ভাষাংশ।
কোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম
৪৭.
সুরা আল মুহম্মদ
মদিনায় অবতীর্ণ : আয়াত ৩৮
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. যারা কুফরী
করে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা সৃষ্টি করে,
আল্লাহ্ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন।
২. আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে,
সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং
তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে,
আল্লাহ্ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।
৩. এটা এ কারণে যে,
যারা কাফের,
তারা বাতিলের অনুসরণ করে
এবং যারা বিশ্বাসী,
তারা তাদের
পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ্ মানুষের জন্যে তাদের
দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।
৪. অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও,
তখন তাদের গর্দন মার,
অবশেষে যখন তাদেরকে
পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ
কর,
না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ
লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রু পক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা
শুনলে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি
তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহ্র পথে শহীদ হয়,
আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।
৫. তিনি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন।
৬. অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন,
যা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
৭. হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর,
আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।
৮. আর যারা কাফের,
তাদের জন্যে আছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন।
৯. এটা এজন্যে যে,
আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন,
তারা তা পছন্দ করে না।
অতএব,
আল্লাহ্ তাদের
কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।
১০. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে,
তাদের পূর্ববর্তীদের
পরিণাম কি হয়েছে?
আল্লাহ্ তাদেরকে
ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এরূপই হবে।
১১. এটা এজন্যে যে,
আল্লাহ্ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।
১২. যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে,
আল্লাহ্ তাদেরকে
জান্নাতে দাখিল করবেন,
যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ
প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের,
তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান
জাহান্নাম।
১৩. যে জনপদ আপনাকে বহিস্কার করেছে,
তদপেক্ষা কত শক্তিশালী
জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি,
অতঃপর
তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।
১৪. যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে,
সে কি তার সমান,
যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
১৫. পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে,
তার অবস্থা নিম্নরূপঃ
তাতে আছে পানির নহর,
নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ
অপরিবর্তনীয়,
পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু
শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের
পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান,
যারা জাহান্নামে
অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের
নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?
১৬. তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে,
অতঃপর যখন আপনার কাছ
থেকে বাইরে যায়,
তখন যারা শিক্ষিত,
তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র
তিনি কি বললেন ?
এদের অন্তরে
আল্লাহ্ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
১৭. যারা সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে,
তাদের সৎপথপ্রাপ্তি আরও বেড়ে যায় এবং আল্লাহ্ তাদেরকে তাকওয়া দান করেন।
১৮. তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে,
কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের
কাছে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে
তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে
?
১৯. জেনে রাখুন,
আল্লাহ্ ব্যতীত কোন
উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন,
আপনার ক্রটির জন্যে এবং
মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ্,
তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
২০. যারা মুমিন,
তারা বলেঃ একটি সূরা
নাযিল হয় না কেন?
অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন
সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়,
তখন যাদের অন্তরে রোগ
আছে,
আপনি তাদেরকে
মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস
তাদের জন্যে।
২১. তাদের আনুগত্য ও মিষ্ট বাক্য জানা আছে। অতএব,
জেহাদের সিন্ধান্ত হলে
যদি তারা আল্লাহ্র প্রতি পদত্ত অংগীকার পূর্ণ করে,
তবে তাদের জন্যে তা মঙ্গলজনক হবে।
২২. ক্ষমতা লাভ করলে,
সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।
২৩. এদের প্রতিই আল্লাহ্ অভিসম্পাত করেন,
অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।
২৪. তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না?
না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?
২৫. নিশ্চয় যারা সোজা পথ ব্যক্ত হওয়ার পর তৎপ্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে,
শয়তান তাদের জন্যে তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়।
২৬. এটা এজন্য যে,
তারা তাদেরকে বলে,
যারা আল্লাহ্র অবতীর্ণ কিতাব অপছন্দ করেঃ আমরা কোন কোন ব্যাপারে তোমাদের কথা
মান্য করব। আল্লাহ্ তাদের গোপন পরামর্শ অবগত আছেন।
২৭. ফেরেশতা যখন তাদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে,
তখন তাদের অবস্থা কেমন
হবে?
