বিষয়: নজরুল সঙ্গীত। 
শিরোনাম: আল্লাজী গো, আমি বুঝি না রে তোমার খেলা 
	
		
আল্লাজী গো, আমি বুঝি না রে তোমার খেলা।
তাই দুঃখ পেলে ভাবি
			
— বুঝি হানিলে হেলা॥
কুমার যখন হাঁড়ি গড়ে কাঁদে মাটি
			—
ভাবে, কেন পোড়ায় আমায় চড়িয়ে ভাটি;
ফুলদানি হয় পোড় খেয়ে সেই মাটির ঢেলা॥
মা শিশুরে ধোয়ায় মোছায়, শিশু ভাবে
			—
ছাড়া পেলে, মা ফেলে সে পালিয়ে যাবে।
মোরা, দোষ করে তাই দুষি তোমায় সারা বেলা॥
আমরা তোমার বান্দা, খোদা তুমি জানো
			—
কেন হাসাও, কেন কাঁদাও, আঘাত হানো।
যে গড়তে জানে তারি সাজে ভেঙে ফেলা॥
		
	
	- 
	ভাবসন্ধান: আল্লাহর সৃষ্ট জগতে চলেছে তাঁর লীলা। আল্লাহর এই অসীম লীলা 
	দর্শনে অভিভূত কবি দিশেহারা। 
 
 কবি আল্লাহর এই লীলা বুঝতে না পেরে- দিকভ্রষ্ট হন। তাই দুঃখ পেলে ভাবেন- হয়তো 
	আল্লাহ তাঁকে অবহেলা করছেন।  কুমার যখন মাটি মথিত করে হাঁড়ি তৈরি করে এবং 
	পরে তা ভাটিতে পুড়িয়ে পাকা রূপ দেয়, তখন মাটি যন্ত্রণায় কাঁদে। এই যন্ত্রণার 
	মধ্যেই মাটির ঢেলা হয়ে ওঠে ফুলদানি। সে জানে না আল্লার লীলাময় রূপান্তরের মহিমা। 
	মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্টের মধ্যে রয়েছে মানুষেরই রূপান্তরের লীলা। মানুষ তা 
	বুঝে উঠতে পারে না।
 
 মা যখন শিশুর কল্যাণে, তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। শিশুর কাছে তা 
	যন্ত্রণাদায়ক মনে হয়। সে ভাবে ছাড়া পেলে মাকে সে ফেলে পালিয়ে যাবে। কবি ভাবেন 
	পর্থিব জীবনে আল্লাহ যা কিছু করেন সবই মানুযের কল্যাণে। এর জন্য কখনো কখনো 
	মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসে। মানুষ তখন শিশুর মতোই প্রতিপালক আল্লাহকে ত্যাগ 
	করতে চায়। না বুঝে আল্লাহকে দোষী ভাবতে থাকে।  মানুষ ভাবতে চায় না, সাময়িক 
	দুঃখ কষ্টের ভিতর দিয়েই আল্লাহ সৃষ্টি করেন আননন্দময় মূহুর্তগুলো।
 
 কবি জানেন, আল্লাহ গড়তে এবং ভাঙতে জানেন। তবু অবুঝ কবি- আল্লাহ কেন 
	কান্না-হাসি-আঘাতে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তোলেন- এই ভেবে তিনি আকুলিত হয়।
 
- 
	রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ 
		খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৬) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি প্রথম গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশ করে। 
		এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৯ মাস। 
 
- গ্রন্থ:
	
		- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। 
				তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৫৬৫। তাল: 
			দাদরা। পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩] 
 
রেকর্ড: টুইন [মার্চ ১৯৪০ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৬)। এফটি ১৩২১৭। শিল্পী 
			আব্বাসউদ্দীন। সুরকার: 
			নজরুল ইসলাম]
		
 
	স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
	- সুধীন দাশ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
		চৌত্রিশতম খণ্ড, (একুশে বই মেলা। ফাল্গুন ১৪১৮/ফেব্রুয়ারি 
	২০১২)]। ১২তম গান। পৃষ্ঠা: ৩৬-৩৯]। 
	[নমুনা]
সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম। 
	পর্যায়:
		- বিষয়াঙ্গ: ধর্মদর্শন। ইসলাম। হামদ। লীলা
- সুরাঙ্গ: ভাটিয়ালি