ভাষাংশ
|
কাজী
নজরুল ইসলাম
|
কাজী নজরুল ইসলামের
রচনাসংগ্রহের সূচি
৭৫১. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
নিশির নিশুতি যেন হিয়ার ভিতরে গো,
সে বলেও না টলেও না থমথম করে গো॥
যেন নতুন পিঞ্জরের পাখি, ঘেরা টোপে ঢাকা থাকি
জটিলা-কুটিলার ভয়ে আছি আমি ম’রে গো॥
যেন চোরের বউ কান্তে নারি ভয়ে ফুকারিয়া গো,
আমি রান্না ঘরে কান্না লুকাই লঙ্কা-ফোড়ন দিয়া গো।
ব্যথার ব্যথী পাইরে কোথা, জানাই যা’রে মনের ব্যথা
বুকে ধিকি ধিকি তুষের আগুন জ্ব’লবে চিরতরে
বুঝি জ্ব’লবে জনম ভ’রে গো॥
*৭৫২, রাগ: ভৈরবী-পিলু, তাল: কাহার্বা
বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানিনী
সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে যাবে কত যামিনী॥
সে কাঁদন শুনি হের নামিল নভে বাদল
এলো পাতার বাতায়নে যুঁই চামেলি কামিনী॥
আমার প্রাণের ভাষা শিখে ডাকে পাখি পিউ কাঁহা
খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে আঁখি মোর সৌদামিনী॥
*৭৫৩. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
বাঁকা চোখে চাহে ও কে
ওকি ভয়ে, না লাজে, না ভালোবাসায়?
বটের ঝুরি ধ’রে হেসে তাকায়
দীঘির জলে কভু কল্সি ভাসায়॥
(আমার) পাখি শিকার দেখে তাহার আঁখি ছলছল
যেন দুটি ঝিনুক ভরা কাজলা দীঘির জল
তার আঁজলা ভরা শাপলা কাঁপে টলমল গো
সে বাঁকিয়ে জোড়া ভুরু মোরে শাসায়॥
কভু এলায়ে গা বাঁধে খোঁপা কোমরে জড়ায় আঁচল
মট্কায় আঙুল, কভু ঘসে সে পা গো
কভু জলে ডোবে কভু সাঁতার কাটে
নানান ছলে সে দেরি করে জলের ঘাটে
মোরে জানায় যেন ও সে আছে ব’সে
কাহার আসার আশায়॥
*৭৫৪. রাগ: সুঘরাই কানাড়া, তাল: ত্রিতাল
ভারতলক্ষ্মী মা আয় ফিরে এ ভারতে
ব্যথায় মোদের চরণ ফেলে অরুণ আশার সোনার রথে॥
অশ্রু গঙ্গার জলে ধুই মা তোর চরণ নিতি
ত্রিশ কোটি কণ্ঠে বাজে রোদনে তোর বোধনগীতি
আয় মা দলিত রাঙা হৃদয় বিছানো পথে॥
বিজয়া তোর হ’ল কবে শতাব্দী চলিয়া যায়
ভারত-বিজয়-লক্ষ্মী ভারতে ফিরিয়া আয়
বিসর্জনের কান্না মা এবার তুই এসে থামা
সফল কর এ তপস্যা মা স্থান দে স্বাধীন জগতে॥
*৭৫৫. তাল: দাদ্রা
রাঙা জবার বায়না ধ’রে আমার কালো মেয়ে কাঁদে
সে তারার মালা সরিয়ে ফেলে এলোকেশ নাহি বাঁধে ॥
পলাশ অশোক কষ্ণচূড়ায়, রাগ ক’রে সে পায়ে গুড়ায়
সে কাঁদে দু’হাত দিয়ে ঢেকে যুগল আঁখি সূর্য চাঁদে॥
অনুরাগের রাঙাজবা থাক না মোর মনের বনে
আমার কালো মেয়ের রাগ ভাঙাতে ফিরি জবার অন্বেষণে।
মা’র রাঙা চরণ দেখতে পেয়ে, বলি এই যে জবা হাবা মেয়ে
(সে) জবা আপন পায়ে উঠলো নেচে মধুর ছাঁদে॥
*৭৫৬. তাল: ফের্তা
পুরুষ : সোনার বরণ কন্যা গো, এসো আমার সোনার নায়ে
চল আমার বাড়ি
স্ত্রী : ওরে অচিন দেশের বন্ধুরে,
তুমি ভিন্ গেরামের নাইয়া আমি ভিন্ গেরামের নারী।
পুরুষ : গয়না দিব বৈচী খাড়ু শাড়ি ময়নামতীর।
স্ত্রী : গয়না দিয়ে মন পাওয়া যায় না কুলবতীর।
পুরুষ : শাপলা ফুলের মালা দেব রাঙা রেশমি চুড়ি।
স্ত্রী : ঐ মন-ভুলানো জিনিস নিয়ে (বন্ধু) মন কি দিতে পারি?
পুরুষ : (তুমি) কোন্-সে রতন চাও রে কন্যা, আমি কি তা জানি?
