ফাল্গুনী
ফাল্গুনী' নাটকের সূচি
দ্বিতীয় দৃশ্য
দ্বিতীয় দৃশ্যের গীতি-ভূমিকা
প্রবীণের দ্বিধা
১
দুরন্ত প্রাণের গান
আমরা খুঁজি খেলার সাথি।
ভোর না হতে জাগাই তাদের
ঘুমায় যারা সারা রাতি।
আমরা ডাকি পাখির গলায়,
আমরা নাচি বকুলতলায়,
মন ভোলাবার মন্ত্র জানি,
হাওয়াতে ফাঁদ আমরা পাতি।
মরণকে তো মানি নে রে,
কালের ফাঁসি ফাঁসিয়ে দিয়ে
লুঠ-করা ধন নিই যে কেড়ে।
আমরা তোমার মনোচোরা,
ছাড়ব না গো তোমায় মোরা,
চলেছ কোন্ আঁধারপানে
সেথাও জ্বলে মোদের বাতি॥
২
শীতের বিদায়-গান
ছাড়্ গো তোরা ছাড়্ গো,
আমি চলব সাগর-পার গো।
বিদায়-বেলায় এ কী হাসি,
ধরলি আগমনীর বাঁশি।
যাবার সুরে আসার সুরে
করলি একাকার গো।
সবাই আপনপানে
আমায় আবার কেন টানে।
পুরানো শীত পাতা-ঝরা,
তারে এমন নূতন-করা?
মাঘ মরিল ফাগুন হয়ে
খেয়ে ফুলের মার গো॥
৩
নবযৌবনের গান
আমরা নূতন প্রাণের চর।
আমরা থাকি পথে ঘাটে
নাই আমাদের ঘর।
নিয়ে পক্ক পাতার পুঁজি
পালাবে শীত ভাবছ বুঝি।
ও-সব কেড়ে নেব, উড়িয়ে দেব
দখিন হাওয়ার 'পর।
তোমায় বাঁধব নূতন ফুলের মালায়
বসন্তের এই বন্দীশালায়।
জীর্ণ জরার ছদ্মরূপে
এড়িয়ে যাবে চুপে চুপে?
তোমার সকল ভূষণ ঢাকা আছে
নাই যে অগোচর গো॥
৪
উদ্ভ্রান্ত শীতের গান
ছাড়্ গো আমায় ছাড়্ গো–
আমি
চলব সাগর-পার গো।
রঙের খেলার, ভাই রে,
আমার সময় হাতে নাই রে।
তোমাদের ওই সবুজ ফাগে
চক্ষে আমার ধাঁদা লাগে,
আমায় তোদের প্রাণের দাগে
দাগিস নে ভাই আর গো॥
দ্বিতীয় দৃশ্য
সন্ধান
ঘাট
ওগো ঘাটের মাঝি, ঘাটের মাঝি, দরজা খোলো।
মাঝি। কেন গো, তোমরা কাকে চাও।
আমরা বুড়োকে খুঁজতে বেরিয়েছি।
মাঝি। কোন্ বুড়োকে।
চন্দ্রহাস।
কোন্ বুড়োকে না। বুড়োকে।
মাঝি। তিনি কে।
চন্দ্রহাস।
আহা, আদ্যিকালের বুড়ো।
মাঝি। ও, বুঝেছি। তাকে নিয়ে করবে কী।
বসন্ত-উৎসব করব।
মাঝি। বুড়োকে নিয়ে বসন্ত-উৎসব! পাগল হয়েছ?
পাগল হঠাৎ হই নি। গোড়া থেকেই এই দশা।
আর অন্তিম পর্যন্তই এই ভাব।
গান
আমাদের খেপিয়ে বেড়ায় যে
কোথায় নুকিয়ে থাকে রে।
ছুটল বেগে ফাগুন হাওয়া
কোন্ খেপামির নেশায় পাওয়া।
ঘূর্ণা হাওয়ায় ঘুরিয়ে দিল সূর্যতারাকে।
মাঝি। ওহে, তোমাদের হাওয়ার জোর আছে--দরজায় ধাক্কা লাগিয়েছে।
এখন সেই বুড়োটার খবর দাও।
মাঝি। সেই যে বুড়িটা রাস্তার মোড়ে ব'সে চরকা কাটে তাকে জিজ্ঞাসা করলে হয় না?
