ নিয়ে।

কোরবানি দে তোরা, কোরবানি দে

বিলিয়ে দেওয়ার খুশির শিরনি তশ্‌তরিতে আন্,

পর্ রে তোরা সবাই ত্যাগের রঙিন পিরহান্।

মোদের যা কিছু প্রিয় বিলাব সবে

নবীর উম্মত তবে সকলে কবে।

কোরবানি দে তোরা, কোরবানি দে

*৫৭৩. তাল: কাহার্‌বা

আমি যদি আরব হ’তাম-মদিনারই পথ।

এই পথে মোর চ’লে যেতেন নূর নবী হজরত

পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,

আমি ঝর্ণা হয়ে গ’লে যেতাম অম্‌নি পরম সুখে;

সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ্-ই-তূরে,

দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত

মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে

আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে।

হাসান হোসেন হেসে হেসে নাচতো আমার বক্ষে এসে

চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত

*৫৭৪. তাল: দাদ্‌রা

    দুখের সাহারা পার হয়ে আমি চলেছি কাবার পানে।

    পড়িব নামাজ মা’রফাতের আরফাত ময়দানে

    খোদার ঘরের দিদার পাইব, হজের পথের জ্বালা জুড়াইব,

(মোর)    মুর্শিদ হয়ে হজরত পথ দেখান সুদূর পানে

    রোজা রাখা মোর সফল হইবে, পাব পিয়াসার পানি;

