ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
অস্পষ্ট
[সবুজ পত্র পত্রিকার
শ্রাবণ ১৩২৬ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার সময় নামকরণ করা হয়েছিল কথিকা]
জানলার ফাঁকে
ফাঁকে দেখা যায় সামনের বাড়ির জীবনযাত্রা। রেখা আর ছেদ,
দেখা আর না-দেখা দিয়ে সেই ছবি আঁকা।
একদিন পড়ার বই পড়ে রইল,
বনমালীর চোখ গেল সেই দিকে।
সেদিন দেখে, সে
বাড়ির ঘরকন্নার পুরোনো পটের উপর দুজন নতুন লোকের চেহারা। একজন বিধবা প্রবীণা,
আর-একটি মেয়ের বয়স ষোলো হবে কি সতেরো।
সেই প্রবীণা জানলার ধারে বসে মেয়েটির চুল বেঁধে দিচ্ছে,
আর মেয়ের চোখ বেয়ে জল পড়ছে।
আর-একদিন দেখা গেল, চুল বাঁধবার লোকটি নেই। মেয়েটি দিনান্তের শেষ আলোতে ঝুঁকে প’ড়ে বোধ হল যেন একটি পুরোনো ফোটোগ্রাফের ফ্রেম আঁচল দিয়ে মাজছে।
তার পর দেখা যায়, জানলার ছেদগুলির মধ্যে দিয়ে ওর প্রতি দিনের কাজের ধারা— কোলের কাছে ধামা নিয়ে ডাল বাছা, জাঁতি হাতে সুপুরি কাটা, স্নানের পরে বাঁ হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে ভিজে চুল শুকোনো, বারান্দার রেলিঙের উপরে বালাপোশ রোদ্দুরে মেলে দেওয়া।
দুপুরবেলায় পুরুষেরা আপিসে; মেয়েরা কেউ বা ঘুমোয়, কেউ বা তাস খেলে; ছাতে পায়রার খোপে পায়রাদের বক্বক্ম মিইয়ে আসে।
সেই সময়ে মেয়েটি ছাতের চিলেকোঠায় পা মেলে বই পড়ে; কোনোদিন বা বইয়ের উপর কাগজ রেখে চিঠি লেখে, আবাঁধা চুল কপালের উপরে থমকে থাকে, আর আঙুল যেন চলতে চলতে চিঠির কানে কানে কথা কয়।
একদিন বাধা পড়ল। সেদিন সে খানিকটা লিখছে চিঠি, খানিকটা খেলছে কলম নিয়ে, আর আলসের উপরে একটা কাক আধখাওয়া আমের আঁঠি ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।
এমন সময়ে যেন পঞ্চমীর অন্যমনা চাঁদের কণার পিছনে পা টিপে টিপে একটা মোটা মেঘ এসে দাঁড়ালো। মেয়েটি আধাবয়সি। তার মোটা হাতে মোটা কাঁকন। তার সামনের চুল ফাঁক, সেখানে সিঁথির জায়গায় মোটা সিঁদুর আঁকা।
বালিকার কোল থেকে তার না-শেষ-করা চিঠিখানা সে আচমকা ছিনিয়ে নিলে। বাজপাখি হঠাৎ পায়রার পিঠের উপর পড়ল।
ছাতে আর মেয়েটিকে দেখা যায় না। কখনো বা গভীর রাতে, কখনো বা সকালে বিকালে, ঐ বাড়ি থেকে এমন-সব আভাস আসে যার থেকে বোঝা যায়, সংসারটার তলা ফাটিয়ে দিয়ে একটা ভূমিকম্প বেরিয়ে আসবার জন্যে মাথা ঠুকছে।
এ দিকে জানলার ফাঁকে ফাঁকে চলছে ডাল বাছা আর পান সাজা; ক্ষণে ক্ষণে দুধের কড়া নিয়ে মেয়েটি চলেছে উঠোনে কলতলায়।
এমনি কিছুদিন যায়। সেদিন কার্তিক মাসের সন্ধ্যাবেলা; ছাদের উপর আকাশপ্রদীপ জ্বলেছে, আস্তাবলের ধোঁয়া অজগর সাপের মতো পাক দিয়ে আকাশের নিশ্বাস বন্ধ করে দিলে।
বনমালী বাইরে থেকে ফিরে এসে যেমনি ঘরের জানলা খুলল অমনি তার চোখে পড়ল, সেই মেয়েটি ছাদের উপর হাত জোড় করে স্থির দাঁড়িয়ে। তখন গলির শেষ প্রান্তে মল্লিকদের ঠাকুরঘরে আরতির কাঁসর ঘণ্টা বাজছে। অনেক ক্ষণ পরে ভূমিষ্ঠ হয়ে মেঝেতে মাথা ঠুকে ঠুকে বারবার সে প্রণাম করলে; তার পরে চলে গেল।
