নাহি ভয় নাহি ভয় ।
মৃত্যুসাগর মন্থন শেষ, আসে মৃত্যুঞ্জয়॥
কৃষ্ণাতিথির তিমির হরণ
আসিল কৃষ্ণ তিমির বরণ,
জয় হে জ্যোতির্ময়॥
দলিত হৃদয়-শতদলে তাঁর
আঁখি-জল-ঘেরা আসন বিথার।
ব্যথা-বিহারীরে দেখিবি কে আয়,
ধ্বংসের মাঝে শঙ্খ বাজায়,
নিখিলের হৃদি বেদনা-আভায়-
নবীন অভ্যুদয়॥
	ভাবসন্ধান: 
	ঘোর পাপ-পঙ্কিল থেকে শুভ্র সুন্দর 
	জগতের অভ্যুদয়কারী কৃষ্ণের বন্দনা করা হয়েছে এই গানে। যেমন সাগর মন্থন শেষে 
	অমৃতহাতে মৃত্যুঞ্জয়রূপী ধন্বন্তরী উত্থিত হয়েছিল, তেমনি কৃষ্ণের আবির্ভাব 
	ঘটেছিল কংসের ঘোরতর অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার জন্য। কবি,  সেই 
	অভয়দানকারী কৃষ্ণের জয়গান করেছেন এই গানে।
	
	অন্তরাতে, কৃষ্ণের আগমন রূপকতার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ 
	করেছিলেন ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাত্রিতে। তাঁর গাত্রবর্ণ কালো। কিন্তু তিনি 
	আবির্ভূত হয়েছিলেন সকল কৃষ্ণকালিমকে অপরহণ করে জ্যোতির্ময় হয়ে। কবি এই 
	জ্যোতির্ময় অবতারে জয়গান গেয়েছেন।
	
	সঞ্চারী ও আভোগে কবি কৃষ্ণের দুঃখমোচানকারী শুভ শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। 
	কংসের অত্যাচারে জগত-সংসারের বেদনা তাঁর হৃদয়কে করেয়েছে ব্যথাতুর, বেদনা 
	অশ্রুতে সিক্ত হয়েছে তাঁর বিশ্বাসন। তারই ভিতরে বেদনা-বিহারী হিসেবে কৃষ্ণ 
	এসেছিলেন সকল দুঃখ মোচনের জন্য। ধ্বংসের মাঝে তিনি কল্যাণের শঙ্খ বাজিয়েছেন। 
	বিশ্বের মর্মস্থলে ধ্বংসের বেদনার ভিতর দিয়ে শুভ্র-সুন্দর নতুন অভ্যুদয় ঘটে 
	কৃষ্ণের আগমনে, তাঁরই ঘোষক হিসেবে সকলকে কবি এই গানের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের জয়গান 
	করার আহ্বান করেছেন সগৌরবে।