জিজ্ঞাসা করেছিলুম–সে বলে, সামনে দিয়ে কত ছায়া যায়, কত ছায়া আসে, কাকেই বা চিনি।
ও যে একই জায়গায় ব'সে থাকে, ও কারো ঠিকানা জানে না।
মাঝি, তুমি ঘাটে ঘাটে অনেক ঘুরেছ,
তুমি নিশ্চয় বলতে পার কোথায় সেই–
মাঝি। ভাই, আমার ব্যাবসা হচ্ছে পথ ঠিক করা– কাদের পথ, কিসের পথ, সে আমার জানবার দরকার
হয় না। আমার দৌড় ঘাট পর্যন্ত, ঘর পর্যন্ত না।
আচ্ছা চলো তো, পথগুলো পরখ করে দেখা যাক।
গান
কোন্ খেপামির তালে নাচে
পাগল সাগরনীর।
সেই তালে যে পা ফেলে যাই,
রইতে নারি স্থির।
চল্ রে সোজা, ফেল্ রে বোঝা,
রেখে দে তোর রাস্তা খোঁজা,
চলার বেগে পায়ের তলায়
রাস্তা জেগেছে॥
মাঝি। ঐ যে কোটাল আসছে, ওকে জিজ্ঞাসা করলে হয়–
আমি পথের খবর জানি, ও পথিকের খবর জানে।
ওহে কোটাল হে, কোটাল হে।
কোটাল। কে গো, তোমরা কে।
আমাদের যা দেখছ তাই, পরিচয় দেবার কিছুই নেই।
কোটাল। কী চাই।
চন্দ্রহাস।
বুড়োকে খুঁজতে বেরিয়েছি।
কোটাল। কোন্ বুড়োকে।
সেই চিরকালের বুড়োকে।
কোটাল। এ তোমাদের কেমন খেয়াল। তোমরা খোঁজ তাকে? সে-ই তো তোমাদের খোঁজ করছে।
চন্দ্রহাস।
কেন বলো তো।
কোটাল। সে নিজের হিমরক্তটা গরম করে নিতে চায়, তপ্ত যৌবনের 'পরে তার বড়ো লোভ।
চন্দ্রহাস।
আমরা তাকে কষে গরম করে দেব, সে- ভাবনা নেই। এখন দেখা পেলে হয়। তুমি তাকে দেখেছ?
কোটাল। আমার রাতের বেলার পাহারা–দেখি ঢের লোক, চেহারা বুঝি নে। কিন্তু বাপু, তাকেই সকলে
বলে ছেলেধরা, উলটে তোমরা তাকে ধরতে চাও--এটা তো পুরো পাগলামি।
দেখেছ? ধরা পড়েছি। পাগলামিই তো। চিনতে দেরি হয় না।
কোটাল। আমি কোটাল, পথ-চলতি যাদের দেখি সবাই এক ছাঁদের। তাই অদ্ভুত কিছু দেখলেই চোখে ঠেকে।
ঐ শোনো! পাড়ার ভদ্রলোকমাত্রই ঐ কথা বলে--আমরা অদ্ভুত।
আমরা অদ্ভুত বৈকি, কোনো ভুল নেই।
কোটাল। কিন্তু তোমরা ছেলেমান্ষি করছ।
ঐ রে, আবার ধরা পড়েছি। দাদাও ঠিক ঐ কথাই বলে।
অতি প্রাচীন কাল থেকে আমরা ছেলেমান্ষিই করছি।
ওতে আমরা একেবারে পাকা হয়ে গেছি।
চন্দ্রহাস।
আমাদের এক সর্দার আছে, সে ছেলেমান্ষিতে প্রবীণ। সে নিজের খেয়ালে এমনি হুহু করে
চলেছে যে তার বয়েসটা কোন্ পিছনে খসে পড়ে গেছে, হুঁশ নেই।
কোটাল। আর তোমরা?
আমরা সব বয়সের গুটি-কাটা প্রজাপতি।
কোটাল। (জনান্তিকে মাঝির প্রতি) পাগল রে, একেবারে উন্মাদ পাগল!