সেদিন বনমালী নীচে গিয়েই চিঠি লিখলে। লিখেই নিজে গিয়ে তখনি ডাকবাক্সে ফেলে দিয়ে এল।
রাত্রে বিছানায়
শুয়ে শুয়ে একমনে কামনা করতে লাগল,
সে চিঠি যেন না পৌঁছয়। সকালবেলায় উঠে সেই বাড়ির দিকে যেন মুখ তুলে চাইতে পারলে না।
সেই দিনই বনমালী মধুপুরে চলে গেল;
কোথায় গেল কাউকে বলে গেল না।
কলেজ খোলবার সময়
সময় ফিরে এল। তখন সন্ধ্যাবেলা। সামনের বাড়ির আগাগোড়া সব বন্ধ,
সব অন্ধকার। ওরা সব গেল কোথায়।
বনমালী বলে উঠল, “যাক,
ভালোই হয়েছে।”
ঘরে ঢুকে দেখে ডেস্কের উপরে একরাশ চিঠি। সব-নীচের চিঠির শিরোনাম মেয়েলি হাতের ছাঁদে লেখা, অজানা হাতের অক্ষরে, তাতে পাড়ার পোস্ট-আপিসের ছাপ।
চিঠিখানি হাতে করে সে বসে রইল। লেফাফা খুললে না। কেবল আলোর সামনে তুলে ধরে দেখলে। জানালার ভিতর দিয়ে জীবনযাত্রার যেমন অস্পষ্ট ছবি, আবরণের ভিতর দিয়ে তেমনি অস্পষ্ট অক্ষর।
একবার খুলতে গেল, তার পরে বাক্সের মধ্যে চিঠিটা রেখে চাবি বন্ধ করে দিলে; শপথ করে বললে, “এ চিঠি কোনোদিন খুলব না।”
পট
[সবুজ পত্র পত্রিকার
ভাদ্র ১৩২৮ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল।]
১
যে শহরে অভিরাম দেবদেবীর পট আঁকে, সেখানে কারো কাছে তার পূর্বপরিচয় নেই। সবাই জানে, সে বিদেশী, পট আঁকা তার চিরদিনের ব্যাবসা।
সে মনে ভাবে, ‘ধনী ছিলেম, ধন গিয়েছে, হয়েছে ভালো। দিনরাত দেবতার রূপ ভাবি, দেবতার প্রসাদে খাই, আর ঘরে ঘরে দেবতার প্রতিষ্ঠা করি। আমার এই মান কে কাড়তে পারে।’
এমন সময় দেশের
রাজমন্ত্রী মারা গেল। বিদেশ থেকে নতুন এক মন্ত্রীকে রাজা আদর করে আনলে। সেদিন তাই
নিয়ে শহরে খুব ধুম।
কেবল অভিরামের তুলি সেদিন চলল না।
নতুন রাজমন্ত্রী, এই তো সেই কুড়িয়ে-পাওয়া ছেলে, যাকে অভিরামের বাপ মানুষ করে নিজের ছেলের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছিল। সেই বিশ্বাস হল সিঁধকাঠি, তাই দিয়ে বুড়োর সর্বস্ব সে হরণ করলে। সেই এল দেশের রাজমন্ত্রী হয়ে।
যে ঘরে অভিরাম পট আঁকে সেই তার ঠাকুরঘর; সেখানে গিয়ে হাত জোড় করে বললে, “এইজন্যেই কি এতকাল রেখায় রেখায় রঙে রঙে তোমাকে স্মরণ করে এলেম। এত দিনে বর দিলে কি এই অপমান।”
২
এমন সময় রথের
মেলা বসল।
সেদিন নানা দেশের নানা লোক তার পট কিনতে এল,
সেই ভিড়ের মধ্যে এল একটি
ছেলে,
তার আগে পিছে
লোক-লশ্কর।
সে একটি পট বেছে নিয়ে বললে,
“আমি কিনব।”
অভিরাম তার নফরকে জিজ্ঞাসা করলে,
“ছেলেটি কে।”
সে বললে,
“আমাদের রাজমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে।”
অভিরাম তার পটের উপর কাপড় চাপা দিয়ে বললে,
“বেচব না।”
শুনে ছেলের আবদার আরও বেড়ে উঠল। বাড়িতে এসে সে খায় না,
মুখ ভার করে থাকে।
অভিরামকে মন্ত্রী থলিভরা মোহর পাঠিয়ে দিলে;
মোহরভরা থলি মন্ত্রীর কাছে ফিরে এল।
মন্ত্রী মনে মনে বললে,
‘এত বড় স্পর্ধা!’
