বিষয়: নজরুল সঙ্গীত। 
শিরোনাম: খয়বর-জয়ী আলী হায়দার জাগো জাগো আরবার 
	
         খয়বর-জয়ী আলী হায়দার জাগো জাগো আরবার।
         দাও দুশমন দুর্গ-বিদারী দু'ধারী জুল্ফিকার॥
         এসো শেরে খোদা ফিরিয়া আরবে,
         ডাকে মুসলিম 'ইয়া আলী' রবে,
	—
         হায়দারী হাঁকে তন্দ্রা-মগনে করো করো 
	হুঁশিয়ার॥
         আল-বোর্জের চূড়া গুঁড়া করা গোর্জ আবার হানো,
         বেহেশ্তী সাকি মৃত এ জাতিরে আবে কওসার 
	দানো।
আজি  বিশ্ব বিজয়ী জাতি যে বেহোশ
         দাও তারে নব কুয়ৎ ও জোশ;
এসো  নিরাশায় মরু-ধূলি উড়ায়ে দুল্দুল্-আসোয়ার॥
	
- ভাবসন্ধান:  এই গানে দুর্বল, তন্দ্রাচ্ছন্ন মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য ইসলাম ধর্মের 
চতুর্থ খলিফা এবং পরাক্রমশালী বীর যোদ্ধা হযরত আলী (রাঃ)-কে আহ্বান করা হয়েছে। এই 
আহ্বান প্রতীকী হযরত আলী (রাঃ)-কে এই গানে উপস্থাপন করা হয়েছে- যেন তাঁর বীরত্ব ও 
আদর্শকে ধারণ করে মুসলমানরা তাঁদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেন। 
 
 গানটির শুরুতে হযরত আলী (রাঃ)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক বিজয় হিসেবে অভিহিত- ইহুদিদের দুর্ভেদ্য দুর্গ খায়বার 
জয়ের কথা বলা হয়েছে। এই দুর্গ জয়ের জন্যই এই গানে তাঁকে খায়বর-জয়ী নামে অভিহিত করা হয়েছে। 
মুসলমানদের উদ্দীপনা যোগাতে কবি খায়বর জয়ের সেই বীরত্ব নিয়ে আবার তিনি যেন অবতীর্ণ হন- 
এমন কামনা ব্যক্ত করেছেন। 
এ্কই আবেগে তিনি কামনা করেছেন- যেন মুসলমান যোদ্ধারা হাতে তুলে দেন তাঁর হাতের দুধারী জুলফিকার নামক তরবারীর 
মতো অস্ত্র।
 
 বহু যুদ্ধের নায়ক হিসেবে তিনি 'শেরে খোদা' উপাধী পেয়েছিলেন। সেই গৌরবময় মহিমা আবার ফিরে আসুক, এই কামনায় মুসলিম জগৎ তাঁকে আহ্বান করছেন 'ইয়া আলী' রবে। 
যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর গগনবিদারী হায়দরী হাঁকে তন্দ্রাচ্ছন্ন মুসলিম জাতি জেগে উঠুক- 
এটাই কবির একান্ত প্রার্থনা।
 
 পারস্যের বিখ্যাত পর্বতমালা আল-বোর্জে-এর চূড়ার তূল্য শত্রুর দুর্ভেদ্য দুর্গ গুঁড়া করার 
জন্য জন্য  গোর্জার (গদা সদৃশ্য অস্ত্র) আঘাত হানার কথা বলা হয়েছে তিনি।  মূলত এখানে 
পর্বতপ্রমাণ কঠিন বাধাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো আলীর অলঙ্ঘনীয় শক্তি কামনা করছেন কবি।
 
 সাকি' অর্থ পানপাত্র পরিবেশনকারিণী, আর 'আবে কওসার' হলো জান্নাতের পবিত্র ঝর্ণার পানি। কবি মুসলিম জাতিকে 'মৃত' বা নিষ্ক্রিয় বলে মনে করছেন। তাই তিনি আলীকে জান্নাতের পানপাত্র বাহক রূপে কল্পনা করে সেই পবিত্র পানীয় (আবে কওসার) দিয়ে এই মৃতপ্রায় জাতির মধ্যে আবার প্রাণসঞ্চার করার 
কথা বলছেন।  
তিনি মনে করেন- একসময় যে মুসলিম জাতি ছিল বিশ্বজয়ী, আজ তারা শক্তি হারিয়ে বেহুঁশ বা চেতনাহীন হয়ে পড়েছে। 
হাজরত আলীর (রাঃ)-এর কাছে কবি সেই জাতিকে নতুন শক্তি (কুয়ৎ) ও উদ্দীপনা (জোশ) দিয়ে 
উজ্জীবিত করার কামনা করেছেন। তিনি যেন দুলদুলের (হযরত আলী (রাঃ)-র ঘোড়ার নাম) পিঠ 
চড়ে নিরাশার মরুভূমির ধূলি উড়য়ে আশা ও উদ্দীপনা সঞ্চারিত করেন নির্জীব মুসলিম জাতিকে।
 
- রচনাকাল ও স্থান:
		গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর 
(অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৩) মাসে, টুইন 
রেকর্ড কোম্পানি 
গানটির প্রথম রেক্র্ড করেছিল । এই সময় নজরুলের 
বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৬ মাস।
 
- গ্রন্থ:
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, [নজরুল ইনস্টিটিউট, , আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।  
৫০৬ সংখ্যক গান] 
- রেকর্ড:
	- ১৯৩৭ 
	খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি [সোমবার, ১২ মাঘ ১৩৪৩] টুইন রেকর্ড কোম্পানির সাথে নজরুলের একটি চুক্তি হয়।
	এই চুক্তিতে গানটি ছিল। 
- টুইন [ডিসেম্বর ১৯৩৬ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৩)। নম্বর এফটি ৪৭১৫।  শিল্পী:
	আব্বাসউদ্দীন আহমদ]
 
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়: 
	- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামি গান। হজরত আলী (রাঃ)
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য