মাঝি। বাপু, এখন তোমরা কী করবে।
চন্দ্রহাস।
আমরা যাব।
কোটাল। কোথায়।
চন্দ্রহাস।
সেটা আমরা ঠিক করি নি।
কোটাল। যাওয়াটাই ঠিক করেছ কিন্তু কোথায় যাবে সেটা ঠিক কর নি?
চন্দ্রহাস।
সেটা চলতে চলতে আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
কোটাল। তার মানে কি হল।
তার মানে হচ্ছে–
গান
চলি গো, চলি গো, যাই গো চলে।
পথের প্রদীপ জ্বলে গো
গগন-তলে।
বাজিয়ে চলি পথের বাঁশি,
ছড়িয়ে চলি চলার হাসি,
রঙিন বসন উড়িয়ে চলি
জলে স্থলে।
কোটাল। তোমরা বুঝি কথার জবাব দিতে হলে গান গাও?
হাঁ। নইলে ঠিক জবাবটা বেরয় না। সাদা কথায় বলতে গেলে ভারি অস্পষ্ট হয়, বোঝা যায় না।
কোটাল। তোমাদের বিশ্বাস, তোমাদের গানগুলো খুব পষ্ট?
চন্দ্রহাস। হাঁ, ওতে সুর আছে কিনা।
গান
পথিক ভুবন ভালোবাসে
পথিকজনে রে।
এমন সুরে তাই সে ডাকে
ক্ষণে ক্ষণে রে।
চলার পথের আগে আগে
ঋতুর ঋতুর সোহাগ জাগে,
চরণঘায়ে মরণ মরে
পলে পলে॥
কোটাল। কোনো সহজ মানুষকে তো কথা বলতে বলতে গান গাইতে শুনি নি।
আবার ধরা পড়ে গেছি রে, আমরা সহজ মানুষ না।
কোটাল। তোমাদের কোনো কাজকর্ম নেই বুঝি?
না। আমাদের ছুটি।
কোটাল। কেন বলো তো।
চন্দ্রহাস।
পাছে সময় নষ্ট হয়।
কোটাল। এটা তো বোঝা গেল না।
ঐ দেখো–
তা হলে আবার গান ধরতে হল।
কোটাল। না তার দরকার নেই। আর বেশি বোঝবার আশা রাখি নে।
সবাই আমাদের বোঝবার আশা ছেড়ে দিয়েছে।
কোটাল। এমন হলে তোমাদের চলবে কী করে।
চন্দ্রহাস।
আর তো কিছুই চলবার দরকার নেই--শুধু আমরাই চলি।
কোটাল। (মাঝির প্রতি) পাগল রে! উন্মাদ পাগল!
চন্দ্রহাস।
এই যে এতক্ষণ পরে দাদা আসছে।
কী দাদা, পিছিয়ে পড়েছিলে কেন।
চন্দ্রহাস।
ওরে আমরা চলি উনপঞ্চাশ বায়ুর মতো, আমাদের ভিতরে পদার্থ কিছুই নেই; আর দাদা চলে
শ্রাবণের মেঘ--মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে ভারমোচন করতে হয়। পথের মধ্যে ওকে শ্লোকরচনায়
পেয়েছিল।
দাদা। চন্দ্রহাস, দৈবাৎ তোমার মুখে এই উপমাটি উপাদেয় হয়েছে। ওর মধ্যে একটু সার কথা আছে।
আমি ওটি চৌপদীতে গেঁথে নিচ্ছি।
চন্দ্রহাস।
না, না, এখন থাক্ দাদা। আমরা কাজে বেরিয়েছি। তোমার চৌপদীর চার পা, কিন্তু চলবার
বেলা এতবড়ো খোঁড়া জন্তু জগতে দেখতে পাওয়া যায় না।
দাদা। আপনি কে।
মাঝি। আমি ঘাটের মাঝি।
দাদা। আর আপনি?