অভিরামের উপর যতই উৎপাত হতে লাগল ততই সে মনে মনে বললে,
“এই আমার জিত।”
৩
প্রতিদিন প্রথম
সকালেই অভিরাম তার ইষ্টদেবতার একখানি করে ছবি আঁকে। এই তার পূজা,
আর কোনো পূজা সে জানে না।
একদিন দেখলে,
ছবি তার মনের মতো হয় না। কী যেন বদল হয়ে গেছে। কিছুতে তার ভালো লাগে
না। তাকে যেন মনে মনে মারে।
দিনে দিনে সেই সূক্ষ্ণ বদল স্থূল হয়ে উঠতে লাগল। একদিন হঠাৎ চমকে উঠে বললে,
“বুঝতে পেরেছি।”
আজ সে স্পষ্ট দেখলে,
দিনে দিনে তার দেবতার মুখ মন্ত্রীর মুখের মতো হয়ে উঠছে।
তুলি মাটিতে ফেলে দিয়ে বললে,
“মন্ত্রীরই জিত হল।”
সেইদিনই পট নিয়ে গিয়ে মন্ত্রীকে অভিরাম বললে,
“এই নাও সেই পট,
তোমার ছেলেকে দিয়ো।”
মন্ত্রী বললে,
“কত দাম।”
অভিরাম বললে, “আমার
দেবতার ধ্যান তুমি কেড়ে নিয়েছিলে,
এই পট দিয়ে সেই ধ্যান
ফিরে নেব।”
মন্ত্রী কিছুই বুঝতে পারলে না।
নতুন পুতুল
[প্রবাসী পত্রিকার
ভাদ্র ১৩২৮ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল।]
এই গুণী কেবল
পুতুল তৈরি করত;
সে পুতুল রাজবাড়ির মেয়েদের খেলার জন্যে।
বছরে বছরে রাজবাড়ির আঙিনায় পুতুলের মেলা বসে। সেই মেলায় সকল কারিগরই এই গুণীকে
প্রধান মান দিয়ে এসেছে।
যখন তার বয়স হল প্রায় চার কুড়ি, এমনসময় মেলায় এক নতুন কারিগর এল। তার নাম কিষণলাল, বয়স তার নবীন, নতুন তার কায়দা।
যে পুতুল সে গড়ে
তার কিছু গড়ে কিছু গড়ে না,
কিছু রঙ দেয় কিছু বাকি
রাখে। মনে হয়,
পুতুলগুলো যেন ফুরোয় নি,
যেন কোনাকালে ফুরিয়ে যাবে না।
নবীনের দল বললে,
“লোকটা সাহস দেখিয়েছে।”
প্রবীণের দল বললে,
“একে বলে সাহস?
এ তো স্পর্ধা।”
কিন্তু,
নতুন কালের নতুন দাবি। এ
কালের রাজকন্যারা বলে,
“আমাদের
এই পুতুল চাই।”
সাবেক কালের অনুচরেরা বলে,
“আরে ছিঃ।”
শুনে তাদের জেদ বেড়ে যায়।
বুড়োর দোকানে এবার ভিড় নেই। তার ঝাঁকাভরা পুতুল যেন খেয়ার অপেক্ষায় ঘাটের লোকের মতো
ও পারের দিকে তাকিয়ে বসে রইল।
এক বছর যায়, দু বছর
যায়,
বুড়োর নাম সবাই
ভুলেই গেল। কিষণলাল হল রাজবাড়ির পুতুলহাটের সর্দার।
২
বুড়োর মন ভাঙল, বুড়োর
দিনও চলে না। শেষকালে তার মেয়ে এসে তাকে বললে,
“তুমি আমার বাড়িতে এসো।”
জামাই বললে, “খাও
দাও,
আরাম করো,
আর সবজির খেত থেকে গোরু বাছুর খেদিয়ে রাখো।”
বুড়োর মেয়ে থাকে অষ্টপ্রহর ঘরকরনার কাজে। তার জামাই গড়ে মাটির প্রদীপ,
আর নৌকো বোঝাই করে শহরে নিয়ে যায়।
নতুন কাল এসেছে সে কথা বুড়ো বোঝে না,
তেমনিই সে বোঝে না যে,
তার নাতনির বয়স হয়েছে ষোলো।
যেখানে গাছতলায় ব’সে
বুড়ো খেত আগলায় আর ক্ষণে ক্ষণে ঘুমে ঢুলে পড়ে সেখানে নাতনি গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে;
বুড়োর বুকের হাড়গুলো
পর্যন্ত খুশি হয়ে ওঠে। সে বলে,
“কী দাদি,
কী চাই।”
নাতনি বলে, “আমাকে
পুতুল গড়িয়ে দাও,
আমি খেলব।”
বুড়ো বলে, “আরে
ভাই,
আমার পুতুল তোর পছন্দ হবে কেন।”
নাতনি বলে,
“তোমার চেয়ে ভালো পুতুল কে গড়ে শুনি।”}
বুড়ো বলে, “কেন,
কিষণলাল।”
নাতনি বলে, ‘ইস্!