    আবে জম্‌জম্ তৌহিদ পিয়ে ঘুচাব পথের গ্লানি।

    আল্লার ঘর তওয়াফ করিয়া কাঁদিব সেথায় পরান ভরিয়া,

    ফিরিব না আর, কোরবানি দেব এই জান সেইখানে

*৫৭৫. তাল: কাহার্‌বা

মোহাররমের চাঁদ এলো ঐ কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়।

ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা তারি মাতম শোনা যায়

কাঁদিয়া জয়নাল আবেদীন বেহোশ হোল কারবালায়

বেহেশ্‌তে লুটিয়ে কাঁদে আলী ও মা ফাতেমায়

কাশেমের ঐ লাশ লয়ে কাঁদে বিবি সাকিনা।

আস্‌গরের ঐ কচি বুকে তীর দেখে কাঁদে খোদায়

কাঁদে বিশ্বের মুসলিম আজি গাহে তারি মর্সিয়া।

ঝরে হাজার বছর ধরে অশ্রু তারি শোকে হায়

*৫৭৬. তাল: কাহার্‌রা

জাগে না সে যোশ ল’য়ে আর মুসলমান।

হায় করিল জয় যে তেজ ল’য়ে দুনিয়া জাহান

যাহার তক্‌বির ধ্বনি, তক্‌দির বদলালো দুনিয়ার

না-ফরমানের জামানায় আনিল ফরমান খোদার,

হায় পড়িয়া বিরান আজি সে গুল্-গুলিস্তান

নাই সাচ্চাই সিদ্দিকের, উমরের নাহি সে ত্যাগ আর

নাহি আর বেলালের ঈমান, নাহি আলীর জুলফিকার,

হায় নাহি আর সে জেহাদ-লাগি’ বীর শহীদান

নাহি আর বাজুতে কুওত্‌ নাহি খালেদ, মুসা, তারেক

নাহি বাদ্‌শাহী তখ্‌তে তাউস্‌ ফকির আজ দুনিয়ার মালেক

হায় ইস্‌লাম কেতাবে শুধু মুসলিম গোরস্তান

*৫৭৭. তাল: কাহার্‌বা

হে মদিনার বুলবুলি গো গাইলে তুমি কোন গজল।

মরুর বুকে উঠল ফুটে প্রেমের রঙিন গোলাপ দল

দুনিয়ার দেশ-বিদেশ থেকে গানের পাখি উঠল ডেকে

মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বনি উঠল ভেদি গগন তল

সাহারার দগ্ধ বুকে রচ তুমি গুলিস্তান

সেথা আস্‌হাব সব ভ্রমর হয়ে শাহাদতের গাইল গান।

দোয়েল কোকিল দলে দলে আল্লা রসুল উঠল ব’লে

আল্ কোরানের পাতার কোলে খোদার নামের বইল ঢল

*৫৭৮. তাল: কাহার্‌বা

তুমি আশা পুরাও খোদা, সবাই যখন নিরাশ করে।

সবাই যখন পায়ে ঠেলে, সান্ত্বনা পাই তোমায় ধ’রে

দ্বারে দ্বারে হাত পাতিয়া ফিরি যখন শূন্য হাতে,

তোমার দানের শির্‌নি তখন আসে আমায় পথ দেখাতে,

দেখি হঠাৎ শূন্য তোমার দানে গেছে ভ’রে

খোদা, তোমায় ভরসা করি নামি যখন কোন কাজে,

সে কাজ হাসিল হয় সহজে শত বিপদ বাধার মাঝে

(খোদা) তোমায় ছেড়ে অন্য জনে শরণ নিলে যায় সে সরে

মাঝ দরিয়ায় ডুবলে জাহাজ তোমায় যদি ডাকি

তোমার রহম কোলে করি তীরেতে যায় রাখি

দুখের অনল কুসুম হয়ে ফুটে ওঠে থরে থরে

*৫৭৯.তাল: কাহার্‌বা

তুমি অনেক দিলে খোদা, দিলে অশেষ নিয়ামত-

আমি লোভী, তাইতো আমার মেটে না হসরত

কেবলি পাপ করি আমি- মাফ করিতে তাই, হে স্বামী,

দয়া করে শ্রেষ্ঠ নবীর করিল উম্মত।

তুমি নানান ছলে করছ পূরণ ক্ষতির খেসারত

মায়ের বুকে স্তন্য দিলে, পিতার দিলে স্নেহ;

মাঠে শস্য ফসল দিলে আরাম লাগি গেহ।

ঈদের চাঁদের রঙ মশালে রঙিন বেহেশ্‌ত্ পথ দেখালে

আখেরেরই সহায় দিলে আখেরি হজরত।

তুমি আজান দিলে না ভুলিতে মসজিদেরই পথ

*৫৮০. তাল: দাদ্‌রা

আল্লাতে যাঁর পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান

কোথা সে আরিফ অভেদ যাঁহার জীবন মৃত্যু জ্ঞান

(যাঁর) মুখে শুনি তৌহিদের কালাম-

    ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম।

যাঁর দীন দীন রবে কাঁপিত দুনিয়া জীন পরী ইনসান্

স্ত্রী পুত্রে আল্লারে সঁপি জেহাদে যে নির্ভিক।

হেসে কোরবানি দিত প্রাণ হায় আজ তারা  মাগে ভিখ্।

    কোথা সে শিক্ষা আল্লাহ্ ছাড়া,

    ত্রিভুবনে ভয় করিত না যাঁরা।

আজাদ করিতে এসেছিল যাঁরা সাথে লয়ে কোর্‌আন্

*৫৮১. তাল: কাহার্‌বা

নামাজ রোজা হজ্-জাকাতের পসারিণী আমি

নবীর কলাম হেঁকে ফিরি পথে দিবস-যামী

আমার নবীজীর পিয়ারি আয়্‌রে ছুটে মুসলিম নারী,

দ্বীনের সওদা করবি কে আয় আয় রে মুক্তি কামী

জন্ম আমার হাজার বছর আগে আরব দেশে

সারা ভুবন ঠাঁই দিয়েছে আমায় ভালোবেসে।

আমার আজান ধ্বনি বাজে- কুল্ মোমিনের বুকের মাঝে

আমি নবীর মানস কন্যা আল্লাহ্ মোর স্বামী

*৫৮২.তাল: কাহার্‌বা

নাই হ’ল মা বসন ভূষণ এই ঈদে আমার

আল্লা আমার মাথার মুকুট রসুল গলার হার

নামাজ রোজার ওড়না শাড়ি, ওতেই আমায় মানায় ভারি,

কল্‌মা আমার কপালে টিপ, নাই তুলনা তার

হেরা গুহারি হীরার তাবিজ কোরান বুকে দোলে

হাদিস্ ফেকাহ্ বাজুবন্দ্ দেখে পরান ভোলে।

হাতে সোনার চুড়ি যে মা, হাসান হোসেন মা ফাতেমা,

মোর অঙ্গুলিতে অঙ্গুরি, মা নবীর চার ইয়ার

৫৮৩. তাল: কাহারবা

আমার যখন পথ ফুরাবে, আসবে গহীন রাতি (খোদা)-

তখন তুমি হাত ধ’রো মোর হ’য়ো পথের সাথি (খোদা)

