|
ভাবিনী
ভাবিছ যে ভাবনা একা-একা
দুয়ারে বসি চুপে চুপে,
সে যদি সম্মুখে দিত দেখা
মূর্তি ধরি কোনো রূপে —
হয়তো দেখিতাম শুকতারা
দিবস পার হয়ে দিশাহারা
এসেছে সন্ধ্যার কিনারাতে
সাঁঝের তারাদের দলে,
উদাস স্মৃতিভরা আঁখিপাতে
উষার হিমকণা জলে ।
হয়তো দেখিতাম, বাদলে যে
শ্রাবণে এনেছিল বাণী
শরতে জলভার এল ত্যেজে
শুভ্র সেই মেঘখানি ।
চলে সে সন্ন্যাসী দিশে
দিশে
রবির আলোকের পিয়াসী সে,
আকাশ আপনারই লিপি লিখে
পড়িতে দিল যেন তারে,
সে তাই চেয়ে চেয়ে
অনিমিখে
বুঝিতে বুঝি নাহি পারে ।
হয়তো দেখিতাম, রজনীতে
সে যেন সুরহারা বীণা
বিজন দীপহীন দেহলিতে
মৌন-মাঝে আছে লীনা ।
একদা বেজেছিল যে
রাগিণী
তারে সে ফিরে যেন
নিল চিনি
তারার কিরণের
কম্পনে
নীরব আকাশের মাঝে,
সুদূর
সুরসভা-অঙ্গনে
সুরের স্মৃতি যেথা বাজে ।
১৫ আশ্বিন
১৩৩৫
একাকী
চন্দ্রমা আকাশতলে পরম একাকী —
আপন নিঃশব্দ গানে আপনারই শূন্য দিল ঢাকি ।
অয়ি
একাকিনী,
অলিন্দে নিশীথরাত্রে শুনিছ সে জ্যোৎস্নার রাগিণী
চেয়ে শূন্যপানে,
যে রাগিণী অসীমের উৎস হতে আনে
অনাদি বিরহরস, তাই দিয়ে ভরিয়া আঁধার
কোন্ বিশ্ববেদনার মহেশ্বরে দেয় উপহার ।
তারি সাথে মিলায়েছ তব
দৃষ্টিখানি,
চোখে অনিবর্চনীয় বাণী,
মিলায়েছ যেন তব জন্মান্তর হতে নিয়ে আসা
দীর্ঘনিশ্বাসের ভাষা ।
মিলায়েছ, সুগম্ভীর দুঃখের মাঝারে
যে মুক্তি রয়েছে লীন বন্ধহীন শান্ত অন্ধকারে ।
অরণ্যে অরণ্যে আজি সাগরে সাগরে,
জনশূন্য তুষারশিখরে
কোন্ মহাশ্বেতা, কোন্ তপস্বিনী বিছালো অঞ্চল,
স্তব্ধ
অচঞ্চল,
অনন্তেরে সম্বোধিয়া কহিল সে ঊর্ধ্বে তুলি আঁখি,
তুমিও একাকী ।
১৮ আশ্বিন ১৩৩৫
|