ভাষাংশকোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম

৪৯.
সুরা আল হুজুরাত


মদীনায় অবতীর্ণ : আয়াত ১৮

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

১. মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছু শুনেন ও জানেন।  
২. মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল
, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।  
৩. যারা আল্লাহ্‌র রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে
, আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।  
৪. যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে
, তাদের অধিকাংশই অবুঝ।  
৫. যদি তারা আপনার বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত সবর করত
, তবে তা-ই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হত। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  
৬. মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে
, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।  
৭. তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন
, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।   
৮. এটা আল্লাহ্‌র কৃপা ও নিয়ামতঃ আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।   
৯. যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে
, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্‌র নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।  
১০. মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব
, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহ্‌কে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।  
১১. মুমিনগণ
, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ্। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।  
১২. মুমিনগণ
, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ্। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।  
১৩. হে মানব
, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহ্‌র কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।  
১৪. মরুবাসীরা বলেঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। বলুনঃ তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি
; বরং বল, আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি। এখনও তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মেনি। যদি তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিস্ফল করা হবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।    
১৫. তারাই মুমিন
, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহ্‌র পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।
১৬. বলুনঃ তোমরা কি তোমাদের ধর্ম পরায়ণতা সম্পর্কে আল্লাহ্‌কে অবহিত করছ
? অথচ আল্লাহ্ জানেন যা কিছু আছে ভূমণ্ডলে এবং যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।  
১৭. তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন
, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ্ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।  
১৮. আল্লাহ্ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেন
, তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা দেখেন।


৫০.
সুরা আল  ক্বাফ

মক্কায় অবতীর্ণ : আয়াত ৪৫

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

১.ক্বাফ! সম্মানিত কোরআনের শপথ;    
২. বরং তারা তাদের মধ্য থেকেই একজন ভয় প্রদর্শনকারী আগমন করেছে দেখে বিস্ময় বোধ করে। অতঃপর কাফেররা বলেঃ এটা আশ্চর্যের ব্যাপার!  
৩. আমরা মরে গেলে এবং মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও কি পুনরুত্থিত হব
? এ প্রত্যাবর্তন সুদূরপরাহত।  
৪. মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে
, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।  
৫. বরং তাদের কাছে সত্য আগমন করার পর তারা তাকে মিথ্যা বলছে। ফলে তারা সংশয়ে পতিত রয়েছে।  
৬. তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না- আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি
? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।  
৭. আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি
, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।   
৮. এটা জ্ঞান আহরণ ও স্মরণ করার মত ব্যাপার প্রত্যেক অনুরাগী বান্দার জন্যে।  
৯. আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্দ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি
, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।  
১০. এবং লম্বমান খর্জুর বৃক্ষ
, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খর্জুর,  
১১. বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে।  
১২. তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে নূহের সম্প্রদায়
, কূপবাসীরা এবং সামূদ সম্প্রদায়।  
১৩. আদ
, ফেরাউন, ও লূতের সম্প্রদায়,    
১৪. বনবাসীরা এবং তোব্বা সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই রসূলগণকে মিথ্যা বলেছে
, অতঃপর আমার শাস্তির যোগ্য হয়েছে।   ১৫. আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? বরং তারা নতুন সৃষ্টির ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করেছে।
১৬. আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে
, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।   
১৭. যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।  
১৮. সে যে কথাই উচ্চারণ করে
, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।  
১৯. মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।  
২০. এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।  
২১. প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী।   
২২. তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ম।   
২৩. তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে
আমলনামা ছিল, তা এই।  
২৪. তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে
,  
২৫. যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে।  
২৬. যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত
, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।  
২৭. তার সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা
, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত।  
২৮. আল্লাহ্ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না। আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম।  
২৯. আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।  
৩০. যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব
; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি?  
৩১. জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে।  
৩২. তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল; 
৩৩. যে না দেখে দয়াময় আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করত এবং বিনীত অন্তরে উপস্থিত হত।  
৩৪. তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন।  
৩৫. তারা তথায় যা চাইবে
, তাই পাবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক।   
৩৬. আমি তাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি
, তারা এদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল এবং দেশে-বিদেশে বিচরণ করে ফিরত। তাদের কোন পলায়ন স্থান ছিল না।  
৩৭. এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে
, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।   
৩৮. আমি নভোমণ্ডল
, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।   
৩৯. অতএব
, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।  
৪০. রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।   
৪১. শুন
, যে দিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান থেকে আহবান করবে,  
৪২. যেদিন মানুষ নিশ্চিত সেই ভয়াবহ আওয়াজ শুনতে পাবে
, সেদিনই পুনরত্থান দিবস।   
৪৩. আমি জীবন দান করি
, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।  
৪৪. যেদিন ভূমণ্ডল বিদীর্ণ হয়ে মানুষ ছুটাছুটি করে বের হয়ে আসবে। এটা এমন সমবেত করা
, যা আমার জন্যে অতি সহজ।  
৪৫. তারা যা বলে
, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।