অনেক কথা হয়নি বলা বলার সময় দিও, খোদা-

আমার তিমির অন্ধ চোখে দৃষ্টি দিও প্রিয়, খোদা

বিরাজ করো বুকে তোমার আরশখানি পাতি’

সারা জীবন কাটলো আমার বিরহে বঁধু,

পিপাসিত কণ্ঠে এসে দিও মিলন-মধু।

তুমি যেথায় থাক প্রিয় সেথায় যেন যাই, খোদা,

সখা ব’লে ডেকো আমায় দিদার যেন পাই,খোদা।

সারা জনম দুঃখ পেলাম, যেন এবার সুখে মাতি

*৫৮৪. তাল: কাহার্‌বা

    মসজিদেরি পাশে আমার কবর দিও ভাই

    যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুন্‌তে পাই

    আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,

    পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।

    গোর আজাব থেকে এ গুনাহ্‌গার পাইবে রেহাই

কত  পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত,

    ঐ মস্‌জিদে করে রে ভাই কোরান তেলাওয়াৎ।

    সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই

কত  দরবেশ ফকির রে ভাই মস্‌জিদের আঙিনাতে

    আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে।

আমি তাঁদের সাথে কেঁদে কেঁদে নাম জপ্‌তে চাই

        আল্লার নাম জপ্‌তে চাই

*৫৮৫. তাল: তেওড়া

তওফিক দাও খোদা ইসলামে মুসলিম্ জাঁহা পুন হোক আবাদ।

দাও সেই হারানো সালতানত্ দাও সেই বাহু সেই দিল্ আজাদ

    দাও সে হাম্‌জা সেই বীর ওলিদ

    দাও সেই উমর হারুন অল রশীদ,

দাও সেই সালাউদ্দীন আবার পাপ দুনিয়াতে চলুক জেহাদ

    দাও সেই রুমী সাদী হাফিজ

    সেই জামী খৈয়াম সে তবরিজ

দাও সে আকবর সেই শাহ্‌জাহান দাও তাজমহলের স্বপ্ন সাধ

    দাও ভা’য়ে ভা’য়ে সেই মিলন

    সেই স্বার্থত্যাগ সেই দৃপ্ত মন,

হোক বিশ্ব মুসলিম এক জামাত উড়ুক নিশান ফের যুক্ত দাঁদ

*৫৮৬, তাল: কাহার্‌বা

    দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দে রে জাকাত।

    তোর দিল্ খুলবে পরে ওরে আগে খুলুক হাত

    দেখ পাক্ কোর্‌আন শোন নবীজীর ফরমান

    ভোগের তরে আসেনি দুনিয়ায় মুসলমান।

তোর একার তরে দেননি খোদা দৌলতের খেলাত

তোর দর্ দালানে কাঁদে ভুখা হাজারো মুসলিম

আছে দৌলতে তোর তাদেরও ভাগ, বলেছেন রহিম।

    বলেছেন রহমানুর রহিম, বলেছেন রসুলে করিম।

    সঞ্চয়ে তোর সফল হবে পাবি রে নাজাত

    এই দৌলত বিভব রতন যাবে না তোর সাথে

    হয়তো চেরাগ জ্বলবে না তোর গোরে শবেরাতে।

    এই জাকাতের বদলাতে পাবি বেহেশ্‌তী সওগাত

*৫৮৭. তাল: কাহার্‌বা

রোজ হাশরে আল্লা আমার ক’রো না বিচার (আল্লা)

