ভাষাংশ।
কোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম
৩৩.
সূরা
আল-আহযাব
মদীনায় অবতীর্ণ : আয়াত ৭৩
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. হে নবী!
আল্লাহ্কে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্
সর্বজ্ঞ,
প্রজ্ঞাময়।
২. আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়,
আপনি তার অনুসরণ করুন।
নিশ্চয় তোমরা যা কর,
আল্লাহ্
সে বিষয়ে খবর রাখেন।
৩. আপনি আল্লাহ্র উপর ভরসা করুন। কার্যনির্বাহীরূপে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৪. আল্লাহ্ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের
সাথে তোমরা ‘যিহার’ কর,
তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র
করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ্ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন
করেন।
৫. তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহ্র কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি
তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান,
তবে তারা তোমাদের
ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে
তোমাদের কোন গোনাহ নেই,
তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা।
আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।
৬. নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের
মাতা। আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগণের মধ্যে যারা আত্মীয়,
তারা পরস্পরে অধিক
ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও,
করতে পার। এটা লওহে-মাহ্ফুযে লিখিত আছে।
৭. যখন আমি পয়গম্বরগণের কাছ থেকে,
আপনার কাছ থেকে এবং নূহ,
ইবরাহীম,
মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম এবং অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে
দৃঢ় অঙ্গীকার–
৮. সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্যে। তিনি কাফেরদের
জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।
৯. হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র নেয়ামতের কথা স্মরণ কর,
যখন শত্রুবাহিনী
তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল,
অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে
ঝঞ্চাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম,
যাদেরকে তোমরা দেখতে
না। তোমরা যা কর,
আল্লাহ্ তা
দেখেন।
১০. যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন
তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল,
প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ্ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে
শুরু করছিলে।
১১. সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।
১২. এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল,
আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়।
১৩. এবং যখন তাদের একদল বলেছিল,
হে ইয়াসরেববাসী, এটা
টিকবার মত জায়গা নয়, তোমরা
ফিরে চল। তাদেরই একদল নবীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলেছিল,
আমাদের বাড়ী-ঘর খালি,
অথচ সেগুলো খালি ছিল না,
পলায়ন করাই ছিল তাদের ইচ্ছা।
১৪. যদি শত্রুপক্ষ চতুর্দিক থেকে নগরে প্রবেশ করে তাদের সাথে মিলিত হত,
অতঃপর বিদ্রোহ করতে
প্ররোচিত করত,
তবে তারা অবশ্যই
বিদ্রোহ করত এবং তারা মোটেই বিলম্ব করত না।
১৫. অথচ তারা পূর্বে আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে,
তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহ্র অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
১৬. বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর,
তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না। তখন তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।
১৭. বলুন! কে তোমাদেরকে আল্লাহ্ থেকে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা
করেন অথবা তোমাদের প্রতি অনুকম্পার ইচ্ছা?
তারা আল্লাহ্ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না।
১৮. আল্লাহ্ খুব জানেন তোমাদের মধ্যে কারা তোমাদেরকে বাধা দেয় এবং কারা তাদের
ভাইদেরকে বলে,
আমাদের কাছে এস। তারা কমই যুদ্ধ করে।
১৯. তারা তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করে। যখন বিপদ আসে,
তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়।
অতঃপর যখন বিপদ টলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে
অবতীর্ণ হয়। তারা মুমিন নয়। তাই আল্লাহ্ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন। এটা
আল্লাহ্র জন্যে সহজ।
২০. তারা মনে করে শক্রবাহিনী চলে যায়নি। যদি শক্রবাহিনী আবার এসে পড়ে,
তবে তারা কামনা করবে যে,
যদি তারা গ্রামবাসীদের
মধ্য থেকে তোমাদের সংবাদাদি জেনে নিত,
তবেই ভাল হত। তারা তোমাদের মধ্যে অবস্থান করলেও যুদ্ধ সামান্যই করত।
২১. যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে,
তাদের জন্যে রসূলুল্লাহ্র মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।
২২. যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল,
তখন বলল,
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল সত্য
বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণই বৃদ্ধি পেল।
২৩. মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহ্র সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ
মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন
করেনি।
২৪. এটা এজন্য যাতে আল্লাহ্
সত্যবাদীদেরকে তাদের
সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা
করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।
২৫. আল্লাহ্ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি।
যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেলেন। আল্লাহ্ শক্তিধর,
পরাক্রমশালী।
২৬. কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল,
তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন।
ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।
২৭. তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির,
ঘর-বাড়ীর,
ধন-সম্পদের এবং এমন এক ভূ-খন্ডের মালিক করে দিয়েছেন,
যেখানে তোমরা অভিযান করনি। আল্লাহ্ সর্ববিষয়োপরি সর্বশক্তিমান।
২৮. হে নবী !
