|
ছায়া
আঁখি চাহে তব মুখ-পানে,
তোমারে জেনেও নাহি জানে ।
কিসের নিবিড় ছায়া
নিয়েছে স্বপনকায়া
তোমার মর্মের মাঝখানে ।
হাসি কাঁপে অধরের শেষে
দূরতর অশ্রুর আবেশে ।
বসন্তকূজিত রাতে
তোমার বাণীর সাথে
অশ্রুত কাহার বাণী মেশে ।
মনে তব গুপ্ত কোন্ নীড়ে
অব্যক্ত ভাবনা এসে ভিড়ে ।
বসন্তপঞ্চম রাগে
বিচ্ছেদের ব্যথা লাগে
সুগভীর ভৈরবীর মিড়ে ।
তোমার শ্রাবণপূর্ণিমাতে
বাদল রয়েছে সাথে সাথে ।
হে করুণ ইন্দ্রধনু,
তোমার মানসী তনু
জন্ম নিল আলোতে ছায়াতে ।
অদৃশ্যের বরণের ডালা,
প্রচ্ছন্ন প্রদীপ তাহে জ্বালা ।
মিলন নিকুঞ্জতলে
দিয়েছ আমার গলে
বিরহের সূত্রে গাঁথা মালা ।
তব দানে ওগো আনমনা,
দিয়ো মোরে তোমার বেদনা ।
যে বন কুয়াশা-ছাওয়া
ঝরা ফুল সেথা পাওয়া,
থাক্ তাহে শিশিরের কণা ।
৫ ভাদ্র ১৩৩৫
বাসরঘর
তোমারে ছাড়িয়া যেতে হবে
রাত্রি যবে
উঠিবে উন্মনা হয়ে প্রভাতের রথচক্ররবে ।
হায় রে বাসরঘর,
বিরাট বাহির সে যে বিচ্ছেদের দস্যু ভয়ংকর ।
তবু সে যতই ভাঙেচোরে
মালাবদলের হার যত দেয় ছিন্ন ছিন্ন করে,
তুমি আছ ক্ষয়হীন
অনুদিন ;
তোমার উৎসব
বিচ্ছিন্ন না হয় কভু, না হয় নীরব ।
কে বলে তোমারে ছেড়ে গিয়েছে যুগল
শূন্য করি তব শয্যাতল ।
যায় নাই, যায় নাই,
নব নব যাত্রীমাঝে ফিরে ফিরে আসিছে তারাই
তোমার আহ্বানে
উদার তোমার দ্বার-পানে ।
হে
বাসরঘর,
বিশ্বে প্রেম মৃত্যুহীন, তুমিও অমর ।
[বাঙ্গালোর
আষাঢ় ১৩৩৫]
বিচ্ছেদ
রাত্রি যবে সাঙ্গ হল , দূরে চলিবারে
দাঁড়াইলে দ্বারে ।
আমার কণ্ঠের যত গান
করিলাম দান ।
তুমি হাসি
মোর হাতে দিলে তব বিরহের বাঁশি ।
তার পরদিন হতে
বসন্তে শরতে
আকাশে বাতাসে উঠে খেদ ,
কেঁদে কেঁদে ফিরে বিশ্বে বাঁশি আর গানের বিচ্ছেদ ।
বাঙ্গালোর
আষাঢ় ১৩৩৫ |