ভাষাংশকোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম

৩৮.
সূরা
ছোয়াদ


মক্কায় অবতীর্ণ : আয়াত ৮৮

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

১. ছোয়াদ- শপথ উপদেশপূর্ণ কোরআনের,  
২. বরং যারা কাফের, তারা অহংকার ও বিরোধিতায় লিপ্ত।  
৩. তাদের আগে আমি কত জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি
, অতঃপর তারা আর্তনাদ করতে শুরু করেছে, কিন্তু তাদের নিষ্কৃতি লাভের সময় ছিল না।  
৪. তারা বিস্ময়বোধ করে যে
, তাদেরই কাছে তাদের মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী আগমন করেছেন। আর কাফেররা বলে এ-তো এক মিথ্যাচারী যাদুকর।  
৫. সে কি বহু উপাস্যের পরিবর্তে এক উপাস্যের উপাসনা সাব্যস্ত করে দিয়েছে। নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।     
৬. তাদের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি একথা বলে প্রস্থান করে যে
, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের উপাস্যদের পূজায় দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই এ বক্তব্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।  
৭. আমরা সাবেক ধর্মে এ ধরনের কথা শুনিনি। এটা মনগড়া ব্যাপার বৈ নয়।   
৮. আমাদের মধ্য থেকে শুধু কি তারই প্রতি উপদেশ বানী অবতীর্ণ হল
? বস্তুতঃ ওরা আমার উপদেশ সম্পর্কে সন্দিহান; বরং ওরা এখনও আমার মার আস্বাদন করেনি।  
৯. না কি তাদের কাছে আপনার পরাক্রান্ত দয়াবান পালনকর্তার রহমতের কোন ভান্ডার রয়েছে
?     
১০. নাকি নভোমণ্ডল
, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর উপর তাদের সাম্রাজ্য রয়েছে? থাকলে তাদের আকাশে আরোহণ করা উচিত রশি ঝুলিয়ে।  
১১. এক্ষেত্রে বহু বাহিনীর মধ্যে ওদেরও এক বাহিনী আছে
, যা পরাজিত হবে।    
১২. তাদের পূর্বেও মিথ্যারোপ করেছিল নূহের সম্প্রদায়
, আদ, কীলক বিশিষ্ট ফেরাউন,    
১৩. সামুদ
, লূতের সম্প্রদায় ও আইকার লোকেরা। এরাই ছিল বহু বাহিনী।   
১৪. এদের প্রত্যেকেই পয়গম্বরগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। ফলে আমার আযাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  
১৫. কেবল একটি মহানাদের অপেক্ষা করছে
, যাতে দম ফেলার অবকাশ থাকবে না।
১৬. তারা বলে
, হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের প্রাপ্য অংশ হিসাব দিবসের আগেই দিয়ে দাও।    
১৭. তারা যা বলে তাতে আপনি সবর করুন এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাউদকে স্মরণ করুন। সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।  
১৮. আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম
, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত;  
১৯. আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।    
২০. আমি তাঁর সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাঁকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফয়সালাকারী বাগ্মীতা।   
২১. আপনার কাছে দাবীদারদের বৃত্তান্ত পৌছেছে
, যখন তারা প্রাচীর ডিঙিয়ে এবাদত খানায় প্রবেশ করেছিল।  
২২. যখন তারা দাউদের কাছে অনুপ্রবেশ করল
, তখন সে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা বললঃ ভয় করবেন না; আমরা বিবদমান দুটি পক্ষ, একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি। অতএব, আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।  
২৩. সে আমার ভাই
, সে নিরানব্বই দুম্বার মালিক আর আমি মালিক একটি মাদী দুম্বার। এরপরও সে বলেঃ এটিও আমাকে দিয়ে দাও। সে কথাবার্তায় আমার উপর বল প্রয়োগ করে।    
২৪. দাউদ বললঃ সে তোমার দুম্বাটিকে নিজের দুম্বাগুলোর সাথে সংযুক্ত করার দাবী করে তোমার প্রতি অবিচার করেছে। শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি জুলুম করে থাকে। তবে তারা করে না
, যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসী ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী। অবশ্য এমন লোকের সংখ্যা অল্প। দাউদের খেয়াল হল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করছি। অতঃপর সে তার পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল, সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করল।    
২৫. আমি তার সে অপরাধ ক্ষমা করলাম। নিশ্চয় আমার কাছে তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্তবা ও সুন্দর আবাসস্থল।   
২৬. হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি
, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাবদিবসকে ভূলে যায়।   
২৭. আমি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা। অতএব
, কাফেরদের জন্যে রয়েছে দূর্ভোগ অর্থাৎ, জাহান্নাম।  
২৮. আমি কি বিশ্বাসী ও সৎকর্মীদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফেরদের সমতুল্য করে দেব
? না খোদাভীরুদেরকে পাপাচারীদের সমান করে দেব।   
২৯. এটি একটি বরকতময় কিতাব
, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।   
৩০. আমি দাউদকে সোলায়মান দান করেছি। সে একজন উত্তম বান্দা। সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল
৩১. যখন তার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট অশ্বরাজি পেশ করা হল
,     
৩২. তখন সে বললঃ আমি তো আমার পরওয়ারদেগারের স্মরণে বিস্মৃত হয়ে সম্পদের মহব্বতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি-এমনকি সূর্য ডুবে গেছে।   
৩৩. এগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে তাদের পা ও গলদেশ ছেদন করতে শুরু করল।   
৩৪. আমি সোলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবং রেখে দিলাম তার সিংহাসনের উপর একটি নিস্প্রাণ দেহ। অতঃপর সে রুজু হল।  
৩৫. সোলায়মান বললঃ হে আমার পালনকর্তা
, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।   
৩৬. তখন আমি বাতাসকে তার অনুগত করে দিলাম
, যা তার হুকুমে অবাধে প্রবাহিত হত যেখানে সে পৌছাতে চাইত।  
৩৭. আর সকল শয়তানকে তার অধীন করে দিলাম অর্থৎ
, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী।  
৩৮. এবং অন্য আরও অনেককে অধীন করে দিলাম
, যারা আবদ্ধ থাকত শৃঙ্খলে।  
৩৯. এগুলো আমার অনুগ্রহ
, অতএব, এগুলো কাউকে দাও অথবা নিজে রেখে দাও-এর কোন হিসেব দিতে হবে না।  
৪০. নিশ্চয় তার জন্যে আমার কাছে রয়েছে মর্যাদা ও শুভ পরিণতি।   
৪১. স্মরণ করুণ
, আমার বান্দা আইয়্যূবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বললঃ শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট পৌঁছিয়েছে।  
৪২. তুমি তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত কর। ঝরণা নির্গত হল গোসল করার জন্যে শীতল ও পান করার জন্যে।   
৪৩. আমি তাকে দিলাম তার পরিজনবর্গ ও তাদের মত আরও অনেক আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশস্বরূপ।  
৪৪. তুমি তোমার হাতে এক মুঠো তৃণশলা নাও
, তদ্বারা আঘাত কর এবং শপথ ভঙ্গ করো না। আমি তাকে পেলাম সবরকারী। চমৎকার বান্দা সে। নিশ্চয় সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল।  
৪৫. স্মরণ করুন
, হাত ও চোখের অধিকারী আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা।
৪৬. আমি তাদের এক বিশেষ গুণ তথা পরকালের স্মরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র্য দান করেছিলাম।  
৪৭. আর তারা আমার কাছে মনোনীত ও সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত।  
৪৮. স্মরণ করুণ
, ইসমাঈল, আল ইয়াসা ও যুলকিফ্‌লের কথা। তারা প্রত্যেকেই গুনীজন।  
৪৯. এ এক মহৎ আলোচনা। খোদাভীরুদের জন্যে রয়েছে উত্তম ঠিকানা-   