২৮. এটা এজন্যে যে,
তারা সেই বিষয়ের অনুসরণ
করে,
যা আল্লাহ্র
অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করে। ফলে তিনি তাদের
কর্মসমূহ ব্যর্থ করে দেন।
২৯. যাদের অন্তরে রোগ আছে,
তারা কি মনে করে যে,
আল্লাহ্ তাদের অন্তরের
বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?
৩০. আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে তাদের সাথে পরিচিত করে দিতাম। তখন আপনি তাদের চেহারা
দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন এবং আপনি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারবেন।
আল্লাহ্ তোমাদের কর্মসমূহের খবর রাখেন।
৩১. আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের
জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই
করি।
৩২. নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহ্র পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের
জন্যে সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর রসূলের (সঃ) বিরোধিতা করে,
তারা আল্লাহ্র কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দিবেন তাদের
কর্মসমূহকে।
৩৩. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর,
রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
৩৪. নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহ্র পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে
অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যায়,
আল্লাহ্ কখনই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।
৩৫. অতএব,
তোমরা হীনবল হয়ো না
এবং সন্ধির আহবান জানিও না,
তোমরাই
হবে প্রবল। আল্লাহ্ই তোমাদের সাথে আছেন। তিনি কখনও তোমাদের কর্ম হ্রাস করবেন
না।
৩৬. পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা,
যদি তোমরা বিশ্বাসী হও
এবং সংযম অবলম্বন কর,
আল্লাহ্
তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চাইবেন না।
৩৭. তিনি তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ চাইলে অতঃপর তোমাদেরকে অতিষ্ঠ করলে তোমরা
কার্পণ্য করবে এবং তিনি তোমাদের মনের সংকীর্ণতা প্রকাশ করে দেবেন।
৩৮. শুন,
তোমরাই তো তারা,
যাদেরকে আল্লাহ্র পথে
ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে,
অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ
কৃপণতা করছে, যারা কৃপণতা করছে,
তারা নিজেদের প্রতিই
কৃপণতা করছে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও,
তবে তিনি তোমাদের
পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন,
এরপর তারা তোমাদের মত হবে না।
৪৮.
সুরা আল ফাততহ
মদীনায় অবতীর্ণ : আয়াত ২৯
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. নিশ্চয় আমি
আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি,
যা সুস্পষ্ট
২. যাতে আল্লাহ্ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি
তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
৩. এবং আপনাকে দান করেন বলিষ্ঠ সাহায্য।
৪. তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন,
যাতে তাদের ঈমানের সাথে
আরও ঈমান বেড়ে যায়। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহ্রই এবং আল্লাহ্
সর্বজ্ঞ,
প্রজ্ঞাময়।
৫. ঈমান এজন্যে বেড়ে যায়,
যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ
ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান,
যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে এবং যাতে তিনি তাদের পাপ
মোচন করেন। এটাই আল্লাহ্র কাছে মহাসাফল্য।
৬. এবং যাতে তিনি কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারী এবং অংশীবাদী পুরুষ ও
অংশীবাদিনী নারীদেরকে শাস্তি দেন,
যারা আল্লাহ্ সম্পর্কে
মন্দ ধারণা পোষন করে। তাদের জন্য মন্দ পরিণাম। আল্লাহ্ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,
তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন। এবং তাহাদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের
প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত মন্দ।
৭. নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহ্রই। আল্লাহ্ পরাক্রমশালী,
প্রজ্ঞাময়।
৮. আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে,
সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।
৯. যাতে তোমরা আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও
সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা কর।
১০. যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে,
তারা তো আল্লাহ্র কাছে
আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহ্র হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব,
যে শপথ ভঙ্গ করে;
অতি অবশ্যই সে তা নিজের
ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে;
আল্লাহ্ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।
১১. মরুবাসীদের মধ্যে যারা গৃহে বসে রয়েছে,
তারা আপনাকে বলবেঃ আমরা
আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অতএব,
আমাদের পাপ মার্জনা
করান। তারা মুখে এমন কথা বলবে,
যা তাদের অন্তরে নেই।
বলুনঃ আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষতি অথবা উপকার সাধনের ইচ্ছা করলে কে তাকে বিরত রাখতে
পারে?