স্ত্রী : তোমার মনের রাজ্যে আমি হ’তে চাই রাজরানী।
দ্বৈত : হইও সাক্ষী তরুলতা পদ্ম নদীর পানি (আরে ও)
(আজি) কূল ছাড়িয়া দু’টি প্রাণী অকূলে দিল পাড়ি॥
*৭৫৭. রাগ; ভৈরবী, তাল: ফের্তা (দাদ্রা ও কাহার্বা)
যাও যাও তুমি ফিরে এই মুছিনু আঁখি
কে বাঁধিবে তোমারে হায় গানের পাখি॥
মোর আজ এত প্রেম আশা এত ভালোবাসা
সকলি দুরাশা আজ কি দিয়া রাখি॥
তোমার বেঁধেছিল নয়ন শুধু এ রূপের জালে
তাই দুদিন কাঁদিয়া হায় এ বাঁধন ছাড়ালে।
আমার বাঁধিয়াছে হিয়া আমি ছাড়ব কি দিয়া
আমার হিয়া তো নয়ন নহে ও সে ছাড়ে না কাঁদিয়া,
ওগো দু’দিন কাঁদিয়া।
এই অভিমান জ্বালা মোর একেলারি কালা
ম্লান মিলনেরি মালা দাও ধূলাতে ঢাকি॥
*৭৫৮. রাগ: সিন্ধু-ভৈরবী, তাল: যৎ (৮ মাত্রা)
যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম সকলি নিয়ো হে স্বামী
যত সাধ আশা প্রীতি ভালোবাসা সঁপিনু চরণে আমি॥
ধ’রে যা’রে রাখি আমার বলিয়া
সহসা কাঁদায়ে যায় সে চলিয়া
অনিমেষ, আঁখি তুমি ধ্রুবতারা জাগো দিবসযামী॥
মায়ারি ছলনায় পুতুল খেলায়
ভুলাইয়া প্রভু রেখেছিলে আমায়
ভুলেছি সে খেলা আজি অবেলায় তোমারই দুয়ারে থামি॥
*৭৫৯. তাল: কাহার্বা
সই নদীর ধারে বকুল তলায় সুবাস শীতল ছায়
(সখি) আকুল তাহার আঁখি দুটি কাহার পানে চায়॥
সই যা না লো দাঁড়ায়ে, কাঁটা বিঁধেছে মোর পায়ে
তোরা দাঁড়া সখি ক্ষণেক, (সখি) ওকি হাসিস্ কেন হায়॥
আমার কলসিটি যে ভারি, ডালে বেঁধেছে মোর শাড়ি
তোরা বলিস ছলে হেরি ওরে (ওলো) ছি ছি একি দায়!
যদি হেরেই থাকি ওরে, তোরা দুষিস্ কেন মোরে
ওলো আমার আমি বশে নাই মোর (পাগল) আঁখির নেশায়॥
*৭৬০. তাল: দাদ্রা
আমার কালিবাঞ্ছা কল্পতরুর ছায়াতলে আয় রে,
এই তরুতলে যে যাহা চায় তখনি তা পায় রে॥
তুই চতুর্বর্গ ফল কুড়াবি
যোগ পাবি, ভোগ পাবি
এমন কল্পতরু থাকতে-কেন মরিস্ নিরাশায় রে॥
দস্যু ছেলের আবদারে সে সাজে ডাকাত কালির বেশে,
কত রামপ্রসাদের কন্যা হয়ে বেড়া বেঁধে যায় রে।
ওরে পুত্র-কন্যা বিভব-রতন,
চেয়ে নে যার ইচ্ছা যেমন,
ওরে আমার এ মন থাকে যেন বাঞ্ছাময়ীর পায় রে॥
সে আর কিছু না চায়
চেয়ে চেয়ে বাসনা তার শেষ হল না হায়!
এবার খালি হাতে তালি দিয়ে (আমি) চাইব কালিকায় রে॥
*৭৬১. তাল: দাদ্রা
আমার হৃদয় অধিক রাঙা মা গো রাঙা জবাব চেয়ে,
আমি সেই জবাতে ভবানী তোর চরণ দিলাম ছেয়ে॥
মোর বেদনার বেদির ‘পরে
বিগ্রহ তোর রাখবো ধ’রে,
পাষাণ দেউল সাজে না- তোর আদরিণী মেয়ে॥
স্নেহ পূজার ভোগ দেবো মা, অশ্রু-পূজারিণী,
অনুরাগের থালায় দেবো ভক্তি-কুসুম-কলি।
অনিমেষ আঁখির বাতি
রাখবো জ্বেলে দিবস রাতি,
তোর রূপ হবে মা আরও শ্যামা (আমার) অশ্রুজলে নেয়ে॥
*৭৬২. তাল: দাদ্রা
আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা দেহ বিল্বদল,
মুক্তি পাবো ছুঁয়ে মুক্তকেশীর চরণতল॥
মোর বলির পশু হবে সর্বকাম,
মোর পূজার মন্ত্র হবে মায়ের নাম,
মোর অশ্রু দেবো মা’র চরণে সেই তো গঙ্গাজল॥
মোর আনন্দ মাকে দেবো তাই হবে চন্দন,
মোর পুষ্পাঞ্জলি হবে আমার প্রাণ মন।
মোর জীবন হবে আরতি-দীপ,
মোর গুরু হবেন শঙ্কর-শিব,
মোর কাঁটার জ্বালা পদ্ম হবে শুভ্র সুনির্মল॥
*৭৬৩. রাগ: জৌনপুরী মিশ্র, তাল: একতাল
এসো মা ভারত-জননী আবার জগৎ-তারিণী সাজে।
রাজরানী মা’র ভিখারিনী বেশ দেখে প্রাণে বড় বাজে॥
শিশু-জগতেরে মায়ের মতন,
তুমি মা প্রথম করিলে পালন,
আজ মাগো তোরই সন্তানগণ কাঁদিছে দৈন্য-লাজে॥
আঁধার বিশ্বে তুমি কল্যাণী
জ্বালিলে প্রথম জ্ঞান-দীপ আনি;
হইলে বিশ্ব-নন্দিতা রানী নিখিল নর-সমাজে॥
দেখা মা পুন সে অতীত মহিমা,
মুছে দে ভীরুতা গ্লানির কালিমা,
রাঙায়ে আবার দশদিক-সীমা দাঁড়া মা বিশ্ব-মাঝে॥
*৭৬৪. তাল: ফের্তা (দ্রুত-দাদ্রা ও কাহার্বা)
ও –তুই যাস্নে রাই-কিশোরী কদমতলাতে,
