ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
মিলন
আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো—
আমার
জুড়ালো হৃদয় প্রভাতে।
আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
পরান কী নিধি কুড়ালো—
ডুবিয়া
নিবিড় নীরব শোভাতে।
আজ গিয়েছি সবার মাঝারে, সেথায়
দেখেছি একেলা আলোকে—
দেখেছি
আমার হৃদয়-রাজারে।
আমি দু-একটি কথা কয়েছি তা-সনে
সে নীরব সভা-মাঝারে—
দেখেছি
চিরজনমের রাজারে।
ওগো, সে কি মোরে শুধু দেখেছিল চেয়ে
অথবা জুড়ালো পরশে—
তাহার
কমলকরের পরশে—
আমি সে কথা সকলি গিয়েছি যে ভুলে
ভুলেছি পরম হরষে।
আমি জানি না কী হল, শুধু এই জানি
চোখে মোর সুখ মাখালো—
কে যেন
সুখ-অঞ্জন মাখালো—
কার আঁখিভরা হাসি উঠিল প্রকাশি
যে দিকেই আঁখি তাকালো।
আজ মনে হল কারে পেয়েছি—
কারে যে
পেয়েছি সে কথা জানি না।
আজ কী লাগি উঠিছে কাঁপিয়া কাঁপিয়া
সারা আকাশের আঙিনা—
কিসে যে
পুরেছে শূন্য জানি না।
এই বাতাস আমারে হৃদয়ে লয়েছে,
আলোক আমার তনুতে—
কেমনে
মিলে গেছে মোর তনুতে।
তাই এ গগনভরা প্রভাত পশিল
আমার অণুতে অণুতে।
আজ ত্রিভুবন-জোড়া কাহার বক্ষে
দেহ মন মোর ফুরালো—
যেন রে
নিঃশেষে আজি ফুরালো।
আজ যেখানে যা হেরি সকলেরি মাঝে
জুড়ালো জীবন জুড়ালো—
আমার
আদি ও অন্ত জুড়ালো।
শিলাইদহ। পদ্মা
২৪ মাঘ, ১৩১২