ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

            মুক্তরূপ
তোমারে আপন কোণে স্তব্ধ করি যবে
       পূর্ণরূপে দেখি না তোমায়,
মোর রক্ততরঙ্গের মত্ত কলরবে
      বাণী তব মিশে ভেসে যায় ।
তোমার পাখারে আমি রুদ্ধ করি বুঝি,
সে বন্ধনে তোমারেই পাই না তো খুঁজি,
তুমি তো ছায়ার নহ, প্রভাতবিলাসী,
     আলোতেই তোমার প্রকাশ,
তোমার ডানার ছন্দে তব উচ্চ হাসি
     যাক চলে ভেদিয়া আকাশ ।

জানি, যদি লুব্ধ মনে কৃপণতা করি,
     ঐশ্বর্যেও দৈন্য না ঘুচায়,
ব্যর্থ ভাণ্ডারের তবে রহিব প্রহরী,
      বঞ্চনা করিব আপনায় ।
আত্মা যেথা লুপ্ত থাকে সেথা উপচ্ছায়া
মুগ্ধ চেতনার 'পরে রচে তার মায়া,
    তাই নিয়ে ভুলাব কি আমার জীবন ।
         গাঁথিব কি বুদ্‌বুদের হার ।
তোমারে আড়াল ক'রে তোমার স্বপন
      মিটাবে কি আকাঙ্ক্ষা আমার ।

বিরাজে মানবশৌর্যে সূর্যের মহিমা,
      মর্তে সে তিমিরজয়ী প্রভু,
অজেয় আত্মার রশ্মি, তারে দিবে সীমা
      প্রেমের সে ধর্ম নহে কভু ।
যাও চলি রণক্ষেত্রে, লও শঙ্খ তুলি,
পশ্চাতে উড়ুক তব রথচক্রধূলি,
নির্দয় সংগ্রাম-অন্তে মৃত্যু যদি আসি
        দেয় ভালে অমৃতের টিকা,
জানি যেন, সে তিলকে উঠিল প্রকাশি
       আমারও জীবনজয়লিখা ।

আমার প্রাণের শক্তি প্রাণে তব লহো,
       মোর দুঃখযজ্ঞের শিখায়
জ্বালিবে মশাল তব, আতঙ্কদুঃসহ
      রাত্রিরে দহি সে যেন যায় ।
তোমারে করিনু দান শ্রদ্ধার পাথেয়,
যাত্রা তব ধন্য হোক, যাহা কিছু হেয়
ধূলিতলে হোক ধূলি, দ্বিধা যাক মরি,
     চরিতার্থ হোক ব্যর্থতাও,
তোমার বিজয়মাল্য হতে ছিন্ন করি
      আমারে একটি পুষ্প দাও ।

২৯ অগষ্ট ১৯২৮