ভাঙার গান
কাজীনজরুল ইসলাম

                    মোহান্তের-মোহ-অন্তের-গান
                             [গান]
 

          জাগো আজ দণ্ড-হাতে চণ্ড বঙ্গবাসী।
            ডুবাল পাপ-চণ্ডাল তোদের বাংলা দেশের কাশী।
                                               জাগো বঙ্গবাসী॥
তোরা     হত্যা দিতিস যাঁর থানে, আজ সেই দেবতাই কেঁদে
ওরে      তোদের দ্বারেই হত্যা দিয়ে মাগেন সহায় আপনি আসি।
                                              জাগো বঙ্গবাসী॥
                    মোহের যার নাইকো অন্ত
                    পূজারী সেই মোহান্ত,
                    মা-বোনে সর্বস্বান্ত করছে বেদী-মূলে।
তোদেরে   পূজার প্রসাদ বলে খাওয়ায় পাপ-পুঁজ সে গুলে।
তোরা       তীর্থে গিয়ে আসিস পাপ-ব্যভিচার রাশি রাশি।
                                             জাগো বঙ্গবাসী॥
 
                  এইসব ধর্ম-ঘাগী
                  দেব্‌তায় করছে দাগী,
                  মুখে কয় সর্বত্যাগী ভোগ-নরকে বসে।
সে যে     পাপের ঘণ্টা বাজায় পাপী দেব-দেউলে পশে।
আর        ভক্ত তোরা পূজিস তারেই যোগাস খোরাক সেবা-দাসী!
                                            জাগো বঙ্গবাসী॥

                 দিয়ে নিজ রক্তবিন্দু
                 ভরালি পাপের সিন্ধু

                 ডুবলি তায় ডুবলি হিন্দু ডুবলি দেব্‌তারে।
দেখো    ভোগের বিষ্ঠা পুড়ছে তোদের বেদীর ধূপধারে।
পূজারীর  কমণ্ডলুর গঙ্গা-জলে মদের ফেনা উঠছে ভাসি।
                                        জাগো বঙ্গবাসী॥

                দিতে যায় পূজা-আরতি
                সতীত্ব হারায় সতী,
                পুণ্য-খাতায় ক্ষতি লেখায় ভক্তি দিয়ে,
তার     ভোগ-মহলের জ্বলছে প্রদীপ তোদের পুণ্য-ঘিয়ে।
তোদের ফাঁকা ভক্তির ভণ্ডামিতে মহাদেব আজ ঘোড়ার ঘাসী।
                                     
 জাগো বঙ্গবাসী॥

                তোরা সব শক্তিশালী
                বুকে নয়, মুখে খালি!
                বেড়ালকে বাছতে দিলি মাছের কাঁটা যে রে।
তোরা    পূজারীকে করিস পূজা পূজার ঠাকুর ছেড়ে।
           মার অসুর শোধরা সে ভুল, আদেশ দেন মা সর্বানাসী।
           'জয় তারকেশ্বর' বলে পরবি রে নয় গলায় ফাঁসি।
                                               জাগো বঙ্গবাসী॥  


রচনা ও প্রকাশকাল:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে হুগলী জেলার তারকেশ্বর মন্দিরের মোহান্তের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সূত্রে, ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ২৭শে জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ১০ জুন ১৯২৪) থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, আনুষ্ঠানিকভাবে তারেকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলন উপলক্ষে নজরুল গানটি রচনা করেছিলেন মে মাসের দিকে।