ভাষাংশ।
কোরানের সূরা সূচি
পবিত্র 
কোরআনুল করীম
৩০. 
সূরা 
আর-রূম
মক্কায় অবতীর্ণ : আয়াত ৬০
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. আলিফ-লাম-মীম,  
২. রোমকরা পরাজিত হয়েছে,  
 
৩. নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে,  
৪. কয়েক বছরের মধ্যে। অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহ্র হাতেই। সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত 
হবে।   
৫. আল্লাহ্র সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী,
পরম দয়ালু।   
৬. আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি হয়ে গেছে। আল্লাহ্ তার প্রতিশ্রুতি খেলাফ করবেন না। 
কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।   
৭. তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না। 
৮. তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে,
আল্লাহ্ নভোমণ্ডল,
ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের 
মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য,
কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতে অবিশ্বাসী।   
৯. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না অতঃপর দেখে না যে;
তাদের পূর্ববর্তীদের 
পরিণাম কি কি হয়েছে? 
তারা তাদের চাইতে শক্তিশালী ছিল,
তারা যমীন চাষ করত এবং তাদের চাইতে বেশী আবাদ করত। তাদের কাছে তাদের রসূলগণ 
সুস্পষ্ট নির্দেশ নিয়ে এসেছিল। বস্তুতঃ আল্লাহ্ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না। 
কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।    
১০. অতঃপর যারা মন্দ কর্ম করত,
তাদের পরিণাম হয়েছে 
মন্দ। কারণ, 
তারা আল্লাহ্র 
আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলত এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।   
১১. আল্লাহ্ প্রথমবার সৃষ্টি করেন,
অতঃপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এরপর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।   
১২. যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে,
সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে।    
১৩. তাদের দেবতাগুলোর মধ্যে কেউ তাদের সুপারিশ করবে না এবং তারা তাদের দেবতাকে 
অস্বীকার করবে।    
১৪. যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে,
সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে।   
১৫. যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে,
তারা জান্নাতে সমাদৃত 
হবে; 
১৬. আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলছে,
তাদেরকেই আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে।   ১৭. অতএব, তোমরা 
আল্লাহ্র পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,  
 
১৮. এবং অপরাহ্নে
ও মধ্যাহ্নে।
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে
তাঁরই প্রশংসা।   
১৯. তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বহির্গত করেন, জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন,
এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে তোমরা উত্থিত হবে।    
২০. তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে,
তিনি মৃত্তিকা থেকে 
তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ,
পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ।   
২১. আর এক নিদর্শন এই যে,
তিনি তোমাদের জন্যে 
তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন,
যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি 
ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।   
২২. তাঁর আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও 
বর্ণের বৈচিত্র্য! নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।     
২৩. তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয় 
এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।   
২৪. তাঁর আরও নিদর্শন- তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ,
ভয় ও ভরসার জন্যে এবং 
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, 
অতঃপর 
তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের 
জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।   
২৫. তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে,
তাঁরই আদেশে আকাশ ও 
পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি মৃত্তিকা থেকে উঠার জন্যে তোমাদের ডাক 
দেবেন, 
তখন তোমরা উঠে 
আসবে।   
২৬. নভোমণ্ডলে ও ভুমণ্ডলে যা কিছু আছে,
সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ।   
২৭. তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন,
অতঃপর পুনর্বার তিনি 
সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্যে সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং 
তিনিই পরাক্রমশালী, 
প্রজ্ঞাময়।  
২৮. আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই মধ্য থেকে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ 
তোমাদের আমি যে রুযী দিয়েছি,
তোমাদের অধিকারভুক্ত 
দাস-দাসীরা কি তাতে তোমাদের সমান সমান অংশীদার?
তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ 
ভয় কর, 
যেরূপ নিজেদের লোককে ভয় কর?
এমনিভাবে আমি সমঝদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করি।    
২৯. বরং যারা যে-ইনসাফ,
তারা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের 
খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে থাকে। অতএব,
আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট 
করেন, 
তাকে কে বোঝাবে?
তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।   
৩০. তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহ্র প্রকৃতি,
যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্র সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল 
ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। 
৩১. সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর,
নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।    
৩২. যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক 
দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।   
৩৩. মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে,
তখন তারা তাদের 
পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁরই অভিমুখী হয়ে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে রহমতের স্বাদ 
আস্বাদন করান, 
তখন তাদের একদল তাদের 
পালনকর্তার সাথে শিরক করতে থাকে,  
 
৩৪. যাতে তারা অস্বীকার করে যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব,
মজা লুটে নাও,
সত্বরই জানতে পারবে।    
৩৫. আমি কি তাদের কাছে এমন কোন দলীল নাযিল করেছি,
যে তাদেরকে আমার শরীক 
করতে বলে?   
 