বিচার চাহি না তোমার দয়া চাহে এ গুনাহ্‌গার

    আমি জেনে শুনে জীবন ভ’রে,

    দোষ করেছি ঘরে পরে

আশা নাই যে যাব ত’রে বিচার তোমার

বিচার যদি করবে কেন রহমান নাম নিলে

ঐ নামের গুণেই ত’রে যাব কেন এ জ্ঞান দিলে;

    দীন ভিখারি ব’লে আমি

    ভিক্ষা যখন চাইব স্বামী

শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে পারবে না’ক আর

*৫৮৮. তাল: কাহার্‌বা

ও   মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

তুই  আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানি তাগিদ

তোর সোনা-দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ।

দে  জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্

আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে।

যে   ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ

আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে।

তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ

ঢাল  হৃদয়ের তোর তশ্‌তরিতে শির্‌নি তৌহিদের।

তোর দাওয়াত কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ

*৫৮৯. তাল: কাহার্‌বা

বক্ষে আমার কা’বার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।

শিরোপরি মোর খোদার আরশ গাই তাঁরি গান পথ বেভুল

লায়লী প্রেমে মজনু পাগল আমি পাগল লা-ইলা’র,

প্রেমিক দরবেশ আমায় চেনে অরসিকে কয় বাতুল

হৃদয় মোর খুশির বাগান বুলবুলি তায় গায় সদাই,

ওরা খোদার রহম মাগে আমি খোদার ইশ্‌ক্ চাই।

আমার মনের মস্‌জিদে দেয়া আজান হাজার মোয়াজ্জিন

প্রাণের ‘লওহে’ কোরান লেখা রুহ্ পড়ে তা রাত্রি দিন।

খাতুনে জিন্নত মা আমার হাসান হোসেন চোখের জল,

ভয় করি না রোজ-কেয়ামত পুল সিরাতের কঠিন পুল

*৫৯০. তাল: কাহার্‌বা

উঠুক তুফান পাপ-দরিয়ায় ওরে আমি কি তায় ভয় করি।

    ও ভাই আমি কি তায় ভয় করি।

পাক্কা ঈমান তক্তা দিয়ে গড়া যে আমার তরী।

    ও ভাই গড়া যে আমার তরী

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুর’ পাল তুলে,

ঘোর তুফানকে জয় ক’রে ভাই যাবই কূলে,

মোহাম্মদ মোস্তাফা নামের (ও ভাই) গুণের রশি ধরি’

খোদার রাহে সঁপে দেওয়া ডুববে না মোর তরী,

সওদা ক’রে ভিড়বে তীরে সওয়ার মানিক ভরি’।

দাঁড় এ তরীর নামাজ, রোজা, হজ্ ও জাকাত,

উঠুক না মেঘ, আসুক বিপদ-যত বজ্রপাত,

আমি যাব বেহেশ্‌ত বন্দরেতে রে এই সে কিস্তিতে চড়ি’

*৫৯১. তাল: কাহার্‌বা

দিন গেল মোর মায়ায় ভুলে মাটির পৃথিবীতে।

কে জানে কখন নিয়ে যাবে গোরে মাটি দিতে রে

    পাঁচ ভূতে আর চোরে মিলে

    রোজগার মোর কেড়ে নিলে;

এখন কেউ নাই রে পারে যাবার দুটো কড়ি দিতে রে

রাত্রি শুয়ে আবার যে ভাই উঠ্‌ব সকাল বেলা,

বলতে কি কেউ পারি তবু খেলি মোহের খেলা।

    বাদ্‌শা আমির ফকির কত

    এলো আবার হলো গত রে;

