ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

            অপরাজিত
        ফিরাবে তুমি মুখ,
ভেবেছ মনে আমারে দিবে দুখ ?
         আমি কি করি ভয় ।
জীবন দিয়ে তোমারে প্রিয়ে, করিব আমি জয় ।
        বিঘ্নভাঙা যৌবনের ভাষা,
              অসীম তার আশা,
                  বিপুল তার বল,
তোমার আঁখি-বিজুলি-ঘাতে হবে না নিষ্ফল ।

বিমুখ মেঘ ফিরিয়া যায় বৈশাখের দিনে,
     অরণ্যেরে যেন সে নাহি চিনে
ধরে না কুঁড়ি কানন জুড়ি, ফোটে না বটে ফুল,
      মাটির তলে তৃষিত তরুমূল ;
           ঝরিয়া পড়ে পাতা,
      বনস্পতি তবুও তুলি মাথা
নিঠুর তপে মন্ত্র জপে নীরব অনিমেষে
       দহনজয়ী সন্ন্যাসীর বেশে ।
দিনের পরে যায় রে দিন, রাতের পরে রাতি,
           শ্রবণ রহে পাতি ।

কঠিনতর যবে সে পণ দারুণ উপবাসে
      এমনকালে হঠাৎ কবে আসে
            উদার অকৃপণ
        আষাঢ় মাসে সজল শুভক্ষন ;
পূর্ব গিরি-আড়াল হতে বাড়ায় তার পাণি,
করিয়ো ক্ষমা, করিয়ো ক্ষমা, গুমরি উঠে বাণী,
         নমিয়া পড়ে নিবিড় মেঘরাশি,
অশ্রুবারিবন্যা নামে ধরণী যায় ভাসি ।

          ফিরালে মোরে মুখ!
এ শুধু মোরে ভাগ্য করে ক্ষণিক কৌতুক ।
          তোমার প্রেমে আমার অধিকার
অতীত যুগ হতে সে জেনো লিখন বিধাতার ।
অচল গিরিশিখর- ' পরে সাগর করে দাবি,
                 ঝর্‌না পড়ে নাবি ;
           সুদূর দিক্‌রেখার পানে চায়,
                 অকূল অজানায়
          শঙ্কাভরে তরল স্বরে কহে,
                 নহে গো, নহে নহে ;
                 এড়ায়ে যাবে বলি
কত-না আঁকাবাঁকার পথে চলে সে ছলছলি ;
বিপুলতর হয় সে ধারা, গভীরতর সুরে,
              যতই আসে দূরে ;
উদারহাসি সাগর সহে অবুঝ অবহেলা —
         একদা শেষে পলাতকার খেলা
বক্ষে তার মিলায় কবে, মিলনে হয় সারা —
         পূর্ণ হয় নিবেদনের ধারা ।

 

   [বাঙ্গালোর]
আষাঢ় ১৩৩৫