থামাও রিমিকি-ঝিমিকি বরিষন, ঝিল্লিঝনক-ঝন-নন, হে শ্রাবণ।
ঘুচাও ঘুচাও স্বপ্নমোহ-অবগুণ্ঠন ঘুচাও॥
এসো হে, এসো হে, দুর্দম বীর এসো হে।
ঝড়ের রথে অগম পথে জড়ের বাধা যত করো উন্মূলন॥
জ্বালো জ্বালো বিদ্যুৎশিখা জ্বালো,
দেখাও তিমিরভেদী দীপ্তি তোমার দেখাও।
দিগ্বিজয়ী তব বাণী দেহো আনি, গগনে গগনে সুপ্তিভেদী তব গর্জন জাগাও॥
" ১৯৩৭ সালে গুরুদেব শেষবার কলকাতায় 'বর্ষামঙ্গলে'র অনুষ্ঠান করেন। সেবার
শান্তিনিকেতনে অনেকগুলি বর্ষার গান রচিত হয়। শান্তিনিকেতনের বর্ষা মঙ্গল অনুষ্ঠান
সুন্দর হওয়ায় অনেকে গুরুদেবকে অনুরোধ করেন কলকাতায় বর্ষামঙ্গলের আয়োজন করতে।
গুরুদেব সম্মত হয়ে আমাকে শান্তিনিকেতনের মহড়ার কাজ চালিয়ে যাবার দায়িত্ব দিয়ে নিজে
কলকাতায় চলে গেলেন কোন কাজে এবং সেখানে একদল গায়িকাকে সংগ্রহ করে তাঁদেরও গান
শেখাতে লাগলেন। সেখানকার মেয়েদের গলা ছিল মিষ্টি, কিন্তু তাঁদের কন্ঠস্বর ছিল ক্ষীণ
তাই প্রথম রাত্রিতে একক কন্ঠের গান প্রেক্ষাগৃহের শেষ অবধি পৌঁছলনা। এই কারনে
গুরুদেব বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। রাত্রে বাড়ি ফিরে বললেন,"এত খাটুনি সব ব্যর্থ হল"। তার
পরের কথাবার্তায় মনে হল তাঁর মনে ধারণা হয়েছে যে, এবারের গানগুলি রচনার দিক থেকে
তেমন ভালো হয় নি, তাই শ্রোতারা তেমন উপভোগ করতে পারল না। গানের দোষে নয়, গাইয়েদের
দোষে এমন হয়েছে এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও বলতে লাগলেন, "ঢিমা লয়ের টানা
টানা সুরের গানই রচনা করেছি বেশি, জোরাল গান দরকার।" সেই রাত্রেই একটি গান রচনা করে
সকলকে ডেকে একসঙ্গে শিখিয়ে তবে বিশ্রাম করতে গেলেন। গানটির প্রথম লাইন হল, 'থামাও
রিমিকি-ঝিমিকি
বরিষন, ঝিল্লিঝনক-ঝন-নন'। গানটির ভিতর দিয়ে
তাঁর তখনকার মনের অবস্থাটা বেশ পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে।"
স্বরবিতান অষ্টপঞ্চাশত্তম (৫৮) খণ্ডের (জ্যৈষ্ঠ ১৪১৩ বঙ্গাব্দ) গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই। উক্ত স্বরলিপিটি ৪।৪ মাত্রা ছন্দে কাহারবা তালে নিবদ্ধ।
রাগ: হাম্বীর-কেদারা। তাল: কাহারবা।[রবীন্দ্রসংগীত : রাগ-সুর নির্দেশিকা । সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬)। পৃষ্ঠা: ৫৮।
রাগ: বেহাগ, কেদারা তাল: কাহারবা। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত। প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমী, জুলাই ২০০১। পৃষ্ঠা: ১০১]
গ্রহস্বর: র্সা।
লয়: মধ্য।