সেথা ধরবে বসন-চোরা ভূতে, পারবিনে আর পালাতে॥
সে দেখলে কি আর রক্ষে আছে,
ও-তোর বসন গিয়ে উঠ্বে গাছে,
ওলো গোবর্ধন-গিরিধারী সে-পারবিনে তায় টলাতে॥
দেখতে পেলে ব্রজবালা,
ঘট কেড়ে সে ঘটায় জ্বালা,
(ওলো) নিজেই গ’লে জল হ’বি তুই পারবিনে তায় গলাতে॥
ঠেলে ফেলে অগাধ-নীরে
সে হাসে লো দাঁড়িয়ে তীরে,
শেষে ভাসিয়ে নিয়ে প্রেম-সাগরে ওলো দোলায় নাগরদোলাতে॥
*৭৬৫. তাল: ফের্তা
ওগো এলে কি শ্যামল পিয়া কাজল মেঘে
চাঁচর চিকুর ওড়ে পবন বেগে॥
তোমার লাবনি ঝ’রে পড়িছে অবনি-পরে
কদম শিহরে কর-পরশ লেগে॥
তড়িৎ ত্বরিত পায়ে বিরহী-আঁখিরে ছায়ে তরাসে লুকায়।
চলিতে পথের মাঝে ঝুমুর ঝুমুর বাজে নূপুর দু’পায়।
অশনি হানার ছলে প্রিয়ারে ধরাও গলে,
ওগো রাতের মুকুল কাঁদে কুসুম জেগে॥
*৭৬৬. তাল: কাহার্বা
ওগো দু’পেয়ে জীব ছিল গদাই (গদাইচন্দ্র) বিবাহ না করে,
কুক্ষণে তার বিয়ে দিয়ে দিল সবাই ধ’রে॥
আইবুড়ো সে ছিল যখন, মনের সুখে উড়ত
হাল্কা দু’খান পা দিয়ে সে (গদাই) নাচ্ত, কুঁদ্ত ছুঁড়ত॥
ওগো বিয়ে করে গদাই
দেখলে সে আর উড়তে নারে, ভারি ঠেকে সদাই।
তার এ্যাডিশনাল দু’খানা ঠ্যাং বেড়ায় পিছে ন’ড়ে॥
গদাই-এর পা দু’খানা মোটা, আর তার বৌ-এর পা দু’খানা সরু,
ছোট বড় চারখানা ঠ্যাং ঠিক যেন ক্যাঙারু
গদাই (দেখতে) ঠিক যেন ক্যাঙারু।
আপিসে পদ বৃদ্ধি হয় না (গদাইচন্দ্রের), কিন্তু ঘরে ফি-বছরে,
পা বেড়ে যায় গড়পড়তায় দু’চারখান ক’রে।
তার বৌ শোনে না মানা-
তিনি হন্যে হয়ে কন্যে আনেন মা ষষ্টির ছানা
মানুষ থেকে চার পেয়ে জীব, শেষ ছ’পেয়ে মাছি,
তারপর আটপেয়ে পিঁপড়ে, বাবা গদাই বলে, একেবারে গেছি
আর বলে, ও বাবা বিয়ে করে মানুষ এই কেলেঙ্কারির তরে (বাবা)॥
*৭৬৭. তাল: ফের্তা
ওগো প্রিয়তম তুমি চ’লে গেছ আজ আমার পাওয়ার বহু দূরে।
তবু মনের মাঝে বেণু বাজে সেই পুরানো সুরে সুরে॥
বাজে মনের মাঝে বেণু বাজে
প্রিয় বাজাতে যে বেণু বনের মাঝে আজো তার রেশ মনে বাজে॥
তব কদম-মালার কেশরগুলি
আজি ছেয়ে আছে ওগো পথের ধূলি,
ওগো আজিকে করুণ রোদন তুলি’ বয় যমুনা ভাটির সুরে॥
(আর উজান বয় না,)
ওগো আজিকে আঁধার তমাল বনে, বসে আছি উদাস মনে
ওগো তোমার দেশে চাঁদ উঠেছে আমার দেশে বাদল ঝুরে॥
সেথা চাঁদ উঠেছে-
ওগো শুক্লা তিথির চতুর্দশীর চাঁদ উঠেছে
সেথা শুক্লা তিথির চতুর্দশীর চাঁদ উঠেছে
সখি তাদের দেশে আকাশে আজ আমার দেশের চাঁদ উঠেছে।
ওগো মোর গগনে কৃষ্ণা তিথি আমার দেশে বাদল ঝুরে॥
*৭৬৮. তাল: দাদ্রা
ওরে আয় অশুচি আয়রে পতিত এবার মায়ের পূজা হবে।
যেথা সকল জাতির সকল মানুষ নির্ভয়ে মা’র চরণ ছোবে।
(সেথা) এবার মায়ের পূজা হবে॥
সেথা নাই মন্দির নাই পূজারি নাই শাস্ত্র নাইরে দ্বারী,
সেথা মা বলে যে ডাকবে এসে মা তাহারেই কোলে লবে॥
মা সিংহ-আসন হ’তে নেমে বসেছে দেখ ধূলির তলে
মার মঙ্গল ঘট পূর্ণ হবে সবার ছোঁওয়া তীর্থ জলে।
মোরা জননীকে দেখিনি, তাই ভাইকে আঘাত হেনেছে ভাই,
আজ মাকে দেখে বুঝবি মোরা এক মা’র সন্তান সবে।
এবার ত্রিলোক জুড়ে পড়বে সাড়া মাতৃ মন্ত্র মাভৈঃ রবে॥
*৭৬৯. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা।
আমি দেখ্ছি কত দেখ্ব কত তোমার ছলাকলা;
আমি নিতুই নিতুই সইব কত, (কালা) তিন সতিনের জ্বালা॥
আমি জল নিতে যাই যমুনাতে তুমি বাজাও বাঁশি হে,
মনের ভুলে কলস ফেলে তোমার কাছে আসি হে,
শ্যাম দিন-দুপুরে গোকুলপুরে (আমার) দায় হল পথ চলা॥
আমার চারদিকেতে ননদ-সতীন দু’কূল রাখা ভার,
আমি সইব কত আর বাঁকা শ্যাম।
ওরা বুঝছে সবই নিত্যি-নতুন, (নিতি) মিথ্যে কথা বলা॥
*৭৭০. তাল: কাহার্বা
কেন বাজাও বাঁশি কালোশশী মৃদু মধুর তানে।
ঘরে রইতে নারি জ্ব’লে মরি বাজাইও না বনে
বাঁশি আর বাজাইও না বনে॥
নিঝুম রাতে বাজে বাঁশি
পরায় গলে প্রেম-ফাঁসি,
কেহ নাহি জানে হে শ্যাম (আমি) মরি শুধু প্রাণে॥
রাখ রাখ ও-বাঁশরি
