ভাষাংশকোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম

৩৬.
সূরা
ইয়াসীন


মক্কায় অবতীর্ণ : আয়াত ৮৩

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

১.ইয়া-সীন   
২. প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম।  
৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগণের একজন।   
৪. সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।  
৫. কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র তরফ থেকে অবতীর্ণ
,    
৬. যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন
, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।   
৭. তাদের অধিকাংশের জন্যে শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।  
৮. আমি তাদের গর্দানে চিবুক পর্যন্ত বেড়ী পরিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক উর্দ্ধমুখী হয়ে গেছে।  
৯. আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি
, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি, ফলে তারা দেখে না।   
১০. আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন
, তাদের পক্ষে দু’য়েই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।   
১১. আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন
, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহ্‌কে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের।   
১২. আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।  
১৩. আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন
, যখন সেখানে রসূলগণ আগমন করেছিলেন।    
১৪. আমি তাদের নিকট দু’জন রসূল প্রেরণ করেছিলাম
, অতঃপর ওরা তাঁদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে। তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।   
১৫. তারা বলল
, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ্ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ।
১৬. রাসূলগণ বলল
, আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।  
১৭. পরিস্কারভাবে আল্লাহ্‌র বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।   
১৮. তারা বলল
, আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি। যদি তোমরা বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।  
১৯. রসূলগণ বলল
, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই! এটা কি এজন্যে যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বস্তুতঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায় বৈ নও।   
২০. অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল
, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর।  
২১. অনুসরণ কর তাদের
, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।  
২২. আমার কি হল যে
, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর এবাদত করব না?  
২৩. আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।  
২৪. এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।  
২৫. আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার কাছ থেকে শুনে নাও।  
২৬. তাকে বলা হল
, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত  
২৭. যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।  
২৮. তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও না।  
২৯. বস্তুতঃ এ ছিল এক মহানাদ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তদ্ধ হয়ে গেল।  
৩০. বান্দাদের জন্যে আক্ষেপ যে
, তাদের কাছে এমন কোন রসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না।
৩১. তারা কি প্রত্যক্ষ করে না
, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না।  
৩২. ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতেই হবে।  
৩৩. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য
, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।  
৩৪. আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।  
৩৫. যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন
?     
৩৬. পবিত্র তিনি, যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে
, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।   
৩৭. তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি
, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।  
৩৮. সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী
, সর্বজ্ঞ, আল্লাহ্‌র নিয়ন্ত্রণ।  
৩৯. চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।    
৪০. সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।  
৪১. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন এই যে
, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি।   
৪২. এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি
, যাতে তারা আরোহণ করে।  
৪৩. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জত করতে পারি
, তখন তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না।   
৪৪. কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।   
৪৫. আর যখন তাদেরকে বলা হয়
, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে।
৪৬. যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে
, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়।   
৪৭. যখন তাদেরকে বলা হয়
, আল্লাহ্ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ্ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ।   
৪৮. তারা বলে
, তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে?  
৪৯. তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে।  
৫০. তখন তারা ওছিয়ত করতেও সক্ষম হবে না। এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।   
৫১. শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে
, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।    
৫২. তারা বলবে
, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উখিত করল? রহমান আল্লাহ্ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।   
৫৩. এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ। সে মুহুর্তেই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।  
৫৪. আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।   
৫৫. এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে।    
৫৬. তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।   
৫৭. সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।  
৫৮. করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে ‘সালাম’।  
৫৯. হে অপরাধীরা, আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।   
৬০. হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে
, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ?
৬১. এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।   
৬২. শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি
?  
৬৩. এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো।  
৬৪. তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর।  
৬৫. আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।  
৬৬. আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম
, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত!  
৬৭. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করতে পারতাম
, ফলে তারা আগেও চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না।   
৬৮. আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি
, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেই। তবুও কি তারা বুঝে না?  
৬৯. আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।  
৭০. যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।  
৭১. তারা কি দেখে না
, তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।  
৭২. আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা ভক্ষণ করে।  
৭৩. তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানীয় রয়েছে। তবুও কেন তারা শুকরিয়া আদায় করে না
?     
৭৪. তারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।  
৭৫. অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।
৭৬. অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখিত না করে। আমি জানি যা তারা গোপনে করে এবং যা তারা প্রকাশ্যে করে।   
৭৭. মানুষ কি দেখে না যে
, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।  
৭৮. সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে
, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?  
৭৯. বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।  
৮০. যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও।   
৮১. যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন
, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।  
৮২. তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন
, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও তখনই তা হয়ে যায়।  
৮৩. অতএব পবিত্র তিনি
, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।