দেখেও বারেক আল্লার নাম জাগে নাকো চিতে।

এবার বসবি কবে ও ভোলা মন আল্লার তস্‌বিতে রে

*৫৯২. তাল কাহার্‌বা

আল্লাকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেসে।

আরশ্ কুরসি লওহ কালাম, না চাহিতেই পেয়েছে সে

রসুল নামের রশি ধ’রে যেতে হবে খোদার ঘরে,

নদী-তরঙ্গে যে পড়েছে ভাই, দরিয়াতে সে আপনি মেশে

তর্ক ক’রে দুঃখ ছাড়া কি পেয়েছিস্ অবিশ্বাসী,

কি পাওয়া যায় দেখ্ না বারেক হজরতে মোর ভালবাসি’।

এই দুনিয়ায় দিবা-রাতি ঈদ্ হবে তোর নিত্য সাথি,

তুই যা চাস্ তাই পাবি রে ভাই আহমদ চান যদি হেসে

*৫৯৩. তাল: কাহার্‌বা

    কারো ভরসা করিসনে তুই (ও মন) এক আল্লার ভরসা কর।

    আল্লা যদি সহায় থাকেন (ও তোর) ভাবনা কিসের, কিসের ডর

    রোগে শোকে দুঃখে ঋণে নাই ভরসা আল্লা বিনে রে

তুই  মানুষের সহায় মাগিস (তাই) পাস্‌নে খোদার নেক্-নজর

    রাজার রাজা বাদশাহ্ যিনি গোলাম হ তুই সেই খোদার,

    বড় লোকের দুয়ারে তুই বৃথাই হাত পাতিস্‌নে আর।

    তোর দুখের বোঝা ভারি হ’লে ফেলে প্রিয়জনও যায় রে চ’লে

সেদিন    ডাক্‌লে খোদায় তাঁহার রহম (ওরে) ঝরবে রে তোর মাথার ’পর

*৫৯৪.তাল: কাহার্‌বা

বহিছে সাহারায় শোকেরি ‘ল’ হাওয়া,

দোলে অসীম আকাশ আকুল রোদনে।

নূহের প্লাবন আসিল ফিরে যেন,

ঘোর অশ্রু-শ্রাবণ ধারা ঝরে সঘনে

‘হায় হোসেনা’ ‘হায় হোসেনা’ বলি’

কাঁদে গিরি নদী, কাঁদে বনস্থলী,

কাঁদে পশু ও পাখি তরুলতার সনে

ফকির বাদ্‌শাহ গরীব ওমরাহে,

কাঁদে তেমনি আজো তাঁরি মর্সিয়া গাহে,

বিশ্ব যাবে মুছে মুছিবে না এ আঁসু

চিরকাল ঝরিবে কালের নয়নে

সেই সে কারবালা সেই ফোরাত নদী

কুল-মুসলিম-হৃদে গাহিছে নিরবধি,

আসমান জমীন রহিবে যতদিন

সবে কাঁদিবে এমনি আকুল কাঁদনে

*৫৯৫. তাল: কাহার্‌বা

    এলো আবার ঈদ ফিরে এলো আবার ঈদ চলো ঈদগাহে।

    যাহার আশায় চোখে মোদের ছিল না রে নিদ চলো ঈদগাহে

    শিয়া সুন্নী লা-মজ্‌হাবী একই জামাতে

    এই ঈদ মোবারকে মিলিবে এক সাথে,

    ভাই পাবে ভাইকে বুকে, হাত মিলাবে হাতে;

আজ এক আকাশের নীচে মোদের একই সে মস্‌জিদ, চলো ঈদগাহে

    ঈদ এনেছে দুনিয়াতে শির্‌নি বেহেশ্‌তী

    দুশ্‌মনে আজ গলায় ধ’রে পাতাব ভাই দোস্তী,

    জাকাত দেব ভোগ-বিলাস আজ গোস্‌সা ও বদ্‌মস্তি;