আপনার পত্নীগণকে বলুন,
তোমরা যদি পার্থিব জীবন
ও তার বিলাসিতা কামনা কর,
তবে আস,
আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই।
২৯. পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ্,
তাঁর রসূল ও পরকাল কামনা
কর,
তবে তোমাদের
সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ্ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।
৩০. হে নবী পত্নীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করলে তাকে দ্বিগুণ
শাস্তি দেয়া হবে। এটা আল্লাহ্র জন্য সহজ।
৩১. তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে,
আমি তাকে দু’বার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত
রেখেছি।
৩২. হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;
যদি তোমরা আল্লাহ্কে
ভয় কর,
তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও
আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না,
ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা
করে,
যার অন্তরে
ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।
৩৩. তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন
করবে না। নামায কায়েম করবে,
যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের
সদস্যবর্গ। আল্লাহ্ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে
পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।
৩৪. আল্লাহ্র আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা,
যা তোমাদের গৃহে পঠিত
হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সূক্ষ্মদর্শী,
সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।
৩৫. নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ,
মুসলমান নারী, ঈমানদার
পুরুষ,
ঈমানদার নারী,
অনুগত পুরুষ,
অনুগত নারী,
সত্যবাদী পুরুষ,
সত্যবাদী নারী,
ধৈর্য্যশীল পুরুষ,
ধৈর্য্যশীল নারী,
বিনীত পুরুষ, বিনীত
নারী,
দানশীল পুরুষ,
দানশীল নারী,
রোযা পালণকারী পুরুষ,
রোযা পালনকারী নারী,
যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী
পুরুষ, যৌনাঙ্গ
হেফাযতকারী নারী,
আল্লাহ্র অধিক
যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ্ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও
মহাপুরষ্কার।
৩৬. আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর
সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে,
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।
৩৭. আল্লাহ্ যাকে অনুগ্রহ করেছেন;
আপনিও যাকে অনুগ্রহ
করেছেন;
তাকে যখন আপনি বলেছিলেন,
তোমার স্ত্রীকে তোমার
কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহ্কে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন,
যা আল্লাহ্ পাক প্রকাশ
করে দেবেন। আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহ্কেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর
যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল,
তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা
তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের
কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহ্র নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।
৩৮. আল্লাহ্ নবীর জন্যে যা নির্ধারণ করেন,
তাতে তাঁর কোন বাধা
নেই। পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহ্র চিরাচরিত বিধান। আল্লাহ্র
আদেশ নির্ধারিত,
অবধারিত।
৩৯. সেই নবীগণ আল্লাহ্র পয়গাম প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তারা আল্লাহ্ ব্যতীত
অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্যে আল্লাহ্ যথেষ্ঠ।
৪০. মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন;
বরং তিনি আল্লাহ্র রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ্ সব বিষয়ে জ্ঞাত।
৪১. মুমিনগণ তোমরা আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।
৪২. এবং সকাল বিকাল আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা কর।
৪৩. তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও রহমতের দোয়া করেন-অন্ধকার
থেকে তোমাদেরকে আলোকে বের করার জন্য। তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।
৪৪. যেদিন আল্লাহ্র সাথে মিলিত হবে;
সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রস্তুত
রেখেছেন।
৪৫. হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী,
সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।
৪৬. এবং আল্লাহ্র আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।
৪৭. আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে,
তাদের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিরাট অনুগ্রহ রয়েছে।
৪৮. আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও
আল্লাহ্র উপর ভরসা করুন। আল্লাহ্ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।
৪৯. মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর,
অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ
করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,
তখন
তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নেই। অতঃপর তোমরা তাদেরকে কিছু
দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে।
৫০. হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি,
যাদেরকে আপনি মোহরানা
প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে
আল্লাহ্ আপনার করায়ত্ত করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি,
ফুফাতো ভগ্নি,
মামাতো ভগ্নি ও
খালাতো ভগ্নিকে যারা
আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে,
নবী তাকে বিবাহ করতে
চাইলে সে-ও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা
দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার
জানা আছে। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
দয়ালু।
৫১. আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে
পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন,
তাকে কামনা করলে তাতে
আপনার কোন দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে,
তাদের চক্ষু শীতল থাকবে;
তারা দুঃখ পাবে না এবং
আপনি যা দেন,
তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট
থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে,
আল্লাহ্ জানেন। আল্লাহ্
সর্বজ্ঞ,
সহনশীল।
৫২. এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ
করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে,
তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।
৫৩. হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের
অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো,
তবে অতঃপর খাওয়া শেষে
আপনা আপনি চলে যেয়ো,
কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না।
নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন;
কিন্তু আল্লাহ্ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু
চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের
জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহ্র রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর
পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ্র কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
৫৪. তোমরা খোলাখুলি কিছু বল অথবা গোপন রাখ,
আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৫৫. নবী-পত্নীগণের জন্যে তাঁদের পিতা পুত্র,
ভ্রাতা,
ভ্রাতুস্পুত্র,
ভগ্নিপুত্র,
সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভুক্ত দাসদাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গোনাহ্ নেই।
নবী-পত্নীগণ,
তোমরা
আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।
৫৬. আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা
নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।
৫৭. যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়,
আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত
রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।
৫৮. যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়,
তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।
৫৯. হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন,
তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে
তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
৬০. মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং মদীনায় গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না
হয়,
তবে আমি
অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করব। অতঃপর এই শহরে আপনার প্রতিবেশী অল্পই
থাকবে।
৬১. অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে,
ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে।
৬২. যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে,
তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহ্র রীতি। আপনি আল্লাহ্র রীতিতে কখনও পরিবর্তন
পাবেন না।
৬৩. লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন,
এর জ্ঞান আল্লাহ্র কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে, সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই।
৬৪. নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি
প্রস্তুত রেখেছেন।
৬৫. তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে এবং কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
৬৬. যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে;
সেদিন তারা বলবে,
হায়! আমরা যদি আল্লাহ্র আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম।
৬৭. তারা আরও বলবে,
হে আমাদের পালনকর্তা,
আমরা আমাদের নেতা ও
বড়দের কথা মেনেছিলাম,
অতঃপর
তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।
৬৮. হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত
করুন।
৬৯. হে মুমিনগণ! মূসাকে যারা কষ্ট দিয়েছে,
তোমরা তাদের মত হয়ো
না। তারা যা বলেছিল,
আল্লাহ্ তা থেকে
তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করেছিলেন। তিনি আল্লাহ্র কাছে ছিলেন মর্যাদাবান।
৭০. হে মুমিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।
৭১. তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে
কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে,
সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।
৭২. আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম,
অতঃপর তারা একে বহন করতে
অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল;
কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ।
৭৩. যাতে আল্লাহ্ মুনাফিক পুরুষ,
মুনাফিক নারী, মুশরিক
পুরুষ,
মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেন
এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।