ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

           প্রতীক্ষা
তোমার প্রত্যাশা লয়ে আছি প্রিয়তমে,
        চিত্ত মোর তোমারে প্রণমে ।
অয়ি অনাগতা, অয়ি নিত্যপ্রত্যাশিতা,
       হে সৌভাগ্যদায়িনী দয়িতা ।
   সেবাকক্ষে করি না আহ্বান ;
   শুনাও তাহারি জয়গান
যে বীর্য বাহিরে ব্যর্থ, যে ঐশ্বর্য ফিরে অবাঞ্ছিত
চাটুলুব্ধ জনতায় যে তপস্যা নির্মম লাঞ্ছিত ।

দীর্ঘ এ দুর্গম পথ মধ্যাহ্নতাপিত,
         অনিদ্রায় রজনী যাপিত ।
শুষ্কবাক্যবালুকার ঘূর্ণিপাক-ঝড়ে
        পথিক ধুলায় শুয়ে পড়ে ।
    নাহি চাহি মধুর শুশ্রূষা,
    হে কল্যাণী, তুমি নিষ্কলুষা,
তোমার প্রবল প্রেম প্রাণভরা সৃষ্টিনিশ্বাস,
উদ্দীপ্ত করুক চিত্তে ঊর্ধ্বশিখা বিপুল বিশ্বাস ।

ধূসর প্রদোষে আজি অস্তপথ জুড়ে
         নিশাচর মিথ্যা চলে উড়ে ।
আলো-আঁধারের পাকে না মিলে কিনারা,
        দীর্ঘ যে দেখায় হ্রস্ব যারা ।
     যাচে দেশ মোহের দীক্ষারে,
     কাঁদে দিক বিধির ধিক্কারে,
ভাগ্যের ভিক্ষুক চাহে কুটিল সিদ্ধির আশীর্বাদ,
ধূলিতে-খুঁটিয়া-তোলা বহুজন-উচ্ছিষ্ট প্রসাদ ।

কুৎসায় বিস্তারি দেয় পঙ্কে-ক্লিন্ন গ্লানি,
      কলহেরে শৌর্য ব ' লে জানি,
ভাবি, দুর্যোগের সিন্ধু তরিব হেলায়
     বঞ্চনার ভঙ্গুর ভেলায় ।
   বাহিরে মুক্তিরে ব্যর্থ খুঁজি,
   অন্তরে বন্ধন করি পুঁজি,
অশক্তি মজ্জায় রক্তে, শক্তি বলি জানি ছলনাকে,
মর্মগত খর্বতায় সর্বকালে খর্ব করি রাখে ।

হে বাণীরূপিণী, বাণী জাগাও অভয়,
      কুজ্ঝটিকা চিরসত্য নয় ।
চিত্তেরে তুলুক ঊর্ধ্বে মহত্ত্বের পানে
      উদাত্ত তোমার আত্মদানে ।
   হে নারী, হে আত্মার সঙ্গিনী,
   অবসাদ হতে লহো জিনি,
স্পর্ধিত কুশ্রীতা নিত্য যতই করুক সিংহনাদ,
হে সতী সুন্দরী, আনো তাহার নিঃশব্দ প্রতিবাদ ।

১৭ অগষ্ট ১৯২৮