    প্রাণের তশ্‌তরিতে ভ’রে বিলাব তৌহিদ-চলো ঈদগাহে

    আজিকার এই ঈদের খুশি বিলাব সকলে,

    আজের মত সবার সাথে মিল্‌ব গলে গলে,

    আজের মত জীবন পথে চলব দলে দলে,

    প্রীতি দিয়ে বিশ্ব-নিখিল করব রে মুরিদ্-চলো ঈদগাহে

*৫৯৬. তাল; কাহার্‌বা

যাবার বেলায় সালাম লহ হে পাক রমজান।

তব বিদায় ব্যথায় কাঁদিছে নিখিল মুসলিম জাহান

পাপীর তরে তুমি পারের তরী ছিলে দুনিয়ায়,

তোমারি গুণে দোজখের আগুন নিভে যায়,

তোমারি ভয়ে লুকায়ে ছিল দূরে শয়তান

ওগো রমজান, তোমারি তরে মুসলিম যত

রাখিয়া রোজা ছিল জাগিয়া চাহি, তব পথ,

আনিয়াছিলে দুনিয়াতে তুমি পবিত্র কোরআন

পরহেজগারের তুমি যে প্রিয় প্রাণের সাথী,

মসজিদে প্রাণের তুমি যে জ্বালাও দীনের বাতি,

উড়িয়ে গেলে যাবার বেলায় নতুন ঈদের চাঁদের নিশান

*৫৯৭. রাগ; ভৈরবী, তাল: কাহার্‌বা

তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়।

ওগো বিজয়ী নিখিল হৃদয় কর কর জয় মোহন মায়ায়

নহে ঐ এক হিয়ার সমান হাজার কাবা হাজার মসজিদ;

কি হবে তোর কাবার খোঁজে, আশয় খোঁজ তোর হৃদয় ছায়ায়

প্রেমের আলোয় যে দিল্ রওশন, যেথায় থাকুক সমান তাহার-

খোদার মস্‌জিদ মুরত-মন্দির ঈসাই-দেউল ইহুদ-খানায়

অমর তার নাম প্রেমের খাতায় জ্যোতির্লেখায় রবে লেখা,

দোজখের ভয় করে না সে, থাকে না সে বেহেশ্‌ত্ আশায়

*৫৯৮. নাটক: ‘রূপকথা’ তাল: কাহার্‌বা

সকাল সাঁঝে প্রভু সকল কাজে উঠুক তোমারি নাম-

    বেজে উঠুক তোমারি নাম।

নিশীথ রাতে তারার মত উঠুক তোমারি নাম-

    বেজে উঠুক তোমারি নাম

তরুর শাখায় ফুলের সম

বিকশিত হোক (প্রভু) তব নাম নিরুপম,

সাগর মাঝে তরঙ্গ সম বহুক তোমারি নাম

পাষাণ শিলায় গিরি নির্ঝর সম বহুক তোমারি নাম

অকূল সমুদ্রে ধ্রুবতারা-সম জাগি’ রহুক তব নাম

             প্রভু জাগি’ রহুক তব নাম।

    শ্রাবণ দিনে বারি ধারার মত

    ঝরুক ও নাম প্রভু অবিরত

মানস কমল বনে মধুকর সম লুটুক তোমারি নাম

*৫৯৯. সিনেমা: ‘সাপুড়ে’, তাল: কাহার্‌বা

কথা কইবে না বউ, তোর সাথে তার আড়ি,

বউ মান করেছে, আজি চলে যাবে বাপের বাড়ি

বউ কস্‌নে কথা কস্‌নে,

এত অল্পে অধীর হ’স্‌নে

ও নতুন ফুলের খবর পেলে

পালিয়ে যাবে তোকে ফেলে,

    ওর মন্দ স্বভাব ভারি

*৬০০. রাগ; হেমকল্যাণ, তাল: দাদ্‌রা

দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য, হে উদার নাথ,

    দাও প্রাণ।

দাও অমৃত মৃত জনে,

দাও ভীত-চিত জনে, শক্তি অপরিমাণ।

    হে সর্বশক্তিমান

দাও স্বাস্থ্য, দাও আয়ু,

স্বচ্ছ আলো, মুক্ত বায়ু,

দাও চিত্ত অ-নিরুদ্ধ, দাও শুদ্ধ জ্ঞান।

    হে সর্বশক্তিমান

দাও দেহে দিব্য কান্তি,

দাও গেহে নিত্য শান্তি,

দাও পুণ্য প্রেম ভক্তি, মঙ্গল কল্যাণ।

ভীতি নিষেধের ঊর্ধে স্থির,

রহি যেন চির-উন্নত শির

যাহা চাই যেন জয় করে পাই, গ্রহণ না করি দান।

        হে সর্বশক্তিমান