ভাষাংশ।
কোরানের সূরা সূচি
পবিত্র 
কোরআনুল করীম
৭১
সুরা 
নূহ 
মক্কায় অবতীর্ণ 
: আয়াত 
২৮
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু 
আল্লাহ্র 
নামে শুরু করছি।
১.আমি 
নূহ্কে প্রেরণ করেছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি একথা বলেঃ তুমি তোমার সম্প্রদায়কে 
সতর্ক কর,
তাদের প্রতি মর্মন্তদ শাস্তি আসার আগে।  
২. সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট 
সতর্ককারী।   
৩. এ বিষয়ে যে,
তোমরা আল্লাহ্ তাআলার এবাদত কর, 
তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।   
৪. আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় 
পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলার নির্দিষ্টকাল যখন হবে,
তখন অবকাশ দেয়া হবে না, 
যদি তোমরা তা জানতে!   
৫. সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি 
দাওয়াত দিয়েছি;  
৬. কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের পলায়নকেই বৃদ্ধি করেছে।   
৭. আমি যতবারই তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি,
যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, 
ততবারই তারা কানে অঙ্গুলি দিয়েছে, মুখমণ্ডল বস্ত্রাবৃত 
করেছে, জেদ করেছে এবং খুব ঔদ্ধত্য 
প্রদর্শন করেছে।   
৮. অতঃপর আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি,  
৯. অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে 
বলেছি।   
১০. অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত 
ক্ষমাশীল।   
১১. তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন,  
১২. তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন,
তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং 
তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।   
১৩. তোমাদের কি হল যে,
তোমরা আল্লাহ্ তাআলার শ্রেষ্টত্ব আশা 
করছ না!   
১৪. অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে সৃষ্টি করেছেন।   
১৫. তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে,
আল্লাহ্ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে 
সৃষ্টি করেছেন। 
১৬. এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন 
প্রদীপরূপে।   
১৭. আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন।   
১৮. অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন এবং আবার পুনরুত্থিত করবেন।   
১৯. আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা।   
২০. যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।   
২১. নূহ বললঃ হে আমার পালনকর্তা,
আমার সম্প্রদায় আমাকে অমান্য করেছে আর অনুসরণ করছে এমন লোককে,
যার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কেবল তার 
ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে।   
২২. আর তারা ভয়ানক চক্রান্ত করছে।   
২৩. তারা বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ,
সুয়া, ইয়াগুছ, 
ইয়াউক ও নসরকে।   
২৪. অথচ তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব আপনি জালেমদের 
পথভ্রষ্টতাই বাড়িয়ে দিন।   
২৫. তাদের গোনাহসমূহের দরুন তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে,
অতঃপর দাখিল করা হয়েছে জাহান্নামে। অতঃপর 
তারা আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত কাউকে সাহায্যকারী পায়নি।   
২৬. নূহ আরও বললঃ হে আমার পালনকর্তা,
আপনি পৃথিবীতে কোন কাফের গৃহবাসীকে 
রেহাই দিবেন না।   
২৭. যদি আপনি তাদেরকে রেহাই দেন,
তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে 
কেবল পাপাচারী, কাফের।   
২৮. হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে,
আমার পিতা-মাতাকে, 
যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও 
মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। 
৭২.
সুরা 
আল-জিন 
মক্কায় অবতীর্ণ 
: আয়াত 
২৮
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু 
আল্লাহ্র 
নামে শুরু করছি।
১. বলুনঃ 
আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে,
জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, 
অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি;   
২. যা সৎপথ প্রদর্শন 
করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে 
শরীক করব না।   
৩. এবং আরও বিশ্বাস করি যে,
আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী 
গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।   
৪. আমাদের 
মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ্ তাআলা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত।   
৫. অথচ আমরা মনে করতাম,
মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ্ তাআলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে 
না।   
৬. অনেক মানুষ 
অনেক জিনের আশ্রয় নিত,
ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।   
৭. তারা ধারণা 
করত, যেমন 
তোমরা মানবেরা ধারণা কর যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাআলা 
কখনও কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না।   
৮. আমরা আকাশ 
পর্যবেক্ষণ করছি,
অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী 
ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।   
৯. আমরা 
আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে 
জলন্ত উল্কাপিণ্ডকে ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে।   
১০. আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট,
না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন!   
