বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: ঈদজ্জোহার তকবির শোন ঈদগাহে
ঈদজ্জোহার তকবির শোন ঈদগাহে!
(তোর) কোরবানিরই সামান নিয়ে চল্ রাহে॥
কোরবানির রঙে রঙিন পর লেবাস্
পিরহানে মাখ্রে ত্যাগের গুল্-সুবাস,
হিংসা ভুলে প্রেমে মেতে
ঈদগাহেরই পথে যেতে দে মোবারকবাদ দ্বীনের বাদ্শাহে॥
খোদারে দে প্রাণের প্রিয়, শোন্ এ ঈদের মাজেরা
যেমন পুত্র বিলিয়ে দিলেন খোদার নামে হাজেরা,
ওরে কৃপণ, দিস্নে ফাঁকি আল্লাহে॥
তোর পাশের ঘরে গরীব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তারে ফেলে ঈদ্গাহে যাস্ সঙ সেজে,
তাই চাঁদ উঠ্ল, এলো না ঈদ্
নাই হিম্মৎ, নাই উম্মিদ,
শোন্ কেঁদে কেঁদে বেহেশ্ত হ’তে হজরত আজ কি চাহে॥
- ভাবসন্ধান: এই গানটি ঈদজ্জোহার জন্য রচিত হয়েছিল। তকবির হলো- একটি
ইসালামিক পারিভাষিক শব্দ। আল্লাহু আকবর (আল্লাহ সবচেয়ে মহান), উচ্চস্বরে ঘোষণাকে
তকবির বলা হয়। ঈদগাহে এই ধ্বনি সমস্বরে উচ্চারিত হয়ে থাকে। এই গানের স্থায়ীতে বলা
হয়েছে -ঈদজ্জোহার তকবির শোন ঈদগাহে। উল্লেখ্য, 'ঈদজ্জোহার তকবির' নামে পৃথক কোনো
তকবির নেই। সাধারণভাবে মুসলমানরা নানাক কারণে আল্লাহু আকবর উচ্চকণ্ঠে সমস্বরে
উচ্চারণ করে থাকেন।
স্থায়ীতে এই ঈদের জন্য সামান (সরঞ্জাম) নিয়ে কোরবানির রাহে (পথে) যাওয়ার অনুরোধ রাখা
হয়েছে। কারণ এই ঈদের লক্ষ্য কোরবানি দেওয়া। সকল লোভ-লালসা, পাপের বিসর্জন এবং
আল্লাহর নামে নিজেকে উৎসর্গ করা হলো- কোরবানি। কোরবানির মধ্য দিয়ে আত্মা হয়ে ওঠে
পবিত্র ও বর্ণাঢ্য। কবি এই গানে মুসলমানদের কোরবানির সেই ত্যাগের রঙে পরনের পোশাক
রঞ্জিত করার জন্য এবং ত্যাগের গোলাপসম সৌরভে পোশাককে সুগন্ধিত করা জন্য আহ্বান
করেছেন এই গানের মাধ্যমে। উচ্চ-নীচ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মহামিলনের আনন্দে ঈদের মাঠে
যেতে আহ্বান করেছেন। যাওয়ার পথে মোবারকবাদ দ্বীনের বাদ্শাহ (আল্লাহর) নামে তকবির
দেওয়ার জন্য অনুরোধ রেখেছেন। কবি ঈদের মাঠে যাওয়া জন্য আমজনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন এই
ঈদের মাজেরা (ঘটনা)। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ইব্রাহিম (আঃ)-এর ঔরসজাত এবং
হাজেরার গর্ভজাত সন্তান ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লার জন্য কোরবানি দেওয়ার মহিমার কথা।
এই মহিমাকে অনুসরণ করে মুসলমানরা কোরবাণী করুক এমনটা চেয়েছেন কবি। কৃপণতা না করে,
তাঁরা আল্লার পথে সব কিছু বিসর্জন দিক- এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন কবি।
যার পাশের ঘরের গরীব কাঙাল দারিদ্রের কশাঘাতে কাঁদছে, তাকে ঘরে ফেলে রেখে কি করে
একজন মুসলমান সঙ সেজে ঈদগাহে যায়- কবি তা ভেবে উঠতে পারেন না। ঈদ হলো মহামিলনের
আনন্দের দিন। যদি মহামিলন না হয়, তাহলে ঈদের চাঁদ উঠলেও ঈদ আসে না। ত্যাগের
সাহস নাই, বেহশতের উম্মিদ (আশা) নাই, বেহেশত হতে নবি তাই যেন বিষাদিত চোখে দেখেন।
তাঁর প্রত্যাশা ত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁর উম্মত হয়ে উঠুক মহীয়ান। তা ঘটে না বলেই, কবি
তাঁর কল্প ভাবনায় অনুভব করেন, বেহেশ্ত হতে নবির ক্রন্দসী চোখের চাহনি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে
কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন্ ১৩৪৪) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির
প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৮ মাস।
- পাণ্ডুলিপি:
মূল পাণ্ডুলিপি
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২০১২)। ১১৪৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৫০
- রেকর্ড: এইচএমভি।
ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮। এন ১৭০৪৬। শিল্পী: মহম্মদ কাসেম ও সঙ্গীরা
- বেতার: ঈদজ্জোহা। গীতিআলেখ্য।
কলকাতা বেতারকেন্দ্র। [৯ জানুয়ারি ১৯৪১ (বৃহস্পতিবার ২৫ পৌষ ১৩৪৭)।
রাত ৮.০৫ -৮.৩৯ মিনিট।
[সূত্র: বেতার জগৎ। ১২বর্ষ ১ম সংখ্যা। ১ জানুয়ারি, ১৯৪১। পৃষ্ঠা: ৪২]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামী গান। মহিমা। ঈদ। ঈদজ্জাহা।