কিষণলালের সাধ্যি!’
দুজনের এই কথা-কাটাকাটি কতবার হয়েছে। বারে বারে একই কথা।
তার পরে বুড়ো তার ঝুলি থেকে মালমশলা বের করে;
চোখে মস্ত গোল চশমাটা আঁটে।
নাতনিকে বলে, “কিন্তু
দাদি,
ভুট্টা যে কাকে খেয়ে যাবে।”
নাতনি বলে, “দাদা,
আমি কাক তাড়াব।”
বেলা বয়ে যায়; দূরে
ইঁদারা থেকে বলদে জল টানে,
তার শব্দ আসে; নাতনি
কাক তাড়ায়,
বুড়ো বসে বসে
পুতুল গড়ে।
৩
বুড়োর সকলের
চেয়ে ভয় তার মেয়েকে। সেই গিন্নির শাসন বড়ো কড়া,
তার সংসারে সবাই থাকে সাবধানে।
বুড়ো আজ একমনে পুতুল গড়তে বসেছে;
হুঁশ হল না,
পিছন থেকে তার মেয়ে ঘন ঘন হাত দুলিয়ে আসছে।
কাছে এসে যখন সে ডাক দিলে তখন চশমাটা চোখ থেকে খুলে নিয়ে অবোধ ছেলের মতো তাকিয়ে
রইল।
মেয়ে বললে, “দুধ
দোওয়া পড়ে থাক্, আর তুমি
সুভদ্রাকে নিয়ে বেলা বইয়ে দাও। অত বড়ো মেয়ে,
ওর কি পুতুলখেলার বয়স।”
বুড়ো তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
“সুভদ্রা খেলবে কেন। এ পুতুল রাজবাড়িতে বেচব। আমার দাদির যেদিন বর আসবে সেদিন তো ওর
গলায় মোহরের মালা পরাতে হবে। আমি তাই টাকা জমাতে চাই।”
মেয়ে বিরক্ত হয়ে বললে,
“রাজবাড়িতে এ পুতুল
কিনবে কে।”
বুড়োর মাথা হেঁট হয়ে গেল। চুপ করে বসে রইল।
সুভদ্রা মাথা নেড়ে বললে,
“দাদার পুতুল রাজবাড়িতে কেমন না কেনে দেখব।”
৪
দু দিন পরে
সুভদ্রা এক কাহন সোনা এনে মাকে বললে,
“এই নাও,
আমার দাদার পুতুলের দাম।”
মা বললে,
“কোথায় পেলি।”
মেয়ে বললে,
“রাজপুরীতে গিয়ে বেচে এসেছি।”
বুড়ো হাসতে হাসতে বললে,
“দাদি,
তবু তো তোর দাদা এখন
চোখে ভালো দেখে না,
তার হাত কেঁপে
যায়।”
মা খুশি হয়ে বললে,
“এমন ষোলোটা মোহর হলেই তো সুভদ্রার গলার হার হবে।”
বুড়ো বললে,
“তার আর ভাবনা কী।”
সুভদ্রা বুড়োর গলা জড়িয়ে ধরে বললে,
“দাদাভাই,
আমার বরের জন্যে তো ভাবনা নেই।”
বুড়ো হাসতে লাগল,
আর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল মুছে ফেললে।
৫
বুড়োর যৌবন যেন
ফিরে এল। সে গাছের তলায় বসে পুতুল গড়ে আর সুভদ্রা কাক তাড়ায়,
আর দূরে ইঁদারায় বলদে ক্যাঁ-কোঁ করে জল টানে।
একে একে ষোলোটা মোহর গাঁথা হল,
হার পূর্ণ হয়ে উঠল।
মা বললে,
“এখন বর এলেই হয়।”
সুভদ্রা বুড়োর কানে কানে বললে,
“দাদাভাই,
বর ঠিক আছে।”
দাদা বললে, “বল্ তো
দাদি,
কোথায় পেলি বর।”
সুভদ্রা বললে, “যেদিন রাজপুরীতে গেলেম দ্বারী বললে, কী চাও। আমি বললেম, রাজকন্যাদের কাছে পুতুল বেচতে চাই। সে বললে, এ পুতুল এখনকার দিনে চলবে না। ব’লে আমাকে ফিরিয়ে দিলে। একজন মানুষ আমার কান্না দেখে বললে, দাও তো, ঐ পুতুলের একটু সাজ ফিরিয়ে দিই, বিক্রি হয়ে যাবে। সেই মানুষটিকে তুমি যদি পছন্দ কর দাদা, তা হলে আমি তার গলায় মালা দিই।”
বুড়ো জিজ্ঞাসা
করলে,
“সে আছে
কোথায়।”
নাতনি বললে, “ঐ যে,
বাইরে পিয়ালগাছের তলায়।”
বর এল ঘরের মধ্যে;
বুড়ো বললে,
“এ যে কিষণলাল।”
কিষণলাল বুড়োর পায়ের ধুলো নিয়ে বললে,
“হাঁ,
আমি কিষণলাল।”
বুড়ো তাকে বুকে চেপে ধরে বললে,
