ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

            দায়মোচন
চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল,
      এ কথা বলিতে চাও বোলো ।
এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল ;
      তার পরে যদি তুমি ভোলো
মনে করাব না আমি শপথ তোমার,
আসা যাওয়া দু দিকেই খোলা রবে দ্বার,
যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই,
       আবার আসিতে হয় এসো ।
সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই,
       তবু ভালোবাসো যদি বেসো ।

বন্ধু, তোমার পথ সম্মুখে জানি,
      পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা ।
অশ্রুনয়নে বৃথা শিরে কর হানি
      যাত্রায় নাহি দিব বাধা ।
আমি তব জীবনের লক্ষ্য তো নহি,
ভুলিতে ভুলিতে যাবে হে চিরবিরহী ;
তোমার যা দান তাহা রহিবে নবীন
       আমার স্মৃতির আঁখিজলে,
আমার যা দান সেও জেনো চিরদিন
       রবে তব বিস্মৃতিতলে ।

দূরে চলে যেতে যেতে দ্বিধা করি মনে
       যদি কভু চেয়ে দেখ ফিরে
হয়তো দেখিবে আমি শূন্য শয়নে
       নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে ।
মার্জনা করো যদি পাব তবে বল,
করুণা করিলে নাহি ঘোচে আঁখিজল,
সত্য যা দিয়েছিলে থাক্‌ মোর তাই,
      দিবে লাজ তার বেশি দিলে ।

দুঃখ বাঁচাতে যদি কোনোমতে চাই
     দুঃখের মূল্য না মিলে ।

দুর্বল ম্লান করে নিজ অধিকার
     বরমাল্যের অপমানে ।
যে পারে সহজে নিতে যোগ্য সে তার ,
     চেয়ে নিতে সে কভু না জানে ।
প্রেমেরে বাড়াতে গিয়ে মিশাব না ফাঁকি ,
সীমারে মানিয়া তার মর্যাদা রাখি ,
যা পেয়েছি সেই মোর অক্ষয় ধন ,
     যা পাই নি বড়ো সেই নয় ।
চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষণিক মিলন
    চিরবিচ্ছেদ করি জয় ।

২৩ অগষ্ট ১৯২৮