১১. আমাদের 
কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত।   
১২. আমরা বুঝতে পেরেছি যে,
আমরা পৃথিবীতে আল্লাহ্ তাআলাকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন 
করেও তাঁকে অপারক করত পরব না।   
১৩. আমরা যখন 
সুপথের নির্দেশ শুনলাম,
তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব,
যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে,
সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না।   
১৪. আমাদের 
কিছুসংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়,
তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে।   
১৫. আর যারা 
অন্যায়কারী, 
তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন। 
১৬. আর এই 
প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে,
তারা যদি সত্যপথে কায়েম থাকত, তবে 
আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম।   
১৭. যাতে এ 
ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে 
মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তিনি তাকে উদীয়মান আযাবে পরিচালিত করবেন।   
১৮. এবং এই 
ওহীও করা হয়েছে যে,
মসজিদসমূহ আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব,
তোমরা আল্লাহ্ তাআলার সাথে কাউকে ডেকো না।   
১৯. আর যখন 
আল্লাহ্ তাআলার বান্দা তাঁকে ডাকার জন্যে দণ্ডায়মান হল,
তখন অনেক জিন তার কাছে ভিড় জমাল।   
২০. বলুনঃ আমি 
তো আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।   
২১. বলুনঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই।   
২২. বলুনঃ আল্লাহ্ তাআলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত 
আমি কোন আশ্রয়স্থল পাব না।   
২৩. কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে 
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে,
তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।  
২৪. এমনকি যখন 
তারা প্রতিশ্রুত শাস্তি দেখতে পাবে,
তখন তারা জানতে পারবে, কার 
সাহায্যকারী দুর্বল এবং কার সংখ্যা কম।   
২৫. বলুনঃ আমি 
জানি না তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয় আসন্ন না আমার পালনকর্তা এর জন্যে কোন মেয়াদ 
স্থির করে রেখেছেন।   
২৬. তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না।   
২৭. তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত 
করেন,   
২৮.  যাতে আল্লাহ্ তাআলা জেনে নেন যে,
রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌঁছিয়েছেন কি না। রসূলগণের 
কাছে যা আছে, তা তাঁর 
জ্ঞান-গোচর। তিনি সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।
৭৩.
সুরা 
মুয্যাম্মিল 
মক্কায় অবতীর্ণ 
: আয়াত 
২০
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু 
আল্লাহ্র 
নামে শুরু করছি।
১. হে 
বস্ত্রাবৃত,   
২. রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে;  
৩. অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম   
৪. অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে।   
৫. আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।   
৬. নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের 
অনুকূল।   
৭. নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।   
৮. আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন।   
৯. তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব,
তাঁকেই গ্রহণ করুন কর্মবিধায়করূপে।   
১০. কাফেররা যা বলে,
তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে 
তাদেরকে পরিহার করে চলুন।   
১১. বিত্ত-বৈভবের অধিকারী মিথ্যারোপকারীদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন 
এবং তাদেরকে কিছু অবকাশ দিন।   
১২. নিশ্চয় আমার কাছে আছে শিকল ও অগ্নিকুণ্ড।   
১৩. গলগ্রহ হয়ে যায় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।   
১৪. যেদিন পৃথিবী পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে বহমান 
বালুকাস্তুপ।   
১৫. আমি তোমাদের কাছে একজন রসূলকে তোমাদের জন্যে সাক্ষী করে প্রেরণ করেছি,
যেমন প্রেরণ করেছিলাম ফেরাউনের কাছে
একজন রসূল। 
১৬. অতঃপর ফেরাউন সেই রসূলকে অমান্য করল,
ফলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছি।   
১৭. অতএব,
তোমরা কিরূপে আত্মরক্ষা করবে যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর,
যেদিন বালককে করে দিব বৃদ্ধ?   
১৮. সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে। তার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত 
হবে।   
১৯. এটা উপদেশ। অতএব,
যার ইচ্ছা, সে 
তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক।   
২০. আপনার পালনকর্তা জানেন,
আপনি এবাদতের জন্যে দণ্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু' 
তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি 
দলও দণ্ডয়মান হয়। আল্লাহ্ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন,
তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি 
ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ,
ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ 
হবে, কেউ কেউ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে 
যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহ্র পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের 
জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, 
যাকাত দাও এবং আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে,
তা আল্লাহ্র কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে 
পাবে। তোমরা আল্লাহ্র কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
দয়ালু।