|
প্রচ্ছন্না
বিদেশে ওই সৌধশিখর- ' পরে
ক্ষণকালের তরে
পথ হতে যে দেখেছিলেম, ওগো আধেক-দেখা
মনে হল তুমি অসীম একা
দাঁড়িয়েছিলে যেন আমার একটি বিজন খনে
আর কিছু নাই সেথায় ত্রিভুবনে ।
সামনে তোমার মুক্ত আকাশ, অরণ্যতল
নীচে,
ক্ষণে ক্ষণে ঝাউয়ের শাখা প্রলাপ মর্মরিছে ।
মুখ
দেখা না যায়,
পিঠের'পরে বেণীটি লুটায় ।
থামের পাশে হেলান-দেওয়া ঈষৎ দেখি আধখানি ওই দেহ,
অসম্পূর্ণ কয়টি রেখায় কী যেন সন্দেহ ।
বন্দিনী কি ভোগের কারাগারে,
ভাবনা তোমার উড়ে চলে দূর দিগন্তপারে ?
সোনার বরন শস্যখেতে, কোন্-সে নদীতীরে
পূজারীদের চলার পথে, উচ্চচূড়া দেবতামন্দিরে
তোমার চিরপরিচিত
প্রভাত-আলোখানি,
তারি স্মৃতি চক্ষে তোমার জল কি দিল আনি ।
কিম্বা তুমি
রাজেন্দ্রসোহাগী,
সেই বহুবল্লভের প্রেমে দ্বিধার দুঃখ হৃদয়ে রয় জাগি,
প্রশ্ন কি তাই শুধাও
নক্ষত্রেরে
সপ্তঋষির কাছে তোমার প্রণামখানি সেরে ।
হয়তো বৃথাই
সাজ, '
তৃপ্তিবিহীন চিত্ততলে তৃষ্ণা-অনল দহন করে আজও ;
তাই কি শূন্য আকাশ-পানে চাও,
উপেক্ষিত যৌবনেরি
ধিক্কার জানাও ?
কিংবা আছ চেয়ে
আসবে সে কোন্ দুঃসাহসী গোপন পন্থা বেয়ে,
বক্ষ
তোমার দোলে,
রক্ত নাচে ত্রাসের উতরোলে ।
স্তব্ধ আছে তরুশ্রেণী মরণছায়া ঢাকা,
শূন্যে ওড়ে অদৃশ্য কোন্ পাখা ।
আমি পথিক যাব-যে কোন্ দূরে ;
তুমি রাজার পুরে
মাঝে মাঝে কাজের অবসরে
বাহির হয়ে আসবে হোথায় ওই
অলিন্দ- ' পরে,
দেখবে চেয়ে অকারণে স্তব্ধ নেত্রপাতে
গোধূলিবেলাতে
বনের সবুজ তরঙ্গ পারায়ে
নদীর প্রান্তরেখায় যে পথ গিয়েছে হারায়ে ।
তোমার ইচ্ছা চলবে
কল্পনাতে
সুদূর পথে আভাসরূপী সেই অজানার সাথে
পান্থ যে জন নিত্য চলে যায় ।
আমি
পথিক হায়,
পিছন-পানে এই বিদেশের সুদূর সৌধশিরে
ইচ্ছা
আমার পাঠাই ফিরে ফিরে
ছায়ায়-ঢাকা আধেক-দেখা তোমার বাতায়নে,
যে মুখ তোমার লুকিয়ে ছিল সে মুখ আঁকি মনে ।
১০ আশ্বিন ১৩৩৫
দর্পণ
দর্পণ লইয়া তারে কী প্রশ্ন শুধাও একমনে
হে সুন্দরী, কী সংশয় জাগে তব উদ্বিগ্ন নয়নে ।
নিজেরে দেখিতে চাও বাহিরে রাখিয়া আপনারে
যেন আর কারো চোখে ; আর কারো জীবনের দ্বারে
খুঁজিছ আপন স্থান । প্রেমের অর্ঘ্যের কোনো ত্রুটি
দেখ কি মুখের কোনোখানে । তাই তব আঁখিদুটি
নিজেরে কি করিছে ভর্ৎসনা । সাজায়ে লইয়া সর্বদেহে
স্বর্গের গর্বের ধন, তবে যেতে চাও তার গেহে ?
জান না কি হে রমণী, দর্পণে যা দেখিছ তা ছায়া,
পার না রচিতে কভু তাই দিয়ে চিরস্থায়ী মায়া ।
তিলোত্তমা অনুপমা সুরেন্দ্রের প্রমোদপ্রাঙ্গণে
কঙ্কণঝংকারে আর নৃত্যলোল নূপুরনিক্বণে
নাচিয়া বাহিরে চলে যায় । লয়ে আত্মনিবেদন
গৌরবে জিনিলা শচী ইন্দ্রলোকে নন্দন-আসন ।
১৫ আশ্বিন ১৩৩৫ |