বরং তোমরা যা কর,
আল্লাহ্ সে বিষয় পরিপূর্ণ জ্ঞাত।
১২. বরং তোমরা ধারণ করেছিলে যে,
রসূল ও মুমিনগণ তাদের বাড়ী-ঘরে কিছুতেই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের
জন্যে খুবই সুখকর ছিল। তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী
এক সম্প্রদায়।
১৩. যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না,
আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।
১৪. নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ্রই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে
ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল,
পরম মেহেরবান।
১৫. তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ ধন-সম্পদ সংগ্রহের জন্য যাবে,
তখন যারা পশ্চাতে থেকে
গিয়েছিল,
তারা বলবেঃ
আমাদেরকেও তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও। তারা আল্লাহ্র কালাম পরিবর্তন করতে চায়। বলুনঃ
তোমরা কখনও আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না। আল্লাহ্ পূর্ব থেকেই এরূপ বলে দিয়েছেন।
তারা বলবেঃ বরং তোমরা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছ। পরন্তু তারা সামান্যই
বোঝে।
১৬.গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত
জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে,
যতক্ষণ না তারা মুসলমান
হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর,
তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে
উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ,
তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।
১৭. অন্ধের জন্যে,
খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের
জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ্ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে তাকে তিনি
জান্নাতে দাখিল করবেন,
যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে,
তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।
১৮. আল্লাহ্ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন,
যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ্ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে
ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয়
পুরস্কার দিলেন।
১৯. এবং বিপুল পরিমাণে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ,
যা তারা লাভ করবে।
আল্লাহ্ পরাক্রমশালী,
প্রজ্ঞাময়।
২০. আল্লাহ্ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন,
যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি তোমাদের থেকে
শত্রুদের স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে এটা মুমিনদের জন্যে এক নিদর্শন হয় এবং তোমাদেরকে
সরল পথে পরিচালিত করেন।
২১. আর ও একটি বিজয় রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসেনি,
আল্লাহ্ তা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
২২. যদি কাফেররা তোমাদের মোকাবেলা করত,
তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত। তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না।
২৩. এটাই আল্লাহ্র রীতি,
যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহ্র রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।
২৪. তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত
করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর,
আল্লাহ্ তা দেখেন।
২৫. তারাই তো কুফরী করেছে এবং বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং
অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌঁছতে। যদি মক্কায় কিছুসংখ্যক ঈমানদার
পুরুষ ও ঈমানদার নারী না থাকত,
যাদেরকে তোমরা জানতে
না। অর্থাৎ তাদের পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত,
অতঃপর তাদের কারণে
তোমরা অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে,
তবে সব কিছু চুকিয়ে দেয়া
হত;
কিন্তু এ কারণে চুকানো হয়নি,
যাতে আল্লাহ্ তাআলা যাকে
ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করে নেন। যদি তারা সরে যেত,
তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শস্তি দিতাম।
২৬. কেননা,
কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর রসূল ও
মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব
অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ্
সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
২৭. আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ্ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই
মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়।
তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন
তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।
২৮. তিনিই তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন,
যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ্
যথেষ্ট।
২৯. মুহাম্মদ আল্লাহ্র রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর,
নিজেদের মধ্যে পরস্পর
সহানুভূতিশীল। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত
দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং
ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়,
অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত
হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে-যাতে আল্লাহ্ তাদের
দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে
এবং সৎকর্ম করে,
আল্লাহ্ তাদেরকে
ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।