বাল্মীকি প্রতিভা (গীতিনাট্য)
রবীন্দ্রনাথের রচিত প্রথম গীতিনাট্য।

৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ই তিনি সেপ্টেম্বর মাসে ইংল্যাণ্ডে পড়াশুনা করতে যান, আর ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ইংল্যাণ্ডের শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ইউরোপীয় অপেরার আদলে তিনি রচনা করেন বাল্মীকি প্রতিভা।

এই গীতিনাট্যটির গানগুলোর সুরের ধরন যে বিশুদ্ধ ভারতীয় বা ইউরোপীয় নয়, 
'দেশী এবং বিলাতি সুরের চর্চার ভিতরে
বাল্মীকিপ্রতিভার জন্ম হইল' -এই বাক্যের ভিতর দিয়ে বেশ সাড়ম্বরে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন তাঁর জীবনস্মৃতি গ্রন্থের 'বাল্মীকি প্রতিভা' অধ্যায়ে। 'বাল্মীকি প্রতিভা' রচনার তাগিদ তার ছিল। তাঁর এই ভাবনাকে উস্‌কে দিয়েছিল ঠাকুরবাড়ির 'বিদ্বজ্জন সমাগম' সভা।

এই সভাটি শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের বিলাত যাওয়ার আগেই ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের অগ্রজেরা এবং অন্যান্য সাহিত্যপ্রেমীদের উৎসাহে, দেশের সমস্ত সাহিত্যিকদের একত্র করার জন্য, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে 'বিদ্বজ্জন সমাগম' নামের এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল (৬ বৈশাখ ১২৮১ বঙ্গাব্দ) এই সভার প্রথম অধিবেশন হয়। পরে এই সভাটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। এর দ্বিতীয় অধিবেশন হয় ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে (২৭ বৈশাখ ১২৮২ বঙ্গাব্দ)।

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে যখন এই সভার আয়োজন চলছিল, রবীন্দ্রনাথের দাদারা একটি নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন।  এই সময় দস্যুরত্নাকরের কবি হয়ে ওঠার বিষয় নিয়ে নাটক রচনার কথা সবাই ভাবছিলেন। রবীন্দ্র সেকালের জনপ্রিয় কবি বিহারীলালের 'সারদামঙ্গল' কাব্যে বাল্মীকির যে কাহিনি ছিল, তার সাথে দস্যু রত্নাকরের কাহিনি যুক্ত করে, রচনা করেন 'বাল্মীকি প্রতিভা'। এই গীতিনাট্যটি রবীন্দ্রনাথ শেষ করেছিলেন পৌষ বা মাঘ মাসের দিকে। বাল্মীকি প্রতিভা চনার পরে, ১২৮৭ বঙ্গাব্দের ১৬ই ফাল্গুন (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দ) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির তেতলার ছাদে বিদ্বজ্জন সমাগম উপলক্ষে মঞ্চস্থ হয়েছিল।  ১২৮৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে গীতিনাট্যটি পুস্তাকারে প্রকাশিত হয়েছিল।

১২৯২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে এই গ্রন্থের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্রে মুদ্রিত হয়েছিল। এই সংস্করণটি দ্বিতীয় সংস্করণ নামে অভিহিত করা হয়েছে।