বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: এলো শোকের সেই মোহর্রম কারবালার স্মৃতি ল'য়ে
এলো শোকের সেই মোহর্রম কারবালার স্মৃতি ল’য়ে।
কাঁদিছে বিশ্বের মুসলিম সেই ব্যথায় বেতাব হয়ে॥
মনে পড়ে আসগরে আজি পিয়াসা দুধের বাচ্চায়
পানি চাহিয়া পেল শাহাদৎ হোসেনের বুকে র’য়ে॥
একহাতে বিবাহের কাঙন একহাতে কাশেমের লাশ,
বেহোঁশ্ খিমাতে সকিনা অসহ বেদনা স’য়ে॥
পাশে শহীদ বীর জব্বার পানির মশক মুখে
হল শহীদ কাঁদে জয়নব কুলসুম আকুল হয়ে॥
শূন্য পিঠে কাঁদে দুলদুল্ হজরত হোসেন শহীদ্,
ঝরিতেছে শোকের বারিষ্ আসমান জমিন ছেয়ে॥
- ভাবসন্ধান: ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা হজরত মুহম্মদ সাঃ-এর কন্যা ফাতিম
রাঃ এবং ইসলাম ধর্মের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রাঃ-এর পুত্র ইমাম হুসাইন রাঃ মহররম মাসের ১০ তারিখ কারবালা প্রান্তরে
তিনি ও তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন। ইসলাম ধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছেও এটি একটি
শোকাবহ ঘটনা হিসেবে স্মরিত হলেও- ইসলাম ধর্মের শিয়া মতালম্বীরা তাঁর এই
মৃত্যুকে বিশেষ শোকাবহ ঘটনা হিসেবে স্মরণ করে থাকেন। মূলত এই শোকাবহ ঘটনার
বিলাপই শোকগাঁথা হয়ে এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে।
বৎসরান্তে কারবালার সংঘটিত শোকাবহ ঘটনার সাক্ষী হয়ে আসে মোহর্রম মাস। এই মাসে কারবালার সেই
শোকাবহ ঘটনাকে স্মর্ণ করে থাকেন বিশ্বের মুসলমানেরা। এই গানে স্মরণ করা হয়েছে ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর
ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগর রাঃ-এর কথা। জলহীন কারবালা প্রান্তরে পিপাসর্ত
এই শিশুকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় কাহিনি হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে- ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর ভাতিজা কাসিমকে (হোসাইন রাঃ -এর ভাই ইমাম হাসান,
রাঃ এর পুত্র)। তিনি কারবালার যুদ্ধে ১৩ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধের
মধ্যে ইমাম হোসাইন রাঃ-এর কন্যা সখিনার সাথে তাঁর বিবাহ দেওবা হয়েছিল। সখিনার এক হাতে ছিল
তাঁর বিবাহের কঙ্কন, অন্য হাতে ছিল তাঁর স্বামী কাশেমের লাশ। বেহোশ
খিমাতে (বিবাহের পোশাকে অসচেতন দশা) অসহ্য বেদনা তিনি সহ্য করেছিলেন। তাঁর পাশে
ছিল জব্বার নামক অপর এক বীর শহিদ। তিষ্ণার্ত এই বীরের মুখে ছিল পানিহীন মশক।
সম্ভবত তিনি পিপাসায় শহিদ হয়েছিল। এঁদের ব্যথায় ব্যথিতা হয়ে আর্তনাদ করেছিলেন
জয়নব (হযরত আলী রাঃ ও ফাতেমা রাঃ-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা) ও কুলসুম (হযরত আলী রাঃ ও ফাতেমা রাঃ-এর
চতুর্থ ও কনিষ্ঠ কন্যা)। হোসাইন রাঃ-এর শহিদ হওয়ার পর, তাঁর ঘোড়া দুলদুল শূন্য
পিঠে আর্তনাদ করেছিল।
এসব ঘটনার সাক্ষী মোহরম। তাই মহরম এলেই যেন আসমান আচ্ছন্ন হয়ে শোকের মেঘে। ঝরে
পড়ে শোকের অশ্রুবৃষ্টি।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (চৈত্র-১৩৩৯-বৈশাখ ১৩৪০)
মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩
বৎসর ১০
মাস।
- গ্রন্থ:
-
গুলবাগিচা।
- প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। ইসলামী গান। মর্শিয়া।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা।
জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। ইসলামী গান। মর্শিয়া। গান সংখ্যা ৭৫। পৃষ্ঠা: ২৭১
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২]। গান সংখ্যা ১১৮৪
- পত্রিকা: মোহাম্মদী [জ্যৈষ্ঠ ১৩৪০ (মে-জুন ১৯৩৩)]
- রেকর্ড: এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৩৩ (চৈত্র-১৩৩৯-বৈশাখ ১৩৪০)]। এন ৭১০১। শিল্পী
মোহাম্মদ কাশেম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
আহসান মুর্শেদ
[নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, চল্লিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা।
জ্যৈষ্ঠ
১৪২৩ বঙ্গাব্দ/ জুন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ] গান সংখ্যা ৬। পৃষ্ঠা: ৪০-৪৩।
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামি। মর্সিয়া
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সুর