বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: খেলো না আর আমায় নিয়ে, প্রিয় অলস খেলা
খেলো
না আর আমায় নিয়ে, প্রিয় অলস খেলা।
নিঠুর খেলা খেল এবার ফুরায় খেলার বেলা॥
(তুমি) অন্ধকারের আড়াল হতে
লও হে টানি' বাহির পথে,
চঞ্চলতার বিপুল স্রোতে, দাও ভাসাতে ভেলা॥
(তুমি) সবার চেয়ে ভালোবাসো, আঘাত যারে হানো,
স্মরণ যারে করো তারে মরণ টানে টানো।
ঠাঁই যারে দাও চরণ-তলে
ভোলাও না তায় সুখের ছলে,
মালার নামে দাও না গলে তোমার অবহেলা॥
- ভাবসন্ধান: পরমসত্তার কাছে কবির আকুল নিবেদন, তিনি
যেন তাঁকে নিয়ে আর নিষ্ঠুর খেলা না খেলেন। সারাজীবন ধরে তিনি পরমসত্তার এই খেলার
পাত্র হয়ে নিজেকে নিঃশেষ করেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে ক্লান্ত কবি এই খেলা
থেকে মুক্তি পেতে চান।
পরমাসত্তার কাছে তাঁর প্রার্থনা, যেন তিনি অজ্ঞানতা, মোহ, জড়তার অন্ধকার থেকে
তাঁকে মুক্ত করেন। সত্য, সুন্দর কর্মময় জীবনের মুক্তির পথে, যেন
তিনি তাঁকে লক্ষের ভেলা চালিত করার শক্তি দেন।
কবি মনে করেন, পরমসত্তা যাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই যেন তিনি বেশী আঘাত করেন,
যাকে তিনি তাঁর মনে স্থান দেন, তাঁকেই যেন মৃত্যুর টানে কাছে টেনে নেন।
মূলত পরমসত্তা আঘাত (দুঃখ, কষ্ট, পরীক্ষা) হলো- ভক্তের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা
ও আশীর্বাদের স্বরূপ। এই আঘাতের মাধ্যমেই ভক্তের ভিতরের কলুষতা দূর হয় এবং তিনি
শুদ্ধ হন। যাকে তিনি স্মরণ করেন বা ভালোবাসেন, তাঁকে মরণের পথে টেনে নিয়ে
জীবনের চূড়ান্ত সত্যের মুখোমুখি করান।
যাঁকে তিনি নিজের
পায়ে ঠাঁই দেন, তাঁকে কখনও ভুলিয়ে দেন না সুখ বা মোহের ছলে। কবি চান,
পরমসত্তা তাঁকে তাঁর চরণতলে দীন ও বিনয়ী করে রাখুন।
তিনি যদি কবিকে মালা পরিয়ে লোকসমাজে প্রতিষ্ঠা দেন, তাতে গৌরবের কিছু নেই। বরং
তাঁকে অবহেলা করে মালা দেন না। তাই কবির কাছে পরমসত্তার পায়ে আশ্রয় নিয়ে প্রকৃত শান্তি ও মুক্তির পথে চলাটা
তাঁর প্রকৃত জীবনদর্শনের অঙ্গীকার রূপে প্রতিভাত হয়েছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ), এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানির সাথে কয়েকটি গান প্রকাশের জন্য নজরুলের একটি চুক্তি হয়। এই
চুক্তিপত্রে এই গানটির উল্লেখ ছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২০১২)। ১২৪৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৭৮।
- নজরুলের হারানো গানের খাতা
[নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭।
গান সংখ্যা ৩৭। for Bindubala Sengupta
কেটে দিয়ে লেখা হয়েছে
for K.gupta। ভজন। পৃষ্ঠা ৬৩]
- রেকর্ড: এইচএমভির
সাথে চুক্তিপত্র। [১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ (বুধবার, ১ আশ্বিন ১৩৪২]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। পরমসত্তা। প্রার্থনা