‘ভাই,
একদিন তুমি কেড়ে
নিয়েছিলে আমার হাতের পুতুলকে,
আজ নিলে আমার প্রাণের পুতুলটিকে।”
নাতনি বুড়োর গলা ধরে তার কানে কানে বললে,
“দাদা,
তোমাকে সুদ্ধ।”
উপসংহার
[ভারতী পত্রিকার
বৈশাখ ১৩২৯ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল।]
ভোজরাজের দেশে
যে মেয়েটি ভোরবেলাতে দেবমন্দিরে গান গাইতে যায় সে কুড়িয়ে-পাওয়া মেয়ে।
আচার্য বলেন,
“একদিন শেষরাত্রে আমার কানে একখানি সুর লাগল। তার পরে সেইদিন যখন
সাজি নিয়ে পারুলবনে ফুল তুলতে গেছি তখন এই মেয়েটিকে ফুলগাছতলায় কুড়িয়ে পেলেম।”
সেই অবধি আচার্য মেয়েটিকে আপন তম্বুরাটির মতো কোলে নিয়ে মানুষ করেছে;
এর মুখে যখন কথা ফোটে নি এর গলায় তখন গান জাগল।
আজ আচার্যের কণ্ঠ ক্ষীণ,
চোখে ভালো দেখেন না। মেয়েটি তাঁকে শিশুর মতো মানুষ করে।
কত যুবা দেশ
বিদেশ থেকে এই মেয়েটির গান শুনতে আসে। তাই দেখে মাঝে মাঝে আচার্যের বুক কেঁপে ওঠে;
বলেন,
“যে বোঁটা আলগা হয়ে আসে
ফুলটি তাকে ছেড়ে যায়।”
মেয়েটি বলে,
“তোমাকে ছেড়ে আমি এক পলক বাঁচি নে।”
আচার্য তার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে বলেন, “যে গান আজ আমার কণ্ঠ ছেড়ে গেল সেই গান তোরই মধ্যে রূপ নিয়েছে। তুই যদি ছেড়ে যাস তা হলে আমার চিরজন্মের সাধনাকে আমি হারাব।”
২
ফাগুনপূর্ণিমায় আচার্যের প্রধান শিষ্য কুমারসেন গুরুর পায়ে একটি আমের মঞ্জরী রেখে প্রণাম করলে। বললে, “মাধবীর হৃদয় পেয়েছি, এখন প্রভুর যদি সম্মতি পাই তা হলে দুজনে মিলে আপনার চরণসেবা করি।”
আচার্যের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। বললেন, “আনো দেখি আমার তম্বুরা। আর, তোমরা দুইজনে রাজার মতো, রানীর মতো, আমার সামনে এসে বসো।”
তম্বুরা নিয়ে আচার্য গান গাইতে বসলেন। দুলহা-দুলহীর গান, সাহানার সুরে। বললেন, “আজ আমার জীবনের শেষ গান গাব।”
এক পদ গাইলেন। গান আর এগোয় না। বৃষ্টির ফোঁটায় ভেরে-ওঠা জুঁইফুলটির মতো হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে খসে পড়ে। শেষে তম্বুরাটি কুমারসেনের হাতে দিয়ে বললেন, “বৎস, এই লও আমার যন্ত্র।”
তার পরে মাধবীর
হাতখানি তার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
“এই লও আমার প্রাণ।”
তার পরে বললেন, “আমার
গানটি দুজনে মিলে শেষ করে দাও,
আমি শুনি।”
মাধবী আর কুমার গান ধরলে—
সে যেন আকাশ আর পূর্ণচাঁদের কণ্ঠ মিলিয়ে গাওয়া।
৩
এমন সময়ে দ্বারে
এল রাজদূত,
গান থেমে গেল।
আচার্য কাঁপতে কাঁপতে আসন থেকে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
“মহারাজের কী আদেশ।”
দূত বললে, “তোমার
মেয়ের ভাগ্য প্রসন্ন,
মহারাজ তাকে ডেকেছেন।”
আচার্য জিজ্ঞাসা করলেন,
“কী ইচ্ছা তাঁর।”
দূত বললে, “আজ রাত
পোয়ালে রাজকন্যা কাম্বোজে পতিগৃহে যাত্রা করবেন,
মাধবী তাঁর সঙ্গিনী হয়ে যাবে।”
রাত পোয়ালো,
রাজকন্যা যাত্রা করলে।
মহিষী মাধবীকে ডেকে বললে,
“আমার মেয়ে প্রবাসে গিয়ে যাতে প্রসন্ন থাকে সে ভার তোমার উপরে।”
