|
বাপী
একদা বিজনে যুগল তরুর মূলে
তৃষ্ণার জল তুমি দিয়েছিলে তুলে ।
আর কোনোখানে ছায়া নাহি দেখি,
শুধালেম, কাছে বসিতে দিবে কি ।
সেদিন তোমার ঘরে ফিরিবার বেলা
বহে গেল বুঝি, কাজে হয়ে গেল হেলা ।
অদূরে হোথায় ভাঙা দেউলের ধারে
পূর্ব যুগের পূজাহীন দেবতারে
প্রভাত-অরুণ প্রতিদিন খোঁজে,
শূন্য বেদির অর্থ না বোঝে,
দিন শেষ হলে সন্ধ্যাতারার আলো
যে পূজারী নাই তারে বলে, দীপ জ্বালো ।
একদিন বুঝি দূরে কোন্ রাজধানী
রচনা করেছে দীর্ঘ এ পথখানি ।
আজি তার নাম নাই ইতিহাসে ;
জীর্ণ হয়েছে বালুকার গ্রাসে,
প্রান্তরশেষে শীর্ণ বনের কোলে
জনপদবধূ জল নিয়ে যায় চলে ।
লুপ্তকালের শুষ্কসাগরধারে
বহু বিস্মৃতি যেথা রয় স্তূপাকারে,
অতি পুরাতন কাহিনী যেথায়
রুদ্ধ কণ্ঠে শূন্যে তাকায়,
হারানো ভাষার নিশার স্বপ্নছায়ে
হেরিনু তোমায়, আসিনু ক্লান্ত পায়ে ।
শুধু দুটি তরু মরুর প্রাণের কথা,
লুকানো কী রসে বাঁচে তার শ্যামলতা ।
সেদিন তাহারি মর্মর-সনে
কী ব্যথা মিশানু, জানে দুইজনে ;
মাথার উপরে উড়ে গেল কোন্ পাখি
হতাশ পাখার হাহাকাররেখা আঁকি ।
তপ্ত বালুরে ভর্ৎসিয়া মুহু মুহু
তাপিত বাতাস চিৎকারি উঠে হুহু ;
ধূলির ঘূর্ণি, যেন বেঁকে বেঁকে
শাপ-লাগা প্রেত নাচে থেকে থেকে ;
রূঢ় রুদ্র রিক্তের মাঝখানে
দুইটি প্রহর ভরেছিনু প্রাণে গানে ।
দিন শেষ হল, চলে যেতে হল একা,
বলিনু তোমারে, আরবার হবে দেখা ।
শুনে হেসেছিলে হাসিখানি ম্লান,
তরুণ হৃদয়ে যেন তুমি জান'
অসীমের বুকে অনাদি বিষাদখানি
আছে সারাখন মুখে আবরণ টানি ।
তার পরে কত দিন চলে গেল মিছে
একটি দিনেরে দলিয়া পায়ের নীচে ।
বহু পরে যবে ফিরিলাম প্রিয়ে,
এ পথে আসিতে দেখি চমকিয়ে
আছে সেই কূপ, আছে সে যুগলতরু ।
তুমি নাই, আছে তৃষিত স্মৃতির মরু ।
এ কূপের তলে মোর যক্ষের ধন
একটি দিনের দুর্লভ সেইক্ষন
চিরকাল ভরি রহিল লুকানো,
ওগো অগোচরা জান নাহি জান ;
আর কোনো দিনে অন্য যুগের প্রিয়া
তারে আর-কারে দিবে কি উদ্ধারিয়া ।
১ সেপ্টেম্বর ১৯২৮
|