ওহে কিশোর-বংশীধারী,
মন নাহি মানে হে শ্যাম (বঁধু) বাঁশি কি গুণ জানে॥
*৭৭১. তাল: কাহার্বা
গিন্নির চেয়ে ভালো মেসোর চেয়ে মামা।
আর ডাইনের চেয়ে ডুগি ভালো অর্থাৎ কি না বামা॥
একশালা সে দোশালা আচ্ছা, চণ্ডুর চেয়ে গাঁজা,
আর হাতের চেয়ে ভালো, তেনার হাতদিয়ে পান সাজা,
আর ধাক্কার চেয়ে গুঁতো ভালো, উকোর চেয়ে ঝামা॥
টিকির চেয়ে বেণী ভালো, ধূতির চেয়ে শাড়ি,
আর পাঁঠার চেয়ে মুরগি ভালো, থানার চেয়ে ফাঁড়ি
ঠুঁটোর চেয়ে নুলো ভালো, প্যান্ট চেয়ে পায়জামা॥
আর পেয়াদার চেয়ে যম ভালোরে (ভাই), শালের চেয়ে বাঁশ,
আর দাঁড়ির চেয়ে গোফ্ ভালো ভাই আঁটির চেয়ে শাঁস,
আর ছেলের চেয়ে ছালা ভালো (ওগো), ঝুড়ির চেয়ে ধামা॥
পাকার চেয়ে কাঁচা ভালো, কালোর চেয়ে ফরসা
আর পেতনীর চেয়ে ভূত ভালো ভাই, ছাড়বার থাকে ভরসা,
আর ঝগড়ার চেয়ে কুস্তি ভালো, কাল্লুর চেয়ে গামা॥
*৭৭১. তাল: কাহার্বা
গিন্নির চেয়ে ভালো মেসোর চেয়ে মামা।
আর ডাইনের চেয়ে ডুগি ভালো অর্থাৎ কি না বামা॥
একশালা সে দোশালা আচ্ছা, চণ্ডুর চেয়ে গাঁজা,
আর হাতের চেয়ে ভালো, তেনার হাতদিয়ে পান সাজা,
আর ধাক্কার চেয়ে গুঁতো ভালো, উকোর চেয়ে ঝামা॥
টিকির চেয়ে বেণী ভালো, ধূতির চেয়ে শাড়ি,
আর পাঁঠার চেয়ে মুরগি ভালো, থানার চেয়ে ফাঁড়ি
ঠুঁটোর চেয়ে নুলো ভালো, প্যান্ট চেয়ে পায়জামা॥
আর পেয়াদার চেয়ে যম ভালোরে (ভাই), শালের চেয়ে বাঁশ,
আর দাঁড়ির চেয়ে গোফ্ ভালো ভাই আঁটির চেয়ে শাঁস,
আর ছেলের চেয়ে ছালা ভালো (ওগো), ঝুড়ির চেয়ে ধামা॥
পাকার চেয়ে কাঁচা ভালো, কালোর চেয়ে ফরসা
আর পেতনীর চেয়ে ভূত ভালো ভাই, ছাড়বার থাকে ভরসা,
আর ঝগড়ার চেয়ে কুস্তি ভালো, কাল্লুর চেয়ে গামা॥
*৭৭২. তাল: দাদ্রা
কোরাস : চীন ও ভারতে মিলেছি আবার মোরা শত কোটি লোক।
: চীন ভারতের জয় হোক! ঐক্যের জয় হোক! সাম্যের জয় হোক।
: ধরার অর্থ নরনারী মোরা রহি এই দুই দেশে,
কেন আমাদের এত দুর্ভোগ নিত্য দৈন্য ক্লেশে।
পুরুষ কণ্ঠ : সহিব না আজ অবিচার-
কোরাস্ : খুলিয়াছে আজি চোখ॥
: প্রাচীন চীনের প্রাচীর মহাভারতের হিমালয়
: আজি এই কথা যেন কয়-
:মোরা সভ্যতা শিখায়েছি পৃথিবীরে-ইহা কি সত্য নয়?
হইব সর্বজয়ী আমরাই সর্বহারার দল,
সুন্দর হবে শান্তি লভিবে নিপীড়িতা ধরাতল।
পুরুষ কণ্ঠ : আমরা আনিব অভেদ ধর্ম-
কোরাস্ : নব বেদ-গাঁথা-শ্লোক॥
*৭৭৩. তাল: কাহার্বা
জাগো জোগো গোপাল নিশি হ’ল ভোর,
কাঁদে ভোরের তারা হেরি’ তোর ঘুম-ঘোর॥
দামাল ছেলে তুই জাগিস্নি তাই
বনে জাগেনি পাখি ঘুমে মগ্ন সবাই,
বাতাস নিশ্বাস ফেলে খুঁজিছে বৃথাই
তোর বাঁশরি লুটায়ে কাঁদে আঙিনায় মোর॥
তুই উঠিস্নি ব’লে দেখ রবি ওঠেনি
ঘরে আনন্দ নাই, বনে ফুল ফোটেনি।
ধোয়াবে বলিয়া তোর মুখের কাজল
থির হ’য়ে আছে ঘাটে যমুনার জল,
অঞ্চল-ঢাকা মোর, ওরে চঞ্চল,
আমি চেয়ে আছি কবে ঘুম ভাঙিবে তোর॥
*৭৭৪. তাল:কাহার্বা
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে।
আমি কাঁটা হয়ে রই নাই বন্ধু তোমার পথের তলে॥
আমি তোমায় ফুল দিয়েছি কন্যা তোমার বন্ধুর লাগি’
যদি আমার শ্বাসে শুকায় সে ফুল তাই হলাম বিবাগী।
আমি বুকের তলায় রাখি তোমায় গো, ওরে শুকায়নি ক’ গলে॥
(ওই) যে-দেশ তোমার ঘর রে বন্ধু সে দেশ হতে এসে,
আমার দুখের তরী দিছি ছেড়ে, (বন্ধু) চলতেছে সে ভেসে।
এখন যে-পথে নাই তুমি বন্ধু গো, তরী সেই পথে মোর চলে॥
*৭৭৫. রাগ: ভৈরবী, তাল: দাদ্রা
তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি হেরিতে যে নিতি পাই তোমায়।
তোমার রূপের আবছায়া ভাসে গগনে, সাগরে, তরুলতায়॥
চন্দ্রে তোমার মধুর হাস, সূর্যে তোমার জ্যোতি প্রকাশ;
করুণা সিন্ধু তব আভাস বারি-বিন্দুতে হিমকণায়॥
ফোটা ফুলে হরি, তোমার তনুর গোপী-চন্দন গন্ধ পাই,