মাধবীর চোখে জল পড়ল না,
কিন্তু অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে যেন রৌদ্র ঠিকরে পড়ল।
৪
রাজকন্যার
ময়ূরপংখি আগে যায়,
আর তার পিছে পিছে যায়
মাধবীর পাল্কি। সে পাল্কি কিংখাবে ঢাকা,
তার দুই পাশে পাহারা।
পথের ধারে ধুলোর উপরে ঝড়ে-ভাঙা অশ্বত্থডালের মতো পড়ে রইলেন আচার্য,
আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কুমারসেন।
পাখিরা গান গাইছিল পলাশের ডালে; আমের বোলের গন্ধে বাতাস বিহ্বল হয়ে উঠেছিল। পাছে রাজকন্যার মন প্রবাসে কোনোদিন ফাগুনসন্ধ্যায় হঠাৎ নিমেষের জন্য উতলা হয়, এই চিন্তায় রাজপুরীর লোকে নিশ্বাস ফেললে।
পুনরাবৃত্তি
[প্রবাসী পত্রিকার
জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল।]
সেদিন যুদ্ধের
খবর ভালো ছিল না। রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন।
দেখতে পেলেন,
প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটো ছেলে আর একটি ছোটো
মেয়ে।
রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমরা কী খেলছ।”
তারা বললে,
“আমাদের আজকের খেলা রামসীতার বনবাস।”
রাজা সেখানে বসে গেলেন।
ছেলেটি বললে, “এই
আমাদের দণ্ডকবন,
এখানে কুটীর
বাঁধছি।”
সে একরাশ ভাঙা ডালপালা খড় ঘাস জুটিয়ে এনেছে,
ভারি ব্যস্ত।
আর,
মেয়েটি শাক পাতা নিয়ে খেলার
হাঁড়িতে বিনা আগুনে রাঁধছে; রাম
খাবেন,
তারই আয়োজনে
সীতার এক দণ্ড সময় নেই।
রাজা বললেন, “আর তো
সব দেখছি,
কিন্তু রাক্ষস
কোথায়।”
ছেলেটিকে মানতে হল,
তাদের দণ্ডকবনে কিছু কিছু ত্রুটি আছে।
রাজা বললেন, “আচ্ছা,
আমি হব রাক্ষস।”
ছেলেটি তাঁকে ভালো করে দেখলে। তার পরে বললে,
“তোমাকে কিন্তু হেরে যেতে হবে।”
রাজা বললেন,
“আমি খুব ভালো হারতে পারি। পরীক্ষা করে দেখো।”
সেদিন রাক্ষসবধ এতই সুচারুরূপে হতে লাগল যে, ছেলেটি কিছুতে রাজাকে ছুটি দিতে চায় না। সেদিন এক বেলাতে তাঁকে দশবারোটা রাক্ষসের মরণ একলা মরতে হল। মরতে মরতে হাঁপিয়ে উঠলেন।
ত্রেতাযুগে পঞ্চবটীতে যেমন পাখি ডেকেছিল সেদিন সেখানে ঠিক তেমনি করেই ডাকতে লাগল। ত্রেতাযুগে সবুজ পাতার পর্দায় পর্দায় প্রভাত-আলো যেমন কোমল ঠাটে আপন সুর বেঁধে নিয়েছিল আজও ঠিক সেই সুরই বাঁধলে।
রাজার মন থেকে
ভার নেমে গেল।
মন্ত্রীকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,
“ছেলে মেয়ে দুটি কার।”
মন্ত্রী বললে, “মেয়েটি
আমারই,
নাম রুচিরা। ছেলের নাম কৌশিক,
ওর বাপ গরিব ব্রাহ্মণ,
দেবপূজা করে দিন চলে।”
রাজা বললেন, “যখন
সময় হবে এই ছেলেটির সঙ্গে ঐ মেয়ের বিবাহ হয়,
এই আমার ইচ্ছা।”
শুনে মন্ত্রী উত্তর দিতে সাহস করলে না,
মাথা হেঁট করে রইল।
২
দেশে সবচেয়ে
যিনি বড়ো পণ্ডিত রাজা তাঁর কাছে কৌশিককে পড়তে পাঠালেন। যত উচ্চবংশের ছাত্র তাঁর
কাছে পড়ে। আর পড়ে রুচিরা।
কৌশিক যেদিন তাঁর পাঠশালায় এল সেদিন অধ্যাপকের মন প্রসন্ন হল না। অন্য সকলেও লজ্জা
পেলে। কিন্তু,
রাজার ইচ্ছা।
সকলের চেয়ে সংকট রুচিরার। কেননা,
