|
দিনান্তে
বাহিরে তুমি নিলে না মোরে, দিবস গেল বয়ে,
তাহাতে মোর যা হয় হোক ক্ষতি,
অন্তরে যা দিবার ছিল মিলিছে এক হয়ে,
চরণে তব গোপনে তার গতি ।
লুকায়ে ছিল ছায়াতে ফুল, ভরিল তব ডালি,
গন্ধভরা বন্দনাতে দিয়েছি ধূপ জ্বালি,
প্রদীপ ছিল মলিনশিখা, ধোঁয়াতে ছিল কালি,
দীপ্ত হয়ে উঠিছে তার জ্যোতি ।
বাহির হতে না যদি লও পূজার এই ডালি
চরণে তব গোপনে তার গতি ।
নাহয় তুমি ওপারে থাকো, এপারে আমি থাকি
নীরব এই নীরস মরুতীরে,
অন্ধকারে সন্ধ্যাতারা নয়নে দেয় আঁকি
সুদূর তব উদার আঁখিটিরে ।
ব্যথায় মম তোমারি ছায়া পড়িছে মোর প্রাণে,
বিরহ হানি তোমারি বাণী মিলিছে মোর গানে,
অলখ স্রোতে ভাবনা ধায় তোমার তটপানে
এপার হতে বহিয়া মোর নতি ।
যে বীণা তব মন্দিরেতে বাজে নি তানে তানে
চরণে তব নীরবে তার গতি ।
আম্বোয়াজ
১ শ্রাবণ ১৩৩৪
অবশেষে
বাহির-পথে বিবাগী হিয়া
কিসের খোঁজে গেলি,
আয় রে ফিরে আয় ।
পুরানো ঘরে দুয়ার দিয়া
ছেঁড়া আসন মেলি
বসিবি নিরালায় ।
সারাটা বেলা সাগর-ধারে
কুড়ালি যত নুড়ি,
নানারঙের শামুক-ভারে
বোঝাই হল ঝুড়ি,
লবণ-পারাবারের পারে
প্রখর তাপে পুড়ি
মরিলি পিপাসায় ;
ঢেউয়ের দোল তুলিল রোল
অকূলতল জুড়ি,
কহিল বাণী কী জানি কী ভাষায় ।
আয় রে ফিরে আয় ।
বিরাম হল আরামহীন
যদি রে তোর ঘরে,
না যদি রয় সাথি,
সন্ধ্যা যদি তন্দ্রালীন
মৌন অনাদরে,
না যদি জ্বালে বাতি ;
তবু তো আছে আঁধার কোণে
ধ্যানের ধনগুলি,
একেলা বসি আপনমনে
মুছিবি তার ধূলি,
গাঁথিবি তারে রতনহারে
বুকেতে নিবি তুলি
মধুর বেদনায় ।
কাননবীথি ফুলের রীতি
নাহয় গেছে ভুলি,
তারকা আছে গগন-কিনারায় ।
আয় রে ফিরে আয় ।
শান্তিনিকেতন
২৯
শ্রাবণ ১৩৩৪ |