ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

                 পরিচয়
তখন বর্ষণহীন অপরাহ্নমেঘে
         শঙ্কা ছিল জেগে ;
ক্ষণে ক্ষণে তীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায়
         বায়ু হেঁকে যায় ;
শূন্য যেন মেঘচ্ছিন্ন রৌদ্ররাগে পিঙ্গল জটায়
     দুর্বাসা হানিছে ক্রোধ রক্তচক্ষুকটাক্ষচ্ছটায় ।

সে দুর্যোগে এনেছিনু তোমার বৈকালী,
            কদম্বের ডালি ।
বাদলের বিষণ্ণ ছায়াতে
           গীতহারা প্রাতে
নৈরাশ্যজয়ী সে ফুল রেখেছিল কাজল প্রহরে
রৌদ্রের স্বপনছবি রোমাঞ্চিত কেশরে কেশরে ।

মন্থর মেঘেরে যবে দিগন্তে ধাওয়ায়
         পুবন হাওয়ায়,
    কাঁদে বন শ্রাবণের রাতে
        প্লাবনের ঘাতে,
তখনো নির্ভীক নীপ গন্ধ দিল পাখির কুলায়ে,
বৃন্ত ছিল ক্লান্তিহীন, তখনো সে পড়ে নি ধুলায় ।
       সেই ফুলে দৃঢ় প্রত্যাশার
            দিনু উপহার ।

সজল সন্ধ্যায় তুমি এনেছিলে সখী,
       একটি কেতকী ।
          তখনো হয় নি দীপ জ্বালা,
               ছিলাম নিরালা ।
সারি-দেওয়া সুপারির আন্দোলিত সঘন সবুজে
জোনাকি ফিরিতেছিল অবিশ্রান্ত কারে খুঁজে খুঁজে ।

দাঁড়াইলে দুয়ারের বাহিরে আসিয়া,
          গোপনে হাসিয়া ।
       শুধালেম আমি কৌতূহলী
             ‘ কী এনেছ ' বলি ।
পাতায় পাতায় বাজে ক্ষণে ক্ষণে বারিবিন্দুপাত,
গন্ধঘন প্রদোষের অন্ধকারে বাড়াইনু হাত ।

ঝংকারি উঠিল মোর অঙ্গ আচম্বিতে
            কাঁটার সংগীতে ।
       চমকিনু কী তীব্র হরষে
             পরুষ পরশে ।
সহজ-সাধন-লব্ধ নহে সে মুগ্ধের নিবেদন,
অন্তরে ঐশ্বর্যরাশি, আচ্ছাদনে কঠোর বেদন ।
        নিষেধে নিরুদ্ধ যে সম্মান
            তাই তব দান ।

চৌরঙ্গি [কলিকাতা]

২০ অগস্ট ১৯২৮