বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে হেরা গিরির 'পরে
ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে হেরা গিরির 'পরে।
শিরে তাঁহার লক্ষ কোটি চাঁদের আলো ঝরে॥
কী অপরূপ জ্যোতির ধারা নীল আসমান হ'তে
নামে বিপুল স্রোতে,
হেরা পাহাড় বেয়ে বহে সাহারা মরু পথে,
সেই জ্যোতিতে দুনিয়া আজি ঝলমল করে॥
আগুন বরণ ফেরেশ্তা এক এসে,
'খোদার হাবিব, জাগো জাগো', বলে হেসে হেসে।
নবুয়তের মোহর দিল বাজুতে তাঁর বেঁধে
তাজিম ক'রে কদমবুসি করে কেঁদে কেঁদে,
সেই নবীরই নামে আজি দুনিয়া দরুদ পড়ে॥
- ভাবসন্ধান: হেরা পর্বতের গুহায় দীর্ঘ দিন
হজরত মুহম্মদ (সাঃ) নবুয়ত লাভ করেন। এই গানে তাঁর নবুয়ত প্রাপ্তি মহিমাকে
উপস্থাপন করা হয়েছে।
আল্লাহকে পাওয়া লক্ষ্যে, নবির সকাতার প্রার্থনাকে এই গানে সোনার চাঁদের (নবি)
ক্রন্দন হিসেবে রূপকার্থে উল্লেখ করা হয়েছে। নবুয়ত প্রাপ্তির পর নবি আল্লাহর
জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলেন অন্তরে বাহিরে। এই গানে ব্যবহৃত জ্যোতি হলো
আল্লাহর মহিমান্বিত রূপ। যা নবির মাধ্যমে উদ্ভাসিত করে তুলেছিল সমগ্র বিশ্বকে।
কবি এই জ্যোতির্ময় মহিমাকে নবির মাথায় ঝরে পড়া লক্ষ কোটি চাঁদের আলোর সাথে
তুলনা করেছেন। সে জ্যোতির নীলাকাশ হতে নেমে এসেছিল- বিপুল স্রোতধারায়। হেরা
পাহাড়ের সেই ধ্যান-সাধন ক্ষেত্রে থেকে সে জ্যোতি শুষ্ক সাহারা মরুর পথ ধরে সারা
পৃথিবীর মানুষের শুষ্ক হৃদয়কে সঞ্জীবিত করেছিল। তাই সারা পৃথিবী আজ সেও জ্যোতির
মহিমায় ঝলমল করছে।
নবয়ত প্রাপ্তি লগ্ন এক আগুন বরণ ফেরেশতা (জিব্রাইল আঃ) ধ্যনমগ্ন নবিকে খোদার
হাবিব (আল্লাহর বন্ধু) সম্বোধনে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন
নবুয়তের মোহর। উল্লেখ্য এখানে 'নবুয়তের মোহর' বলতে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুয়তের চিহ্ন।
অনেকের মতে, নবির কাঁধের কাছে তিলের মতো একটি চিহ্ন ছিল নবুয়তের চিহ্ন। এই
গানের 'নবুয়তের মোহর' বলতে সাধারণত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পিঠের উপরের অংশে, দুই কাঁধের মাঝে অবস্থিত একটি মাংসপিণ্ডকে বোঝানো হয়েছে।
'তাজিম করে কদম্বুসি করে কেঁদে কেঁদে' এই অংশে নবীর প্রতি ভক্তি এবং শ্রদ্ধার সাথে তাঁর পায়ের কাছে নত হওয়া ও ক্রন্দনরত অবস্থার চিত্রই
উপস্থাপন করা হয়েছে। সবশেষে বলা হয়েছে 'সেই নবিরই নামে আজি দুনিয়ার সকল
মুসলমানরা দরুদ পাঠ করে'। এই অংশে সকল সৃষ্টির তাঁর প্রতি দরুদ (সালাত) পাঠের মাধ্যমে সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড করা হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ৯ মাস।
- গ্রন্থ:
-
জুলফিকার
- দ্বিতীয়
সংস্করণ [ডিসেম্বর, ১৯৫২ (পৌষ ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ)]
২৭ সংখ্যক গান।
- নজরুল রচনাবলী সপ্তম খণ্ড [কার্তিক
১৪১৯, নভেম্বর ২০১২।
জুলফিকার দ্বিতীয় খণ্ড। ৩। পৃষ্ঠা ৯২]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৩০৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩৯৫।]
- রেকর্ড: টুইন
[মার্চ ১৯৩৮ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৪)। এফটি ১২৩০৫। শিল্পী: আব্দুল লতিফ। সুর: কমল দাশগুপ্ত।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম ধর্ম। মাত-এ রসুল