ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
*৭০১. তাল: দাদ্রা আগুন জ্বালাতে আসিনি গো আমি এসেছি দেয়ালি জ্বালাতে শুধু ক্রন্দন হয়ে আসিনি এসেছি চন্দন হতে থালাতে॥ ধরায় আবার আসিয়াছি প্রিয়া তব মুখখানি দেখিব বলিয়া তাই প্রদীপ হইয়া নীরবে পুড়ি তোমারই বরণ ডালাতে॥ তব মিলন বাসরে ঘুম ভাঙাইতে আসিনি তুমি কেন লাজে ওঠো আকুলি তব রাঙা মুখখানি রাঙাইয়া যাব চলে গো আমি সাঁঝের ক্ষণিক গোধূলী। তব কাজল নয়ন-পল্লব ছায়ে, অশ্রুর মত রহিব লুকায়ে ঝরিতে এসেছি ফুল হয়ে আমি তোমার বুকের মালাতে॥ ৭০২. তাল: ফের্তা আজি নতুন এ চাঁদের তিথিতে কোন্ অতিথি এলো ফুল-বীথিতে॥ যদি বেদনা পায় বঁধু পথ চলিতে তাই চেয়েছি বনপথ ফুল কলিতে জানি ভাল জান হে বঁধু ফুল দলিতে এসো বঁধু সুমধুর প্রীতিতে॥ এসো মনের মন্দিরে দেবতা আমার লহ প্রেমের চন্দন আঁখি জলহার আজি সফল করো সাধ আমার পূজার চির জনম রহ মোর স্মৃতিতে॥ *৭০৩. তাল: দ্রুত-দাদ্রা আয় মা ডাকাত কালী আমার ঘরে কর ডাকাতি যা আছে সব কিছু মোর লুটে নে মা রাতারাতি॥ আয় মা মশাল জ্বেলে, ও তোর ডাকাত ছেলে ভৈরবেরে করে সাথি জমেছে ভবের ঘরে অনেক টাকা যশঃখ্যাতি কেড়ে মোর ঘরের চাবি, নে মা সবই পুত্র কন্যা স্বজন জ্ঞাতি॥ মায়ার দুর্গে আমার দুর্গা নামও হার মেনেছে ভেঙে দে সেই দুর্গ আয় কালিকা তা থৈ নেচে, আয় আয় আয়। রবে না কিছুই যখন রইবি শুধু মা বভানী মুক্তি পাব সেদিন টানবো না আর মায়ার ঘানি খালি হাতে তালি দিয়ে কালী বলে উঠবো মাতি কালী কালী কালী বলে উঠবো মাতি কালী কালী কালী বলে, খালি হাতে তালি দিয়ে উঠবো মাতি॥ *৭০৪.তাল: কাহার্বা এলো রে এলো ঐ রণ-রঙ্গিণী শ্রীচণ্ডী, চণ্ডী এলো রে এলো ঐ অসুর সংহারিতে বাঁচাতে উৎপীড়িতে ধ্বংস করিতে সব বন্ধন বন্দী, শ্রীচণ্ডী, চণ্ডী, এলো রে এলো ঐ॥ দনুজ দলনে চামুণ্ডা এলো ঐ প্রলয় অগ্নি জ্বালি নাছিছে তাথৈ তাথৈ তাতা থৈ থৈ দুর্বলে বলে মা মাভৈঃ মাভৈঃ মুক্তি লভিবি সব শৃঙ্খল বন্দী, শ্রীচণ্ডী, চণ্ডী, এলো রে এলো ঐ॥ রক্ত-রঞ্জিত অগ্নি শিখায় করালী কোন্ রসনা দেখা যায়। পাতাল তলের যত মাতাল দানব পৃথিবীতে এসেছিল হইয়া মানব তাদের দণ্ড দিতে আসিয়াছে চণ্ডীকা সাজিয়া চণ্ডী, শ্রীচণ্ডী, চণ্ডী এলো রে॥ *৭০৫. তাল: দাদ্রা এলো রে শ্রী দুর্গা শ্রী আদ্যাশক্তি মাতৃরূপে পৃথিবীতে এলো রে গভীর স্নেহরস ধারায় কল্যাণ কৃপা করুণায় স্নিগ্ধ করিতে॥ ঊর্ধ্বে উড়ে যায় শান্তির পতাকা শুভ্র শান্ত মেঘ আনন্দ বলাকা মমতার অমৃত লয়ে শ্যামা, মা হয়ে এলো রে সকলের দুঃখ দৈন্য হরিতে॥ প্রতি হৃদয়ের শতদলে শ্রীচরণ ফেলে বন্ধন কারার দুয়ার ঠেলে। এলো রে দশভুজা সর্বমঙ্গলা মা হয়ে দুর্বলে দুর্জয় করিতে নিরন্নে অন্ন দিতে॥ *৭০৬. সিনেমা, ‘অভিনয় নয়’ তাল: দাদ্রা মেয়ে: ওশাপ্লা ফুল নেবো না বাবলা ফুল এনে দে নইলে দেবো না বাঁশি ফিরিয়ে। ছেলে: খুলে বেণীর বিনুনী, খোঁপার চিরুনি হাতে দে, যাব খানিক জিরিয়ে। মেয়ে: বন-পায়রার পালক দে কুড়িয়ে, ছেলে: তোর চোখের চাওয়া পায়রা দিল উড়িয়ে, দুজনে: মোদের ঝগড়া দেখে হালকা হাওয়া বহে ঝিরঝিরিয়ে। ছেলে: তোর জোড়া ভুরু-ধনুক মোর নাসিকা বাঁশি লো মেয়ে: চাঁদের চেয়ে ভালো লাগে কালো রূপের হাসি রে তোর কালো রূপের হাসি ছেলে: ওই কালো চোখের হাসি। মেয়ে: তুই যাদু করে মন দিলি দুলিয়ে দুজনে: মোদের কথা শুনে শিরিষ পাতা ওঠে শিরশিরিয়ে॥ *৭০৭. তাল: দ্রুত-দাদ্রা ওলো ননদিনী বল্ কপট নিপট কালা, নিঠুর খল্॥ তার নাই ভয় নাই লজ্জা শরম লইয়া যুবতীর ধরম গো খেলে সে নিঠুর খেলা, চতুর চপল্॥ না শুনে লো তোদের গালি মাখলাম কুলে কালার কালি গো সে মুখে সরল বনমালী, অন্তরে গরল্॥ তার শত জনে মন বাঁধা, রাতে চন্দ্রা দিনে রাধা (তারে) কঠিন কথা শুনাইব চল্লো গোঠে চল্॥ কৃষ্ণ ব’লে অবিরত দে লো গালি পারিস যত ননদী কয় বুঝেছি বউ (কৃষ্ণ) নাম শোনারই ছল ও বউ কৃষ্ণ নাম তোর ভাল লাগে তাই কৃষ্ণ (ও তোর) নাম শোনারই ছল॥ *৭০৮. রাগ; ভীমপলশ্রী মিশ্র, তাল: আদ্ধা-কাওয়ালি কেন আন ফুল-ডোর আজি বিদায়-বেলা, মোছ মোছ আঁখি-লোর যদি ভাঙিল মেলা॥ কেন মেঘের স্বপন আন মরুর চোখে, ভু’লে দিয়ো না কুসুম যারে দিয়েছ হেলা॥ যবে শুকাল কানন এলে বিধুর পাখি, ল’য়ে কাঁটা-ভরা প্রাণ এ কি নিঠুর খেলা। যদি আকাশ-কুসুম পেলি চকিতে কবি, চল চল মুসাফির, ডাকে পারের ভেলা॥ *৭০৯, তাল: কাহার্বা স্ত্রী: কোন্ বিদেশের নাইয়া তুমি আইলা আমার গাঁও কুল-বধূর সিনান ঘাটে বাঁধলে তোমার নাও॥ পুরুষ: বাণিজ্যেরই লাইগ্যা কন্যা বেড়াই ভেসে স্রোতে (ওগো) তোমার রূপের হাট দেখলাম যাইতে এই পথে। স্ত্রী: বুঝি তাই বাঁশের বাঁশি, তাই দিয়ে কি হে বিদেশি অমূল্য এই মনের মানিক, কিনতে তুমি চাও॥ পুরুষ: তোমায় পাবো বলে আজো শূন্য আমার তরী (রে কন্যা) স্ত্রী: অমন করে চাই ও না গো আমি ভয়ে মরি। পুরুষ: ভয়ে মরার চেয়ে কন্যা ডুবে মরা ভালো স্ত্রী: আমার মন ডুবেছে দেখে তোমার নয়ন কাজল কালো (রে বন্ধু) উভয়ে: নূতন প্রেমের যাত্রী দু’জন ছোট্ট মোদের নাও ওরে গহীন জলের আকুল জোয়ার অকূলে ভাসাও মোদের অকূলে ভাসাও॥ *৭১০. তাল: ফের্তা ছি ছি ছি কিশোর হরি, হেরিয়া লাজে মরি সেজেছ এ কোন রাজ সাজে যেন সঙ্ সেজেছ, হরি হে যেন সঙ সেজেছ- ফাগ মুছে তুমি পাপ বেঁধেছ হরি হে যেন সঙ্ সেজেছ; সংসারে তুমি সঙ্ সাজায়ে নিজেই এবার সঙ্ সেজেছ। বামে শোভিত তব মধুরা গোপিনী নব সেথা মথুরার কুবুজা বিরাজে। মিলেছে ভাল, বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল, ত্রিভঙ্গ অঙ্গে কুবুজা সঙ্গে বাঁকায় বাঁকায় মিলেছে ভাল। হরি ভাল লাগিল না বুঝি হৃদয়-আসন তাই সিংহাসনে তব মজিয়াছে মন প্রেম ব্রজধাম ছেড়ে নেমে এলে কামরূপ হরি, এতদিনে বুঝিলাম তোমার স্বরূপ তব স্বরূপ বুঝি না হে গোপাল রূপ ফেলে ভূপাল রূপ নিলে স্বরূপ বুঝি না হে। হরি মোহন মুরলী কে হরি’ নিল কুসুম কোমল হাতে এমন নিঠুর রাজদণ্ড দিল মোহন মুরলী কে হরি। দণ্ড দিল কে, রাধারে কাঁদালে বলে দণ্ড দিল কে দণ্ডবৎ করি শুধাই শ্রীহরি দণ্ড দিল কে রাঙা চরণ মুড়েছে কে সোনার জরিতে খুলে রেখে মধুর নূপুর, হরি হে খুলে রেখে মধুর নূপুর। হেথা সবাই কি কালা গো? কারুর কি কান নাই নূপুর কি শোনে নাই, সবাই কি কালা গো কালায় পেয়ে হল হেথায় সবাই কি কালা গো। তব এ রূপ দেখিতে নারি, হরি আমি ব্রজনারী, ফিরে চল তব মধুপুর সেথা সকলি যে মধুময়, অন্তরে মধু বাহিরে মধু সেথা সকলি যে মধুময়-ফিরে চল হরি মধুপুর। *৭১১. তাল: কাহার্বা নীল কবুতর লয়ে নবীর দুলালী মেয়ে খেলে মদিনায় দেহের জ্যোতিতে তার জাফরানি পিরহান ম্লান হয়ে যায়॥ মুখে তার নবীজীর মুখেরি আদল আঁখি দুটি করুণায় সদা ঢল ঢল, মেষ শাবকেরে ধরি মধুর মিনতি করি কলেমা শোনায়॥ জুম্মার মস্জিদে কোন্ সে ভক্ত পড়ে কোরান আয়াত, অমনি সে খেলা ভুলি কচি দুটি হাত তুলে করে মোনাজাত। নীল দরিয়ার পানি নয়নে বহে ‘উম্মতে কর ত্রাণ’ কাঁদিয়া কহে হজরত কোলে তুলে ‘বেহেশ্ত্ রানী তুমি’ বলে ফাতেমায়॥ *৭১২. তাল: কাহার্বা প্রভু তোমারে খুঁজিয়া মরি ঘুরে ঘুরে বৃথা দূরে চেয়ে থাকি তুমি অন্তরতম আছ অন্তরে নয়নেরে দিয়ে ফাঁকি॥ তুমি কাছে থাকি খেল লুকোচুরি তাই বাহিরে চাহিয়া দেখিতে না পাই যেমন আঁখির পল্লব নাথ দেখিতে পায় না আঁখি॥ মোরা ভাবি তুমি কত দূরে বুঝি গ্রহ তারকার পারে বুকে যে ঘুমায় তারে খুঁজি বনে পান্তরে দ্বারে দ্বারে। বাহিরে না পেয়ে ফিরি যবে ঘরে দেখি জেগে আছ তুমি মোর তরে যত ডাকি তত লুকাও হে চোর মোর বুকে মুখ রাখি॥ *৭১৩. তাল: ফের্তা বাঁকা শ্যামল এলো বন-ভবনে তার বাঁশির সুর শুনি পবনে॥ রাঙা সে চরণের নূপুর-রোলে রে আকুল এ হৃদয় পুলকে দোলে রে সে নূপুর শুনি’ নাচে ময়ূর কদম তমাল-বনে॥ বুঝি সেই শ্যামের পরশ লাগিল আমার চরণে তাই নাচন জাগিল- ঘিরি শ্যামে দখিন-বামে নেচে বেড়াই আপন মনে॥ এলো মাধবী চাঁদ গগন আঙিনায় জোয়ার এসেছে তাই হৃদয় যমুনায় খুলিয়া গলার মালা পরাব শ্যামেরি বরণে॥ *৭১৪. তাল: কাহার্বা ভোর হোল ওঠ্ জাগ্ মুসাফির আল্লা-রসুল বোল্ গাফ্লিয়াতি ভোল্ রে অলস্ আয়েশ আরাম্ ভোল্॥ এই দুনিয়ার সরাইখানায় জনম্ গেল ঘুমিয়ে হায় ওঠ রে সুখ-শয্যা ছেড়ে মায়ার বাঁধন খোল্॥ দিন ফুরিয়ে এলো যে রে দিনে দিনে তোর দীনের কাজে অবহেলা কর্লি জীবন ভোর। যে দিন আজো আছে বাকি খোদারে তুই দিস্নে ফাঁকি আখেরে পার হবি যদি পুল্ সেরাতের পোল্॥ *৭১৫. রাগ; কাফি-সিন্ধু মিশ্র, তাল: কাহার্বা রঙ্গিলা আপনি রাধা তারে হোরির রঙ দিও না ফাগুনের রানীরে শ্যাম আর ফাগে রাঙিয়ো না॥ রাঙা আবির রাঙা ঠোঁটে গালে ফাগের লালী ফোটে রঙ সায়রে নেয়ে উঠে অঙ্গে ঝরে রঙের সোনা॥ অনুরাগ-রাঙা মনে রঙের খেলা ক্ষণে ক্ষণে অন্তরে যার রঙের লীলা তারে বাহিরের রঙ লাগিয়ো না॥ *৭১৬. তাল: দ্রুত-দাদ্রা রসুল নামের ফুল এনেছি রে (আয়) গাঁথবি মালা কে এই মালা নিয়ে রাখবি বেঁধে আল্লা তালাকে॥ অতি অল্প ইহার দাম শুধু আল্লা রসুল নাম এই মালা প’রে দুঃখ শোকের ভুলবি জ্বালাকে॥ এই ফুল ফোটে ভাই দিনে রাতে (ভাইরে ভাই) হাতের কাছে তোর ও তুই কাঁটা নিয়ে দিন কাটালি রে তাই রাত হ’ল না ভোর। এর সুগন্ধ আর রূপ ব’য়ে যায় নিত্য এসে তোর দরজায় রে পেয়ে ভাতের থালা ভুললি রে তুই চাঁদের থালাকে॥ *৭১৭. রাগ; দেশি টোড়ি মিশ্র, তাল: কাহার্বা সকরুণ নয়নে চাহ আজি মোর বিদায়-বেলা ভুলিতে দাও বিদায়-দিনে হেনেছ যে অবহেলা॥ হাসিয়া কহ কথা আজ হাসিতে যেমন আগেতে হেরিবে মোর জীবন-সাঁঝে গোধূলি রঙের খেলা॥ হে বন্ধু, বন্ধুর পথে কে কাহার হয়েছে সাথি তেমনি থাকিয়া যায় সব যাবার যে যায় সে একেলা॥ *৭১৮. রাগ; দরবারী কানাড়া, বৈতালিক স্মরণ-পারের ওগো প্রিয়, তোমায় আমি চিনি যেন তোমায় চাঁদে চিনি আমি, তুমি আমায় তারায় চেন॥ নূতন পরিচয়ের লাগি’ তারায় তারায় থাকি জাগি’ বারে বারে মিলন মাগি, বারে বারে হারাই হেন॥ নূতন চোখের প্রদীপ জ্বালি’ চেয়ে আছি নিরিবিলি, খোলো প্রিয় তোমার ধরার বাতায়নের ঝিলি-মিলি। নিবাও নিবু-নিবু বাতি, ডাকে নূতন তারার ভাতি, ওগো আমার দিবস রাতি কাঁদে বিদায়-কাঁদন কেন॥ *৭১৯. তাল: কাহার্বা হে মদিনাবাসী প্রেমিক ধর হাত মম॥ জ্বলওয়া দেখালে দিল হরিলে বন্ধু হলো বেগানা হেসে হেসে সংসার কহে দীওয়ানা এ দীওয়ানা॥ বিরহের এ রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর হৃদয়ে মোর শান্তি নাহি কাঁদে পরান মোর॥ দুখের দোসর কেউ নাহি মোর নাই ব্যথী ব্যথার তোমায় ভুলে ভাসি অকূলে পার করো সরকার॥ *৭২০. তাল: কাহার্বা হে মদিনার নাইয়া! ভব-নদীর তুফান ভারি কর মোরে পার তোমার দয়ায় ত’রে গেল লাখো গুন্হাগার॥ পারের কড়ি নাই হে আমার হয়নি নামাজ রোজা কূলে এসে বসে আছি নিয়ে পাপের বোঝা (আমায়) ‘পার কর ইয়া রসুল’ বলে কাঁদি জারে জার॥ তোমার নাম গেয়েছি শুধু কেঁদে সুব্হ শাম তরিবার মোর নাই ত’ পুঁজি বিনা তোমার নাম। হাজারো বার দরিয়াতে ডুবে যদি মরি ছাড়ব না মোর পারের আশা তোমার চরণ-তরী সবার শেষে পার যেন হয় এই খিদ্মতগার॥ *৭২১. তাল: কাহার্বা আকুল ব্যাকুল ঢুঁড়ত ফিঁরু শ্যাম তুম বিনা রহন না জায়। তুম হারে কারণ সব কুছ ছোড়ি প্রীতি ছোড়ন না যায়॥ ক্যিউ তরসাও অন্তরযামী আওয়ো মিলো কির্পা কর স্বামী নিদ নাহি র্য় না দিন নাহি চ্যয় না, বিরহ কী আগ জ্বালায়॥
*৭২২. আঁধার মনের মিনারে মোর হে মুয়াজ্জিন, দাও আজান গাফেলতির ঘুম ভেঙে দাও হউক নিশি অবসান॥ আল্লাহ নামের যে তক্বীরে ঝর্ণা বহে পাষাণ চিরে শুনি’ সে তক্বিরের আওয়াজ জাগুক আমার পাষাণ প্রাণ॥ জামাত ভারি জমবে এবার এই দুনিয়ার ঈদগাহে, মেহেদী হবেন ইমাম সেথায় রাহ্ দেখাবেন গুমরাহে। আমি যেন সেই জামাতে সামিল হতে পারি প্রাতে ডাকে আমায় শহীদ হতে সেথায় যতো নওজোয়ান॥ *৭২৩. রেকর্ড-নাটিকা: ‘লায়লী মজনু’ তাল: দাদ্রা মজনু: আবার কেন বাতায়নে দীপ জ্বালিলে, হায়! আমার যে প্রাণ-পতঙ্গ ওই প্রদীপ পানেই ধায়॥ লায়লী: আমার প্রেম যে অনল শিখা জ্বলে তিমির রাতে পতঙ্গরে পোড়াই আমি নিজেও পুড়ি সাথে। মজনু: একি ব্যথা একি নেশা এই কি গো প্রেম গরল-মেশা! লায়লী: তত আলো দান করে সে যত সে জ্বালায়॥ *৭২৪. তাল: কাহার্বা ইয়া মোহাম্মদ, বেহেশত্ হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও এই দুনিয়ার দুঃখ থেকে এবার আমায় নাজাত দাও॥ পীর মুর্শীদ পাইনি আমি, তাই তোমায় ডাকি দিবস-যামী, তোমারই নাম হউক হজরত আমার পরপারের নাও॥ অর্থ-বিভব-যশ-সম্মান চেয়ে চেয়ে নিশিদিন দুঃখে শোকে জ্ব’লে মরি পরান কাঁদে শ্রান্তিহীন। আল্লা ছাড়া ত্রিভুবনে, শান্তি পাওয়া যায় না মনে কোথায় পাব সে আবহায়াত ইয়া নবীজী রাহ্ বাতাও॥ *৭২৫. তাল: কাহার্রা ঈদ মোবারক হো- ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ, ঈদ মোবারক হো- রাহেলিল্লাহ্কে আপনাকে বিলিয়ে দিল, কে হলো শহীদ॥ যে কোরবানি আজ দিল খোদায় দৌলৎ ও হাশমত্, যার নিজের ব’লে রইলো শুধু আল্লাও হজরত, যে রিক্ত হয়ে পেল আজি অমৃত-তৌহিদ॥ যে খোদার রাহে ছেড়ে দিল পুত্র ও কন্যায় যে আমি নয়, আমিনা ব’লে মিশলো আমিনায়। ওরে তারি কোলে আসার লাগি’ নাই নবীজীর নিদ॥ যে আপন পুত্র আল্লারে দেয় শহীদ হওয়ার তরে ক্বাবাতে সে যায় না রে ভাই নিজেই ক্বাবা গড়ে সে যেখানে যায়-জাগে সেথা ক্বাবার উম্মিদ॥ *৭২৬. সিনেমা, ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’, তাল: দ্রুত-দাদ্রা কারার ঐ লৌহ-কপাট ভেঙ্গে ফেল্ কর্ রে লোপাট রক্ত-জমাট শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী! ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ! ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥ গাজনের বাজনা বাজা! কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে? হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান প’রবে ফাঁসি? সর্বনাশী- শিখায় এ হীন্ তথ্য কে রে? ওরে ও পাগ্লা ভোলা, দেরে দে প্রলয়-দোলা গারদগুলো জোরসে ধ’রে হ্যাঁচকা টানে। মার্ হাঁক হায়দরী হাঁক্ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবন-পানে॥ নাচে ঐ কাল-বোশেখী, কাটাবি কাল ব’সে কি? দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’। লাথি মার, ভাঙ্রে তালা! যত সব বন্দী-শালায়- আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্ উপাড়ি॥ *৭২৭. রাগ পিলু মিশ্র, তাল:দ্রুত-দাদ্রা গলে টগর মালা কাদের ডাগর মেয়ে যেন রূপের সাগর চলে উজান বেয়ে॥ তার সুডোল তনু নিটোল বাহুর পরে চাঁদের আলো যেন পিছ্লে পড়ে ও কি বিজলি পরী এলো মেঘ পাসরি’ চাঁদ ভুলে যায় লোকে তার নয়নে চেয়ে॥ যেন রূপকথার দেশের সে রাজকুমারী রামধনুর রঙ ঝরে অঙ্গে তারি মদন রতি করে তার আরতি তার রূপের মায়া দুলে ভুবন ছেয়ে॥ *৭২৮. সিনেমা: চৌরঙ্গী, তাল: কাহার্বা পুরুষ:জহরত পান্না হীরার বৃষ্টি তব হাসি-কান্না চোখের দৃষ্টি তারও চেয়ে মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি॥ স্ত্রী: কান্না-মেশানো পান্না নেবো না, বঁধু। এই পথেরই ধূলায় আমার মনের মধু করে হীরা মানিক সৃষ্টি মিষ্টি আরো মিষ্টি॥ পুরুষ: সোনার ফুলদানি কাঁদে লয়ে শূন্য হিয়া এসো মধু-মঞ্জরি মোর! এসো প্রিয়া, প্রিয়া! স্ত্রী: কেন ডাকে বউ কথা কও, বউ কথা কও, আমি পথের ভিখারিনী গো, নহি ঘরের বউ। কেন রাজার দুলাল মাগে মাটির মউ। বুকে আনে ঝড়, চোখে বৃষ্টি তার-সকরুণ দৃষ্টি তবু মিষ্টি॥ *৭২৯. তাল: ফেরতা টলমল টলমল পদভরে বীরদল চলে সমরে॥ খরধার তরবার কটিতে দোলে রণন ঝনন রণ-ডঙ্কা বোলে ঘন তূর্য-রোলে শোক-মৃত্যু ভোলে দেয় আশিস সূর্য সহস্র করে॥ চলে শ্রান্ত দূর-পথে মরু দুর্গম পর্বতে চলে বন্ধুবিহীন একা, মোছে রক্তে ললাট-কলঙ্ক-লেখা। কাঁপে মন্দিরে ভৈরবী-এ কি বলিদান! জাগে নিঃশঙ্ক শঙ্কর ত্যজিয়া শ্মশান! দোলে ঈশান মেঘে কাল প্রলয় নিশান! বাজে ডম্বরু, অম্বর কাঁপিছে ডরে॥ *৭৩০. তাল: কাহার্বা পুরুষ : তুমি ফুল আমি সুতো গাঁথিব মালা স্ত্রী : সহিতে হবে মোরে সুচির জ্বালা॥ পুরুষ : দুলিবে গলে মোর বুকের’ পরে স্ত্রী : ফেলে দিবে বাসি হলে নিশি-ভোরে বন-কুসুম ঝরি বনে নিরালা॥ পুরুষ : তব কুঞ্জ-গলি আসে দখিন-হাওয়া আসে চপল অলি স্ত্রী : তা’রা রূপ-পিয়াসি তা’রা ছিঁড়ে না কলি। তা’রা বনের বাহিরে মোরে নেবে না কালা। পুরুষ : তবে চলিয়া যাই আমি নিরাশা ল’য়ে স্ত্রী : না, না, যেয়ো না যেয়ো না, থাক গো বুকে শিশির হয়ে। পুরুষ : এসো নব প্রেমে করি বন উজালা। দ্বৈত : এসো নব প্রেমে করি বন উজালা॥ *৭৩১. রাগ; ভৈরবী, তাল: দাদ্রা তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে। তুমি কান্না পাওয়াও কাননকে গো ফুল-ঝরা প্রভাতে॥ তুমি ভৈরবী সুর উদাস বিধুর অতীত দিনের স্মৃতি সুদূর, তুমি ফোটার আগে ঝরা মুকুল বৈশাখী হাওয়াতে॥ তুমি কাশের ফুলের করুণ হাসি মরা নদীর চরে তুমি শ্বেত-বসনা অশ্রুমতী উৎসব-বাসরে। তুমি মরুর বুকে পথ-হারা গোপন ব্যথার ফল্লুধারা, তুমি নীরব বীণা বাণীহীনা সঙ্গীত-সভাতে॥ *৭৩২. তাল: ফের্তা তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায় কেমনে রাধার কাঁদিয়া বরষ যায়॥ খর-বৈশাখে কি দাহন থাকে বিরহিণী একা জানে ঘৃত-চন্দন পদ্মপাতায় দারুণ দহন-জ্বালা না জুড়ায় ‘ফটিক জলে’র সাথে আমি কাঁদি চাহিয়া গগন-পানে। জ্বালা না জুড়ায় গো- হরি-চন্দন বিনা ঘৃত-চন্দনে জ্বালা না জুড়ায় গো শ্যাম-শ্রীমুখ-পদ্ম বিনা পদ্ম পাতায় জ্বালা না জুড়ায়॥ বরষায় অবিরল ঝর ঝর ঝরে জল জুড়াইল জগতের নারী রাধার গলার মালা হইল বিজলি-জ্বালা তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি! সখি রে, তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি। প্রবাসে না যায় পতি সব নারী ভাগ্যবতী বন্ধু রে বাহুডোরে বাঁধে ললাটে কাঁকন হানি’ একা রাধা অভাগিনী প্রদীপ নিভায়ে ঘরে কাঁদে। জ্বালা তা’র জুড়ালো না জলে গো শাওনের জলে তা’র মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে গো কৃষ্ণ-মেঘ গেছে চ’লে, অকরুণ অশনি হানিয়া হিয়ায় (সখি)॥ আশ্বিনে পরবাসী প্রিয় এলো ঘরে গো মিটিল বধূর মন-সাধ (সখি রে) রাধার চোখের জলে মলিন হইয়া যায় কোজাগরী চাঁদ (মলিন হইয়া যায় গো)। আগুন জ্বালালে শীত যায় নাকি রাধার কি হ’ল হায় বুক ভরা তার জ্বলিছে আগুন তবু শীত নাহি যায়। যায় না, যায় না আগুন জ্বলে- বুকের আগুন জলে, তবু শীত যায় না, যায় না, শীত যদি বা যায় নিশীথ না, যায় গো যায় না, যায় না, রাধার যে কি হ’ল হায়॥ কলিয়া কৃষ্ণ-চূড়া, ছড়ায়ে ফাগের গুঁড়া আসিল বসন্ত রাধা-অনুরাগে রেঙে কে ফাগ খেলিবে গো, নাই ব্রজ-কিশোর দুরন্ত। মাধবী-কুঞ্জে কুহু কুহরিছে মুহুমুহু ফুল-দোলনায় সবে দোলে, এ মধু মাধবী রাতে রাধার মাধব নাই দুলিবে রাধা কার কোলে সখি রে- রাধা দোলে কার কোলে গো শ্যাম-বল্লভ বিনা রাধা দোলে কার কোলে গো, বল্ সখি, দোলে কার কোলে। ফুল-দোলে দোলে সবে পিয়াল-শাখে রাধার প্রিয়া নাই, বাহু দু’টি দিয়া বাঁধিবে কাহাকে, ঝরা-ফুল-সাথে রাধা ধূলাতে লুটায়॥ *৭৩৩.রাগ; মিশ্র পিলু, তাল: দ্রুত-দাদ্রা বকুল তলে ব্যাকুল বাঁশি কে বাজায় যে বাঁশরি শুনে কিশোরী সহসা যেন গো যৌবন পায়॥ রয় না মন ঘরে সেই বাঁশির সুরে দূরে ভেসে যেতে চায় পরান ঘুরে মরে তাহার রাঙা পায়॥ তারি নূপুর শুনি নিশিদিনই প্রাণে মোর নিশীথ রাতে আসে পাশে বসে মনোচোর। তারে কি মালা দিব অশ্রু-মুক্তা গাঁথা বিছাবো পথে কি তার মরা ফুল ঝরা পাতা প্রাণের দীপালি জ্বালি তারি আশায়॥ *৭৩৪. তাল: দ্রুত-দাদ্রা বনের হরিণ আয় রে বনের হরিণ আয় কাজল-পরা চোখ নিয়ে আয় আমার আঙিনায় রে॥ (দেখ্) নেই বনে কেউ এক্লা দুপুর আয় ঝরা পাতায় বাজিয়ে নূপুর, ঝুমুর ঝুমুর তোরে ডাকে নোটন পায়রার দল ডাকে মেঘের ঝরোকায় রে॥ কি দেখে তুই ধীরি ধীরি চাস্ রে ফিরি ফিরি, বন্-শিকারির তীর নহে ও, ঝরনা ঝিরি ঝিরি। মাদল বাজে ঈশান কোণে ঝড় উঠেছে আমার মনে সেই তুফানের তালে তালে নাচ্বি চপল পায় রে॥ *৭৩৫. তাল: দাদ্রা বল্ নাহি ভয় নাহি ভয়! বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ জয়, সত্যের জয়! তুই নির্ভর কর্ আপনার’ পর্ আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর্ ওরে যে যায় যাক্ সে, তুই শুধু বল্ ‘আমার হয়নি লয়’! বল্ ‘আমি আছি’ আমি পুরুষোত্তম, আমি চির-দুর্জয়! বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!! যে গেল সে নিজেরে নিঃশেষ করি’ তোদের পাত্র দিয়ে গেল ভরি’! ঐ বন্ধ মৃত্যু পারেনি ক’ তাঁরে পারেনি করিতে লয়! তাই আমাদের মাঝে নিজেরে বিলায়ে সে আজি শান্তিময় বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!! ওরে রুদ্র তখনি ক্ষুদ্রেরে গ্রাসে আগেই যবে সে ম’রে থাকে ত্রাসে ওরে আপনার মাঝে বিধাতা জাগিলে বিশ্বে সে নির্ভয় এই ক্ষুদ্র কারায় কভু কি ভয়াল ভৈরব বাঁধা রয়? বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!! ওরে আত্ম-অবিশ্বাসী, ভয়ে-ভীত! কেন হেন ঘন অবসাদ চিত বল্ পর-বিশ্বাসে পর-মুখপানে চেয়ে কি স্বাধীন হয়? তুই আত্মাকে চিন্, বল ‘আমি আছি’ ‘সত্য আমার জয়’! বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!! *৭৩৬. তাল: ফের্তা (কাহার্বা ও দাদ্রা) বিদেশিনী বিদেশিনী চিনি চিনি ঐ চরণের নূপুর রিনিঝিনি॥ দীপ জেগে ওঠে পাথার জলে তোমার চরণ-ছন্দে, নাচে গাঙচিল সিন্ধু-কপোত তোমারি সুরে আনন্দে। মুকুতা কাঁদিছে হার্ হ’তে ওগো তোমার বেণীর বন্ধে। মলয়ে শুনেছি তোমার বলয় চুড়ির রিনিঠিনি॥ সাগর-সলিল হয়েছে সুনীল তোমার তনুর বর্ণে, তোমার আঁখির আলো ঝলমল দেবদারু তরু-পর্ণে। অস্ত-তপন হয়েছে রঙিন তোমার হাসির স্বর্ণে শঙ্খ-ধবল বেলাভূমে খেল সাগর-নটিনী॥ *৭৩৭. তাল: কাহার্বা মদিনার শাহানশাহ্ কোহ্-ই-তূর-বিহারী মোহাম্মদ মোস্তফা নবুয়তধারী॥ আল্লার প্রিয় সখা, দুলাল মা আমেনার খোদিজার স্বামী, প্রিয়তম আয়েশার আস্হাবের হাম্দম্ ওয়ালেদ ফাতেমার, বেলালের আজান, খালেদের তলোয়ার, কেয়ামতে উম্মত শাফায়ত-কারী॥ তৌহিদ-বাণী মুখে, আল-কোরআন হাতে খোদার নূর দেখি যাঁর হাসির ইশারাতে যাঁর কদমের নীচে দুলে কত জিন্নাত, যে দু’হাতে বিলালো দুনিয়ায় খোদার মোহাব্বত হো মেরাজের দুলহা আল্লার আর্শচারী॥ নয়নে যাঁর সদা খোদার রহমত ঝরে সংসার মরুবাসী পিয়াসার তরে আনিল যে কওসর সাহারা নিঙাড়ি’॥ *৭৩৮. তাল: ত্রিতাল মম প্রাণ-শতদল হোক প্রণামী-কমল (ওগো) তব চরণে আমার এ হৃদয় নাথ হোক তন্ময় তোমারি স্মরণে॥ তব পূজার বেদী হোক আমার এ মন হোক্ আরতি-প্রদীপ মোর এ দুটি নয়ন নাথ, লহ মোরে পায় তোমারি সেবায় জীবনে-মরণে॥ মম দুঃখে সুখে মম তৃষিত বুকে তুমি বিরাজ, মোর সকল কাজে বীণা-বেণু সম নিশিদিন বাজো। মোর দেহখানি, নাথ চন্দন প্রায় হোক্ ক্ষয় তব মন্দির-পাষাণ-শিলায়, পাই যেন লয়, নাথ তব সৃষ্টির রূপে বরণে॥ *৭৩৯. তাল: কাহার্বা মেরে শ্রীকৃষ্ণ ধরম শ্রীকৃষ্ণ করম শ্রীকৃষ্ণহি তন-মন-প্রাণ। সব্সে নিয়ারে পিয়ারে শ্রীকৃষ্ণজী নয়নুকে তারে সমান॥ দুখ সুখ সব শ্রীকৃষ্ণ মাধব কৃষ্ণহি আত্ম জ্ঞান কৃষ্ণ কণ্ঠহার আঁখকে কাজর কৃষ্ণ হৃদয়মে ধ্যান শ্রীকৃষ্ণ ভাষা শ্রীকৃষ্ণ আশা মিটায়ে পিয়াস উয়ো নাম (মেরে) স্বামী-সখা-পিতা-মাতা শ্রীকৃষ্ণজী ভ্রাতা-বন্ধু-সন্তান॥ *৭৪০. রাগ: আড়ানা, তাল: ঝাঁপতাল যোগী শিব শঙ্কর ভোলা দিগম্বর ত্রিলোচন দেবাদিদেব ধ্যানে সদা মগন॥ চির শ্মশানচারী অনাদি সমাধিধারী স্তব্ধ ভয়ে চরণে তাঁরি প্রণতি করে গগন॥ ত্রিশূল-বিষাণ রহে পড়িয়া পাশে ললাটে শশী নাহি হাসে গঙ্গা তরঙ্গ-হারা ভীত ভুবন। ত্রাহি হে শম্ভু শিব, ত্রাসে কাঁপে জড় ও জীব ভোলো এ ভীষণ তপ গাহিতেছে সঘন॥ *৭৪১. তাল: কাহার্বা দ্বৈত : রাধাকৃষ্ণ নামের মালা : জপ দিবানিশি নিরালা॥ পুরুষ : অগতির গতি গোকুলের পতি স্ত্রী : শ্রীকৃষ্ণে ভক্তি দেয় যে শ্রীমতী পুরুষ : ভব-সাগরে কৃষ্ণ নাম ধ্রুবজ্যোতি দ্বৈত : সেই কৃষ্ণের প্রিয়া ব্রজবালা॥ স্ত্রী : পাপ-তাপ হবে দূর হরির নামে : শ্রীমতী রাধা যে হরির বামে পুরুষ :ঐ নাম জপি’ যাবি গোলকধামে দ্বৈত : সেই রাধা নাম হবে দুঃখ জ্বালা॥ পুরুষ : কৃষ্ণ-মূরতি হৃদি-মন্দিরে রাখো দ্বৈত : জপ রে যুগল নাম রাধাশ্যাম এই আঁধার জগৎ হবে আলা॥ *৭৪২. তাল: কাহার্বা শ্রান্ত-ধারা বালুতটে শীর্ণা-নদীর গান সেই সুরে গো বাজবে আমার করুণ বাঁশির তান॥ সাথী-হারা একেলা পাখি, যে-সুরে যায় বনে ডাকি’ সেই সুরেরি কাঁদন মাখি’ বিধুর আমার প্রাণ॥ দিন শেষের ম্লান আলোতে ঘনায় যে বিষাদ আমার গানে জড়িয়ে আসে তারই অবসাদ। ঝরা-পাতার মরমরে, বাদল-রাতে ঝরঝরে বাজে আমার গানের সুরে গোপন অভিমান॥ *৭৪৩. তাল: তেওড়া হিন্দু আর মুসলিম মোরা দুই সহোদর ভাই। এক বৃন্তে দু’টি কুসুম এক ভারতে ঠাঁই॥ সৃষ্টি যাঁর মুসলিম রে ভাই হিন্দু সৃষ্টি তাঁরি মোরা বিবাদ ক’রে খোদার উপর করি যে খোদকারি। শাস্তি এত আজ আমাদের হীন-দশা এই তাই॥ দুই জাতি ভাই সমান মরে মড়ক এলে দেশে বন্যাতে দুই ভাইয়ের কুটির সমানে যায় ভেসে। দুই জনারই মাঠেরে ভাই সমান বৃষ্টি ঝরে- সব জাতিরই সকলকে তাঁর দান যে সমান করে চাঁদ সুরুযের আলো কেহ কম-বেশি কি পাই বাইরে শুধু রঙের তফাৎ ভিতরে ভেদ নাই॥ *৭৪৪. তাল: ত্রিতাল হে মহামৌনী, তব প্রশান্ত গম্ভীর বাণী শোনাবে কবে যুগ যুগ ধরি’ প্রতীক্ষারত আছে জাগি’ ধরণী নীরবে॥ যে-বাণী শোনার অনুরাগে উদার অম্বর জাগে অনাগত যে-বাণীর ঝঙ্কার বাজে ওঙ্কার প্রণবে॥ চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারায় জ্বলে যে-বাণীর শিখা পুষ্পে-পর্ণে শত বর্ণে যে-বাণী-ইঙ্গিত লিখা। যে অনাদি বাণী সদা শোনে যোগী-ঋষী মুনি জনে যে-বাণী শুনি না শ্রবণে বুঝি অনুভবে॥ *৭৪৫. রাগ: ভৈরবী, তাল: দাদ্রা আজ ভারতের নব আগমনী জাগিয়া উঠেছে মহাশ্মশান জাগরণী গায় প্রভাতের পাখি ফুলে ফুলে হাসে গোরস্থান॥ ট’লেছে অটল হিমালয় আজি সাগরে শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি’ হলাহল শেষে উঠেছে অমৃত বাঁচাইতে মৃত মানব-প্রাণ॥ আঁধারে ক’রেছে হানাহানি যারা আলোকে চিনেছে আত্মীয় তা’রা এক হয়ে গেছে খ্রীস্টান, শিখ, হিন্দু, পারসি, মুসলমান। এই তাপসীর চরণের তলে লভিয়াছে জ্ঞান শিক্ষা সকলে আবার আসিবে তারা দলে দলে করিতে পুণ্য-তীর্থ-স্নান॥
*৭৪৬. রাগ; খাম্বাবতী, তাল: ঝাঁপতাল আজি নন্দলাল মুখচন্দ নেহারি অধীর আনন্দে অন্তর কাঁপে ঝরে প্রেমবারি॥ বকুল-বন হরষে ফুলদল বরষে গাহে রাধা শ্যাম নাম হরি-চরণ হেরি শুকসারি॥ *৭৪৭. তাল: কাহার্বা কে সাজালো মাকে আমার বিসর্জনের বিদায় সাজে আজ সারাদিন কেন এমন করুণ সুরে বাঁশি বাজে॥ আনন্দেরি প্রতিমাকে হায়, বিদায় দিতে পরান নাহি চায় মা-কে ভাসিয়ে জলে কেমন ক’রে রইব আঁধার ভবন মাঝে॥ মা’র আগমনে বেজেছিল প্রাণে নূতন আশার বাঁশি দুঃখ শোক ভয় ভুলেছিলাম দেখে মা অভয়ার মুখের হাসি। মা দশ হাতে আনন্দ এনেছিল, বিশ হাতে আজ দুঃখ ব্যথা দিল মা মৃন্ময়ীকে ভাসিয়ে জলে, পাব চিন্ময়ীকে বুকের মাঝে॥ *৭৪৮. তাল: কাহার্বা গিরিধারী গোপাল ব্রজ গোপ দুলাল অপরূপ ঘনশ্যাম নব তরুণ তমাল॥ বিশাখার পটে আঁকা মধুর নিরুপম কান্ত ললিতার শ্রীরাধা প্রীতম রুক্সিণী-পতি হরি যাদব ভূপাল॥ যশোদার স্নেহডোরে বাঁধা ননীচোর নন্দের নয়ন-আনন্দ-কিশোর শ্রীদাম-সুদাম-সখা গোঠের রাখাল॥ কংস-নিসূদন কৃষ্ণ মথুরাপতি গীতা উদ্গাতা পার্থসারথি পূর্ণ ভগবান বিরাট বিশাল॥ *৭৪৯. রাগ; বাগেশ্রী মিশ্র, তাল: আহার্বা চোখের নেশার ভালোবাসা সে কি কভু থাকে গো জাগিয়া স্বপনের স্মৃতি স্মরণে কে রাখে গো॥ তোমরা ভোল গো যা’রে চিরতরে ভোল তা’রে মেঘ গেলে আবছায়া থাকে কি আকাশে গো॥ পুতুল লইয়া খেলা খেলেছ বালিকা বেলা খেলিছ পরান ল’য়ে তেমনি পুতুল খেলা। ভাঙিছ গড়িছ নিতি হৃদয়-দেবতাকে গো। চোখের ভালোবাসা গ’লে শেষ হ’য়ে যায় চোখের জলে বুকের ছলনা সেকি নয়ন জলে ঢাকে গো॥ *৭৫০. তাল: ত্রিতাল ত্রিংশ কোটি তব সন্তান ডাকে তোরে ভুলে আছিস দেশ জননী কেমন ক’রে॥ ব্যথিত বুকে মাগো তোমার মন্দির গড়ি করি পূজা আরতি মাগো যুগ যুগ ধরি’ ধূপ পুড়িয়া মাগো চন্দন শুকায়ে যায় এসো মা এসো পুন রানীর মুকুট প’রে॥ দুখের পসরা মা আর যে বহিতে নারি কাঁদিয়া কাঁদিয়া শুকায়েছে আঁখি-বারি এ গ্লানি লাজ মাগো সহিতে নাহি পারি বিশ্ব বন্দিতা এসো দুখ-নিশি-ভোরে॥ অতীত মহিমা ল’য়ে এসো মহিমাময়ী হীনবল সন্তানে কর মা ভুবনজয়ী দুখ তপস্যা মা কবে তব হবে শেষ আয় মা নব আশা রবির প্রদীপ ধ’রে॥
|