ছবি ও গান
রবীন্দ্রনাথের রচিত কাব্যগ্রন্থ। এর প্রথম সংস্করণ
প্রকাশিত হয়েছিল ১২৯০ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে।
বেঙ্গল লাইব্রেরির তালিকা অনুসারে গ্রন্থটির প্রকাশকাল ছিল- ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৪ (শনিবার
১২ ফাল্গুন ১২৯০)। এর আখ্যানপত্র থেকে জানা যায়- 'ছবি ও গান'/শ্রী রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর/প্রণীত।/আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্রে/শ্রী কালিদাস
চক্রবর্ত্তী দ্বারা/মুদ্রিত ও প্রকাশিত/ফাল্গুন ১৮০৫ শক।/ মূল্য ১ এক টাকা'
গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা: আখ্যাপত্র [২]। বিজ্ঞাপন [২] +সূচিপত্র [৴৹-৵৹] +১০৪।
গ্রন্থটির উৎর্গ পত্রে ছিল-
'গত বৎসরকার বসন্তের
ফুল লইয়া এ বৎসরকার বসন্তে মালা গাঁথিলাম। যাঁহার নয়ন-কিরণে প্রতিদিন প্রভাতে
এই ফুলগুলি একটি একটি করিয়া ফুটিয়া উঠিত, তাঁহারি চরণে ইহাদিগকে উৎসর্গ করিলাম।'
ধারণা করা হয়,
রবীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থটি 'উৎসর্গ'
করেছিলেন কাদম্বরী দেবীকে।
এই গ্রন্থের বিজ্ঞাপনে ছিল-
'এই গ্রন্থে প্রকাশিত ছোটো ছোটো
কবিতাগুলি গত বৎসরে লিখিত হয়- কেবল শেষ তিনটি কবিতা পূর্বেকার লেখা, এই নিমিত্ত
তাহারা কিছু স্বতন্ত্র হইয়া পড়িয়াছে।
'ছন্দের সম্বন্ধে কিছু বলা আবশ্যক। এই
পুস্তকের কোনো কোনো গানে ছন্দ নাই বলিয়া মনে হইতে পারে, কিন্তু বাস্তবিক তাহা
নহে। যে-সকল পাঠকের কান আছে, তাহারা ছন্দ খুঁজিয়া লইবেন, দেখিতে পাইবেন
বাঁধাবাধি ছন্দ অপেক্ষা তাহা শুনিতে মধুর; হসন্ত বর্ণকে অকারান্ত করিয়া পড়িলে
কোনো কোনো স্থলে ছন্দের ব্যাঘাত হইবে।'
রবীন্দ্ররচনাবলী প্রথম
খণ্ডের [বিশ্বভারতী, জ্যৈষ্ঠ ১৩৯৬, পৃষ্ঠা] গ্রন্থ পরিচয় অংশের প্রমথ চৌধুরীর কাছে
লিখিত পত্র [১৮৯০] থেকে, এই গ্রন্থের কবিতা ও গান রচনার সময় রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ ও
আবেগ সম্পর্কে জানা যায়।
'আমার ছবি ও গান আমি যে কী মাতাল হয়ে
লিখেছিলুম...আমি তখন দিনরাত পাগল হয়ে ছিলুম। আমার সমস্ত বাহ্যলক্ষণে এমন-সকল
মনোবিকার প্রকাশ পেত যে, তখন যদি তোমরা আমাকে প্রথম দেখতে তো মনে করতে এ
ব্যক্তি কবিত্বের খেপামি দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার সমস্ত শরীরে মনে নবযৌবন যেন
একেবারে হঠাৎ বন্যার মতো এসে পড়েছিল। আমি জানতুম না আমি কোথায় যাচ্ছি, আমাকে
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। একটা বাতাসের হিল্লোলে একরাত্রির মধ্যে কতকগুলো ফুল
মায়ামন্ত্রবলে ফুটে উঠেছিল, তার মধ্যে ফলের লক্ষণ কিছু ছিল না। কেবলই একটা
সৌন্দর্যের পুলক, তার মধ্যে পরিণাম কিছুই ছিল না।
তোমাদেরও বোধ হয় এমন অবস্থা হয়-
উড়িতেছে কেশ, উড়িতেছে বেশ,
উদাস পরাণ কোথা নিরুদ্দেশ,
হাতে লয়ে বাঁশি মুখে লয়ে হাসি
ভ্রমিতেছি আনমনে।
চারি দিকে মোর বসন্ত হসিত,
যৌবনমুকুল প্রাণে বিকশিত,
সৌরভ তাহার বাহিরে আসিয়া
রটিতেছে বনে বনে।
'সত্যি কথা বলতে কি, সেই নবযৌবনের নেশা এখনো আমার হৃদয়ের মধ্যে লেগে রয়েছে। ছবি
ও গান পড়তে পড়তে আমার মন যেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে, এমন আমারে কোনো পুরনো লেখায় হয়
না।'
'ছবি ও গানের
প্রথম সংস্করণের প্রথম ও শেষ কবিতা দুইটি ('আজু সখি মুহু মুহু' ও 'মরণ রে তুঁহুঁ মম
শ্যামসমান') পরে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর অন্তর্গত হয়। প্রথম সংস্করণের অন্য
কবিতাগুলি ছবি ও গানের শেষ স্বতন্ত্র সংস্করণে মুদ্রিত আছে। এই শেষোক্ত সংস্করণ
হইতে 'ধীরে ধীরে প্রভাত হল' ("বিরহ") কবিতাটি বর্তমান রচনাবলীতে বর্জিত ও অন্যগুলি
গৃহীত হইয়াছে। ছবি ও গানের 'রাহুর প্রেম' কবিতাটি
সঞ্চয়িতার বহুলাংশে পরিবর্তিত হইয়াছে।'