|
পরিণয়
শুভক্ষণ আসে সহসা আলোক জ্বেলে,
মিলনের সুধা পরম ভাগ্যে মেলে ।
একার ভিতরে একের দেখা না পাই,
দুজনার যোগে পরম একের ঠাঁই,
সে একের মাঝে আপনারে খুঁজে পেলে ।
আপনার দান সেই তো চরম দান,
আকাশে আকাশে তারি লাগি আহ্বান ।
ফুলবনে তাই রূপের তুফান লাগে,
নিশীথে তারায় আলোর ধেয়ান জাগে,
উদয়সূর্য গাহে জাগরণী গান ।
নীরবে গোপনে মর্তভুবন- ' পরে
অমরাবতীর সুরসুরধুনী ঝরে ।
যখনি হৃদয়ে পশিল তাহার ধারা
নিজেরে জানিলে সীমার-বাঁধন-হারা,
স্বর্গের দীপ জ্বলিল মাটির ঘরে ।
আজি বসন্ত চিরবসন্ত হোক,
চিরসুন্দরে মজুক তোমার চোখ ।
প্রেমের শান্তি চিরশান্তির বাণী
জীবনের ব্রতে দিনে রাতে দিক আনি,
সংসারে তব নামুক অমৃতলোক ।
আশ্বিন? ১৩৩৫
মিলন
সৃষ্টির প্রাঙ্গণে দেখি বসন্তে অরণ্যে ফুলে ফুলে
দুটিরে মিলানো নিয়ে খেলা ।
রেণুলিপি বহি বায়ু প্রশ্ন করে মুকুলে মুকুলে
কবে হবে ফুটিবার বেলা ।
তাই নিয়ে বর্ণচ্ছটা, চঞ্চলতা শাখায় শাখায়,
সুন্দরের ছন্দ বহে প্রজাপতি পাখায় পাখায়,
পাখির সংগীত-সাথে বন হতে বনান্তরে ধায়
উচ্ছ্বসিত উৎসবের মেলা ।
সৃষ্টির সে রঙ্গ আজি দেখি মানবের লোকালয়ে
দুজনায় গ্রন্থির বাঁধন ।
অপূর্ব জীবন তাহে জাগিবে বিচিত্র রূপ লয়ে
বিধাতার আপন সাধন ।
ছেড়েছে সকল কাজ, রঙিন বসনে ওরা সেজে
চলেছে প্রান্তর বেয়ে, পথে পথে বাঁশি চলে বেজে,
পুরানো সংসার হতে জীর্ণতার সব চিহ্ন মেজে
রচিল নবীন আচ্ছাদন ।
যাহা সবচেয়ে সত্য সবচেয়ে খেলা যেন তাই,
যেন সে ফাল্গুনকলোল্লাস ।
যেন তাহা নিঃসংশয়, মর্তের ম্লানতা যেন নাই,
দেবতার যেন সে উচ্ছ্বাস ।
সহজে মিশিছে তাই আত্মভোলা মানুষের সনে
আকাশের আলো আজি গোধূলির রক্তিম লগনে,
বিশ্বের রহস্যলীলা মানুষের উৎসবপ্রাঙ্গণে
লভিয়াছে আপন প্রকাশ ।
বাজা তোরা বাজা বাঁশি, মৃদঙ্গ উঠুক তালে মেতে
দুরন্ত নাচের নেশা পাওয়া ।
নদীপ্রান্তে তরুগুলি ওই দেখ্ আছে কান পেতে,
ওই সূর্য চাহে শেষ চাওয়া ।
নিবি তোরা তীর্থবারি সে অনাদি উৎসের প্রবাহে
অনন্তকালের বক্ষ নিমগ্ন করিতে যাহা চাহে
বর্ণে গন্ধে রূপে রসে, তরঙ্গিত সংগীত উৎসাহে
জাগায় প্রাণের
মত্ত হাওয়া ।
সহস্র দিনের মাঝে আজিকার এই দিনখানি
হয়েছে স্বতন্ত্র চিরন্তন ।
তুচ্ছতার বেড়া হতে মুক্তি তারে কে দিয়েছে আনি
প্রত্যহের ছিঁড়েছে বন্ধন ।
প্রাণদেবতার হাতে জয়টিকা পরেছে সে ভালে,
সূর্যতারকার সাথে স্থান সে পেয়েছে সমকালে,
সৃষ্টির প্রথম বাণী যে প্রত্যাশা আকাশে জাগালে
তাই এল করিয়া বহন ।
২০ আশ্বিন ১৩৩৫ |