ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

                মহুয়া
বিরক্ত আমার মন কিংশুকের এত গর্ব দেখি ।
           নাহি ঘুচিবে কি
অশোকের অতিখ্যাতি, বকুলের মুখর সম্মান ।
         ক্লান্ত কি হবে না কবিগান
         মালতীর মল্লিকার
         অভ্যর্থনা রচি বারংবার ?
রে মহুয়া, নামখানি গ্রাম্য তোর, লঘু ধ্বনি তার,
        উচ্চশিরে তবু রাজকুলবনিতার
       গৌরব রাখিস ঊর্ধ্বে ধরে ।
           আমি তো দেখেছি তোরে
বনস্পতিগোষ্ঠী-মাঝে অরণ্যসভায়
       অকুণ্ঠিত মর্যাদায়
           আছিস দাঁড়ায়ে ;
       শাখা যত আকাশে বাড়ায়ে

শাল তাল সপ্তপর্ণ অশ্বত্থের সাথে
        প্রথম প্রভাতে
সূর্য-অভিনন্দনের তুলেছিস গম্ভীর বন্দন ।
অপ্রসন্ন আকাশের ভ্রূভঙ্গে যখন
     অরণ্য উদ্‌বিগ্ন করি তোলে,
সেই কালবৈশাখীর ক্রুদ্ধ কলরোলে
     শাখাব্যূহে ঘিরে
আশ্বাস করিস দান শঙ্কিত বিহঙ্গ অতিথিরে ।
     অনাবৃষ্টিক্লিষ্ট দিনে,
         বিশীর্ণ বিপিনে,
    বন্যবুভুক্ষুর দল ফেরে রিক্ত পথে,
দুর্ভিক্ষের ভিক্ষাঞ্জলি ভরে তারা তোর সদাব্রতে ।

বহুদীর্ঘ সাধনায় সুদৃঢ় উন্নত
          তপস্বীর মতো
    বিলাসের চাঞ্চল্যবিহীন,
সুগম্ভীর সেই তোরে দেখিয়াছি অন্যদিন
           অন্তরে অধীরা
ফাল্গুনের ফুলদোলে কোথা হতে জোগাস মদিরা
            পুষ্পপুটে ;
বনে বনে মৌমাছিরা চঞ্চলিয়া উঠে ।
    তোর সুরাপাত্র হতে বন্যনারী
সম্বল সংগ্রহ করে পূর্ণিমার নৃত্যমত্ততারই ।
           রে অটল, রে কঠিন,
      কেমনে গোপনে রাত্রিদিন
তরল যৌবনবহ্নি মজ্জায় রাখিয়াছিলি ভরে ।
         কানে কানে কহি তোরে —
বধূরে যেদিন পাব, ডাকিব ‘ মহুয়া ' নাম ধরে ।

[জোড়াসাঁকো]
৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৮