ছেলেরা কানাকানি করে।
লজ্জায় তার মুখ লাল হয়,
রাগে তার
চোখ দিয়ে জল পড়ে।
কৌশিক যদি কখনো তাকে পুঁথি এগিয়ে দেয় সে পুঁথি ঠেলে ফেলে। যদি তাকে পাঠের কথা বলে
সে উত্তর করে না।
রুচির প্রতি অধ্যাপকের স্নেহের সীমা ছিল না। কৌশিককে সকল বিষয়ে সে এগিয়ে যাবে এই
ছিল তাঁর প্রতিজ্ঞা,
রুচিরও সেই ছিল পণ।
মনে হল,
সেটা খুব সহজেই ঘটবে,
কারণ কৌশিক পড়ে বটে
কিন্তু একমনে নয়। তার সাঁতার কাটতে মন,
তার বনে বেড়াতে মন,
সে গান করে,
সে যন্ত্র বাজায়।
অধ্যাপক তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন,
“বিদ্যায় তোমার অনুরাগ নেই কেন।”
সে বলে,
“আমার অনুরাগ শুধু
বিদ্যায় নয়,
আরও নানা জিনিসে।”
অধ্যাপক বলেন,
“সে-সব অনুরাগ ছাড়ো।”
সে বলে,
“তা হলে বিদ্যার প্রতিও আমার অনুরাগ থাকবে না।”
৩
এমনি করে কিছু
কাল যায়।
রাজা অধ্যাপককে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমার ছাত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে।”
অধ্যাপক বললেন,
“রুচিরা।”
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন,
“আর কৌশিক?”
অধ্যাপক বললেন,
“সে যে কিছুই শিখেছে এমন বোধ হয় না।”
রাজা বললেন,
“আমি কৌশিকের সঙ্গে রুচির বিবাহ ইচ্ছা করি।”
অধ্যাপক একটু হাসলেন;
বললেন,
“এ যেন গোধূলির সঙ্গে
উষার বিবাহের প্রস্তাব।”
রাজা মন্ত্রীকে ডেকে বললেন,
“তোমার কন্যার সঙ্গে
কৌশিকের বিবাহে বিলম্ব উচিত নয়।”
মন্ত্রী বললে, “মহারাজ,
আমার কন্যা এ বিবাহে
অনিচ্ছুক।”
রাজা বললেন,
“স্ত্রীলোকের মনের ইচ্ছা কি মুখের কথায় বোঝা যায়।”
মন্ত্রী বললে, “তার
চোখের জলও যে সাক্ষ্য দিচ্ছে।”
রাজা বললেন, “সে কি
মনে করে কৌশিক তার অযোগ্য।”
মন্ত্রী বললে, “হাঁ,
সেই কথাই বটে।”
রাজা বললেন,
“আমার সামনে দুজনের বিদ্যার পরীক্ষা হোক। কৌশিকের জয় হলে এই বিবাহ
সম্পন্ন হবে।”
পরদিন মন্ত্রী রাজাকে এসে বললে,
“এই পণে আমার কন্যার মত আছে।”
৪
বিচারসভা
প্রস্তুত। রাজা সিংহাসনে ব’সে,
কৌশিক তাঁর সিংহাসনতলে।
স্বয়ং অধ্যাপক রুচিকে সঙ্গে করে উপস্থিত হলেন। কৌশিক আসন ছেড়ে উঠে তাঁকে প্রণাম ও
রুচিকে নমস্কার করলে। রুচি দৃক্পাত করলে না।
কোনোদিন
পাঠশালার রীতিপালনের জন্যেও কৌশিক রুচির সঙ্গে তর্ক করে নি। অন্য ছাত্রেরাও অবজ্ঞা
করে তাকে তর্কের অবকাশ দিত না। তাই আজ যখন তার যুক্তির মুখে তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ তীরের
ফলায় আলোর মতো ঝিক্মিক্ করে উঠল তখন গুরু বিস্মিত হলেন,
এবং বিরক্ত হলেন। রুচির
কপালে ঘাম দেখা দিল,
সে বুদ্ধি স্থির
রাখতে পারলে না। কৌশিক তাকে পরাভবের শেষ কিনারায় নিয়ে গিয়ে তবে ছেড়ে দিলে।
ক্রোধে অধ্যাপকের বাক্রোধ হল,
আর রুচির চোখ দিয়ে ধারা বেয়ে জল পড়তে লাগল।
রাজা মন্ত্রীকে বললেন,
“এখন,
বিবাহের দিন স্থির করো।”
কৌশিক আসন ছেড়ে উঠে জোড় হাতে রাজাকে বললে,
“ক্ষমা করবেন,
এ বিবাহ আমি করব না।”
রাজা বিস্মিত হয়ে বললেন,
“জয়লব্ধ পুরস্কার গ্রহণ
করবে না?”
