বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
গান সংখ্যা : ১১৫৬.
শিরোনাম:
উদার প্রাতে কে উদাসী এলে।
পাঠ ও পাঠভেদ:
১১৫৬.
রাগ: টোড়ি, তাল: আদ্ধা-কাওয়ালি
উদার প্রাতে কে উদাসী এলে।
প্রশান্ত দীঘল নয়ন মেলে' ॥
স্নিগ্ধ সকরুণ তোমার হাসি
আঘাত করে যেন আমারে আসি',
পাষাণ সম তব মৌন মূরতি মোর বুকে বিষাদের ছায়া কেন ফেলে॥
উন্মন ভিখারি গো বল মোর কাছে
শূন্য হৃদয় তব কোন মন যাচে,
অশ্রু তুষার ঘন বিগ্রহ তব গলিয়া পড়িবে প্রেমে কার মালা পেলে॥
ভাবসন্ধান:
এই গানে টোড়ি রাগের প্রকৃতিকে রূপকতার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। দিবা দ্বিতীয়
প্রহরের শুরুর দিকে প্রভাতের যে উদার রূপ প্রকৃতিতে ফুটে উঠে, তারই প্রশান্ত
পরিবেশে রাগটি যেন উদাসী বেশে আত্মপ্রকাশ করে। অবারিত স্নিগ্ধ ছায়া যেন ছড়িয়ে পড়ে।
উদাসী টোড়ির আবির্ভাবে যে স্নিগ্ধ অথচ করুণ রসের সৃষ্টি করে, তা কবিকে গভীরভাবে
স্পর্শ করে। তার পাষাণসম অকরুণ মৌন মূর্তি, কবির হৃদয়ে কেন বিষাদে আচ্ছন্ন করে, কবি
বুঝে উঠতে পারেন না।
টোড়ি যেন ভিখারির বেশে কিছু প্রত্যাশা নিয়ে কবির কাছে আসে। কিসের প্রত্যাশায় তার।
তুষারের মতো জমাট বেদনা অশ্রু গলে পড়বে কার মালার মতো প্রেমের অর্ঘ পেলে, কবি তা
জানেন না।
তথ্যানুসন্ধান:
ক. রচনার প্রেক্ষাপট, কাল ও স্থান:
রচনার প্রেক্ষাপট: ভারতী রাগ সঙ্গীতে নানা দিক নিয়ে নজরুল ইসলাম নানা রকমের গবেষণা করেছিলেন। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' হলো তার একটি। ভারতীয় রাগ-সঙ্গীত শাস্ত্রে রাগ-পরিবেশনায় দিনের বিভিন্ন সময় এবং ঋতু বৈচিত্র্যের প্রভাব রয়েছে। দিনের বিচারে ভারতীয় সঙ্গীতঋষিরা দিবারাত্রির বিভাজিত অংশ হিসেবে প্রহর বা যাম নামক এককটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই গবেষণার সূত্রে তিনি রচনা করেছিলেন 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম নামক একটি গীতি আলেখ্য। এটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
এই গীতি আলেখ্যের প্রথম ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের দ্বিতীয় গানটিই ছিল ' উদার প্রাতে কে উদাসী এলে। এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় টোড়ি রাগের ভূমিকা এবং কড়ি মধ্যমের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। নিচের নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
টোড়ি রাগিনী দ্বিতীয় প্রহরে গীত হয়।
ভৈরবী আশাবরী গান্ধারী প্রভৃতি রাগিনীর পর এই রাগের তীব্র মধ্যম তীব্র সুরে জানিয়ে দেয় যে, দিনের দ্বিতীয় প্রহর এল। দু' একটী টোড়িতে দুই মধ্যম লাগে। শুদ্ধ টোড়ির এক 'মা'। আরোহণের সময় এর পা পড়ে বক্র গতিতে। আরোহণের সময় ঋষভ বা রেখাবে চড়তে এ একটু ইতস্ততঃ করে। অবরোহণের বেলায় কিন্তু ঋষভের গা ঘেঁসে খেলা করে। টোড়ির খেয়াল শুনুন। [পাণ্ডুলিপি নমুনা]
রচনাকাল ও স্থান:
'যাম-যোজনায়
কড়ি মধ্যম' নামক গীতি-আলেখ্যটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
ধারণা করা হয়, এই গীতি-আলেখ্য উপলক্ষেই গানটি রচিত হয়েছিল কলকাতায়। এই
ধারণা থেকে অনুমান করা যায়, গানটি রচনার সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ.
সঙ্গীত
বিষয়ক তথ্যাবলী:
গানটির কোনো শ্রবণ নমুনা পাওয়া যায় নি। এবং এর কোনো স্বরলিপিও পাওয়া যায় নি।
'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম'
-এর দ্বিতীয় প্রহরের রাগ হিসেবে নজরুল ইসলাম যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার শেষে রয়েছে
'টোড়ির খেয়াল শুনুন'।
এ থেকে অনুমান করা যায়, গানটি তিনি খেয়াল হিসেবেই লিখেছিলেন।