রাগ: সিন্ধু কাফি, তাল: লাউনি
গুল-বাগিচার বুলবুলি আমি রঙিন প্রেমের গাই গজল।
অনুরাগের লাল শারাব মোর আঁখি ঝলে ঝলমল (হায়)॥
আমার গানের মদির ছোঁয়ায়
গোলাপ কুঁড়ির ঘুম টুটে যায়,
সে গান শুনে প্রেমে-দীওয়ানা কবির আঁখি ছলছল (হায়)॥
লাল শিরাজির গেলাস হাতে তন্বী সাকি পড়ে ঢুলে,
আমার গানের মিঠা পানির লহর বহে নহর-কূলে।
ফুটে ওঠে আনারকলি নাচে ভ্রমর রঙ-পাগল (হায়)॥
সে-সুর শুনে দিশেহারা
ঝিমায় গগন ঝিমায় তারা,
চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা চোখে১ শিশির ল॥১. বনের পাতায়
- ভাবার্থ: পারশ্যের গজলের বিষায়ানুসঙ্গে গানটি রচিত। এই গানে কবি গুলবাগিচা, বুলবুলি, শারাব, সাকি ইত্যাদি রূপকতার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার প্রতি তাঁর গভীর প্রেমকে উপস্থাপন করেছেন। ফলে সন্ধ্যাভাষার আলো-আঁধারের খেলায় গানটি হয়ে উঠেছে রহস্যময়।
কবির কাছে এই জগৎ যেন স্রষ্টার সাজানো নান্দনিক গুলবাগিচা। কবি সে বর্ণবিভূষিত গুলবাগিচার রূপ সন্দর্শনে আত্মহারা হয়ে বুলবুলির মতো গজল গান করেন। স্রষ্টার প্রতি অনুরাগের শরাব (মদিরা) পান করে কবির চোখের অন্ধকার দূরীভূত হয়ে গুলবাগিচা হয়ে ওঠে আলো-ঝলমল।
কবি মনে করেন স্রষ্টার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের ছোঁয়ায় অপ্রস্ফুটিত গোলাপ কুড়ি (হৃদয় গোলাপ) জেগে ওঠে এবং স্রষ্টার প্রেম কবির সাথে একীভূত হয়ে যায়। আর তা অনুভব করে, গভীর অনুরাগে কবির চোখ সজল হয়ে ওঠে।
কবি-হৃদয়ের প্রেম-প্রদায়িনী সাকিও এই গান শুনে যেন প্রেমে বিভোর হয়ে মোহিত হয়ে পড়ে। বাণী ও সুরের বন্ধন এই গান যেন প্রণয়-প্লাবনে সবাইকে আবেশিত করে। স্রষ্টার প্রতি কবির এই সপ্রেম সঙ্গীত-নিবেদন যেন- আনারকলি প্রস্ফুটিত হয়, প্রেমের রঙিন নেশায় ভ্রমর পাগলের মতো নাচে, ঝিমিয়ে পড়ে মহাকাশ ও নক্ষত্র রাজি।