কোটাল। আমি পাড়ার কোটাল।
দাদা। তা উত্তম হল–
আপনাদের কিছু শোনাতে ইচ্ছা করি। বাজে জিনিষ না--কাজের কথা।
মাঝি। বেশ বেশ। আহা, বলেন, বলেন।
কোটাল। আমাদের গুরু বলেছিলেন, ভালো কথা বলবার লোক অনেক মেলে কিন্তু ভালো কথা যে-মরদ খাড়া
দাঁড়িয়ে শুনতে পারে তাকেই শাবাশ। ওটা ভাগ্যের কথা কিনা। তা, বলো ঠাকুর বলো।
দাদা। আজ পথে যেতে যেতে দেখলুম, রাজপুরুষ একজন বন্দীকে নিয়ে চলেছে। শুনলুম, সে কোনো
শ্রেষ্ঠী, তার টাকার লোভেই রাজা মিথ্যা ছুতো করে তাকে ধরেছে। শুনে আমি নিকটেই মুদির
দোকানে বসে এই শ্লোকটি রচনা করেছি। দেখো বাপু, আমি বানিয়ে একটি কথাও লিখি নে। আমি
যা লিখব রাস্তায় ঘাটে তা মিলিয়ে নিতে পারবে।
ঠাকুর কী লিখেছ শুনি।
দাদা।
আত্মরস লক্ষ্য ছিল ব'লে
ইক্ষু মরে ভিক্ষুর কবলে।
ওরে মূর্খ, ইহা দেখি শিক্ষ–
ফল দিয়ে রক্ষা পায় বৃক্ষ।
বুঝেছ? রস জমায় বলেই ইক্ষু বেটা মরে, যে গাছ ফল দেয় তাকে তো কেউ মারে না।
কোটাল। ওহে মাঝি, খাসা লিখেছে হে!
মাঝি। ভাই কোটাল, কথাটির মধ্যে সার আছে।
কোটাল। শুনলে মানুষের চৈতন্য হয়। আমাদের কায়েতের পো এখানে থাকলে ওটা লিখে নিতুম রে। পাড়ায়
খবর পাঠিয়ে দে।
সর্বনাশ করলে রে!
চন্দ্রহাস।
ও ভাই মাঝি, তুমি যে বললে আমাদের সঙ্গে বেরবে, দাদার চৌপদী জমলে তো আর--
মাঝি। আরে রসুন মশায়, পাগলামি রেখে দিন। ঠাকুরকে পেয়েছি, দুটো ভালো কথা শুনে নিই–
বয়েস
হয়ে এল, কোন্ দিন মরব।
ভাই, সেইজন্যেই তো বলছি, আমাদের সঙ্গ পেয়েছ, ছেড়ো না।
চন্দ্রহাস।
দাদাকে চিরদিনই পাবে কিন্তু আমরা একবার ম'লে বিধাতা দ্বিতীয়বার আর এমন ভুল করবেন
না।
(বাহির হইতে) ওগো কোটাল, কোটাল, কোটাল!
কে রে! অনাথ কলু দেখছি। কী হয়েছে।
কলু। সেই যে ছেলেটাকে পুষেছিলুম, তাকে বুঝি কাল রাত্রে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে সেই ছেলেধরা।
কোন্ ছেলেধরা।
কলু। সেই বুড়ো।
চন্দ্রহাস।
বুড়ো? বলিস কী রে।
কলু। আপনারা অত খুশি হন কেন।
ওটা আমাদের একটা বিশ্রী স্বভাব। আমরা খামকা খুশি হয়ে উঠি।
কোটাল। পাগল! একেবারে উন্মাদ পাগল!
চন্দ্রহাস।
তাকে তুমি দেখেছ হে?