হাওয়ায় তোমার স্নেহের পরশ অন্নে তোমার প্রসাদ খাই।
রাসবিহারী তোমার রূপ দোলে, দুঃখ শোকের হিন্দোলে,
তুমি, ঠাঁই দাও যবে ধর কোলে মোর বন্ধু স্বজন কেঁদে ভাসায়॥
*৭৭৬. তাল: কাহার্বা
থাক্ এ গৃহ ঘিরিয়া সদা মঙ্গল কল্যাণ হে ভগবান।
দাও পুত পবিত্রতা প্রশান্তি অফুরান, হে ভগবান॥
অন্তরে দেহে দাও বিমল্-জ্যোতি
কর্মে প্রেরণা দাও ধর্মে মতি;
এ গৃহের নারী হোক পুণ্যবতী
বীরত্বে ত্যাগে হোক পুরুষ মহান; হে ভগবান॥
এ গৃহের বারি হোক নির্মল সুশীতল হে ভগবান,
এ গৃহের আলো হোক পুণ্যে সমুজ্জ্বল হে ভগবান।
সকলের সাথে হেথা প্রীতি যেন রয়
যেন নাহি থাকে হেথা রোগ শোক ভয়;
দূর কর হিংসা পাপ সংশয়
সার তব পায়ে নিবেদিত সকলের মনপ্রাণ, হে-ভগবান॥
*৭৭৭. রাগ: সিন্ধু, তাল: কাহার্বা
দুঃখ-ক্লেশ-শোক-পাপ-তাপ শত
শ্রান্তি মাঝে হরি শান্তি দাও দাও॥
কাণ্ডারি হে আমার, পার কর কর পার,
উত্তাল তরঙ্গ অশান্তি পারাবার,
অভাব দৈন্য শত হৃদি-ব্যথা-ক্ষত,
যাতনা সহিব কত প্রভু কোলে তুলে নাও॥
হে দীনবন্ধু করুণাসিন্ধু,
অম্বর ব্যাপি’ ঝরে তব কৃপা-বিন্দু,
মরুর্ মতন চেয়ে আছি নব ঘনশ্যাম-
আকুল তৃষ্ণা ল’য়ে প্রভু পিপাসা মিটাও॥
*৭৭৮. রাগ: আনন্দ ভৈরবী, তাল: কাহার্বা
দেখে যারে রুদ্রাণী মা সেজেছে আজ ভদ্রকালী।
শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে শ্মশান মাঝে শিব-দুলালী॥
আজ শান্ত সিন্ধু তীরে
অশান্ত ঝড় থেকেছে রে,
মা’র কালো রূপ উপছে পড়ে ছাপিয়ে ভুবন গগন-ডালি॥
আজ অভয়ার ওষ্ঠে জাগে শুভ্র করুণ শান্ত হাসি,
আনন্দে তাই বসন ফেলি’ মহেন্দ্র ঐ বাজায়-বাঁশি,
ঘুমিয়ে আছে বিশ্ব ভুবন
মায়ের কোলে শিশুর মতন,
পায়ের লোভে মনের বনে ফুল ফুটেছে পাঁচমিশালী॥
৭৭৯. তাল: কাহার্বা
ব্রজপুর-চন্দ্র পরমসুন্দর, কিশোর লীলা-বিলাসী
সখি গো, আমি তা’রই চিরদাসী।
অমৃত-রস-ঘন শ্যামল শোভন, প্রেম-বৃন্দাবন-বাসী॥
চাঁচর চিকুরে শিখী-পাখা যার,
গলে দোলে বন-কুসুম হার
ললাটে তিলক, কপোলে অলক অধরে মৃদু মৃদু হাসি॥
মকর কুণ্ডল দোলে শ্রবণে,
বোলে মণি-মঞ্জরি রাতুল চরণে
চির অশান্ত, চপল কান্ত বিশ্ব সে রূপ পিয়াসি॥
বক্ষে শ্রীবৎস কৌস্ত্তভ শোভে,
করে মুরলী ভোলে মধুর রবে,
পীত বসনধারী সেই মাধবে যেন যুগে যুগে ভালবাসি॥
*৭৮০. তাল: দাদ্রা
মা কবে তোরে পারব দিতে আমার সকল ভার।
ভাবতে কখন পারব মাগো নাই কিছু আমার॥
কারেও আনিনি মা সঙ্গে ক’রে
রাখতে নারি কারেও ধ’রে
তুই দিস, তুই নিস্ মা হ’রে (আমার) কোথায় অধিকার॥
হাসি খেলি, চলি, ফিরি ইঙ্গিতে মা তোরই,
তোরই মাঝে লভি, তোরই মাঝে মরি।
পুত্র-মিত্র-কন্যা-জায়া,
মহামায়া তোরই মায়া,
মা তোর লীলার পুতুল আমি ভাবতে দে এবার॥
*৭৮১. তাল: ফের্তা
উভয়ে : মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে দূর দ্বারকায় বৃন্দাবনে।
স্ত্রী+উভয়ে : মোর মন হ’তে চায় ব্রজের রাখাল খেলতে রাখাল-রাজার সনে॥
স্ত্রী : রূপ ধরে না বিশ্বে যাহার
দেখতে সাধ যায় কিশোর-রূপ তার
পুরুষ : কেমন মানায় নরের রূপে অনন্ত সেই নারায়ণে॥
স্ত্রী : সাজ্ত কেমন শিখী-পাখা বাজ্ত কেমন নূপুর পায়ে,
পুরুষ : থির কেমন থাক্ত ধরা নাচ্ত যখন তমাল-ছায়ে।
উভয়ে : মা যশোদা বাঁধ্ত যখন কাঁদ্ত ভগবান কেমনে॥
স্ত্রী : সাজ্ত কেমন বন-মালায় বিশ্ব যাহার অর্ঘ্য সাজায়;
পুরুষ : যোগী-ঋষি পায় না ধ্যানে গোপ-বালা কেমনে পায়।
উভয় : তেম্নি ক’রে কালার প্রেমে সব খোয়াব এই জীবনে॥
*৭৮২. রাগ: মিশ্র বাগেশ্রী, তাল: ত্রিতাল
শ্যামা তোর নাম যার জপমালা তার কি মা ভয় ভাবনা আছে।
দুঃখ-অভাব-রোগ-শোক-জরা লুটায় মা তার পায়ের কাছে॥
যার চিত্ত নিবেদিত তোর চরণে,
ওমা কি ভয় তাহার জীবনে মরণে।
যেমন খেলে শিশু মায়ের সম তোর অভয় কোলে সে তেমনি নাচে॥
রক্ষামন্ত্র যার শ্যামা তোর নাম,
সকল বিপদ তারে করে প্রণাম।
সদা প্রসন্ন মন তার ধ্যানে মা তোর,
