বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: এ কোন্‌ পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মা'র আঙ্গিনায়।
এ কোন্‌ পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মা'র আঙ্গিনায়।
ত্রিশ কোটি ভাই মরণ-হরণ গান গেয়ে তাঁর সঙ্গে যায়॥
           অধীন দেশের বাঁধন-বেদন
            কে এলো রে করতে ছেদন?
শিকল-দেবীর বেদীর বুকে মুক্তি-শঙ্খ কে বাজায়॥
মরা মায়ের লাশ কাঁদে ঐ অভিমানী ভা'য়ে ভা'য়ে
বুক-ভরা আজ কাঁদন কেঁদে আনল মরণ-পারের মায়ে।
            পণ করেছে এবার সবাই
            পর-দ্বারে আর যাব না ভাই!
মুক্তি সে তো নিজের প্রাণে, নাই ভিখারির প্রার্থনায়॥
শাশ্বত যে সত্য তাঁরি ভুবন ভ’রে বাজলো ভেরী,
অসহ্য আজ নিজের বিষেই মরলো ও-তার নাইকো দেরী।
            হিংসুকে নয়, মানুষ হ'য়ে
            আয় রে, সময় যায় যে ব'য়ে!
মরার মতন মরতে, ওরে মরণ ভীতু! ক’জন পায়॥
ইস্‌রাফিলের শিঙ্গা বাজে আজকে ঈশান-বিষাণ সাথে,
প্রলয় রাগে নয় রে এবার ভৈরবীতে দেশ জাগাতে।
            পথের বাধা স্নেহের মাথায়
            পায় দ'লে আয় পায় দ'লে আয়!
রোদন কিসের? আজ যে বোধন-
বাজিয়ে বিষাণ উড়িয়ে নিশান আয় রে আয়॥
'১৯২১ সালের বিরাট অসহযোগ আন্দোলন তখন চলেছিল। তারই জন্যে এই গানটি লেখার অনুরোধ নজরুলকে করা হয়েছিল। সে শুধু গানটি যে লিখেছিল তা নয়, মিছিলে ও মিটিং-এ গানটি সে গেয়েওছিল। আমি যতটা মনে করতে পারছি, গান্ধীজীকে লক্ষ্য ক'রে এটাই ছিল নজরুলের লেখা প্রথম গান। খানিকটা গান্ধীবাদও এই গানের ভিতরে আছে। যেমন, "মুক্তি সে ত নিজের প্রাণে, নাই ভিখারীর প্রার্থনায়।" কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাশও বলেছিলেন যে, স্বরাজ? সে তো প্রাণে প্রাণে অনুভব করার ব্যাপার ! সংজ্ঞা দিয়ে তা কি কখনও বোঝানো যায়? এই গানটির সুর কিন্তু লোকের প্রাণে পৌঁছেছিল। ৭ই জুলাই (১৯২১) তারিখে রথযাত্রার সময়ে নজরুল আর আমি যখন শ্রীইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তদের বাড়ীর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ার গাড়ীতে রথ দেখাতে রাস্তায় বা'র হয়েছিলাম তখন নজরুলকে দেখিয়ে একটি ছোট ছেলে আর একটি ছোট ছেলেকে বলছিল, "দেখ্, ওই পাগল পথিক যাচ্ছে।"

সম্ভবত নজরুল এই সূত্রে , গানটি লিখেছিলেন ৭-৮ জুলাই ১৯২১ (২৩-২৪ আষাঢ় ১৩২৮) তারিখে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২২ বৎসর ১-২ মাস।