৩৬. আর যখন আমি মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই,
তারা তাতে আনন্দিত হয় 
এবং তাদের কৃতকর্মের ফলে যদি তাদেরকে কোন দুদর্শা পায়, 
তবে তারা হতাশ হয়ে পড়ে।   
৩৭. তারা কি দেখে না যে,
আল্লাহ্ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী 
সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।   
৩৮. আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে 
উত্তম, 
যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম।   
৩৯. মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে,
এই আশায় তোমরা সুদে যা 
কিছু দাও, 
আল্লাহ্র কাছে তা বৃদ্ধি পায় 
না। পক্ষান্তরে, 
আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় 
পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে,
অতএব,
তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।    
৪০. আল্লাহ্ই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন,
অতঃপর রিযিক দিয়েছেন,
এরপর তোমাদের মৃত্যু 
দেবেন, 
এরপর তোমাদের জীবিত করবেন। 
তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি,
যে এসব কাজের মধ্যে কোন 
একটিও করতে পারবে? 
তারা যাকে শরীক করে,
আল্লাহ্ তা থেকে পবিত্র ও মহান।    
৪১. স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে 
তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান,
যাতে তারা ফিরে আসে।    
৪২. বলুন, 
তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পুর্ববর্তীদের পরিণাম 
কি হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।     
৪৩. যে দিবস আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রত্যাহৃত হবার নয়,
সেই দিবসের পূর্বে আপনি সরল ধর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে 
পড়বে।    
৪৪. যে কুফর করে,
তার কুফরের জন্যে সে-ই 
দায়ী এবং যে সৎকর্ম করে, 
তারা 
নিজেদের পথই শুধরে নিচ্ছে।    
৪৫. যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে,
আল্লাহ্ তা’আলা 
তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না। 
৪৬. তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি এই যে,
তিনি সুসংবাদবাহী বায়ু 
প্রেরণ করেন, 
যাতে তিনি তাঁর 
অনুগ্রহ তোমাদের আস্বাদন করান এবং যাতে তাঁর নির্দেশে জাহাজসমূহ বিচরণ করে এবং 
যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।    
৪৭. আপনার পূর্বে আমি রসূলগণকে তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি। 
তাঁরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেন। অতঃপর যারা পাপী ছিল,
তাদের আমি শাস্তি দিয়েছি। মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।    
৪৮. তিনি আল্লাহ্,
যিনি বায়ু প্রেরণ করেন,
অতঃপর তা মেঘমালাকে 
সঞ্চারিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে 
স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর 
বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান;
তখন তারা আনন্দিত হয়।    
৪৯. তারা প্রথম থেকেই তাদের প্রতি এই বৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার পূর্বে নিরাশ ছিল।   
৫০. অতএব, 
আল্লাহ্র রহমতের ফল দেখে নাও,
কিভাবে তিনি মৃত্তিকার মৃত্যুর পর তাকে জীবিত করেন। নিশ্চয় তিনি মৃতদেরকে জীবিত 
করবেন এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।    
৫১. আমি যদি এমন বায়ু প্রেরণ করি যার ফলে তারা শস্যকে হলদে হয়ে যেতে দেখে,
তখন তো তারা অবশ্যই অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।  
৫২. অতএব, আপনি 
মৃতদেরকে শোনাতে পারবেন না এবং বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবেন না,
যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।     
৫৩. আপনি অন্ধদেরও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথ দেখাতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরই 
শোনাতে পারবেন, 
যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। কারণ, তারা মুসলমান।   
৫৪. আল্লাহ্ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন, অতঃপর দুর্বলতার পর 
শক্তিদান করেন, অতঃপর 
শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ,
সর্বশক্তিমান।     
৫৫. যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে,
সেদিন অপরাধীরা কসম খেয়ে 
বলবে যে, 
এক মুহুর্তেরও 
বেশী অবস্থান করিনি। এমনিভাবে তারা সত্যবিমুখ হত।   
৫৬. যাদের জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে,
তারা বলবে আমরা 
আল্লাহ্র কিতাব মতে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছি। এটাই পুনরুত্থান দিবস,
কিন্তু তোমরা তা জানতে না।   
৫৭. সেদিন জালেমদের ওযর-আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তওবা করে আল্লাহ্র 
সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও তাদের দেয়া হবে না।   
৫৮. আমি এই কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। আপনি যদি 
তাদের কাছে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন,
তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে,
তোমরা সবাই মিথ্যাপন্থী।   
৫৯. এমনিভাবে আল্লাহ্ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।    
৬০. অতএব, আপনি 
সবর করুন। আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়,
তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।