কৌশিক বললে, “জয়
আমারই থাক্,
পুরস্কার অন্যের
হোক।”
অধ্যাপক বললেন, “মহারাজ,
আর এক বছর সময় দিন,
তার পরে শেষ পরীক্ষা।”
সেই কথাই স্থির হল।
৫
কৌশিক পাঠশালা
ত্যাগ করে গেল। কোনোদিন সকালে তাকে বনের ছায়ায়,
কোনোদিন সন্ধ্যায় তাকে পাহাড়ের চূড়ার উপর দেখা যায়।
এ দিকে রুচির শিক্ষায় অধ্যাপক সমস্ত মন দিলেন। কিন্তু,
রুচির সমস্ত মন কোথায়।
অধ্যাপক বিরক্ত হয়ে বললেন,
“এখনও যদি সতর্ক না হও তবে দ্বিতীয়বার তোমাকে লজ্জা পেতে হবে।”
দ্বিতীয়বার লজ্জা পাবার জন্যেই যেন সে তপস্যা করতে লাগল। অপর্ণার তপস্যা যেমন অনশনের, রুচির তপস্যা তেমনি অনধ্যায়ের। ষড়্দর্শনের পুঁথি তার বন্ধই রইল, এমন কি কাব্যের পুঁথিও দৈবাৎ খোলা হয়।
অধ্যাপক রাগ করে বললেন, “কপিল-কণাদের নামে শপথ করে বলছি আর কখনো স্ত্রীলোক ছাত্র নেব না। বেদবেদান্তের পার পেয়েছি, স্ত্রীজাতির মন বুঝতে পারলেম না।”
একদা মন্ত্রী
এসে রাজাকে বললে,
“ভবদত্তর বাড়ি থেকে
কন্যার সম্বন্ধ এসেছে। কুলে শীলে ধনে মানে তারা অদ্বিতীয়। মহারাজের সম্মতি চাই।”
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন,
“কন্যা কী বলে।”
মন্ত্রী বললে, “মেয়েদের
মনের ইচ্ছা কি মুখের কথায় বোঝা যায়।”
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন,
“তার চোখের জল আজ কী রকম
সাক্ষ্য দিচ্ছে।”
মন্ত্রী চুপ করে রইল।
৬
রাজা তাঁর
বাগানে এসে বসলেন। মন্ত্রীকে বললেন,
“তোমার মেয়েকে আমার কাছে
পাঠিয়ে দাও।”
রুচিরা এসে রাজাকে প্রণাম করে দাঁড়াল।
রাজা বললেন, “বৎসে,
সেই রামের বনবাসের খেলা
মনে আছে?”
রুচিরা স্মিতমুখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
রাজা বললেন, “আজ সেই
রামের বনবাস খেলা আর-একবার দেখতে আমার বড়ো সাধ।”
রুচিরা মুখের এক পাশে আঁচল টেনে চুপ করে রইল।
রাজা বললেন, “বনও
আছে,
রামও আছে,
কিন্তু শুনছি বৎসে,
এবার সীতার অভাব ঘটেছে।
তুমি মনে করলেই সে অভাব পূরণ হয়।”
রুচিরা কোনো কথা
না ব’লে
রাজার পায়ের কাছে নত হয়ে প্রণাম করলে।
রাজা বললেন, “কিন্তু
বৎসে,
এবার আমি রাক্ষস সাজতে
পারব না।”
রুচিরা স্নিগ্ধ চক্ষে রাজার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
রাজা বললেন, “এবার
রাক্ষস সাজবে তোমাদের অধ্যাপক।”