৫০. তথা স্থায়ী বসবাসের জান্নাত
; তাদের জন্যে তার দ্বার উম্মুক্ত রয়েছে।  
৫১. সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে। তারা সেখানে চাইবে অনেক ফল-মূল ও পানীয়।   
৫২. তাদের কাছে থাকবে আনতনয়না সমবয়স্কা রমণীগণ।  
৫৩. তোমাদেরকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে বিচার দিবসের জন্যে।   
৫৪. এটা আমার দেয়া রিযিক যা শেষ হবে না।   
৫৫. এটা তো শুনলে
, এখন দুষ্টদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্ট ঠিকানা  
৫৬. তথা জাহান্নাম। তারা সেখানে প্রবেশ করবে। অতএব
, কত নিকৃষ্ট সেই আবাসস্থল।   
৫৭. এটা উত্তপ্ত পানি ও পুঁজ
; অতএব তারা একে আস্বাদন করুক।   
৫৮. এ ধরনের আরও কিছু শাস্তি আছে।  
৫৯. এই তো একদল তোমাদের সাথে প্রবেশ করছে। তাদের জন্যে অভিনন্দন নেই। তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে।  
৬০. তারা বলবে
, তোমাদের জন্যেও তো অভিনন্দন নেই। তোমরাই আমাদেরকে এ বিপদের সম্মুখীন করেছ। অতএব, এটি কতই না ঘৃণ্য আবাসস্থল।
৬১. তারা বলবে
, হে আমাদের পালনকর্তা, যে আমাদেরকে এর সম্মুখীন করেছে, আপনি জাহান্নামে তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দিন।   
৬২. তারা আরও বলবে
, আমাদের কি হল যে, আমরা যাদেরকে মন্দ লোক বলে গণ্য করতাম, তাদেরকে এখানে দেখছি না।    
৬৩. আমরা কি অহেতুক তাদেরকে ঠাট্টার পাত্র করে নিয়েছিলাম
, না আমাদের দৃষ্টি ভুল করছে?    
৬৪. এটা অর্থাৎ, জাহান্নামীদের পারস্পরিক বাক-বিতন্ডা অবশ্যম্ভাবী।  
৬৫. বলুন
, আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং এক পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।  
৬৬. তিনি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা
, পরাক্রমশালী, মার্জনাকারী।  
৬৭. বলুন
, এটি এক মহাসংবাদ,  
৬৮. যা থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ।  
৬৯. ঊর্ধ্ব জগৎ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না যখন ফেরেশতারা কথাবার্তা বলছিল।  
৭০. আমার কাছে এ ওহীই আসে যে
, আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।   
৭১. যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন
, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব।   
৭২. যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব
, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো।  
৭৩. অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাই একযোগে সেজদায় নত হল
,    
৭৪. কিন্তু ইবলীস
; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।  
৭৫. আল্লাহ্ বললেন
, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন?   
৭৬. সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।   
৭৭. আল্লাহ্ বললেনঃ বের হয়ে যা
, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত।    
৭৮. তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।    
৭৯. সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা
, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।  
৮০. আল্লাহ্ বললেনঃ তোকে অবকাশ দেয়া হল।   
৮১. সে সময়ের দিন পর্যন্ত যা জানা।  
৮২. সে বলল
, আপনার ইয্‌যতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব।  
৮৩. তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা
, তাদেরকে ছাড়া।  
৮৪. আল্লাহ্ বললেনঃ তাই ঠিক
, আর আমি সত্য বলছি-   
৮৫. তোর দ্বারা আর তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।  
৮৬. বলুন
, আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না আর আমি লৌকিকতাকারীও নই।  
৮৭. এটা তো বিশ্ববাসীর জন্যে এক উপদেশ মাত্র।  
৮৮. তোমরা কিছু কাল পরে এর সংবাদ অবশ্যই জানতে পারবে।