বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা:
শিরোনাম:
এ কি সত্য সকলই
সত্য, হে আমার চিরভক্ত
পাঠ ও পাঠভেদ:
এ কি সত্য সকলই সত্য, হে আমার চিরভক্ত॥
মোর নয়নের বিজুলি-উজল আলো
যেন ঈশান কোণের ঝটিকার মতো কালো এ কি সত্য।
মোর মধুর অধর বধূর নবীন অনুরাগ-সম রক্ত
হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য॥
অতুল মাধুরী ফুটেছে আমার মাঝে,
মোর চরণে চরণে সুধাসঙ্গীত বাজে এ কি সত্য।
মোরে না হেরিয়া নিশির শিশির ঝরে,
প্রভাত-আলোকে পুলক আমারি তরে এ কি সত্য।
মোর তপ্তকপোল-পরশে-অধীর সমীর মদিরমত্ত
হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ:
MS. NO 227
MS. NO 290
MS. NO 426 (ii)
পাঠভেদ: এই গানটি গীতবিতানের নাট্যগীতি' পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হলেও, কোনো নাটকের গান নয়। পতিসর থেকে ১৩ আশ্বিন রেলপথে কলকাতায় ফিরে আসার সময়, রেলগাড়িতে 'প্রণয়প্রশ্ন' শিরোনামের একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন। ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে 'কল্পনা' কাব্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এই সময়ের ভিতরে রচিত গানগুলোর সাথে রাগ-নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু 'প্রণয়প্রশ্ন' কবিতার সাথে রাগ-নাম ছিল না। তাছাড়া কবিতাটির দীর্ঘ পদ এবং তার বিন্যাস কবিতার মতো করেই লেখা। প্রতিটি স্তবকের ছন্দ এবং ভাবের যে পূর্ণতা লক্ষ্য করা যায়, তাতে এটি 'কাব্যগীতি'র অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। নিচে মূল কবিতাটির পাঠ তুলে ধরা হলো।
প্রণয়-প্রশ্ন
এ কি সত্য?
আমার মধুর অধর, বধূর
নবলাজসম রক্ত,
হে আমার চিরভক্ত,
এ কি সত্য?
চিরমন্দার ফুটেছে আমার মাঝে কি?
চরণে আমার বীণাঝংকার বাজে কি?
এ কি সত্য?
নিশির শিশির ঝরে কি আমারে হেরিয়া?
প্রভাত-আলোকে পুলক আমারে ঘেরিয়া,
এ কি সত্য?
তপ্তকপোলপরশে অধীর
সমীর মদিরমত্ত,
হে আমার চিরভক্ত,
এ কি সত্য?
কালো কেশপাশে দিবস লুকায় আঁধারে,
মরণবাঁধন মোর দুই ভুজে বাঁধা রে,
এ কি সত্য?
ভুবন মিলায়ে মোর অঞ্চলখানিতে,
বিশ্ব নীরব মোর কণ্ঠের বাণীতে,
এ কি সত্য?
ত্রিভুবন লয়ে শুধু আমি আছি,
আছে মোর অনুরক্ত,
হে আমার চিরভক্ত,
এ কি সত্য?
তোমার প্রণয় যুগে যুগে মোর লাগিয়া
জগতে জগতে ফিরিতেছিল কি জাগিয়া?
এ কি সত্য?
আমার বচনে নয়নে অধরে অলকে
চিরজনমের বিরাম লভিলে পলকে,
এ কি সত্য?
মোর সুকুমার ললাটফলকে
লেখা অসীমের তত্ত্ব,
হে আমার চিরভক্ত,
এ কি সত্য?
বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলী'র সপ্তম খণ্ডে এই কবিতার মূল পাঠ পাঠটি
কবিতা হিসেবেই পাওয়া যায়।
তথ্যানুসন্ধান:
ক. রচনাকাল ও স্থান: ১৩০৪
বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে যান। তারপর পাবনার ইছামতী,
যমুনা বরাল, বলেশ্বরী নদী ধরে সাজাদপুরের উদ্দেশ্যে পৌঁছান ৮ তারিখে। ৯
আশ্বিন সাজাদপুর থেকে পতিসরের দিকে যাত্রা করেন এবং পতিসরে ১০ আশ্বিনে পৌঁছান। ১৩
আশ্বিন রেলপথে কলকাতায় ফিরে আসার সময় তিনি এই গানটি রচনা করেছিলেন।
এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৩৬ বৎসর ৫ মাস।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
কল্পনা, কবিতা, শিরোনাম: 'প্রণয়প্রশ্ন' (বৈশাখ ১৩০৭)। [রবীন্দ্ররচনাবলী , সপ্তম খণ্ড। (বিশ্বভারতী, শ্রাবণ ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ)]।
অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী, পৌষ ১৩৮০ বঙ্গাব্দ)। নাট্যগীতি (কল্পনা কাব্য) পর্যায়ের ৫৮ সংখ্যক গান।
স্বরবিতান পঞ্চত্রিংশ (৩৫) খণ্ডের (ফাল্গুন ১৪১৩) চতুর্থ গান। পৃষ্ঠা: ১৩-১৫।
পত্রিকা:
সঙ্গীত-বিজ্ঞান প্রবেশিকা [বৈশাখ ১৩৪০, দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৩-৪]। রবীন্দ্রনাথ-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
স্বরলিপিকার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। [সঙ্গীত-বিজ্ঞান প্রবেশিকা (বৈশাখ ১৩৪০, দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৩-৪) থেকে স্বরবিতান স্বরবিতান পঞ্চত্রিংশ (৩৫) খণ্ডে (ফাল্গুন ১৪১৩) গৃহীত হয়েছে।]।
স্বরলিপি:
স্বরবিতান পঞ্চত্রিংশ (৩৫) খণ্ডের (ফাল্গুন ১৪১৩)-এ গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ ও তাল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে যথাক্রমে মিশ্র ঝিঁঝিট ও দাদরা।
রাগ: মিশ্র ঝিঁঝিট। তাল: দাদরা। [স্বরবিতান পঞ্চত্রিংশ (৩৫) খণ্ডের (ফাল্গুন ১৪১৩)
রাগ: মিশ্র ঝিঁঝিট। তাল: দাদরা। [রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা । সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬)। পৃষ্ঠা: ৩৫]।
গ্রহস্বর : সা।
লয় : মধ্য।