ভূমানন্দে মা গো রহে সে বিভোর।
তার নিকটে আসিতে নারে কালো কঠোর তব নাম প্রসাদ সে লভিয়াছে॥
*৭৮৩. তাল: কাহার্বা
দ্বৈত : ওগো নন্দ দুলাল নাচে ছন্দতালে
স্ত্রী : মধু মঞ্জির বোলে মণি কুন্তল দোলে
পুরুষ: চন্দন লেখা শোভে চারুভালে॥
স্ত্রী : রস যমুনায় জাগে ঢেউ উতরোল
পুরুষ: ব্রজগোপিকার প্রাণে লাগে তারি হিল্লোল
দ্বৈত : রাস পূর্ণিমা রাতে শিখী নাচে সাথে সাথে
ফুল দোলে কুঞ্জেরই বকুল ডালে॥
স্ত্রী : নাচে নন্দ দুলাল বাজে মোহন বেণু
পুরুষ: অঙ্গের লাবনিতে আলো করে অবনিতে
দ্বৈত : হাসিতে ঝরায় ফুল পরাগ রেণু।
স্ত্রী : রাঙা পায়ে রুমুঝুমু বাজে মধুর
পুরুষ: জীবন মরণ তার যুগল নূপুর
দ্বৈত : মুগ্ধ তারকা শশী রাতের দেউলে বসি
আরতি প্রদীপ শিখা নিত্য জ্বালে॥
৭৮৪. তাল: দাদ্রা
(মা) ওমা তোর ভুবনে জ্বলে এত আলো
আমি কেন অন্ধ মাগো দেখি শুধু কালো॥
মা সর্বলোকে শক্তি ফিরিস নাচি
ওমা আমি কেন পঙ্গু হয়ে আছি
ওমা ছেলে কেন মন্দ হল জননী যার ভালো॥
তুই নিত্য মহা প্রসাদ বিলাস কৃপার দুয়ার খুলি
চির শূন্য রইল কেন আমার ভিক্ষা ঝুলি।
বিন্দু বারি পেলাম না মা সিন্ধুজলে রয়ে
মা ও তোর চোখের কাছে পড়ে আছি চোখের বালি হয়ে
মোর জীবন্মুত এই দেহে মা চিতার আগুন জ্বালো॥
*৭৮৫. তাল: ফের্তা
ওরে দেখে যা তোরা নদীয়ায়
গোরার রূপে এলো ব্রজের শ্যামরায়॥
মুখে হরি হরি বলে
হেলে দুলে নেচে চলে
নরনারী প্রেমে গলে ঢলে পড়ে রাঙা পায়॥
ব্রজে নূপুর পরি নাচিতে এমনি হরি
কূল ভুলিয়া সবে ছুটিত এমন করি
শচীমাতার রূপে কাঁদিছে মা যশোদা
বিষ্ণু প্রিয়ার চোখে কাঁদে কিশোরী রাধা
নহে নিমাই নিতাই ও যে কানাই বলাই
শ্রীদাম সুদাম এলো জগাই মাধাই-এ হায়॥
আজ এসেছে ভুবন ভুলাতে অসি নাই বাঁশি নাই
ও ভাই এবারে শূন্য হাতে এসেছে ভুবন ভুলাতে।
ও ভাই লীলা পাগল এলো প্রেমে মাতাতে
ডুবু ডুবু নদীয়া বিশ্ব ভাসিয়া যায়॥
*৭৮৬. নাটক: ‘আলেয়া’, রাগ: পিলু, তাল: দাদ্রা
কে দুয়ারে এলে মোর তরুণ ভিখারি
কি যাচে ও আঁখি বুঝিতে যে নারি॥
হৃদি প্রাণ মন বিভব রতন
ডারিনু চরণে লহ পথচারী॥
দুয়ারে মোর নিতি গেয়ে যায় যে গীতি
নিশিদিন বুকে বেঁধে তারি স্মৃতি।
কি দিয়ে এ ব্যথা নিবারিতে পারি॥
মিলন বিরহ যা চাও প্রিয় লহ
দাও ভিখারিনী বেশ দাও ব্যথা অসহ
মোর নয়নে দাও তব নয়ন বারি॥
*৭৮৭. নাটিকা: ‘বিয়ে বাড়ি’, তাল: কাহার্বা
পুরুষ : কোন্ ফুলেরি মালা দিই তোমার গলে লো প্রিয়া
বুলবুল গাহিয়া উঠে তব ফুলেল পরশ নিয়া॥
স্ত্রী : হাতে দিও হেনার গুছি কেশে শিরিন ফুল।
কর্ণে দিও টগর কুঁড়ি অপ্রাজিতার দুল।
কুন্দকলির মালা দিও নাই পেলে বকুল
ফুলের সাথে হৃদয় দিতে হয় না যেন ভুল॥
পুরুষ : কোন ভূষণে রানী ও রূপের করি আরতি
হয় সোনার বরণ মলিন হেরি তোমার রূপের জ্যোতি।
স্ত্রী : তোমার বাহুর বাঁধন প্রিয় সেই তো গলার হার
হাতে দিও মিলন রাখি খুলবে না যা আর।
কানে দিও কানে কানে কথার দু’টি দুল
নিত্য নূতন ভূষণ দিও প্রেমের কামনার॥
পুরুষ : কোন নামেতে ডাকি সাধ না মেটে কোনো নামে
তব নাম-গানে সব কবি হার মানে ধরাধামে।
স্ত্রী : সুখের দিনে সখি ব’লো সেই তো মধুর নাম
দুখের দিনে বন্ধু ব’লে ডেকো অবিরাম।
নিরালাতে রানী বলো শ্রবণ অভিরাম
বুকে চেপে প্রিয়া ব’লো সেই তো আমার নাম॥
*৭৮৮. নাটিকা: ‘বিয়ে বাড়ি’, তাল: ফের্তা
চাও চাও চাও নব বধূ অবগুণ্ঠন খোলো
আনত নয়ন তোলো॥
আমি যে ননদী খরতর নদী লজ্জা কি
লজ্জায় ফুল শয্যায় কাল ছিল না তো নত ওই আঁখি
সবি বলে দেব যদি বউ কথা না বলো॥
‘বউ কথা কও’ ডাকে পাখি
তবুও নীরব রবে নাকি
দেখি দেখি গালে লালী ও কিসের? ও! লজ্জায় বুঝি লাল হলো॥
ও কি অধীর চরণে যেয়ো না যেয়ো না
আন-ঘরে লুকাইতে দেখে যদি কেউ
সখি পাশের ও ঘরে মানুষ যে রহে
তারও অন্তরে বহে বিরহের ঢেউ।
লজ্জাই যদি তব ভূষণ সজ্জায় তবে কি প্রয়োজন?