কলু। বোধ হয় কাল রাত্রে তাকেই দূর থেকে দেখেছিলুম।
কী রকম চেহারাটা।
কলু। কালো, আমাদের এই কোটাল দাদার চেয়েও। একেবারে রাত্রের সঙ্গে মিশিয়ে গেছে। আর বুকে
দুটো চক্ষু জোনাক-পোকার মতো জ্বলছে।
ওহে, বসন্ত-উৎসবে তো মানাবে না।
চন্দ্রহাস।
ভাবনা কী। তেমন যদি দেখি তবে এবার নাহয় পূর্ণিমার উৎসব না করে অমাবস্যায় করা যাবে।
অমাবস্যার বুকে তো চোখের অভাব নেই।
কোটাল। ওহে বাপু, তোমরা ভালো কাজ করছ না।
না, আমরা ভালো কাজ করছি নে।
আবার ধরা পড়েছি রে, আমরা ভালো কাজ করছি নে।
কী করব, অভ্যাস নেই।
যেহেতু আমরা ভালোমানুষ নই।
কোটাল। এ কি ঠাট্টা পেয়েছ। এতে বিপদ আছে।
বিপদ? সেইটেই তো ঠাট্টা।
গান
ভালোমানুষ নই রে মোরা
ভালোমানুষ নই।
গুণের মধ্যে ওই আমাদের
গুণের মধ্যে ওই।
দেশে দেশে নিন্দে রটে,
পদে পদে বিপদ ঘটে,
পুঁথির কথা কই নে মোরা
উলটো কথা কই।
কোটাল। ওহে বাপু, তোমরা যে কোন্ সর্দারের কথা বলছিলে, সে গেল কোথায়। সে সঙ্গে থাকলে যে
তোমাদের সামলাতে পারত।
সে সঙ্গে থাকে না পাছে সামলাতে হয়।
সে আমাদের পথে বের করে দিয়ে নিজে সরে দাঁড়ায়।
কোটাল। এ তার কেমনতরো সর্দারি।
চন্দ্রহাস।
সর্দারি করে না বলেই তাকে সর্দার করেছি।
কোটাল। দিব্যি সহজ কাজটি তো সে পেয়েছে।
চন্দ্রহাস।
না ভাই, সর্দারি করা সহজ, সর্দার হওয়া সহজ নয়।
গান
জন্ম মোদের ত্র৻হস্পর্শে
সকল অনাসৃষ্টি।
ছুটি নিলেন বৃহস্পতি,
রইল শনির দৃষ্টি।
অযাত্রাতে নৌকো ভাসা,
রাখি নে ভাই ফলের আশা,
আমাদের আর নাই যে গতি
ভেসেই চলা বৈ॥
দাদা, চলো তবে, বেরিয়ে পড়ি।
কোটাল। না না ঠাকুর, ওদের সঙ্গে কোথায় মরতে যাবে।
মাঝি। তুমি আমাদের শোলোক শোনাও, পাড়ার মানুষ সব এল বলে। এ-সব কথা শোনা ভালো।
দাদা। না ভাই, এখান থেকে আমি নড়ছি নে।
তা হলে আমরা নড়ি। পাড়ার মানুষ আমাদের সইতে পারে না।
পাড়াকে আমরা নাড়া দিই, পাড়া আমাদের তাড়া দেয়।
ঐ যে চৌপদীর গন্ধ পেয়েছে, মউমাছির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
পাড়ার লোক।
ওরে মাঝির এখানে পাঠ হবে।
কে গো। তোমরাই পাঠ করবে নাকি।
আমরা অন্য অনেক অসহ্য উৎপাত করি কিন্তু পাঠ করি নে।
ঐ পুণ্যের জোরেই আমরা রক্ষা পাব।
পাড়ার লোক।
এরা বলে কী রে। হেঁয়ালি নাকি।
চন্দ্রহাস।
আমরা যা নিজে বুঝি তাই বলি; হঠাৎ হেঁয়ালি বলে ভ্রম হয়। আর তোমরা যা খুবই বোঝ দাদা
তাই তোমাদের বুঝিয়ে বলবে, হঠাৎ গভীর জ্ঞানের কথা বলে মনে হবে।
একজন বালকের প্রবেশ
বালক। আমি পারলুম না। কিছুতে তাকে ধরতে পারলুম না।
কাকে ভাই।
বালক। ঐ তোমরা যে বুড়োর খোঁজ করছিলে তাকে।
তাকে দেখেছ নাকি।
বালক। সে বোধ হয় রথে চড়ে গেল।
কোন্ দিকে।
বালক। কিছুই ঠাওরাতে পারলুম না। কিন্তু তার চাকার ঘূর্ণিহাওয়ায় এখনো ধুলো উড়ছে।
চল্ তবে চল্।
শুকনো পাতায় আকাশ ছেয়ে দিয়ে গেছে।
[ প্রস্থান
কোটাল।পাগল! উন্মাদ পাগল!