সুখে সুখী হব দুখে দুখী ব’সো মুখোমুখি লাজ ভোলো॥
*৭৮৯. তাল: দাদ্রা
কাঁদবো না আর শচীনলাল তোমায় ডেকে ডেকে
মোরা কাঁদবো না-
(প্রিয়) তুমি গেছ চলে তোমার প্রেম গিয়েছ রেখে
তাই কাঁদব না॥
ত্যাগ যেখানে প্রেম যেখানে
তোমার মধু-রূপ সেখানে
ওগো জগন্নাথের দেউল তোমায় রাখবে কোথায় ঢেকে॥
হল বৈরাগিনী ধরা তোমার চরণ ধূলি মেখে
তোমার মন্ত্র নিল অসীম আকাশ চাঁদের তিলক এঁকে।
সুন্দর যা কিছু হেরি
ওগো রূপ সে শচী-নন্দনেরি
তোমার ডাক শুনি যে আজো হৃদয়পুরীর সাগর থেকে।
তোমার ডাক শুনি যে ওহে প্রিয়
ডাক শুনি যে আজো হৃদয়পুরীর সাগর থেকে॥
৭৯০.
বন্ধু তোমার দুয়ার বন্ধ।
তবু তোমার গৃহের পথে ছুটে কমল-গন্ধ॥
বন্ধু তোমার অলক-উড়া মনে পড়ে মনে পড়ে,
বন্ধু তোমার পুলক ঝরা আজও আছে বক্ষে ঝ’রে।
প্রথম যেদিন দুয়ার খোলা
দেখি তোমায় আপন ভোলা;
রাজপথেতে লোকের মেলা
তুমি আপন সুরে অন্ধ॥
বন্ধু তুমি ভুলে যাওয়া গানের বুঝি সুর
হারিয়ে পাওয়া আলোকপুরের স্বপ্ন সুমধুর,
বন্ধু তোমার হাতের বীণা
তোমার মতই লজ্জাহীনা
তোমার মতই ছিন্ন ভিনা
তোমার মতই হত-ছন্দ॥
*৭৯১. তাল:ফের্তা
গিরিধারী লাল কৃষ্ণ গোপাল যুগে যুগে হ’য়ো প্রিয়
জনমে জনমে বঁধু তব প্রেমে আমারে ঝুরিতে দিও॥
তুমি চির চঞ্চল চির পলাতকা
প্রেমে বাঁধা প’ড়ে হ’য়ো মোর সখা
মোর জাতি কুল মান তনু মন প্রাণ হে কিশোর হ’রে নিও॥
রাধিকার সম কুজার সম রুক্সিণী সম মোরে
গোকুল মথুরা দ্বারকায় নাথ রেখো তব সাথী করে।
গোপনে চেয়ো সব শত গোপীকায়
চন্দ্রাবলী ও সত্যভামায়
তেমনি হে নাথ চাহিও আমায় লুকায়ে ভালোবাসিও॥
*৭৯২. তাল: দাদ্রা
(মা) ওমা তুই আমারে ছেড়ে আছিস আমি তাই হয়েছি লক্ষ্মীছাড়া
ও তোর কৃপা বিনা শক্তিময়ী শুকিয়ে গেল ভক্তিচারা॥
ওমা তুই আশ্রয় দিলি না তাই, আমি যা পাই তা পথে হারাই
তোর রসময় ভুবন আমার শ্মশান হল ওমা তারা॥
আজ আনন্দ যমুনা ফেলে এসেছি তাই যমের দ্বারে
ওমা জীবনে যা পেলাম না তা মরণ যদি দিতে পারে।
মাগো ওমা তত বাড়ে বুকের জ্বালা, পাই যত যশ খ্যাতির মালা
রাজপ্রসাদে শুয়ে মাগো শান্তি কি পায় মাতৃহারা॥
*৭৯৩. তাল: দাদ্রা
দীনের হতে দীন দুঃখী অধম যেথা থাকে
ভিখারিনী বেশে সেথা দেখেছি মোর মাকে
মোর অন্নপূর্ণা মাকে॥
অহংকারের প্রদীপ নিয়ে স্বর্গে মাকে খুঁজি
মা ফেরেন ধূলি পথে যখন ঘটা করে পূজি
ঘুরে ঘুরে দূর আকাশে প্রণাম আমার ফিরে আসে
যথায় আতুর সন্তানে মা কোল বাড়ায়ে ডাকে॥
নামতে নারি তাদের কাছে সবার নীচে যারা
তাদের তরে আমার জগন্মাতা সর্বহারা।
অপমানের পাতাল তলে লুকিয়ে যারা আছে
তোর শ্রীচরণ রাজে সেথা না মা তাদের কাছে
আনন্দময় তোর ভুবনে আনব কবে বিশ্বজনে
আমি দেখব জ্যোতির্ময়ী রূপে সেদিন তমসাকে
আমার অন্নপূর্ণা মাকে॥
*৭৯৪. তাল: দাদ্রা
দুঃখ অভাব শোক দিয়েছ হে নাথ তাহে দুঃখ নাই
তুমি যেন অন্তরে মোর বিরাজ করো সর্বদাই॥
রোগের মাঝে অশান্তিতে
তুমি থেকো আমার চিতে
তোমার নামের ভজন গীতে প্রাণে যেন শান্তি পাই॥
দুর্দিনেরি বিপদ এলে তোমায় যেন না ভুলি
তোমার ধ্যানে পর্বত প্রায় অটল থাকি, না দুলি।
সুখের দিনে বিলাস ঘোরে
ভুলতে নাহি দিও মোরে
আপনি ডেকে নিও কোলে দূরে যদি সরে যাই॥
*৭৯৫. রাগ: গৌড় সারং, তাল: একতাল
দুঃখ সাগর মন্থর শেষ ভারতলক্ষ্মী আয় মা আয়
কবে সে ডুবিলি অতল পাথারে উঠিলি না আর হায় মা হায়॥
মন্থনে শুধু উঠে হলাহল
শিব নাই পান কে করে গরল
অমৃত ভাণ্ড লয়ে আয় মাগো জ্বলিয়া মরি বিষের জ্বালায়॥
হরিৎ ক্ষেত্রে সোনার শস্যে দুলে না আর তোর আঁচল
শুকায়েছে মাগো মায়ের স্তন্য গভীর দুগ্ধ নদীর জল।
চাই না মোক্ষ চাই মা বাঁচিতে
অক্ষয় আয়ু লয়ে ধরণীতে
চাই প্রাণ চাই ক্ষুধায় অন্ন মুক্ত আলোকে মুক্ত বায়॥
*৭৯৬. তাল: ফের্তা
দে দোল দে দোল্ ওরে দে দোল্ দে দোল্
জাগিয়াছে ভারত সিন্ধু তরঙ্গে কল-কল্লোল॥
পাষাণ গলেছে রে অটল টলেছে রে
জেগেছে পাগল রে ভেঙেছে আগল॥
বন্ধন ছিল যত হল খানখান রে
পাষাণ পুরীতে ডাকে জীবনেরি বান রে
মৃত্যু ক্লান্ত আজি কুড়াইয়া প্রাণ রে
দুর্মদ যৌবন আজি উতরোল॥
অভিশাপ রাত্রির আয়ু হল ক্ষয় রে
আর নাহি অচেতন আর নাহি ভয় রে
আজও যাহা আসেনি আসিবে সে জয় রে
আনন্দ ডাকে দ্বারে খোল দ্বার খোল॥
*৭৯৭. তাল: দ্রুত-দাদ্রা
নন্দ দুলাল নাচে নাচে রে হাতে সরের নাড়ু নিয়ে নাচে
ব্রজের গোপাল নাচে নাচে রে হাতে সরের নাড়ু নিয়ে নাচে
ওসে হাতের নাড়ু মুখে ফেলে, আড় চোখে চায় হেলে দুলে
যথায় গোপীর ক্ষীর নবনী দইয়ের হাঁড়ি আছে॥
শূন্য দু হাত শূন্যে তুলে দেয় সে করতালি বলে তাই তাই তাই
নন্দ পিতায় কয় ইশারায় নাই ননী নাই
নন্দ ধরতে গেলে যায় পিছিয়ে
মুচকি হেসে যায় এগিয়ে যশোমতীর কাছে রে॥
কহে শিউরে উঠে শিমুল ফুল নাচ রে গোপাল নাচ নাচ রে
নাচ রে গোপাল নাচ
সারা গায়ে ঘুঙুর বেঁধে নাচে ডুমুর গাছ রে
নাচ রে গোপাল নাচ
শিমুল গায়ে নাচে সুখে কাঁটা দিয়ে উঠে ফুল ফোটে মরা গাছে॥
নাচ ভুলে সে থমকে দাঁড়ায়
মার চোখে জল দেখতে সে পায় রে
ননী মাখা দু হাত দিয়ে চোখ মুছিয়ে লুকায় বুকের কাছে॥
*৭৯৮. তাল: দাদ্রা
প্রভু তোমাতে যে করে প্রাণ নিবেদন ভয় নাহি আর তার
শত সে বিপদে আপদে তাহার হাত ধরে কর পার॥
তার দুঃখে শোকে ভাবনায় ভয়ে
তব নাম রাজে সান্ত্বনা হয়ে
পার হয়ে যায় তব নাম লয়ে দুস্তর পারাবার॥
ঝড় ঝঞ্ঝায় প্রাণ শিখা তার শান্ত অচঞ্চল
টলমল করে রূপে রসে তার জীবনের শতদল।
যেমন পরম নির্ভরতায়
শিশু তার মার বক্ষে ঘুমায়
তোমারে যে পায় সে জন তেমনি ডরে নাহি সংসার॥
*৭৯৯. তাল: কাহার্বা
মাধব গোবিন্দ শ্রীকৃষ্ণ মুরারি॥
কহ নাম মুখে গাহ সুখে দুখে
মণিহারই করে গেঁথে রাখ বুকে
গোলকে হরি তার সখা সাথী প্যারী॥
পেল না ব্রহ্মা শিব ধেয়ানে যাহারে
বাঁধিল গোকুলে গোয়ালিনী তারে
যুগে যুগে সে যে প্রেমের ভিখারি॥
লীলা রসে তাহার ডুবে রও অবিরাম
এ সংসার হবে রে সুমধুর ব্রজধাম
ধরিবেন হৃদয়ে তোরে গিরিধারী॥
*৮০০. তাল: কাহার্বা
প্রভু সংসারেরি সোনার শিকল বেঁধো না আর পায়
তোমার প্রেম ডোরে ত্রিভুবন স্বামী বাঁধ হে আমায়॥
সারা জীবন বোঝা বয়ে, এসেছি আজ ক্লান্ত হয়ে
জুড়াতে হে শান্তি দাতা তোমার শীতল ছায়॥
হে নাথ যতদিন শক্তি ছিল বোঝা বহিবার
হাসি মুখে বয়েছি নাথ তোমার দেওয়া ভার।
শেষ হল আজ ভবের খেলা, কি দান দেব যাবার বেলা
তোমার নামের ভেলায় যেন এ দীন তরে যায়॥